নন্দিনী চট্টোপাধ্যায় | জয়শঙ্করের বৌ

নন্দিনী চট্টোপাধ্যায় | জয়শঙ্করের বৌ

নামখানার পশ্চিমদিকে জয়নগর শহর ও পুবে মজিলপুর শহর । আমি যে সময়ের কথা বলতে বসেছি সে সময় মজিলপুর শহর ছিলনা । ছোট একটি গ্রাম বলেই মজিলপুরকে জানত সবাই । তবু স্থানীয় মানুষের অনেক বছরের দাবিতে ব্রিটিশ সরকার যখন জয়নগরে রেল স্টেশন করলেন আর ইস্টার্ন বেঙ্গল রেলওয়ে কলকেতা থেকে জয়নগর পর্যন্ত কয়লার রেল চালাতে লাগল ব্যাপারটা স্থানীয় লোকেদের কাছে শুধুমাত্র আনন্দের নয় বেশ একটু দর্শনীয় হয়ে দাঁড়াল । এমন হল যে বৃদ্ধরা মজলিস ফেলে বালক বালিকারা খেলা ভুলে মধ্যবয়সীরা কাজকর্ম ছেড়ে ঐ রেল স্টেশনের আশেপাশে ভিড় জমাতে শুরু করল । এটা ১৮৮৪ । রেল চলতে শুরু করেছে তা প্রায় দু বছর হয়ে গেল । সারাদিনে মাত্র দুটি ট্রেন কলকেতা অভিমুখে যায় ও আসে কিন্তু এইসব গাঁ গঞ্জের মানুষের কাছে সেই যেন অনেক । স্টেশন মাস্টার বাবুর প্রতিটি কাজ কম্মই যেন বিস্ময়কর । বার বার দেখেও আশ মেটেনা । মনে হয় কি যেন একটা দেখা বাকি রয়ে গেল । ঝম ঝম করে ট্রেন আসা যাওয়া এক অত্যাশ্চর্য ব্যাপার ! । এখনো এই জয়নগর শহর থেকে মাত্রই গুটিকয় লোক জন কলকেতায় গেছে এসেছে । যারা গেছে তাদের বাড়িতে ভিড় যেন ফুরোয়না । কলকেতার বিচিত্র সব কেতাকানুনের গপ্প শুনে শুনেও যেন আর ফুরোয়না ।

এমনি এক ঘু ঘু ডাকা দুপুরে নির্দিষ্ট ট্রেনটি ঝমাঝম করতে করতে জয়নগর স্টেশনে এসে দাঁড়াল । ট্রেন থেকে যে গুটিকয় লোক নামল তাদের সকলকেই শঙ্কর চেনে । শুধু মাত্র একজনকে সে ঠিক চিনতে পারলনা । মধ্যবয়সী সুপুরুষ চেহারা । গায়ে আলপাকার কোট আর পায়ে মোজা জুতো । উকিল টুকিল নাকি উনি ?

শঙ্কর জয়নগরের হারাণচন্দ্র মিত্তিরের একমাত্র ছেলে। শিবরাত্তিরের সলতে । সে স্থানীয় স্কুলে সেকেন্ড ক্লাসে পড়ে । কিন্তু এখানকার বেশিরভাগ লোকেদের মত তারও রেলগাড়ি দেখার বাসনা ষোলোআনা । সেই বাসনা পূরণের জন্যই সে মাঝে মাঝে ক্লাস কামাই করে এসে এই রেললাইনের ধারে দাঁড়িয়ে থাকে । রেলগাড়ি দেখে বাড়ি ফেরে সে । রেলগাড়ি কেমন এক সুদূরের আহবান বহন করে আনে । ঝম ঝম ঝম ঝম কু ঝিক ঝিক করে রেল চলে । কত স্টেশনে ট্রেন দাঁড়ায় । কত অচেনা লোক ওঠে নামে । ভাঁড়ে চা ---বাদাম বাদাম ---- ছেলেটা কেমন যেন হারিয়ে যাচ্ছিল ! সে কবে একা একা কলকেতায় যাবে ?

-----খোকা মজিলপুরের দিকে যাব। গোরুর গাড়ি পাব নাকি একটা ?
 
একটু আগের দেখা সেই সৌম্যদর্শন ব্যক্তিই কথা বলছেন শঙ্করের সঙ্গে । শঙ্কর একটু হকচকিয়ে গেল । সে আজ পর্যন্ত জয়নগরের বাইরে কোথাও যায়নি । অপরিচিত ব্যক্তির সঙ্গে কথা বলতে তার এখনো একটু বাধো বাধো ঠেকে । সে একটু থেমে থেমে বলল --- হ্যাঁ গরুর গাড়ি পাবেন । তবে এই দুপুরের সময়টা তো ! গাড়োয়ানেরা এদিক সেদিন বিশ্রাম নেয় । আপনি খুঁজে পাবেননা ওদের ।
--তাহলে তুমিই একটা গাড়ি ঠিক করে দাও ।
--আচ্ছা চলুন ।

শঙ্কর আগে আগে চলতে লাগল । স্টেশন পেরিয়ে প্লাটফর্ম পেরিয়ে এক জায়গায় একটু ঝোপঝাড় । তার ওধারে গরুর গাড়িগুলো দাঁড়িয়ে থাকে । শঙ্কর গিয়ে হাঁকাহাঁকি করে মদনখুড়োর গাড়িটা ঠিক করে দিল ।

গাড়িতে উঠবার সময় ভদ্রলোক বললেন ---বাহ তুমি তো বেশ ভাল ছেলে হে । আমার সঙ্গে আমার বাড়িতে যাবে নাকি আজ ? আমার নাম সতীশচন্দ্র ঘোষ । আমি কলকাতা হাইকোর্টের একজন উকিল ।এখানে থাকিনা । কলকাতায় বেশিরভাগ থাকি । মাঝে মধ্যে বাড়ি আসি । চলনা বেড়িয়ে আসবে আমার বাড়ি । আমি ফেরত ভাড়া দিয়ে দেব । এই গরুর গাড়িই বাড়িতে ফিরিয়ে দেবে তোমাকে ।

---কিন্তু বাড়িতে না বলে কি করে যাব ?
ভদ্রলোক ভুরু কুঁচকে বললেন ---যদ্দুর মনে হয় যে তুমি মিত্তিরদের বাড়ির ছেলে ।কি ঠিক বলেছি তো ?
শঙ্কর অবাক হয়ে বলে ---আজ্ঞে । কিন্তু আপনি কি করে ---?

---দেখ বাবা মিত্তিরদের বাড়ির ছেলেদের চেহারার একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য হল টকটকে ফর্সা রঙ আর বাঁকা নাক । তোমার মধ্যে সেই দুটো ব্যাপারই র‍য়েছে । তাই আমি এত চট করে বলে দিতে পারলাম । তা এই দুপুরবেলা এখানে কি মনে করে ঘুরছিলে ?

----আজ্ঞে ---
এবার শঙ্করের মুখে আর কথা যোগায়না । সে স্কুল পালিয়ে ট্রেন দেখার লোভে এখানে এসে জুটেছে । কিন্তু এসব কথা এই ভদ্রলোককে বলা যায়না । সে আমতা আমতা করে কিছু একটা বলতে গেল কিন্তু তার আগেই উনি বলে উঠলেন –হুম ট্রেন দেখার আকর্ষণে এসেছ বুঝতেই পারছি ।কিন্তু এজন্য ইস্কুল কামাই করেছ মনে হয় ।

শঙ্কর এবার একেবারে চুপসে গেল । না জানি কি নাকি বলবেন এবার ভদ্রলোক । তবে বাবা ঠাকুরদার মুখে সে সতীশ উকিলের নাম অনেকবার শুনেছে ।ইনি যখন এত করে ডাকছেন এঁর সঙ্গে একবার ঘুরেই আসা যেতে পারে । তার ওপর দেখা গেল যে মদনখুড়োও এঁকে ভালমতন চেনে । এঁর কথা শুনলে ইনি নিশ্চয়ই বাবা বা বাড়ির কারুকে তার অপকীর্তির কথা বলে দেবেন না । সে আর এরপরে কথাটি না বলে গুটি গুটি গরুর গাড়ির মধ্যে গিয়ে উঠল । ভদ্রলোকও মুচকি হেসে শঙ্করের পাশে গিয়ে বসলেন । সঙ্গে আছে শুধু একটি কাঠের সুটকেস । তার থেকে খান কয়েক ল্যাবেঞ্চুস বের করে শঙ্করকে দিলেন তিনি । বাহ এই ল্যাবেঞ্চুসের অপুর্ব স্বাদ ! এমন ল্যাবেঞ্চুস সে কখনো খায়নি । সে হাসিমুখে ভদ্রলোকের দিকে চাইতেই তিনি বললেন ---একে বলে চকোলেট । সাহেবরা খায় । কলকাতায় নতুন পাওয়া যাচ্ছে । আমি আমার মেয়ে সোমশিখার জন্য কয়েকটা এনেছি । তার থেকেই তোমাকে দিলাম ।
চকোলেট খেয়ে শঙ্করের মন দারুণ ভাল হয়ে গেল । সে এবার স্বচ্ছন্দে সতীশবাবুর সঙ্গে গল্পে মেতে গেল। মদনখুড়োর গরুর গাড়ি এ রাস্তা সে রাস্তা ঘুরে মাঠ পেরিয়ে গাঁ গঞ্জের খানাখন্দ পেরিয়ে যখন সতীশবাবুর বাড়ির সামনে এসে দাঁড়াল তখন সুর্য ডোবে ডোবে ।সতীশবাবু বাড়ির বাইরে থেকেই হাঁক পাড়লেন ---কইগো ? আমি এসে গেছি । শিখা মা ----কোথায় তুমি ?

সতীশবাবুর কথা তখনো শেষ হয়নি । বাড়ির ভেতর থেকে ভারি সুন্দর মুখের এক ঢলো ঢলো লাবণ্যের বন্যা বেরিয়ে এল । অন্তত শঙ্করের তেমনি মনে হল ।এত সুন্দর মেয়ে সে আগে কখনো দেখেছে বলেই মনে পড়েনা ।

---বাবা ---
বলেই সেই সুন্দরী এগিয়ে এসে সতীশবাবুর বুকে মাথাটা গুঁজে দিল ---এবার কতদিন পরে এলে বাবা !
--ইচ্ছে করে কি দেরি করে আসি মা ? মকদ্দমার কাজ থাকে যে !

কিশোরী এবার মুখ ঝুলিয়ে বলে ---আর আমার যে মন খারাপ হয় তার বেলা ?

একটু ভারি সারি দেখতে এক মহিলা ততক্ষনে এগিয়ে এসেছিলেন ---শিখা সর মা । বাবাকে ঘরে ঢুকতে দে আগে ।ওমা তোমার সঙ্গে এটি কে গো ?

শিখা ততক্ষনে বোধহয় শঙ্করকে দেখতে পেয়ে থাকবে কিন্তু তার স্বভাবে অকারণ লজ্জা পাওয়ার ব্যাপারটি নেই বলেই মনে হল । আর এসব পাড়াগাঁয়ে ছেলেমেয়েরা মাঠেঘাটে পাল্লা দিয়ে ছুটোছুটি করে খেলাধুলা করে বড় হয় । অকারণ লজ্জা পাওয়ার ব্যাপারগুলি তাদের মধ্যে সেভাবে জাগ্রত হয়না হয়ত । শিখা এক পাশে গিয়ে দাঁড়াল । সতীশবাবু সঙ্গের বাক্সটি বাড়ির সবসময়ের কাজের লোক রাখালের হাতে দিয়ে বললেন ---আরে এর নাম শঙ্কর । আমার ছেলে বেলার বন্ধু হারাণের ছেলে । আমি দেখতে পেয়ে সঙ্গে করে নিয়ে এলাম । ভাবলাম তুমিও শঙ্করের সঙ্গে আলাপটা সেরে নাও ।

স্বামী স্ত্রীর চোখে চোখে নীরবে কিছু কথা হয়ে গেল । সতীশবাবুর স্ত্রী সস্নেহে জিজ্ঞেস করলেন ---তোমার নামটি তাহলে শঙ্কর । তাইতো ?
---আজ্ঞে না খুড়িমা । আমার পুরো নাম জয়শঙ্কর মিত্র ।
--বাহ। বোস বাবা । এতটা পথ এলে । দুটো মুখে দাও । ঘরে তৈরি নাড়ু মুড়কি আছে । খাও বসে ।
সতীশবাবু বাদ সাধেন –আরে ওসব তো সব বাড়িতেই থাকে । আমি বাগবাজারের নবীন ময়রার রসগোল্লা এনেছি । ওই নাগরীতে আছে । ঐ গোটা কত দাও ওকে ।শিখাকেও দাও । ঘরের মেয়ে বলে ওকে পরে দিলে হবেনা । শঙ্কর আর শিখা একসঙ্গে বসে নবীন ময়রার রসগোল্লা খাক ।

সতীশবাবু ভেতর বাড়িতে যান । হাত মুখ ধোবেন । জামা কাপড় ছাড়বেন । কিছু মুখে দেবেন । তারপর শঙ্করকে পৌছাতে যাবেন জয়নগরে । গরুর গাড়িকে দাঁড় করিয়ে রেখেছেন তিনি । আসল কথাটা হল এই যে বন্ধু হারাণের সঙ্গে সতীশবাবুর অনেক দিন থেকেই কথা হয়ে আছে । ছোট মেয়ে সোমশিখাকে তিনি হারাণের একমাত্র ছেলে শঙ্করের হাতে দেবেন । বড় দুই মেয়ের বিয়ে ভিন রাজ্যে দিয়ে অবধি বড় মনকষ্টে আছেন সতীশবাবু ও তাঁর স্ত্রী । মেয়েরা বিয়ের পরে একবারের বেশি বাপের বাড়ি আসার অনুমতি পায়নি । হয়ত শ্বশুরবাড়িতে সুখেই আছে তারা কিন্তু তাতে বাপ মায়ের মন মানে কই ? এসব কারনেই সোমশিখাকে মজিলপুরের পাশের গ্রাম জয়নগরেই বিয়ে দিতে চান তিনি । বন্ধু হারাণচন্দ্রের ছেলেটিও চমৎকার । অতএব বিয়ে হতে কোন বাধা নেই এখানে । তবে কথাটা বড়দের মুষ্টিমেয় জনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে এখনো অবধি । সতীশবাবু হারাণচন্দ্র ও দুই বাড়ির দুই গিন্নি ছাড়া এই মহৎ সত্য আর কারো কর্ণগোচর হয়নি এখনো । সতীশ এবারে অনেকদিন পরে হারাণের ছেলেটিকে দেখলেন । দেখে তাঁর চোখ জুড়িয়ে গেছে। এবং তিনি স্থির নিশ্চিত যে তাঁর স্ত্রীরও ভাবী জামাইকে বিলক্ষণ পছন্দ হয়েছে ।

বয়সে শিখা ও শঙ্কর এক বয়সী বলেই মনে হয় ।কিন্তু তাতে কি ? বরং বয়সের ব্যবধান না থাকায় স্বামী স্ত্রীর সখ্যতা আরো বাড়বে । সতীশবাবু স্থির করলেন যে আজই হারাণের বাবা শ্রী বিরামচন্দ্র মিত্রকে কথাটা বলে ব্যাপারটা পাকা করে নেবেন । আর বলতে কি , শুভস্য শীঘ্রম ।।

ওদিকে শঙ্কর ও শিখা একসঙ্গে বসে রসগোল্লা খেতে খেতে গল্পে মেতে গেল

--তুমি এই রকম রসগোল্লা আগে কখনো খেয়েছ ?
রসগোল্লা দূরে থাক ।শঙ্কর এত ভাল স্বাদের কোন খাবার আগে কখনো খায়ই নি । সে বলল
---নাতো
শিখা হাসল --- বাবা কলকেতা থেকে আসার সময় আনেন । ভাল মিষ্টি ল্যাবেঞ্চুস মেম পুতুল আনেন আমার জন্য আর মায়ের জন্য আনেন গরম জামা বোনার পশম । ঠাকুমার জন্য আনেন ----
শঙ্কর গ্রামের ছেলে । গ্রামেই বড় হয়েছে সে । তার বাপ দাদাও কখনো কলকাতা যায়না । কাজেই কলকাতা সম্পর্কে তার একটা সহজ সরল আগ্রহ রয়েই গেছে ।সে মন দিয়ে শিখার কথা শুনতে লাগল । সে জানল যে শিখা ইস্কুলে না গেলেও বাড়িতে অনেকদূর অবধি পড়েছে । মুগ্ধবোধ ব্যাকরণ কুড়ি ঘর অবধি নামতা যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ সব সে জানে । এমনকি সে ইংরাজীও জানে । সে সিলেবল ভেঙে ইংরাজি বানান করতে পারে । জয়নগর অঞ্চলের শুকদেব ভটচায্যি ইংরাজির মাস্টারমশাই এসে তাকে বাড়িতে পড়িয়ে যান । তার দুই দিদিও লেখাপড়া কিছু শিখেছে ।
 
শঙ্কর এত সব শুনে বলল --- বাঃ তুমি তো অনেক জানো । আমাদের এদিকে আর কোন মেয়েকে এত লেখাপড়া করতে দেখিনা ।

শিখা ঠোঁট বেঁকিয়ে বলল ---আহা বিদ্যাসাগর মশাই যে বলে দিয়েছেন । সব মেয়েদের লেখাপড়া শিখতে হবে ।লেখাপড়া না শিখলে মেয়েরা অন্ধকারে পড়ে থাকবে ।

শঙ্কর চমৎকৃত হয়ে বলল --- বিদ্যাসাগর মশাইয়ের কথা তুমি জানলে কিকরে ?

শিখা গর্বের সঙ্গে বলল ---অনেক জানি । আমার বাবা সব বলেন । বিদ্যাসাগর , ব্রাহ্মসমাজ , কলকেতার থিয়েটার , হিন্দু কলেজ , হাওড়া ইষ্টিশন সব কিছুর কথা জানি আমি ।
----আর হাইকোর্ট ?
---ওটা তো জানিই । আমার বাবা ওখানে উকিল যে !
শঙ্করের অজ্ঞতা দেখে শিখা হাসে ।শঙ্করও হারেনা । সে তার বইতে পড়া নানা চমকপ্রদ গল্প উৎসাহভরে শোনাতে থাকে । ক্রমশ চোদ্দবছুরে কিশোরীটি চুপ করে এবং হাঁ করে পনের বছরের কিশোরটির মুখের দিকে তাকিয়ে গল্প শুনতে থাকে ।

আড়াল থেকে সতীশবাবুর বউ স্নেহলতা সস্নেহে চেয়ে থাকেন এই যুগলের দিকে ।কিছুক্ষণ পরে সতীশবাবু এসে হাঁক দেন -----এবারে বাড়ি যেতে হবে বাবা । চল তোমায় দিয়ে আসি ।

জয়শঙ্কর মিত্রকে বাড়ি পৌঁছে দিতে হবে ? শঙ্করের মানে লাগে । সে তড়িঘড়ি বলে
---আজ্ঞে আমি একাই বাড়ি চলে যেতে পারব । মদনখুড়ো তো আছে । আপনি বরং বিশ্রাম নিন খুড়োমশাই ।

অন্য ছেলে হলে সতীশবাবু নিশ্চিত তাকে বলে বসতেন ---থাম তো হে ছোকরা ---কিন্তু এখানে সে কথা মনেই হলনা । হাজার হোক ভাবী জামাই বলে কথা ! সতীশবাবু সস্নেহে বললেন
---আচ্ছা চল তো এখন । আমিও তোমার বাবার সঙ্গে দেখাসাক্ষাতটা সেরে আসি ।

সোমশিখার মধ্যে অকারণ জড়তা নেই । আর তার বাবা মা তাকে তেমন করেই বড় করে তুলেছেন । তাই সে শঙ্কর চলে আসার সময় সহজ সুরেই বলল ---আবার এসো ।
 
সতীশবাবু হাসিমুখে বললেন ---আসবে আসবে ।আসতে ওকে হবেই ।

শঙ্করদের বাড়িতে পৌঁছাতেই সাদর অভ্যর্থনা জুটল ।দুই বন্ধুতে অনেকদিন পর জমিয়ে গপ্পগাছা হতে হতে সতীশবাবু আসল কথাটা পেড়ে বসলেন
------তোমার ছেলেকে আজ অনেকদিন পর দেখলাম হারাণ । খুব ভাল ছেলে তোমার । আমার মেয়ে শিখার জন্য তো সেই কবে থেকে তোমার ছেলেকে চেয়ে রেখেছি । এখন ওরা একটু বড় হয়েছে । বর্তমান আইনে চোদ্দ বছরের মেয়েকে বিয়ে দেওয়া চলতে পারে । তাই ভাবছিলাম তুমি যদি মত করো তো বিয়েটা লাগিয়ে দিতে পারি ।

হারাণ কিন্তু কিন্তু করে বলে
---- ভাই সতীশ তোমার মেয়েকে বউমা হিসেবে ঘরে নিতে আমি একশো ভাগ রাজি । সবদিক থেকে যোগ্য মেয়ে তোমার কিন্তু আমার ছেলে শঙ্কর এখনো বড় ছোট ।এই গ্রামে ওর কদ্দুর কি লেখাপড়া হবে জানিনা । এখন তুমি যদি এই বাউন্ডুলে ছেলের হাতে তোমার মেয়ে দাও তো আমি আর কি বলব ।

সতীশ উকিল হুঙ্কার ছাড়লেন
---কে বলে জয়শঙ্কর অযোগ্য ? আমি তাকে আমার মেয়ের যোগ্য করে নেব । তোমাদের মত নিয়ে ওকে এবার আমি কলকাতায় নিয়ে যাব । হিন্দু স্কুলে ভর্তি করে দেব । ভাল ভাল শিক্ষকের কাছে পড়াব । ও এন্ট্রান্স পাস দেবে । তারপর ওর সঙ্গে কথা বলে ও যেমন পড়তে চায় আমি ওকে তেমনিভাবেই এগিয়ে দেব । ইচ্ছে হলে ও প্রেসিডেন্সি কলেজে পড়তে পারে ।মেডিক্যাল কলেজেও পড়তে পারে ।

হারাণ আবার কিন্তু কিন্তু করে
-----এত খরচা আমি তো চালাতে পারবনা ভাই
---কে বলেছে তোমাকে চালাতে ? আমি আমার নিজের স্বার্থে মেয়ের স্বার্থে তোমার পরিবারের স্বার্থে ছেলেটাকে তৈরি করার একটা সুযোগ চাইছি ভাই ।
হারাণ এবার হাসে
 
---তাহলে আমি আর কি বলব ? বাবা হয়ত এখনো জেগে আছেন । চল ওঁর মতটা নিয়ে আসি চল ।
হারাণের বাবা বিরামচন্দ্র মিত্তিরও আপত্তি করলেননা । দুই পরিবারের সকলের সম্মতিতে বিরাট ধূমধাম করে সতীশ ঘোষের ছোট মেয়ে সোমশিখার সঙ্গে হারাণ মিত্তিরের একমাত্র ছেলে জয়শঙ্করের শুভ বিবাহ হয়ে গেল । জয়নগর ও মজিলপুর অঞ্চলের একটি লোকও নেমন্তন্ন পেতে বাকি রইলনা ।
শঙ্কর যেদিন শিখাদের বাড়ি গেছিল সেদিনের পর শিখার সঙ্গে তার আর দেখা হয়নি । তাদের দুজনের বিয়ে হবে এই কথা শুনে দুজনেই প্রথমটা খুব ঘাবড়ে গিয়েছিল । তবে সেই প্রথমদিনের আলাপের মধুর আনন্দময় স্মৃতি তাদের দুজনকেই কিছুটা আশ্বস্ত করেছিল । মনে মনে দুজনেই দুজনকে মেনে নিয়েছিল ।

ফুলশয্যার রাতে তাদের দুজনের যে রকম কথা বার্তা হল তা এই রকম
-------ইস সেজে গুজে কেমন কাপড়ের পুঁটুলি হয়ে আছে দেখ
---ইস নিজে যে ধুতি পরে বর সেজে বসে আছে !
---এবাবা আমি তো বরই । আজ থেকে আমি তোমার বর জানোনা ?
---জানিতো ।
----তাহলে বলছ যে ?
---বলছি কারণ তোমাকে একটুও মানাচ্ছে না। তুমি যেমনিভাবে আমাদের বাড়ি প্রথমবার এসেছিলে তেমনিভাবেই তোমাকে সবচে ভাল দেখায় ।

---কক্ষনো না । আমাকে সব সময় খুব ভাল দেখায় । আমার ঠাকুমা ন পাড়ার ফুল দিদা আর আমার মামার বাড়ির দিদিমা আমাকে কতবার বিয়ে করতে চেয়েছে । আর আমার রাঙা কাকিমার জা তো কতবার বলেছে -----
---কি বলেছে ? কি বলেছে ?
---বলেছে যে খুড়ি আমার তো মেয়ে নেই নইলে এই ছেলেটাকে আমার জামাই করতাম ----
---যাওতো---
শিখা মুখ ঘুরিয়ে বসে ।
----আহা রাগ কর কেন বউ ?
----কি বললে তুমি ?
----যা শুনলে তাই ।
---তুমি আমায় বউ বলে ডাকবে ?
---হু। আর তুমি আমায় কি বলবে ?
শিখা এবার কি এক অজ্ঞাত কারণে লজ্জা পায় । লজ্জা পাওয়া তার স্বভাববিরুদ্ধ । সে গাল লাল করে বলে
----মা যেমনি করে বাবাকে বলে দিদিরা যেমন করে জামাইবাবুদের বলে আমিও তেমনি আস্তে করে বলব---
-----কি বলবে বলো
শঙ্কর হঠাত ভীষণ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়ে । তার চোদ্দ বছরের বউয়ের মুখের খুব কাছে সরে এসে বলে ---বলো না–
শিখা চোখ বুজে বলে ----ওগো শুনছ ---
শঙ্কর শিখার গলা জড়িয়ে ধরে ---শিখাও শঙ্করের ----
রাত্রি শেষ হয় । ছেলেটি এবং মেয়েটি দুজনেই মনের দিক থেকে একটু বড় হয়ে যায় ।

পরবর্তী পনেরো দিন এই যুগল এবং তাদের সমস্ত পরিবার আনন্দ সাগরে ভাসতে থাকে ।শিখার মত লক্ষ্মীমন্ত বউ পেয়ে হারাণ মিত্তিরের বাড়ির সকলেই ভারি খুশি । ষোল দিনের দিন সতীশবাবু নতুন জামাইকে সঙ্গে করে কলকাতায় রওনা দিলেন ।ঠিক হল শিখা বাপের বাড়িতে থাকবে । মাঝে মধ্যে শ্বশুরবাড়িতে এসেও থাকবে ।

যাওয়ার দিন শঙ্কর একটু কাঁদল , শিখাও । শঙ্করের স্কুলের বন্ধুরা অনেকেই দেখা করতে এল । শঙ্করের ভাগ্য দেখে অনেকেই হিংসেয় জ্বলে মরল । সুন্দরী বউ পয়সাওলা শ্বশুর কলকাতায় পড়তে যাওয়া সব পেল ছেলেটা ।লাস্ট বেঞ্চের তিনকড়ি বলল ---সালা সউরের পয়সা দেখাচ্ছে । আমাদেরও যদি অমন রূপের বাহার থাকত আমরাও অনেক কিছু করে ফেলতাম ।

তিনকড়ির পাশে দাঁড়িয়ে থাকা অপরেশ বলল -------অমন করে বলিস না। শঙ্কর চলে গেলে আমাদেরও কি দুঃখ হবেনা বল ?

তিনকড়ি কোনদিনই দেখতে ভাল নয় ।শঙ্কর ভাল দেখতে বলে সে বরাবর শঙ্করকে হিংসে করত । এখন কোন কথা না বলে বিচিত্র মুখভঙ্গি করল ।
রেলগাড়িতে করে কলকাতায় আসাটা দারুন উপভোগ করল শঙ্কর । আহা এই রেলগাড়ি দেখবার জন্য সে কতবার রেলস্টেশনে এসে দাঁড়িয়ে থাকত । আজ সে নিজেই সেই রেলগাড়িতে চাপার সুযোগ পেল !

কলকাতায় এসে কটা দিন স্বপ্নের মত কেটে গেল ।সোমশিখার মুখে সে কলকাতার যা যা বিবরণ শুনেছিল সে সবই সত্যি হয়ে তার বিস্মিত চোখের সামনে এসে উপস্থিত হল । বিস্ময়ের ঘোর ভাঙতে কটা দিন লাগল । তারপর সতীশবাবু তাকে ডাকলেন। সে এখনও সতীশবাবুকে কিছু সম্বোধন করতে পারেনা ।লজ্জায় চুপ করে থাকে শুধু ।

সতীশবাবু বললেন
---আমি হিন্দু স্কুলে কথা বলে এসেছি । তোমার স্কুলের মার্কশিট ওঁদের দেখিয়েছি । ওঁরা খুশি হয়েছেন । কাল তোমাকে স্কুলে ভর্তি করে দিয়ে আসব ।

স্কুলে ভর্তি হয়ে তার জীবন ও জগত আশচর্যভাবে বদলে গেল । তার ভাবনা চিন্তা বদলে গেল । চিন্তার জগত প্রসারিত হল আর নানান ছেলের সঙ্গে আলাপ পরিচয় হয়ে তার চেনা জানার পরিধিটাও মস্ত হয়ে গেল । লেখাপড়ায় সে বরাবর ভাল । গ্রামে থাকতে ততটা মনোযোগী ছিলনা কিন্তু হিন্দু স্কুলের পরিবেশ তাকে নতুন করে গড়ে দিল ।তার লেখাপড়া চলতে লাগল সমতালে ও দুরন্ত গতিতে ।
 
লেখাপড়া ও কলকেতায় পাওয়া নতুন জগত তাকে বার বার ভাঙল ও গড়ল কিন্তু এ সবের মাঝমধ্যিখানে পদ্মের মত প্রস্ফূটিত হয়ে রইল একখানি মুখ। শিখা এখন বাপের বাড়িতে রয়েছে। অতএব চিঠি লেখায় বাধা নেই । শঙ্কর প্রায়ই লম্বা লম্বা চিঠি লিখে মজিলপুরে তার শ্বশুরবাড়ির ঠিকানায় পোস্ট করতে শুরু করল । প্রেমের কথা নয় । প্রতিদিনের নানান অভিজ্ঞতায় ভরে ওঠা জীবনের ঝুলি উপুড় করে দেয় সে তার প্রেয়সীর কাছে ।ওদিক থেকেও এক আধটা উত্তর আসে । তাতে থাকে নানান সাবধানবাণী আর কলকেতার মেয়েদের ফাঁদে না পড়ার উপদেশ ।শঙ্করের হাসি পায় । যার দুই চোখ ভরে আছে সোমশিখার ভালবাসায় তার কি করে অন্যদিকে চোখ পড়বে ?এই বোকাটা সেসব বুঝলে তো ?
এন্ট্রান্স পরীক্ষার আর বেশি বাকি নেই । মেয়ের মনোভাব বুঝে সতীশবাবু নিজেই একদিন বললেন
----একবার বাড়িতে ঘুরে আসবে নাকি বাবা ? অনেকদিন বাড়ি যাওনি ।
শঙ্করের প্রবল ইচ্ছে হল যে সে হ্যাঁ বলে কিন্তু কি ভেবে সে বলল
---আজ্ঞে এন্ট্রান্সের পরেই যাব একবারে ।
---আচ্ছা । আমি তাহলে সেইমত বাড়িতে লিখে দিচ্ছি ।


শঙ্কর ঘর থেকে বেরিয়ে এল কিন্তু তার সমস্ত মন মজিলপুরে পড়ে রইল । তার খুব ইচ্ছে হল যে সে এক্ষুনি সোমশিখার কাছে দৌড়ে চলে যায়। তারপর তারা দুজনে হাত ধরাধরি করে চাঁদের আলোয় পিয়ালী নদীর তীরে গিয়ে বসে। ফুল শয্যার রাতে সে শিখাকে আদর করে চুমু দিয়েছিল কিন্তু বৌ তাকে চুমু দেয়নি । একটু চাপাচাপি করতে না করতেই রাত ভোর হয়ে গেছিল । পিয়ালী নদীর তীরে বসে বৌয়ের কাছ থেকে সেই চুমুগুলো আদায় করে নিতে হবে ।

তারপর ----
এইসব ভাবতে ভাবতে ক’টা দিন স্বপ্নের মধ্যে দিয়ে গেল । শেষটায় শঙ্কর আর থাকতে পারলনা । একরাতে কাউকে কিছু না বলে সে রাতে ট্রেন ধরে গভীর রাতে জয়নগর রেল স্টেশনে গিয়ে নামল । হয়ত এখন রাত এগারোটা হবে কিন্তু গ্রামগঞ্জে সেই নিশুতি । প্রায় ফাঁকা ট্রেন থেকে একজন যাত্রীই রেল স্টেশনে নামল সেদিন ।সাদা ফটফটে জোছনায় চেনা পথ ধরে দৌড়াতে দৌড়াতে হাঁপাতে হাঁপাতে রাত প্রায় একটা নাগাদ সতীশ উকিলের বাড়ির চেনা জানালাটায় গিয়ে মৃদু টোকা দিল শঙ্কর । স্বাভাবিকভাবেই কেউ উঠলনা । রাতে্র আমেজ গায়ে মেখে গোটা গ্রাম ঘুমিয়ে কাদা । শঙ্কর জানে যে এই ঘরে শিখা ঘুমায় । তার পায়ের কাছে শুয়ে থাকে এই বাড়ির দাসি ।দুই একবার ডাকাতেও যখন কেউ উঠলনা তখন শঙ্কর আগেই খুঁজে রাখা এক গর্ত দিয়ে ভেতরে চোখ ফেলে শিখাকে খুঁজল ।

গরমকাল। বাড়ির পুরনো দাসির সামনে যথেষ্ট ঢিলে ঢালা হয়ে শুয়েছে শিখা । পরণের কাপড় উর্ধাংগ থেকে সরে গেছে। নিম্নাঙ্গের কাপড় সরে পায়ের পুরুষ্টু গোছ পরিদৃশ্যমান । ঘরের ভিতরে উঁকি দিতে গিয়ে যে এমন দৃশ্য উন্মোচিত হবে তা কে জানত !বেশ কিছুক্ষন তার শরীর মনে কোন সাড় রইলনা । অর্ধনগ্ন অপরূপ এক নারী শরীর ! সুষুপ্তি মগ্ন শরীরটি নিঃশ্বাসের তালে তালে উঠছ পড়ছে ।সেই ওঠাপড়ার সামনে দাঁড়িয়ে সতের বছরের প্রায় যুবকটির অর্ধোন্মাদ দশা ঘটল । সে তখন কি করছিল কি বলছিল কে জানে ! কিন্তু একটু পরেই তার সম্বিত ফিরল । শিখা কখন বাইরে বেরিয়ে এসেছে আর এসেই তাকে পিছন দিক থেকে দুই হাতের বাঁধনে বেঁধে ফ্বেলেছে ! কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলছে
---আসবে বলনি কেন ?
শঙ্কর চমকে তাকাতেই দেখল যে শিখা কখন তার বেশবাস ঠিক করে ঘর থেকে বেরিয়ে পড়েছে ! শঙ্কর বৌয়ের কথার কোন উত্তর দিলনা । আসলে উত্তর দেওয়ার পরিস্থিতি ছিলনা তার । শিখা কি বুঝল কে জানে । উৎফুল্ল হয়ে বলল
---ইস আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে! তুমি কি ও বাড়িতে এসেছ ? থাকবে ? তাহলে আমাকে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা কর শঙ্কর এতক্ষনে ধাতস্থ হয়েছে । বলল
---আমি কোন বাড়িতেই আসিনি ।
---তার মানে ?
---আমি শুধু আমার বৌয়ের সঙ্গে দেখা করব বলে কলকেতার বাড়ি থেকে রাতের বেলা পালিয়ে ট্রেনে চেপে এখানে এসেছি । আবার সকালে প্রথম ট্রেন ধরে কলকেতায় ফিরে যাব । কাকপক্ষী টেরটি পাবেনা ।
শঙ্কর হাসে । শিখা গালে হাত দিয়ে বলে
---আর বাবা যদি সেখানে তোমার খোঁজ করেন তখন তোমাকে না পেলে কি হবে ভাবতে পার ?
---কেউ খুঁজবেনা । আর এইটুকু ঝুঁকি তো নিতেই হবে নইলে বৌয়ের সঙ্গে গপ্প করব কখন ?
সেদিন রাতে আর পিয়ালী নদীর ধারে যাওয়া হয়না কিন্তু ঝোপের ধারে বসে সারা রাত অজস্র না বলা কথা বলে ফেলে এই দুজন ।শঙ্কর তার বৌকে অসংখ্য বার চুমো দেয় আর শিখাও তার বরকে সেগুলি ফিরিয়ে দেয় । ঠিক হয় যে এন্ট্রান্স পরীক্ষার পরে শিখা গিয়ে কলকেতায় একমাস থাকবে আর সতীশবাবুর সাহায্য ছাড়াই এই যুগল কলকেতার নানান দর্শনীয় স্থান দেখে বেড়াবে । আগামী দিনগুলির কল্পনায় উচ্ছল হয়ে ওঠে ওরা ।ভোরের বেলা শঙ্কর একাই স্টেশনে ফিরতে চাইছিল কিন্তু এইটুকু সময়ও যেন বরকে ছাড়তে আপত্তি শিখার । তাই শিখা তার বরকে স্টেশনে পৌঁছিয়ে ট্রেনে চাপিয়ে দিয়ে তবে বাড়ি যেতে পারল । দুজন দুদিকে চলে যাওয়ার সময় দুজনের চোখেই জল ছিল কিন্তু আগামী দিনগুলির মধুর কল্পনায় দুজনেই চোখের জল মুছে নিচ্ছিল ।


এন্ট্রান্স পরীক্ষা শুরু হতে আর মাত্র পনেরো দিন বাকি ছিল । সেই রাত্রিতে শঙ্করের বাড়ি থেকে পালাবার কথা সতীশ উকিলের কড়া নজর অতিক্রম করতে পারেনি কিন্তু অভিজ্ঞ মানুষটি ভালই বুঝেছিলেন যে জামাতা বাবাজীবন কোথায় যেতে পারে । তাই তিনি সস্নেহে অবজ্ঞা করেছিলেন ব্যাপারটিকে । কলকেতার বাসাবাড়িতে জামাতাকে পুত্রস্নেহে পালন করছিলেন তিনি । বলেছিলেন
----এন্ট্রান্স পরীক্ষার প্রথমদিন আমি সঙ্গে করে নিয়ে যাব কেমন বাবাজী ।
কিন্তু কি এক অজ্ঞাত কারণে পরীক্ষার আগের দিন জামাতাকে কিছু না বলেই তিনি হঠাত কোথায় চলে গেলেন । কোথায় গেলেন চাকরটাকেও বলে যাননি । কবে আসবেন তাও সে জানেনা ।শঙ্কর ভাবল হয়ত তিনি কোন জরুরি মকদ্দমার কাজে গেছেন । তাড়া থাকায় কাউকে কিছু বলতে পারেননি । যাহক শঙ্কর ভালোভাবে পরীক্ষা দিল এবং পরীক্ষার পর তার আর তর সইছে না বলে সে চাকরটাকে বলে সেই দিনই দেশের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিল । আবার সেই রাতের ট্রেন এবং নিশুতি রাতে জয়নগর স্টেkশনে নামা । সেদিনও যাত্রী মাত্র একজনই ।

শঙ্কর কোন দিকে না তাকিয়ে ছুটে মজিলপুরে তার শ্বশুরবাড়ির দিকে যাচ্ছিল । পথ যেন আর ফুরোয়না কিন্তু শঙ্কর তার আনন্দ দিয়ে পথের কষ্ট লাঘব করে । তারপর একসময় কাঙ্খিত বাড়িটিতে পৌছেই গেল সে । তবে বাড়িটির সামনে এসে দাঁড়ানো মাত্রই বুকের মধ্যে কেমন এক চাপ অনুভব করল সে । যেন এক অলঙ্ঘনীয় শূন্যতার পাহাড় তার পথ রোধ করে দাঁড়াচ্ছে । সে শূন্যতার আকার প্রকার নেই । শুধু অস্তিত্ব আছে । গভীর রাতের নিশুতি আঁধারে শুধু মাত্র আদরিণীকে কাছে পাওয়ার আকাঙ্খায় আকুল কিশোরটি এই অবিকল্প শূন্যতার সামনে দিশেহারা হয়ে গেল । জানলায় টোকা দিয়ে ফিস ফিস করে ডাকল
---বউ
অমনি হালকা হাওয়ায় খুলে গেল জানালার কবাট। ভেতরে শুয়ে আছে সোমশিখা । জয়শঙ্করের বৌ । গায়ে কোন বসন নেই । এমনকি একটি সুতোও নয় । অপরূপ সুন্দর এক ষোল বছরের তন্বী । চোখ বন্ধ করে শুয়ে রয়েছে ভেতরে । ঐ নারীটি তার নিজের । সে চাইলে এখনি ঐ শরীরের দখল নিতে পারে । কিন্তু যে নারী একান্তভাবে তারই সেই নারীকে কেন সে দখল করবে ? বরং দূর থেকে প্রাণভরে তাকে একটুক্ষণ দেখবে সে । এই অপার্থিব রূপকে সোহাগে যতনে ভরিয়ে তোলার দায়িত্ব যে একান্তভাবে তারই ।
কতক্ষণ এভাবে গেল কে জানে ! ভোরের দিকে তার পিঠে কে হাত রাখতে সে চমকে উঠে পিছনে তাকাল । তার শ্বশুর মশাই সতীশবাবু সেখানে দাঁড়িয়ে আছেন। ভাঙাচোরা সর্বহারা চেহারা ।
------শিখাকে খুঁজছ ?
শঙ্করের মুখে সহসা কোন কথা যোগালোনা । সে চুপ করে ঘরের ভিতরে চাইল । সকাল হয়ে গেছে । শিখা কি এখনো আলুথালু হয়েই থাকবে ?
কিন্তু ঘরের ভিতরে কেউ নেই । যে বিছানাটার উপরে শুয়ে থাকা শিখাকে সে এতক্ষন মুগ্ধ দৃষ্টিতে দেখছিল সেই বিছানাটি ফাঁকা । শয্যাটি টানটান করে পাতা । শুধু আজ কেন ? ওই শয্যা দেখে মনে হচ্ছে যে গত পনেরোদিনেও ওখানে কেউ শোয়নি ।বিছানার ওপর হাল্কা ধুলোর একটা স্তর ।শঙ্কর অবাক হয়ে সতীশবাবুর মুখের দিকে চাইল।

----বাঁচাতে পারলামনা বাবা ।তোমার পরীক্ষা শুরু হচ্ছে বলে তোমাকে আর বিরক্ত করলামনা । মেয়েটার শরীর খারাপ শুনে একাই দেশের বাড়িতে চলে এসেছিলাম। খুব জ্বর হয়েছিল মেয়েটার । কোন কিছুতেই যখন জ্বর আর নামলো না শহর থেকে বড় ডাক্তার আনতে লোক পাঠালাম । সাহেব ডাক্তার ডাঃ হেনরিকে নিয়ে গোরুর গাড়িটা সবেমাত্র মজিলপুরের দিকে বেঁকেছে , শিখা মায়ের প্রাণটা বেরিয়ে গেল । ডাক্তার ফিজ না নিয়ে ফিরে গেল । আমি যে কি বলি তোমায় বাবা ????
সতীশবাবুর হাহাকারে সচকিত হল প্রকৃতি । ভোরের কাকগুলো অবধি এদিক সেদিক উড়ে গেল । একবারও ডাকলনা ।

সেই নিশুতি রাতের দৃশ্য থেকে শুরু করে আজ এখন সতীশবাবুর বলা কথাগুলি শঙ্করের অস্তিত্ব নড়িয়ে দিচ্ছিল । সে ঐ চৌহদ্দি থেকে পালাতে চাইছিল । শিখা তাকে এমনভাবে ছেড়ে গেল !! শেষটায় সে পাগলের মত সতীশবাবুর বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল । কোথায় যাবে সে ? এখানে যাওয়ার মত একটিই জায়গা আছে আর তা হল নিজের বাড়ী । কিন্তু এখন তার কারো সঙ্গে কথা বলতে ভাল লাগবেনা । কারো সংগ বিষের মত ঠেকবে । তবু একটি নিরাপদ আশ্রয়ের ঘেরাটোপে মাথা গুঁজে অনেক অনেকক্ষণ পড়ে থাকতে ইচ্ছে করছিল আর তাই সে কোনমতে খোঁড়াতে খোঁড়াতে নিজের জয়নগরের বাড়িতে এসে পৌছাল । তাকে দেখে প্রথমে দৌড়ে এল তার মা বাবা । তারপর ঠাকুর্দা ঠাকুরমা আরো সকলে । কান্নাকাটির পালা সাঙ্গ হলে সে ঘরে গিয়ে দোর দিল । দুপুরে কিছু খেলনা ।

সন্ধেতে সতীশবাবু এলেন । এই কদিনে যা হোক করে একটু সামলে নিয়েছেন তিনি । বললেন
----ভাই হারাণ শিখা চলে গেছে বলে শঙ্করের লেখাপড়ার যে ভার আমি নিয়েছি সে ভার আমি একইভাবে বহন করে যেতে চাই । তোমরা এতে কোন আপত্তি করতে পারবেনা । শঙ্কর আমার জামাই ভাব জামাই বন্ধুপুত্র ভাব বন্ধুপুত্র । মোদ্দা কথা ও আমার আপনার জন । ও যেমন আমার কাছে কলকেতায় ছিল তেমনিই থাকবে লেখাপড়া করবে ।

মনের এই ভেঙে পড়া পরিস্থিতিতে সতীশবাবুর কথাটা শঙ্কর লুফে নিল । তার বাবা ও ঠাকুর্দা একটু কিন্তু কিন্তু করলেও সে যে কোন উপায়ে এই জয়নগর মজিলপুরের পরিবেশ থেকে পালিয়ে যেতে চাইছিল । কলকেতায় আর যাই হোক সোমশিখার স্মৃতি তাকে তাড়া করে ফিরবেনা ।

তবে কলকেতায় গিয়েও আগের মত লেখাপড়ায় মন বসলনা তার । এফএ পাস দেওয়ার জন্য ভর্তি হলেও সে ইস্কুল থেকে নাম কাটিয়ে নিয়ে সতীশবাবুর জানাশোনা এক সাহেবি আপিসে কনিষ্ঠ কেরানির কাজ জুটিয়ে নিল সে ।ইচ্ছে হলে দেশের বাড়ি যায় নইলে মাসের পর মাস যায়না । কলকেতায় একা থাকতে থাকতে মদ্যপানের অভ্যেসটাও পাকা হয়ে উঠছিল। সব দেখে শুনে বৃদ্ধ অভিজ্ঞ উকিল সতীশবাবু মনের কষ্ট মনেই রেখে দিয়ে একদিন বাল্যবন্ধু হারাণকে বললেন
--- আমার মেয়ে চলে গেছে তা আজ প্রায় আট ন বছর হল । ছেলেটার আবার বিয়ের ব্যবস্থা কর ভাই । নইলে ছেলেটাকে আবার হারাতে না হয় ।
কলকেতার চাকুরে ছেলের পাত্রীর অভাব হলনা । শঙ্করের মা নিজেই ভবানী বলে একটি সুন্দরী মেয়ের সন্ধান আনলেন ।শিখার সঙ্গে সুখস্মৃতি শিখা মারা যাওয়ার পরের অত্যদ্ভুত স্মৃতি সবই আজ ফিকে । তবু শঙ্কর এই বিয়ে করার ব্যাপারে প্রথমটা আপত্তি জানাল।কিন্তু কদিন পরে নিস্পৃহভাব দেখিয়ে টোপর পরে বিয়ে করতে চলে গেল ।
এই পর্যন্ত সব ঠিক ছিল ।
সমস্যা শুরু হল শঙ্করের বৌভাতের দিন থেকে । নতুন বৌ ভবানী বয়সে এই আঠারো উনিশ হবে । সুন্দরী এবং অতি মাত্রায় শরীর সচেতন । সবসময় সে যেন তার শরীরটিকে পুরুষের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসার জন্য উদগ্রীব হয়েই আছে । ফুলশয্যার দিনটিতে স্বামীর বক্ষলগ্না হতে সে একমুহূর্ত বিলম্ব চাইছিল না । শঙ্কর কিছু বলার বা ভাবার আগেই সে এগিয়ে এসে স্বামীর বুকের মধ্যে মুখখানি ডুবিয়ে দিয়েছিল। রতিক্রীড়ার যে কটি কৌশল সে তার এই অল্প বয়সে জানে তার সব কটি সে একে একে প্রয়োগ করতে সবে শুরু করেছিল । শঙ্কর নিরাবেগ থাকলেও তার শরীর জাগছিল ধীরে । তারপর যখন ভবানী শঙ্করের ঠোঁটের কাছে নিজের আলতারঞ্জিত ঠোঁট দুখানি চুম্বনের প্রত্যাশায় তুলে ধরল সে স্পষ্ট দেখল যে পিছনের জানালার সামান্য ছিদ্রপথে একটি অপার্থিব মুখ জ্বলন্ত দৃষ্টিতে তাদের দিকে চেয়ে রয়েছে । সেই মুখের প্রতি ভাবভঙ্গিতে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে নিষেধ ।
ভবানী সভয়ে সরে এল । সে বুঝতে পারল যে ওই মুখ কার এবং সে কি বলতে চাইছে । তারপর থেকে ভবানী রাতে বা দিনমানে যখনই স্বামীর কাছাকাছি যেতে চেয়েছে তখনই সেই অপার্থিব মুখ তার ভয়ঙ্কর জ্বলন্ত দৃষ্টি মেলে দিয়ে ভবানীকে শঙ্করের কাছ থেকে সরিয়ে দিয়েছে । স্বামীর পাশে শুয়ে স্বামীসঙ্গ পাওয়ার জন্য ভবানী ছটফট করেছে কিন্তু সেই অপার্থিব সুন্দর মুখ প্রতিদিনই আরো ভয়ঙ্করী মুর্তি ধরে তাকে নীরবে শাসিয়েছে । ভবানী আতঙ্কে নিজের মধ্যে নিজে গুটিয়ে গেছে ।

ভবানীর সঙ্গে সঙ্গে জয়শঙ্করেরও একই অভিজ্ঞতা হত বলে সেও ধীরে ধীরে বিবাহিত জীবন যাপন করার আশা ত্যাগ করল । এই অপার্থিব মুর্তির ভয়াবহ অস্তিত্বের কথা শঙ্করের বাবা মা সমস্ত পরিবার ভবানীর বাপের বাড়ির লোকেরা জানল এবং যে যার মত করে মানল । ওঝা বদ্যি করেও কিছু ফল ফললনা । শঙ্কর বেশির ভাগ কলকেতায় থাকত আর কখনো সখনো দেশের বাড়িতে এলে আলাদা ঘরে রাত কাটাত । এতে কোন সমস্যার উদ্ভব হতনা ।
কিন্তু সকলে সব কিছু মেনে নিলেও একজনকে কিছুতেই কোন কথা শোনানো যেতনা । সে ভবানীর অবাধ্য শরীর । পুরুষসঙ্গ লাভের দুর্মর আকাঙ্খা ভবানীকে পাগল করে দিত । সে কিছুতেই নিজেকে শান্ত করতে পারত না । তারপর নিজেকে শান্ত রাখার উপায় সে নিজেই ভেবে নিল । সে জানতে পারল যে রেল ইস্টিশনের সামনে কিছুদিন হয় এক পাগলা সাহেব এসে আস্তান গেড়েছে । ভাল লোকে বলে ও গাছ পালা নিয়ে গবেষণা করে কিন্তু দুষ্টু লোকে বলে যে পরের বাড়ির মেয়ে বউ চুরি করাই ওর মতলব । ভবানী ভাবল ---আমাকে চুরি করলেই বা মন্দ কি ?
এই ভেবে ভবানী কদিন ওর কাছে গোপনে ঘোরাঘুরি করতে শুরু করল । গ্রামের মধ্যে অবৈধ সম্পর্কে জড়ালে নানা ঝামেলা । তার চেয়ে বাইরের উটকো লোকই ভাল । আজ আছে কাল নেই ।অসমসাহসিনী ভবানী ভাষার ব্যবধান এড়িয়ে আকারে ইঙ্গিতে সাহেবের সঙ্গে ভাব জমিয়ে ফেলল ।নিজের ইচ্ছের কথাও ঠারে ঠোরে ব্যাখ্যা করে ছাড়ল ।আগুন আর ঘি । পাশাপাশি থাকলে গলবে না এ হতে পারে নাকি ?উদ্ভিদতত্ত্ববিদ পাগলা সাহেব ডেভিড ভবানীর ইচ্ছার মর্যাদা না দিয়ে পারল না ।অল্প কিছুদিন পরেই ভবানী বুঝতে পারল যে সে মা হতে চলেছে ।পরিপূর্ণ যৌনতৃপ্তি এবং সেই সঙ্গে সন্তানের মা হওয়ার গৌরব । ভবানী ধন্য হল । সোমশিখার অদৃশ্য উপস্থিতির জন্যই হোক বা ভবানীর ঝগড়ুটে স্বভাবের জন্যই হোক এইসব বেচালের খবর যারা রাখত তারা কেউ প্রকাশ্যে ভবানীর বিরুদ্ধে কোন কথা বলার দুঃসাহস দেখালনা । সাহেবও যে কাজে এখানে আস্তানা গেড়েছিল সেসব কাজ মিটিয়ে ভবানীকে বিদায়চুম্বন করে একদিন বেপাত্তা হয়ে গেল।জয়শঙ্কর আগেই স্ত্রীর বেচালের খবর পেয়েছিল । কিন্তু সোমশিখার অপার্থিব উপস্থিতি তাকে সম্ভবত সংসারের প্রতি বিরূপ করে তুলেছিল।অন্তরীক্ষবাসিনী সোমশিখা্র জয়শঙ্করের প্রতি টান থাকলেও জয়শঙ্কর এখন সোমশিখা্ নামটিকেই ভয় পেত ।ধীরে ধীরে জয়শঙ্কর দেশের বাড়িতে যাওয়াই ছেড়ে দিল কিন্তু পাকেচক্রে ভবানীর সন্তানের পিতৃত্ব স্বীকার করে নিল ।জয়শঙ্করের বাবা মাও মুখে কুলুপ আঁটল ।
নির্দিষ্ট সময়ে ছেলের মা হল ভবানী ।ছেলের নাম রাখা হল সোমশঙ্কর । আর এই ছেলে জন্মানোর পরেই জয়শঙ্কর মিত্তির চাকরি ছেড়ে বিলেতে একটি ট্রেনিং নিতে চলে গেল ।আর ফিরে এলনা । কিছুদিন পরে বিশ্বস্ত সূত্রে খবর এল যে বিলেতে নিউমোনিয়া হয়ে সে মারা গেছে । আবার দুষ্টু লোকেরা বলল মারা যাওয়ার আগে বিলেতে মেম বিয়ে করেছিল সে । কিন্তু ভাল করে সংসার শুরু করার আগেই কী এক জ্বরে মেমসাহেব আর জয়শঙ্কর দুজনেই একসঙ্গে প্রাণ হারায় ।

সব শুনে সদ্যবিধবা ভবানী মুচকি হাসলেও গ্রামের লোকেরা আতঙ্কে শিউরে উঠল ।








একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ