কিন্তু এই যে বোবা সেজে কালাতিপাত, এর পিছনের আসল গল্পটি কি? কি হতে পারে? এই নয় যে, কোন কিছুতেই কোন বিষয়েই এনাদের কোন প্রতিক্রিয়া হয় না। হলে তাঁরা নিশ্চয় আর সংসারের মায়ায় বাঁধা পড়ে থাকতেন না নিশ্চয়। হিমালয়ে হোক যমালয়ে হোক কোথাও একটা মহাস্থবির শান্তি খুঁজে নিতেন। সামাজিক ক্ষেত্রে নিজের মতামত প্রদানের বিষয়ে হয়তো এঁদের ভিতর কোন লোকলজ্জা কাজ করতে পারে। কে কোন মতামত কিভাবে নেবে। সেই ভেবেও চুপ করে থাকতে পারেন অনেকে। কিংবা হয়তো নিজের অভিমতের উপরে নিজেরই আত্মবিশ্বাস নাই। যদিও সেটি বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়। হতে পারে অধিকাংশ বিষয়েই আমাদের জ্ঞানের পরিধি সংকীর্ণ। সেখানে আমরা কেউই খাপ খুলতে যাই না। যেতে চাই না সচারচর। কিন্তু তার মানে তো এটা নয়, কোন বিষয়েই জ্ঞান অভিজ্ঞতা চিন্তা ভাবনা নাই। যার যে বিষয়ে জানাশোনা আছে, সেই বিষয়েই না হয় তিনি জানান দিন নিজস্ব অভিমত। কিন্তু কেউ যদি জেনেশুনেও চুপটি করে বসে থাকেন, তবে তো চিন্তার বিষয়। এমনটা হতে পারে, আগে সকলের মতামত জেনে নিয়ে তারপর গরিষ্ঠ মতের স্বপক্ষে মতামত দেওয়ার ইচ্ছে থাকাও বিচিত্র নয়। কিন্তু একেবারে স্পিকটিনট! না’কি ধরে নিতে হবে, এনারা কোন বিষয়েই নিজে থেকে চিন্তা করতে, খতিয়ে দেখতে চান না। সান্ধ্যটিভির সিরিয়াল দেখার মতো করে নিউজফীড দর্শন করেন। কোন চিন্তা নাই। বিতর্ক নাই। ঝামেলা নাই। শুধু দর্শনেন্দ্রিয় চালু রেখে এনার্জি কনজারভেশন! বলা যেতে পারে বিমূর্ত দর্শক!
এই বিমূর্ত দর্শক নিয়ে, মশাই আপনারই বা এত মাথাব্যথা কেন শুনি? দাবি করতে পারেন অনেকে। খুবই স্বাভাবিক। কথায় বলে অলস মস্তিষ্ক শয়তানের বাসা। তেমনটা ভাবাও বিচিত্র নয় অনেকের পক্ষে। সকলেরই সব রকম ভাবনা করার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা রয়েছে। আসলে সেই স্বাধীনতার ব্যবহারের কথাই এই আলোচনার মূল ভরকেন্দ্র। পা থাকতে কেউ তো আর খোঁড়া সেজে থাকে না! তাহলে সোশ্যাল মিডিয়াতেই বা কেন মানুষ বোবা সেজে থাকতে চায়, সেটা জানতে চাওয়াও কিন্তু ব্যক্তি বিশেষের মৌলিক অধিকারের ভিতরে পড়ে। তাই এটাকে ঠিক অনভিপ্রেত নাক গলানো বলে দাগিয়ে দেওয়াও সঙ্গত হবে বলে মনে হয় না।
বহু জনপ্রিয় সিনেমায় দেখা যায়, হিরো একা হাতে দশটা গুন্ডা সামলাচ্ছে। চারধারে প্রচুর দর্শক ভিড় করে দেখছে। কিন্তু মুখে চোখে কোন প্রতিক্রিয়া নাই। মুখে কোন শব্দ নাই। এই যে নিঃশব্দ দর্শন, যদিও সেটি সিনেমার স্ক্রিপ্ট অনুসরণ করে, তবুও এর একটি সামাজিক অভিঘাত বোধহয় পড়েই সমাজ জীবনে। মানুষের চেতনার ভিতে। বাস্তবের জমিতেও যখন সিনেমার প্রতিফলন দেখা যায়, তখন সেটি আমরা বুঝতে পারি।
একদঙ্গল অপরাধী মিলে একজনকে পিটিয়ে মারছে দেখেও চারপাশের মানুষজন ভিকটিমকে বাঁচাতে এগিয়ে আসে না। বা মৌখিক ভাবেও কোন প্রতিবাদ করে না যখন। ভারতবর্ষে বিগত পাঁচ ছয় বছর গণপিটুনিতে যত নিরীহ নিরস্ত্র সাধারণ মানুষের প্রাণ গিয়েছে। সেই ঘটনা গুলির সাথে এই যে বোবার দর্শন, এর একটি সরাসরি যোগ আছে। সেটা আমরা প্রায় সকলেই কম বেশি জানি। চোখের সামনে গণধর্ষণের মতো জঘন্য অপরাধ সংঘঠিত হতে দেখলেও অধিকাংশ মানুষ বোবা সেজে কালা সেজে চোখ খুলে দেখে যাবে। তবুও সংঘবদ্ধ হয়ে প্রতিরোধ করতে এগিয়ে আসার সাহস পাবে না। বস্তুত এই যে অধিকাংশ বিষয়ে বোবা সেজে থাকার অভ্যস্থ জীবন। একবার সেই জীবনে অভ্যস্থ হয়ে গেলে আমাদের মনুষ্যত্বের সহজাত প্রতিক্রিয়াগুলির ধারও দিনে দিনে ভোঁতা হয়ে যেতে থাকে। সমাজে তখনই দুর্বৃত্তদের পৌষমাস।
এই যে বোবা জনসমাজ। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রই হোক কিংবা ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতাই হোক। এসবের যারা কারবারি, তারা সবসময় এই বোবা জনসমাজকেই তুরুপের তাস করে নিজেদের আখের গুছিয়ে নেয়। অতদূরও যেতে হবে না, পাড়ার গুণ্ডামস্তানরাই এই বোবা জনগোষ্ঠীর দৌলতে করেকম্মে খায়। এবং তখন সেই দাপটের সামনে আমরা কে না বোবা সেজে থাকি? তখন বোবাদেরই দলভারি। আজকের এইসব বোলচাল তখন কোথায় যাবে। স্কুলের বদরাগী দিদিমনির চোখরাঙানির সামনে ঠোঁঠে আঙুল দিয়ে থাকার মতো তখন অধিকাংশ আমরাই স্পিকটিনট। চাচা আপন প্রাণ বাঁচা। ফলে একটা সমাজ জখন এই বোবা সেজে থাকার চর্চায় মেতে থাকে, তখন সেই সমাজকে রক্ষা করবে কোন ঈশ্বর?
শুধুই কি বোবা সেজে থাকা? অনেক সময় আমাদের অনেককেই বোবায় পায়। পুরানো দিনের গ্রাম বাংলায় বোবায় পাওয়া মানুষ দেখা যেত সময় অসময়। শহীদের রক্ত হবে নাকো ব্যর্থ। শহীদের স্মরণেই ভোট দেওয়ার ডাক শুনে ছুট ছুট ছুট। দলে দলে ভোট গিয়ে পড়লো সৈনিকদের প্রাণরক্ষায় ব্যর্থ হওয়া সরকারের কোলেই। আমাদের অমূল্য ভোট সৈনিকদের যে প্রাণ বাঁচাতে পারেনি, বোবা কালা হাবার মতোন সেকথা বলতেও ভুলে গেলাম আমরা। ন্যাড়া দিব্বি দ্বিতীয়বারও বেলতলায় গিয়ে দাঁড়ালো। বোবায় না পেলে এমনটা হতে পারতো কখনো?
না শুধুই সোশ্যাল মিডিয়ায় নয়। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এমন ভাবেই বোবা সেজে চুপটি করে বসে থাকি আমরা। অন্যের ঘরে আগুন লেগেছে তো আমার কি? আমি কেন চিৎকার করে আত্মপ্রকাশ করবো? তার থেকে চুপটি করে ঘাপটি মেরে থাকা বেশি নিশ্চিন্তের। ঠিক এইটাই ক্রিয়াশীল থাকে আমাদের অসাড় চেতনায়। থাকে বলে আমরা কম বেশি সবাই বোবা সেজে থাকার বিষয়ে বিশেষ ভাবে দক্ষতা অর্জন করে ফেলেছি। দশকের পর দশক জুড়ে। আর সেইভাবে দিনের পর দিন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম বোবা সেজে থাকতে থাকতে আমরা টের পাইনা আর। কখন কিভাবে আমাদের বোবায় পেয়ে যায়। একবার বোবায় পেয়ে গেলে, তখন আর নিয়ন্ত্রণ থাকে না আমাদের ভোটের আঙুলে। আমাদের চেতনার চিন্তাস্রোতে। নিয়ন্ত্রণ থাকে না আমাদের ব্যক্তিগত মত অমতের উপরে। তখন লাইক দিতে না চাইলেও বোবায় পওয়া মানুষের মতো কোটি কোটি লাইক পড়তে থাকে ফেক নিউজেও। বোবায় পাওয়া মানুষের মতো আমরা ঘাড় কাৎ করি সেই দিকেই, যেদিকে ঘাড় কাৎ করলে খুশি হয় ফেক নিউজের কারবারিরা। এইভাবে একটি গোটা সমাজ ব্যবস্থায় যদি বোবায় পাওয়া মানুষের ভিড় জমে যায়, তখন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অপেক্ষা করে ঘোর দুর্দিন। আমাদের যা ক্ষতি হওয়ার তাতো হয়ই। কিন্তু তার থেকেও অনেক বেশি ক্ষতি হয়ে যায় আমাদের সমাজের গোটা ভবিষ্যতটাই। তখন আর বলেই বা কি লাভ বোবার শত্রু নাই? আসলে বোবাদেরই শত্রুর খপ্পরে পড়ার সম্ভাবনা সবচাইতে বেশি। সবচেয়ে মারত্মক তাই আজকের এই বোবা সেজে থাকা। যার অনিবার্য পরিণতি আগামীতে বোবায় পাওয়া। এখন কে কোন পরিণতি ডেকে নেবে, হ্যাঁ অবশ্যই সেটি তাঁর মৌলিক অধিকারের বিষয়। সেখানে নাক গলানোর নীতিগত অধিকার আমাদের কারুরই নাই। এমনকি স্বয়ং ঈশ্বরেরও নয়। থাকলে তিনি কি আর এমন চুপ করে বোবা হয়ে বসে থাকতেন?
© শ্রীশুভ্র কর্তৃক সংরক্ষিত
এই যে বোবা জনসমাজ। রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রই হোক কিংবা ধর্মীয় সাম্প্রদায়িকতাই হোক। এসবের যারা কারবারি, তারা সবসময় এই বোবা জনসমাজকেই তুরুপের তাস করে নিজেদের আখের গুছিয়ে নেয়। অতদূরও যেতে হবে না, পাড়ার গুণ্ডামস্তানরাই এই বোবা জনগোষ্ঠীর দৌলতে করেকম্মে খায়। এবং তখন সেই দাপটের সামনে আমরা কে না বোবা সেজে থাকি? তখন বোবাদেরই দলভারি। আজকের এইসব বোলচাল তখন কোথায় যাবে। স্কুলের বদরাগী দিদিমনির চোখরাঙানির সামনে ঠোঁঠে আঙুল দিয়ে থাকার মতো তখন অধিকাংশ আমরাই স্পিকটিনট। চাচা আপন প্রাণ বাঁচা। ফলে একটা সমাজ জখন এই বোবা সেজে থাকার চর্চায় মেতে থাকে, তখন সেই সমাজকে রক্ষা করবে কোন ঈশ্বর?
শুধুই কি বোবা সেজে থাকা? অনেক সময় আমাদের অনেককেই বোবায় পায়। পুরানো দিনের গ্রাম বাংলায় বোবায় পাওয়া মানুষ দেখা যেত সময় অসময়। শহীদের রক্ত হবে নাকো ব্যর্থ। শহীদের স্মরণেই ভোট দেওয়ার ডাক শুনে ছুট ছুট ছুট। দলে দলে ভোট গিয়ে পড়লো সৈনিকদের প্রাণরক্ষায় ব্যর্থ হওয়া সরকারের কোলেই। আমাদের অমূল্য ভোট সৈনিকদের যে প্রাণ বাঁচাতে পারেনি, বোবা কালা হাবার মতোন সেকথা বলতেও ভুলে গেলাম আমরা। ন্যাড়া দিব্বি দ্বিতীয়বারও বেলতলায় গিয়ে দাঁড়ালো। বোবায় না পেলে এমনটা হতে পারতো কখনো?
না শুধুই সোশ্যাল মিডিয়ায় নয়। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এমন ভাবেই বোবা সেজে চুপটি করে বসে থাকি আমরা। অন্যের ঘরে আগুন লেগেছে তো আমার কি? আমি কেন চিৎকার করে আত্মপ্রকাশ করবো? তার থেকে চুপটি করে ঘাপটি মেরে থাকা বেশি নিশ্চিন্তের। ঠিক এইটাই ক্রিয়াশীল থাকে আমাদের অসাড় চেতনায়। থাকে বলে আমরা কম বেশি সবাই বোবা সেজে থাকার বিষয়ে বিশেষ ভাবে দক্ষতা অর্জন করে ফেলেছি। দশকের পর দশক জুড়ে। আর সেইভাবে দিনের পর দিন, প্রজন্মের পর প্রজন্ম বোবা সেজে থাকতে থাকতে আমরা টের পাইনা আর। কখন কিভাবে আমাদের বোবায় পেয়ে যায়। একবার বোবায় পেয়ে গেলে, তখন আর নিয়ন্ত্রণ থাকে না আমাদের ভোটের আঙুলে। আমাদের চেতনার চিন্তাস্রোতে। নিয়ন্ত্রণ থাকে না আমাদের ব্যক্তিগত মত অমতের উপরে। তখন লাইক দিতে না চাইলেও বোবায় পওয়া মানুষের মতো কোটি কোটি লাইক পড়তে থাকে ফেক নিউজেও। বোবায় পাওয়া মানুষের মতো আমরা ঘাড় কাৎ করি সেই দিকেই, যেদিকে ঘাড় কাৎ করলে খুশি হয় ফেক নিউজের কারবারিরা। এইভাবে একটি গোটা সমাজ ব্যবস্থায় যদি বোবায় পাওয়া মানুষের ভিড় জমে যায়, তখন ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য অপেক্ষা করে ঘোর দুর্দিন। আমাদের যা ক্ষতি হওয়ার তাতো হয়ই। কিন্তু তার থেকেও অনেক বেশি ক্ষতি হয়ে যায় আমাদের সমাজের গোটা ভবিষ্যতটাই। তখন আর বলেই বা কি লাভ বোবার শত্রু নাই? আসলে বোবাদেরই শত্রুর খপ্পরে পড়ার সম্ভাবনা সবচাইতে বেশি। সবচেয়ে মারত্মক তাই আজকের এই বোবা সেজে থাকা। যার অনিবার্য পরিণতি আগামীতে বোবায় পাওয়া। এখন কে কোন পরিণতি ডেকে নেবে, হ্যাঁ অবশ্যই সেটি তাঁর মৌলিক অধিকারের বিষয়। সেখানে নাক গলানোর নীতিগত অধিকার আমাদের কারুরই নাই। এমনকি স্বয়ং ঈশ্বরেরও নয়। থাকলে তিনি কি আর এমন চুপ করে বোবা হয়ে বসে থাকতেন?
© শ্রীশুভ্র কর্তৃক সংরক্ষিত
0 মন্তব্যসমূহ
সুচিন্তিত মতামত দিন