শব্দের মিছিল

শব্দের মিছিল sobdermichil

মূল্যায়ন অর্থাৎ ইংরেজিতে গালভরে আমরা  যাকে বলি ইভ্যালুয়েশন।

মানব জীবনের প্রতিটি স্তরেই এই শব্দটি অবিচ্ছেদ্য এবং তার চলমান প্রক্রিয়া।  আমরা জানি পাঠক্রম বা সমাজ প্রবাহিত শিক্ষা দীক্ষার মধ্য দিয়েই প্রতিটি মানুষের মধ্যেই গঠিত হতে থাকে বহুবিদ গুন, মেধা, বোধ বুদ্ধি, ব্যবহার, কর্মদক্ষতা ইত্যাদি। এর সামগ্রিক বিশ্লেষণ বা পর্যালোচনা  থেকেই এক মানুষ অপর মানুষের প্রতি যে সিদ্ধান্তে বা বিশ্বাসে উপনীত হয়, তাই মূল্যায়ন।  

স্বাভাবিক ভাবে,  মানব জীবনে  মূল্যায়নের এর প্রভাব অনস্বীকার্য।  একে উপহাস, অবহেলা, বিদ্রুপ  করা অর্থই -   বিপরীত মানুষের ন্যায় নীতি কর্তব্য - কর্ম কে উপেক্ষা করা বা অবমূল্যায়ন করা। যা ভয়ঙ্কর। এবং এটাই ঘটেই চলেছে -

যেমন ধরুন অমর্ত্য সেন বা অভিজিৎ বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়। সমগ্র বিশ্বে যারা আলোচিত, নন্দিত। যাঁরা অর্থনীতি বিষয়ক প্রাজ্ঞজন। কতটা মূল্যায়িত তাঁরা নিজ বসত ভিটায়? অথচ এদের চেয়ে অধিক বেশি মূল্যায়িত গ্রামসভার মেম্বার থেকে পর্যায়ক্রমে বিধানসভার বিধায়করা। কেননা স্বল্প সময়ে এদের ব্যক্তিগত অর্থনৈতিক উন্নতিই কেবল বিস্ময়ের নয়, আইন বেআইন, দম্ভ,ভোগ সব আকাশছোঁয়া। অশোক স্তম্ভে সজ্জিত এরা সমুজ্জ্বল। কী করে হয়? এর উৎস কী? তাহলে কেনই বা মানুষ পণ্ডিত্যের লেঙ্গুর ধরে থাকবেন। সে যতই সিঙ্গুর চুলায় যাক। অথবা ভাগ মোহন ভাগ , ভাগ নকুল ভাগ। 

পাশাপাশি এটাও অনস্বীকার্য, যারা অন্তত সাহসী এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারতেন, বিকল্প ধারার উন্মোচন করতে পারতেন  অর্থাৎ সেই সব   ডাক্তার মোক্তার ইঞ্জিনিয়ার এমনকি বাংলার  কবি সাহিত্যিক সাংষ্কৃতিক জগৎ কেও  উপেক্ষা করে, মানুষ মূলত ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতা- কর্মীদের মূল্যায়ন করছেন। শর্টকাটে দুধে ভাতে এদের পথ অনুসরণ করছেন। কেননা, বুদ্ধিজীবীর মোড়কে অসংখ্য  দুর্বুদ্ধি জীবীর বাস,  সুতরাং নীতি আদর্শ উচ্চারণই এখন পাপ।  চোখ থাকতেও বন্ধ তাই তার ঝাপ।

স্বাভাবিক ভাবেই বিশ্বজয়ী বঙ্গ সন্তানেরাও আমাদের মতো সাধারণ শ্রমিক কৃষক জনতার কাছে ব্রাত্য। বরং মিত্র এবং চটি চিত্র  আমাদের শর্টকার্ট ফর্মুলা। এই যেমন আলুবাজি থেকে নানান উৎসবের কারসাজি। দুর্নীতি থেকে ভাউতাবাজি। ভাঙ্গাবাড়ি থেকে তিন তলা । তলা চাগিয়ে চাগিয়ে হাইরাইজ। গাড়ি বাড়ি নারী ....  তুমুল সানরাইজ .. বিপুল  সম্ভাবনাময় সমূহ পথ।

কেউ কী বলতে পারবেন,  রাজনৈতিক কর্মী আর রাজনৈতিক ব্যাপারীর মধ্যে পার্থক্য কী? কেউ কি পারবেন ভোট বাক্সে তার উত্তর জমা দিতে? অথবা কেই কী তাদের প্রশ্ন করতে পারবেন -  এই দেশে, এই বেশে -  অন্তত আত্মসম্মানের সহিত কীভাবে জীবন জীবিকা সুস্থ ভাবে উদযাপন করা সম্ভব?

অন্যথায়, পড়াশোনা চুলায় দাও / মিত্র-  চটি চিত্রর জীবন বাউ। দালালির গান গাও।

হরি হে ....

ধ্বংস হোক বিষাক্ত কুঁড়ি এবং তার সম্মোহ ফুল। 
হে মানুষ জেগে ওঠো, আর নয় ভুল।


শব্দের মিছিল
কলকাতা

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ