কাশ্মীর
ষোলই জানুয়ারি ,২০১৯
ষোলই জানুয়ারি ,২০১৯
প্রিয় সুচরিতা ,
এখন অনেক রাত ।সারা কাশ্মীর জুড়ে তুষারঝড় চলছে। তুলোর মত বরফের আস্তরণে চারিদিক ঢাকা । আমি যেখানে থাকি ছোট্ট একটা ঘর ,মাথায় ছাউনি ।তার ওপর পুরু করে বরফ পড়েছে । সামনে খোলা জানলা।সেখানে বন্দুক ভরা আছে। ওপারে কাঁটাতার ,তার ওপারে পাকিস্তান। সবসময় আমাদের সজাগ থাকতে হয় কখন শত্রু আক্রমণ করে। এখানে দশ দিন সূর্য ওঠেনি। চারিদিক কুয়াশার চাদরে মোড়া । যেদিন সূর্য ওঠে বরফের ফাঁক গলে কি অপরুপ সেই দৃশ্য! আমি ছবি তুলে রাখি । দূরে একটা মন্দির আছে ।সেখানে গিয়ে মাঝে মাঝে প্রণাম করে আসি ।
খুব বাড়ির কথা মনে পড়ে । সেই আমার ছোট্ট গ্রাম ।এতদিনে মাঠের ফসল কাটা হয়েছে ।তার ওপর সর্ষে ছড়িয়ে দিলেই চারিদিক কেমন হলুদ বরণ । মাকে বল , আমাদের মাটির বাড়িটা এবার পাকা করব সেইজন্য তিল তিল করে টাকা জমিয়ে রাখছি ।
আমার পাশেই যে ছেলেটা ছিল , নাম রাকেশ ।কাল জঙ্গির গুলিতে তার প্রাণ গেল । এরোপ্লেনে তার মরদেহ যাবে পাঞ্জাবের এক গ্রামের বাড়িতে । সারা গ্রাম ভেঙ্গে পড়বে , শেষবার বিদায় জানাবে । বীর সেনার জন্য কুর্নিশ আর স্যালুট ।
একটা কান্না দলা পাকিয়ে উঠছে গলার কাছে । গ্রামে ওর নতুন বিবাহিত স্ত্রী আর ছেলে মেয়ে । বৃদ্ধা মা ও আছেন । মৃত্যু আমাদের পায়ে পায়ে ঘোরে তবু আমাদের শোক করতে নেই জানো সুচরিতা । কঠিন ওই বরফের মত করেছি শক্ত কঠিন হৃদয় ।নির্ভীক সেনার মত বলে উঠবো -জয় হিন্দ ! ভারত মাতা কি জয় !
এই শীতের রাতে তোমায় মনে পড়ছে । তোমার নরম মুখ ,আদর ,ভালবাসা ,শেষবারে আসার সময় গাল বেয়ে নেমে আসা জল --সব অনুভবে ধরে রেখেছি মনের গভীরে ।
জানি না কবে ছুটি পাব । কবে তোমায় দেখতে পাব , তবে একটা করে চিঠি লিখব তোমার জন্য । সে চিঠি কোনদিন তোমার কাছে পৌছবে না । অপেক্ষায় থেকো ।আমার দেওয়া লাল শাড়িটি পরে হলুদ সর্ষে খেতে তুমি দাঁড়িয়ে , এই ছবিটা আমি রোজ দেখতে পাই , স্পষ্ট দেখতে পাই ।
তোমার জন্য ভালবাসা অনিঃশেষ আর মাকে প্রণাম জানালাম ।
ইতি ---
সুপ্রতিম
0 মন্তব্যসমূহ
সুচিন্তিত মতামত দিন