অব্যয়কথা

তিতকুটে কথা, অব্যয়কথা

কিছু কথা তিতকুটে লাগবেই। সম্প্রতি এক খ্যাতনামা কবি অধ্যাপকের চরিত্র ও কর্ম নিয়ে মিডিয়া জুড়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। ভাবখানা অনেকটা যেন এমন, এরকম ঘটনা এই বাংলায় খুবই বিরল। অনেকেই নাকি বিস্মিত। হতবাক। হতবাক হওয়ার মতো ঘটনা হলো, পিতৃতান্ত্রিক সমাজে ক্ষমতার অপব্যবহার করে নারী দেহ ভোগের যে ঐতিহ্য উত্তরাধিকার ও পরম্পরা বাঙালির জাতিগত বৈশিষ্ট; সেই আবহমান সত্যকে বেমালুম ভুলে গিয়ে এমন একটা ভাব করা, যেন এমন ঘটনা এই প্রথম ঘটল। যেন বাংলার সাহিত্যকুলে বাংলার অধ্যাপক কুলে এমন লাম্পট্য এই প্রথম। যে সমাজে নারীদেহ পুরুষের সম্ভোগের সামগ্রীর বেশি কিছু নয়। যে সমাজে নারীর মূল্য স্থির হয় তাঁর যৌন তৃপ্তি দেওয়ার সক্ষমতার উপরে, যে সমাজে নারীর গর্ভের মালিকানা পুরুষের অধীন। যে সমাজে অবিবাহিত নারীর মাতৃত্বকে সম্মান দেওয়া হয় না কোনদিন। যে সমাজ ধর্ষককে নিয়ে লজ্জিত হয় না কোনদিন। লজ্জিত হয় ধর্ষিতাকে নিয়ে, সেই রকম সম্পূর্ণ পতিত একটা পচন ধরা সমাজের আর যাই হোক নীতিশাস্ত্র হাতে বিচারকের আসনে বসে পড়া অত্যন্ত বেমানান। 

পিতৃতান্ত্রিক এই সমাজে ইচ্ছেয় হোক অনিচ্ছায় হোক পুরুষের ক্ষমতাকে কাজে লাগিয়ে নিজের আখের গোছাতে অনেক মেয়েকেই তাদের যৌবন ভাড়া খাটাতে হয়। পেশাগত সিঁড়ির মগডালে উঠতে। এটা কোন নতুন কথা নয়। অধিকাংশই বাধ্য হয়ে সেই সুযোগটি কাজে লাগিয়ে পুরুষের কামলীলাকে সন্তুষ্ট করে বাঁকা পথে কাজ হাসিল করে নেয়। কেউ কেউ নিজের অযোগ্যতাকে ঢাকতে পার্ভারটেড পুরুষকেই মই হিসাবে কাজে লাগায়। এটাও কোন গুপ্ত তথ্য নয়। কথায় বলে চুরি বিদ্যা মহাবিদ্যা যদি না পড়ে ধরা। আসল বিষয়টা সেখানেই। অনেক সময় দেখা যায় পকেটমার ধরা পড়লে অনেক ভদ্রজনই হাতের সুখ মিটিয়ে নেয়। তাদের কজন প্রকৃতই সৎ। অফিসে খুষ খায় না। ব্যবসায় চুরি করে না? ঠিক সেই রকমই আজ মিডিয়া জুড়ে এমন অনেকেই মরা কান্না জুড়েছেন, যাঁরা এই একই রোগের ক্রনিক রুগী। বা একই খেলার চ্যম্পিয়ান খেলোয়ার। 

যতদিন পিতৃতন্ত্রের শিকড় শুদ্ধ মূলোচ্ছেদ না হবে, ততদিন পুরুষ তার ক্ষমতার অপব্যবহার করে নারীদেহ লুঠ করতেই থাকবে। যে যেভাবে পারবে। না, তাই বলে সবাই তা করবে না নিশ্চয়। কারণ সকলেই সমান সাহসী বা কানকাটা বেহায়া হয় না। কিন্তু শুধুমাত্র নীতিগত কারণে মনুষ্যত্বের দীক্ষায় কজন পুরুষ ক্ষমতার অপব্যবহার না করেও নারীকে তাঁর আপন যোগ্যতায় এগিয়ে যেতে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়? এই প্রশ্নের উত্তর আমরা সকলেই জানি। যে যায় লঙ্কায় সেই হয় রাবণ। যদিও রাবণের এমন কোন লাম্পট্য ছিল না। পুরুষের হাতে যতটুকুই ক্ষমতা থাকুক না কেন, সে সেই ততটুকু পরিমাণেই লাম্পট্য করে নারীদেহ চুষে নেওয়ার চেষ্টা করবে। এটা বাঙালির জাতিগত বৈশিষ্ট। তাই আজ যারা বিচারের দাবিতে নিজের নাম স্বাক্ষর করছেন, কাল যে তাঁদের কারুর থলের বেড়াল বেড়িয়ে পড়বে না, এমন নিশ্চয়তা কে দেবে? আইন সঠিক বিচার করুক। যিনি লাম্পট্যের রোগে ভুগছেন, তিনি সেরে উঠুন। কিন্তু যে দেশে ঠগ বাছতে গাঁ উজার হয়ে যায়, তাদের ন্যাকামি বড়োই দৃষ্টিকটু।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

1 মন্তব্যসমূহ

সুচিন্তিত মতামত দিন