এই সময়ের বুকে ক্ষত জমে আছে / শহরের বুকে ক্ষত জমে আছে/ কিছু দেখি, কিছু দেখতে পাই না…’ মৌসুমী ভৌমিকের জনপ্রিয় এই গানটি যতবার শুনছি ততবারই নিজের আঙ্গিকে ভাবছি ... শুধুই ভাবছি, সত্যিই তো কত কিছু দেখি, কত কিছু দেখতে পাই না!
এই যেমন, যে বিষয়গুলো তিক্ত হলেও সত্যি --- চলমান মন্ত্রী, আমলা এবং তাদের বিপুল অকর্মণ্য চ্যালাচামুণ্ডাদের এই করোনা-ক্রান্তিলগ্নে যেমন পেটের ভাতের কথা ভাবতে হয় না, তেমনি ভাবতে হয় না সেফ জোনের হাইরাইজে বসে ফেবুপাড়ার কফি লাইভে হঠাৎ বেড়ে ওঠা বিজ্ঞ মানুষদের জীবনযুদ্ধের কথা, কিম্বা এই ধরুন হাতেগোনা এমন জনা ত্রিশ-চল্লিশ বংশপরম্পরায় জ্ঞানপাপী --- যারা পূর্বে এবং বর্তমান সময়ের রাজনৈতিক অঙ্গনে সর্বাধিক সুবিধাপ্রাপ্ত মানুষ, তারাই নাকি ঠিকা নিয়েছেন এই বঙ্গের রাজনীতি, অর্থনীতি, আইনকানুন, শিক্ষা ,স্বাস্থ্য এমনকি পরকীয়ায় সিক্ত - রিক্ত হৃদয়ের হাল ফেরাতে --- আনন্দের সহিত ২৪ ঘন্টা এনিটাইম অল দ্য টাইম।
জনসমুদ্রের এই দেশে এই রাজ্যের অধিকাংশ মানুষ অবচেতনে সচেতন বলেই কি বাড়ন্ত আজ যত অশুভ আধিপত্য? প্রশাসন, সে তো যুগ-যুগ ধরেই সরকারে অধিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলের আস্থাভাজন। তবে কি, গণতন্ত্রের অনেক স্তম্ভের আরও এক স্তম্ভও আজ সুচারু ব্যাম্বু, বাঁশ? যাকে ভর করেই অনায়াসে সফল করা যায় রাজনৈতিক অভিসন্ধি?
নচেৎ, রাষ্ট্রনায়কদের অদূরদর্শিতার ফলে শুধুমাত্র হাজার -হাজার মেহনতি মানুষদের পথে ভাসিয়ে পরিযায়ী তকমা কেন? কেনই বা তাঁদের মৃত্যুর মুখে নির্মমভাবে ঠেলে দেওয়া? কেনই বা তাঁদেরই একমাত্র করোনা রোগের উৎসে চিহ্নিত করা হলো? কেন এই বৈষম্য?
শাক দিয়ে মাছ ঢাকা? বলদ কেনাবেচা?
ভাবতে অবাক হই, দিকপাল বরেণ্যদের এই পুণ্যভূমিতে --- রাজনৈতিক সেবায়েতরা নন, মিডিয়ার গালগপ্প নয়, একমাত্র "কোভিড ১৯" আজ জাতি-ধর্ম নির্বিশেষে সর্বস্তরের মানুষকে জীবনযুদ্ধে একত্রিত করে তুলেছে। চোখ মেলে দেখতে শিখিয়েছে, প্রতিবাদ - প্রতিরোধ করতে শিখিয়েছে।
যার পরিণাম, বিভিন্ন জায়গায় রেশন দুর্নীতি থেকে অসাধু রেশন ডিলার ঘেরাও, নাগরিক পরিষেবার বিভিন্ন দাবিতে সরকারি অফিস ঘেরাও, পথ অবরোধ, রাজনৈতিক নেতানেত্রী মুক্ত অধিকাংশ চিকিৎসা ব্যবস্থা থেকে সামাজিক অবস্থা, বেসরকারি কলেজ, বিদ্যালয়ের অমানবিক এবং তুঘলকি সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে অভিভাবকদের ঘেরাও - অবস্থান আজ মুহূর্মুহু।
দিন সমাগত, এটা আর ভাবার প্রয়োজন নেই। যার অনৈতিক পেশীক্ষমতা এবং যার অঢেল অর্থ, সে তেমন বড়ো মান্যিগণ্যি। জেনে রাখা ভালো, কোনো রোগই এই দুইয়ের ধার ধারে না। তাহলে আমরাই বা কেন?
দিন সমাগত, এটা আর ভাবার প্রয়োজন নেই। যার অনৈতিক পেশীক্ষমতা এবং যার অঢেল অর্থ, সে তেমন বড়ো মান্যিগণ্যি। জেনে রাখা ভালো, কোনো রোগই এই দুইয়ের ধার ধারে না। তাহলে আমরাই বা কেন?
পরিশেষে, আমাদের মনে রাখতে হবে - রোগের সাথে আমাদের লড়াই, রোগীর সাথে নয়। তাই সমাজের সব রোগ নির্মূলে আমাদের সংহতি, অবস্থান, লড়াইকে এগিয়ে নিয়ে চলতে হবে, রোগ মুক্ত সমাজ গড়ার প্রত্যাশায়।
শব্দের মিছিল
১২ই জুলাই / কলকাতা
0 মন্তব্যসমূহ
সুচিন্তিত মতামত দিন