বিদিশা সরকার | আমি হাঁটতে পারছি না কারণ​

বিদিশা | আমি হাঁটতে পারছি না কারণ​

■ আমি হাঁটতে পারছি না কারণ​

আমি আর হাঁটতে পারছি না কারণ
আমার হাতদুটো বেঁধে রাখা হয়েছে একটা আংঠায়​ওরা সবাই দেখছে
খাবার টেবিলে গল্প করছে​

একযুগ কোনো খিদে নেই
যুগ তো অখন্ডমন্ডলাকার
আমাকে যারা রুটি ছুড়ে দিয়েছিল বা​
পুরোনো গাউন
তাদের চাহিদার নামগুলো মনে করতে পারছি না
চাদর মুড়ি দিয়ে শীত ঢুকেছিল তখন ডিসেম্বর
তাওয়ায় সেঁকে সেঁকে গরম কাপড় দিয়ে যে উত্তাপ
তাতেও আড়াল সরায়নি
তখন তো আমার হাতদুটো বাঁধা ছিল না​

বা​

কোনো আংঠাও ছিল না সিলিং ফ্যানের পাশে ।

আমি হাঁটতে যেতাম যেখানে সেখানে বাগান ছিল না​
অথবা কোনো ফোয়ারাও না
বৃষ্টিতে পুকুর উপচে পড়লে সেই জলে ঠাঁয় দাঁড়িয়ে
থাকতে থাকতে পায়ের পাতা ফ্যাকাসে ও সাদা হয়ে যেত​
উত্তাপ জানলার ধারে বসে চা খেত​
দূর থেকে দেখতাম ওদের আলনা উপচে পড়ছে কাপড় চোপড়

উৎসবের আগে আমার মা রাত জেগে জেগে
জামা সেলাই করত​
আর বাবা রাত জাগতে বারন করতেন​
কোনো কোনো বারন করার এত ভালবাসা লুকিয়ে থাকে !​
সেই বাড়িগুলোতে আংটা ছিল না
অথবা থাকলেও সেটা মা বলতে পারবে​

আমি কারও কাছে পৌঁছতে পরছি না কারণ
একটা প্রেসক্রিপশন
মানে একটা নির্দেশনামা
যত বলছি ঘরগুলো মুখস্থ হয়ে গেছে
ঘরের নামতা
যোগফল
সিঁড়ি ভাঙা​
দৈর্ঘ্য প্রস্থ
দৈর্ঘ্য প্রস্থ

ওরা বারান্দা বিষয়ে রচনা লিখতে বলছে​
অসমাপ্ত সেই লেখাটা কেড়ে নিয়ে বলছে​
বাথরুম পরিষ্কারের পদ্ধতিগুলো বিষয়ে কিছু একঘন্টা সময়ের মধ্যে

আমি বাথরুমের জানালা দিয়ে একেকটা বাড়ির
ছাদ
ছাদের বাগান
তার চেয়ে দূরে সুপুরি গাছের সারি
পাশের বাড়ির রান্নার গন্ধ আর ঝগড়া
সাবানের ফেনার মধ্যে গুলে নিচ্ছি​

প্রথম ধাক্কাতে সাড়া দিচ্ছি না​
দ্বিতীয় ধাক্কাতেও না
তৃতীয় ধাক্কায় দরজা ভেঙে পড়লে​
ওরা আমাকে চালান করে দিচ্ছে বিছানায়
সেখানে ঘুমাতে ঘুমাতে আমি
ভেঙে ফেলছি সংসারের কাপ ডিশ
হারিয়ে ফেলেছি গোল মরিচের কৌটোর ঢাকনা
একজন সুপারভাইজার এসে
কেড়ে নিচ্ছে হাতের চুড়ি ও আঙটি​

নেমপ্লেটের ওপর আমার নামের পাশে যে পদবি
তার আগেও কয়েকটা ঝাপসা পদবি
পদবি বদলায় আর নাম সাড়া দেয়​

সাড়া দেওয়া আসলে বাজনা ...
সরোজ বড়ুয়ার ম্যান্ডোলিন
তিনটে ভল্ট দিয়ে একেবারে বিম বারে
নাদিয়া কোমানভিচ

পায়রা ওড়া রোদ্দুরে তিতাস চৌধুরীর
আবছা চাওনি
আমি তার কান্না বুঝতে পারি
আরও অনেকের কান্না
কে কাঁদায়
কেনই বা কাঁদায়
সবই
ঈশ্বরের ক্ষতি পূরণের বালাই নেই
জবাবদিহিরও
পুরুষ মানুষ ঈশ্বরের মতো
অথবা
ঈশ্বর পুরুষ !

পুরনো চিঠির মতো ভালবাসাগুলো কেমন
ভাঁজে ভাঁজে ছিঁড়ে যাচ্ছে -
অস্পষ্ট অক্ষরগুলো চশমা না পরলে বোঝা যায় না --

চশমাটা লুকিয়ে রাখি
চিঠিগুলোও
আই ড্রপ দিয়ে চোখ বুজে শুখা নদী পারাপার করে বাজার লাগোয়া
মনোস্কামনারা
সেফটি পিন আর বোতামের কিছু কথা
বাথরুমের ঝাঁঝিতে আটকে রয়েছে -

যে গাছটার সঙ্গে আমি অবৈধ
তার গুড়ি বেয়ে উঠছে সব পরজীবীরা
মনি আন্টি
পিউমনি
আরও
আরও সব অবৈধরা।
এইসব দেখতে দেখতে জমাট হতে হতে পাথর --

আমার অবৈধ বলে,
দোলনা বেঁধে দেবো বুনো গন্ধ মাখিয়ে ।
আমি জানি সব অন্ধকারই দোলনা
রাত আটটার পর পার্কের দরজা বন্ধ হয়ে যায়
দোলনা শিকল দিয়ে বাঁধা
অন্ধকারকে পাহারা দেয় একেকটা লাইট পোস্ট,
লাস্ট ট্রেনে ঘরে ফেরার নাম
দায়সারা --

পাঁচটা বিড়ালছানা ফেলে মা বিড়ালটা
ফিরছে না কেন এখনও
তাগিদ আর জীববৃত্তির মাঝখানে বসে
একাই সামলাচ্ছি একান্নবর্তী সংসার
আমার মা যেমন,

'মনে পড়লে মনে করতে নেই' বলে
কুটিকুটি করে ছিঁড়ে ফেলেছিল পনেরটা চিঠি -

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ