কেননা জীবন এবং জগতকে সে ছারখার করতে এসেছিল। যতটা পেরেছে করেওছে। ২০২০ খ্রিস্টাব্দ মানুষের জীবনে যেন এক অভিশাপের বছর, এমনটাই তো সকলে মিলে সাব্যস্ত করেছে সেই কবে, অতিমারি যখন আতংকের জাল প্রথম ছড়িয়ে দিতে শুরু করছিল সেই থেকেই। শুধু তো প্রাণহানি বা ভোগান্তি নয়, এ থেকে যে বিপুল ক্ষতি হয়েছে মানুষের, বিশ্বের প্রতিটি দেশের, তার হিসাব তো এখনও করা হয়ে ওঠেনি। সে ক্ষতি শুধু তো অচল সংসার কিম্বা আর্থিক টানাটানি দিয়ে বোঝানো যাবেনা! অনেকদিন পৃথিবী থমকে থাকলে, মানুষ তার প্রাণের মানুষের কাছে আসতে না পারলে যা হয় তা তো অঙ্ক কষে দেখিয়ে দেওয়া যায়না। একান্তে, অন্তরে সে বেদনা বেজে যায়। আসলে অনেক রকম ক্ষত তৈরি হয়ে গেছে সবার অলক্ষ্যে।
মোটা দাগের ক্ষতগুলো তবু খালি চোখে দেখা যায়। অঙ্গে বিকৃতি আসে যে! কিন্তু আরও যে অসংখ্য ক্ষত তৈরি হচ্ছে জীবনে, কোভিড ছাড়াও আরও কত সংকট যে নেমে এসেছে মানুষের জীবনে, এই অভিশপ্ত বছরে তার বাড়বাড়ন্তও তো কম নয়। সেসবের আঘাত অন্তরাত্মা কে তছনছ করে দেয়, ওলট পালট করে দেয় যত মূল্যবোধের সঞ্চয়, তাকে তো পরিমাপ করা যায়না! তার কারণে যে মস্ত বড় ক্ষতি হয়ে যায় জীবনে, মননে, তার হিসাব মানুষ করবে কি করে?
সব ক্ষতির খবর হয়না। এখন যেমন করোনা ভাইরাসও আর তেমন গুরুত্বপূর্ণ খবরের তালিকায় নেই। লেবাননে বিস্ফোরণ, ইরাকে গাড়ি-বোমা, ওখানে খুন ধর্ষণ, ওখানে বোমাবাজি, এই ধরণের খবরগুলোর মতো এতই গা সওয়া হয়ে গেছে যে আর সেগুলো আমাদের মনে তেমন উদ্বেগ জাগায়না। তাছাড়া এই সর্বনাশা বছর ভালো করে শিখিয়ে দিয়ে গেল কোন খবর টা বেশি গুরুত্বপূর্ণ, কি দেখলে শুনলে মানুষের নিশ্চিত অগ্রগতি।
না, এরকম স্বপ্নভঙ্গের বছর চাইনি। এক একসময় মনে হয়, দুর্বিষহ এই বছরটাকে স্মৃতির ভাণ্ডার থেকে মুছে দেওয়া যায় কি? অবশ্য গেলেও লাভ কি! যা ক্ষতি হয়ে গেছে তা আর পূরণ হবার নয়! তার চেয়ে এর চলে যাওয়াটাকেই বরং সেলিব্রেট করি।
ওঝারা যেমন ডাক পেলে এখনও ভুত ছাড়ানোর খেলা দেখায়, ভুতকে নির্দেশ দেয় ছেড়ে যাবার আগে কিছু একটা সংকেত দিয়ে যেতে, তেমনি এই অভিশপ্ত বছরটিকেও বলতে চাই, অনিবার্য নিয়মে যখন এই ভুবন ছেড়ে যাবে, যত আপদ বিপদ সব সঙ্গে নিয়ে যাও। আর যাবার সময় একটা এমন কিছু চিহ্ন রেখে যাও যেন আমরা দেখে বুঝতে পারি তুমি অভিশাপের চাদরটি তুলে নিয়ে গেছ। স্বস্তির নিশ্বাস ফেলার জন্য একটা শাপমুক্তির চিহ্ন দরকার আমাদের।
0 মন্তব্যসমূহ
সুচিন্তিত মতামত দিন