শব্দের মিছিল

শব্দের মিছিল
কৃষি প্রধান ভারতে কৃষকের আত্মহত্যার সংবাদ যেখানে শিরোনাম,যেখানে প্রায় সমগ্র ভারতের নানা স্থানে দলিত শ্রেণীর উপর অত্যাচার হত্যা নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়, যেখানে একুশ শতকের দ্বিতীয় দশকে দাঁড়িয়ে আধুনিক সমাজ ব্যবস্থায় ভারতীয় নারী নিগৃহীত, অত্যাচারিত, ধর্ষিত, যেখানে মানুষের সেবায় নিয়েজিত রাজনৈতিক সেবায়েতদের উগ্রজাতীয়তাবাদ, ধর্মান্ধতা, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সন্ত্রাস সহ অমানবিক ক্রিয়াকলাপের জন্য জাতি আজ বিপদাপন্ন , সেখানে খুব স্পষ্টভাবেই বলা যায় - দলিত শ্রেণীর মহান প্রতিভূ আম্বেদকর প্রণীত ভারতীয় সংবিধান সুরক্ষায় নির্বাচিত প্রতিনিধিরা আক্ষরিক অর্থেই তাঁবেদার, অক্ষম এবং অকর্মা দেশ ও নাগরিকের প্রভূত উন্নতি সাধনে। 

দেশ, দেশাত্মবোধ, জনগণ এখন কথার কথা মাত্র।বরং আমরা ক্রমশ বুঝে নিতে শিখলাম শুধু অর্থ, কীর্তি কিংবা সচ্ছলতা নয়, আরও কোনও এক বিপন্ন বিস্ময়ে আমরা ধাবিত।স্বাধীনতা উত্তর ভারতে ভাষাভিত্তিক রাজ্য গঠন, রাষ্ট্রভাষা নির্বাচন এসব গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা প্রবাহ জনগণের মনে যে বিভেদের বীজ বপন করেছিল, তা নির্মূল হয়েছে বলা যায় না বরং রাজনীতির চতুরাঙ্গিকে ভাষার সাথে ধর্মের নিপুণ মিশ্রণে এবং তার বহির্প্রকাশ আজ আরও প্রকট এবং ভয়াবহ। 

আমরা অধিকাংশই অবগত, ধর্মের ভিত্তি মূলত বিশ্বাস।এই বিশ্বাস অনড়।অপরদিকে সভ্যতার ভিত্তি বিজ্ঞান।এই বিজ্ঞানের সত্য পরিবর্তনশীল এবং অগ্রসরমান আর ধর্ম অপরিবর্তনীয়। ধর্ম বিশ্বাসের মধ্যে বেঁধে রাখে।এই বেঁধে রাখার মধ্যেও আছে মানুষের মধ্যে শৃৃঙ্খলাবোধ, সততা, ন্যায়পরায়ণতা ও পরস্পরের প্রতি দায়িত্ববোধ। এক কথায় সামাজিক বাধ্যবাধকতা সৃষ্টির অমোঘ বার্তা।

অথচ, এই যে দেশে দেশে এক ধর্মাবলম্বীদের ওপর অন্য ধর্মাবলম্বীদের উৎপীড়ন, এটা কখনই ধর্মে ধর্মে সংঘাত নয়।ধর্ম মানবতার বিরুদ্ধাচারীও নয়, বরং তার সম্পূরক।অথচ অতীত থেকেই কতগুলো গোঁড়া, ধান্দাবাজ মানুষের প্রত্যক্ষ মদতে ধর্মকে বদ্ধ ও কুসংস্কার প্রথার মধ্যে আবদ্ধ রেখে প্রত্যেক ধর্মানুসারীদের মধ্যে ধর্মান্ধ শ্রেণীর উদ্ভব ঘটিয়ে চলেছেন।স্বাভাবিকভাবেই প্রকৃত ধর্মানুসারীরা নন বরং এই বদ্ধ সংস্কারে আবদ্ধ ধর্মান্ধরাই আজ প্রকৃত মানবতা ও মানবসভ্যতার অগ্রগতির বিরুদ্ধ।

অথচ, ধর্মনিরপেক্ষতা কোনো ধর্মবিরোধী ব্যবস্থা নয়। বরং সব ধর্মের সহাবস্থানের নিশ্চয়তা সে দেয়। এর মূলমন্ত্রই - ধর্ম যার যার, রাষ্ট্র সবার। 

অথচ আজ … এমনই এক সময়ের গর্ভ থেকে উঠে আসছে পঞ্চাশের দশক।যে সময় মন্বন্তর, স্বাধীনতা, দেশভাগ, কমিউনিস্ট পার্টির উত্থান।এ এমন এক সন্ধিক্ষণ, যেখানে চতুর রাজনৈতিক পালাবদলের স্বাদ দ্রুত বদলে মুখ্য হয়ে ওঠে ইনক্লাব জিন্দাবাদ, মানুষের অধিকার, ভূমির অধিকার, কাজের অধিকার, মানুষের মৌলিক সমগ্র অধিকারের দাবী এবং বাস্তবায়নের আন্দোলন। উঠে আসছে্ন, ব্যাতিক্রমি সেই শক্তি চট্টোপাধ্যায়।উঠে আসছেন সলিল চৌধুরী এবং আরও অনেকে ...

এ ভাবেই, সময়ের দাবি মেনে নিয়েই, কবিতা থেকে ক্রমশ মুখ্য হয়ে উঠছে চলমান ছবি। মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে গম্ভীর কণ্ঠে ‘এই রোকো’ বলে রুদ্ধশ্বাস গতিকে থামানোর সাহস আজকাল আর কেউ রাখেন না। কেউ লেখেন না – 

'ভাড়াটা বড্ড বেশী
এক হাজার মায়া
আর দুশো ভালোবাসা
খুচরো খরচ কিছু আশা প্রত্যাশা
এছড়া জলাঞ্জলি দিতে হলো ভাষা
তা হোক
তবু,আমি নেমে যাব
আমার টিকিট কাটা অনেক দূরে
এ গাড়ি যাবে না
আমি অন্য গাড়ি নেব'

এখন বদলে যাওয়া কবি ও কবিতার সংজ্ঞায় বোহেমিয়ান স্বভাব অনেক বেশি শান্ত, ঋজু এবং পোশাকি। নিরাপদ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে প্রতি পদক্ষেপের পিছনে কাজ করে চলে তাঁদের বর্ণাঢ্য হিসেবনিকেশ। এমনকি মুখশ্রী, ফিটনেসের প্রতি নজর রাখতে হচ্ছে পাছে চেয়ার হাতছাড়া হয়, পত্র ... সনদ ... টাকার অবমুল্যায়ন হয়!

ভাবছি কি লিখি, কেন লিখি! আসলে মানুষ বড় কাঁদছে। বাঁচার তাগিদে জোরালো হয়ে আসছে সেই কান্নার আওয়াজ। যে আওয়াজে ধ্বনিত হচ্ছে এই সময়ের নির্ভীক সাহিত্যিক অনিন্দিতা মণ্ডলের একটি লাইন ‘এখন রাজনীতিতে ঘেন্না ছাড়া কোনও স্বাদ জিভে লাগেনা’।


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ