“The purpose of silence and solitude, is to be able to see and hear. The Spirit speaks to us when our heart is still and silent before the Lord – not when we’re rushing about and doing our own thing in our own way” (Richard Foster—‘Celebration of Discipline’, p. 86).
জীবন এক অবিরাম সংগ্রাম। রণক্ষেত্রে আহত সৈনিকের মতই জীবনের যুদ্ধেও মানুষ প্রতিমুহূর্তে রক্তাক্ত, ক্ষতবিক্ষত হতে থাকে। প্রাত্যহিক দিন যাপনের ক্লান্তি, কর্মক্ষেত্রে, সংসারে সর্বত্র একে অপরকে পিছনে ফেলে এগিয়ে যাওয়ার হিংস্র প্রতিযোগিতা, রোগ-শোক, দারিদ্র্য, হতাশা, কাংক্ষিত বস্তু না পাওয়ার বেদনা—ইত্যাদি হাজার হাজার সমস্যায় মানুষ জ্বলে-পুড়ে খাক হয়ে যাচ্ছে। এই সমস্যার জাল থেকে সাময়িক নিষ্কৃতি পাওয়ার আশায়, একটু শান্তির সন্ধানে সে তাই ছুটে যায় নির্জনে, একান্তে, প্রকৃতির অকৃত্রিম সান্নিধ্যে। নির্জনতা তার মনকে সাময়িক ভাবে শান্ত করে, গ্রীষ্মের দাবদগ্ধ শরীর যেমন জুড়িয়ে দেয় সুশীতল জলে অবগাহন স্নান। সংসারের সকল কোলাহল একপাশে সরিয়ে রেখে ক্ষণকাল তার আপন মনের সঙ্গে আলাপ করার সুযোগ হয়। আর এই অবসরেই সে তার মনের ভিতর আরেক মনের সন্ধান পায়, যার সঙ্গে এতকাল ঘর করেও চেনা হয়নি তাকে! এই হল নির্জন বাস—নিজের অচিন মনকে চিনে নেওয়া, অন্তর্মুখ হওয়া, সংসার ও ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য বিষয়ের বাইরে এক অতীন্দ্রিয় বস্তুর রহস্য ভেদের আকুলতায় মথিত হওয়া।
নির্জন বাসের উদ্দেশ্য ও মনের উপর তার প্রভাব:
সন্ত আব্বা আরসেনিয়াস প্রথম জীবনে ছিলেন রোমান সেনেটর। তিনি অত্যন্ত জ্ঞানপিপাসু মানুষ ছিলেন। রোম সম্রাট থিওডোসিয়াস তাঁকে নিজ কন্যার গৃহশিক্ষক নিযুক্ত করেছিলেন। রাজপ্রাসাদের বৈভবের মধ্যে থেকেও তাঁর মনে তৃপ্তি ছিল না এবং ক্রমে বৈরাগ্যের প্রেরণায় তিনি ঈশ্বরের কাছে প্রত্যহ প্রার্থনা করতে শুরু করলেন, “প্রভু, আমাকে মুক্তির পথ দেখাও!” একদিন তিনি অশরীরী বানী শুনলেন, “আরসেনিয়াস! সংসার থেকে পালাও, তাহলেই তুমি রক্ষা পাবে”। তাই একদিন গোপনে, সবার অলক্ষ্যে তিনি রোম ছেড়ে ঈজিপ্টের পথে যাত্রা করলেন। পৌঁছালেন আলেকজান্দ্রিয়া শহরে। সেখানে পৌঁছে নির্জন মরুভূমিতে নিঃসঙ্গ জীবন কাটাতে লাগলেন। প্রার্থনাও চলতে লাগল আগের মত, “প্রভু, আমাকে মুক্তির পথ দেখাও!” একদিন আবার তিনি শুনলেন সেই অশরীরী বানী—“ আরসেনিয়াস! পালাও! মৌন ও প্রার্থনা পরায়ণ হও, সকল পাপ থেকে মুক্ত হওয়ার এই একমাত্র উপায়!” অতএব সংসার থেকে পালিয়ে নির্জনে নিঃসঙ্গ হওয়া, নীরবতার অনুশীলন করা ও প্রার্থনায় মগ্ন হওয়া—এই হল নির্জন বাসের প্রকৃত উদ্দেশ্য।
সাংসারিক কোলাহল থেকে দূরে গিয়ে, ব্যস্ততাকে সাময়িক বিরতি দিয়ে প্রকৃতির সান্নিধ্যে কয়েকটা দিন নির্জনে কাটালে তা আমাদের অবসন্ন, ক্লান্ত স্নায়ুগুলি সজীব করে তোলে। আবার আমরা জীবন-সমস্যার মোকাবিলা করার মত মানসিক সবলতা ফিরে পাই। কিন্তু ব্যক্তি ও মানসিক অবস্থা ভেদে এই সজীবতার স্থায়িত্ব ভিন্ন ভিন্ন। আমাদের মন স্বভাবতই বহির্মুখী। মন ইন্দ্রিয়ের সংযোগেই সুখী হয়, আবার ইন্দ্রিয়গুলি বিষয় ভোগের জন্য লালায়িত হয়। মনের সঙ্গে আমাদের অচ্ছেদ্য সম্বন্ধ। তাই চিরপরিচিত স্থান থেকে সরে গিয়ে নির্জনে বাস করলেই যে মনও নির্জন হবে, তা নয়। মন সদাই সঙ্গ খোঁজে। একে অপরের সঙ্গে কথা বলে সময় কাটায়, হয়তো কখনো কখনো তা অর্থহীন প্রলাপ। তাই নিঃসঙ্গ অবস্থায় মন ভয়াবহ ভাবে প্রতিক্রিয়া করে। সেইজন্যই অনেক সময় দেখা যায় যে, কোন কোন শান্ত, নির্জন পরিবেশে কিছু মানুষ এসে চিৎকার চেঁচামেচি করে, বিকট শব্দে মাইক বাজিয়ে সেই পবিত্র নীরবতার মাধুর্য নষ্ট করে চলে যায়। তাই নির্জন বাস করার জন্য চাই উপযুক্ত মানসিক প্রস্তুতি। তা না হলে নির্জনবাস আমাদের মধ্যে কোনও স্থায়ী প্রভাব ফেলতে পারে না। যেমন উপযুক্ত প্রস্তুতি ছাড়া ধ্যানাভ্যাস অনেক সময় মারাত্মক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করে, নির্জনবাসের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার। ধ্যানের চেষ্টায় মন অন্তর্মুখ হয়। এ যেন এক মন্থন ক্রিয়া। সমুদ্র মন্থনে যেমন উঠেছিল কালকূট-বিষ, মন-মন্থনেও উঠে আসে এমন সব অজানা বিষয়-বিষ, যা দেখে মানুষ বিস্মিত, আহত, ভীত হয়। মানসিক এই চাপ সহ্য করতে না পেরে অনেকে পাগল পর্যন্ত হয়ে যায়। অনেকে যে জপ-ধ্যান করার যথেষ্ট সময় পান না বলে অভিযোগ করেন, সেই অভিযোগের যথার্থতা প্রমাণিত হয় নির্জনে এলে। যখন অন্য সব কাজ থেকে ছুটি দিয়ে সেই ব্যস্ত মানুষটিকে শুধু জপ-ধ্যান করার পর্যাপ্ত সময় দেওয়া হয়, তখনই সে বুঝতে পারে যে তার অশান্ত মন মনের গভীরে ডুব দিতে শেখেনি, বাচ্চা ছেলের মত এতদিন কেবল অভিযোগই করেছে।
“The Way of the Heart” p. 27-28 বইটিতে Henri Nouwen লিখেছেন, সম্পূর্ণ একাকী অবস্থায় যখন আমরা নির্জনে বাস করি, তখন যাবতীয় পিছুটান ফেলে ঈশ্বরের মুখোমুখি হই। কথা বলার সঙ্গী, কিম্বা আধুনিক যুগের নিত্যসঙ্গী মোবাইল ফোন থাকে না, না কোন মিটিং, মনোরঞ্জনের জন্য কোন গান শোনা, সঙ্গ দেওয়ার জন্য কোন বই—কিছুই থাকে না। সকল উপাধি বর্জিত ‘নগ্ন’, সম্পূর্ণ অসহায়, দুর্বল, বঞ্চিত, বিধ্বস্ত সেই আমিত্ব জগত-সংসারের কাছে মূল্যহীন ! এই তুচ্ছতা, এই সম্পূর্ণ অসহায়তাই নির্জনে আমাদের একমাত্র সঙ্গী। ‘আমি কেউ নই, কিচ্ছু নই’—এই অনুভূতি এতই ভয়ংকর যে তখন সমস্ত সত্তা প্রাণপণে ছুটে যেতে চায় সঙ্গীদের কাছে, কর্মব্যস্ততার মধ্যে, আমাদের যাবতীয় বিক্ষিপ্ততার মধ্যে—যাতে এই ভয়ানক শূন্যতা থেকে পালিয়ে গিয়ে নিজেকে বিশ্বাস করাতে পারি, আমরা যেন একটা কেউকেটা! শুধু তাই নয়, যখনই আমরা নির্জনবাসের সিদ্ধান্ত নিই, যত রাজ্যের কিম্ভুত চিন্তা, অবাস্তব কল্পনা, কুদৃশ্য মনকে চঞ্চল করে তোলে। বাঁদর যেমন কলাগাছে লাফ দেয়, তেমন করে ঐসমস্ত বাজে চিন্তাগুলো আমাকে একলা পেয়ে মনের মধ্যে ঝাঁপিয়ে পড়ে। লোভ, ক্রোধ প্রভৃতি তাদের কুৎসিত চেহারা নিয়ে মনের সামনে হাজির হয়। শত্রুদের সঙ্গে আমরা হয়তো মনে মনে ঝগড়া করি অথবা কামনা ভরা স্বপ্ন দেখি। শূন্যতা ও রিক্ততার অন্ধকার গহ্বর থেকে পালিয়ে আমাদের মিথ্যা আমিত্বকে তার সমস্ত মিথ্যা গৌরবের মধ্যে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। নির্জনতার ‘মরুভূমি’ আমাদের এই ভয়ানক অসহায়তার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে দেয়, এবং ঈশ্বরের চরণে নিঃশর্ত আত্মসমর্পণে বাধ্য করে।
প্রকৃত নির্জন বাস:
ভগবদ্গীতায় “বিবিক্তদেশসেবিত্বমরতির্জনসংসদি” (১৩/১০) জ্ঞানের লক্ষণ বলা হয়েছে। অর্থাৎ নির্জন স্থানে বসবাসে আগ্রহ, জনসংসর্গে অনীহা—এইসমস্তকে জ্ঞান বলা হয়। নির্জন স্থান বলতে এখানে বোঝান হয়েছে নদীতীর, অরণ্য, দেবালয় অথবা এমন কোন স্থান যেখানে মন সহজেই শান্ত হয়। কিন্তু আধ্যাত্মিক পথের নবীন সাধকের ক্ষেত্রে এই নির্জন পরিবেশ থেকে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা কম। যতক্ষণ না সে নিজেকে মন থেকে পৃথক সত্তা বলে অনুভব করতে পারছে এবং মনের গতিবিধির সাক্ষী স্বরূপ না হতে পারছে, ততক্ষণ তার পক্ষে নির্জন বাস সাধন সহায়ক হবে না। শ্রীরামকৃষ্ণ বলেছেন, “সংসার জল, আর মনটি যেন দুধ। যদি জলে ফেলে রাখ, তাহলে দুধে-জলে মিশে এক হয়ে যায়, খাঁটি দুধ খুঁজে পাওয়া যায় না। দুধকে দই পেতে মাখণ তুলে যদি জলে রাখা যায়, তাহলে ভাসে। তাই নির্জনে সাধনা দ্বারা আগে জ্ঞানভক্তিরূপ মাখন লাভ করবে। সেই মাখন সংসার-জলে ফেলে রাখলেও মিশবে না, ভেসে থাকবে”(পৃঃ২০)।
আমরা জানি যে অশান্ত মন আমাদের নির্জন বাসের সুফল থেকে বঞ্চিত করে। দেহ-মনের সঙ্গে একাত্মতা হেতু প্রকৃত নির্জন বাস আমাদের কাছে কেবলমাত্র পুঁথিগত ধারণা হিসাবেই রয়ে যায়। বেদান্ত বলে, আমরা দেহ নই, মন নই, বুদ্ধিও নই, আমরা শুদ্ধ জ্যোতিঃস্বরূপ—“জ্যোতিরহম্ বিরজা বিপাপ্মা”। যতক্ষণ আমরা নিজেদের দেহ-মন থেকে পৃথক সত্তা রূপে অনুভব করতে না পারি, মনের গতিবিধির সাক্ষী হতে না পারি, ততক্ষণ আমরা বুঝতেই পারি না যে প্রকৃত নির্জনতার নৈঃশব্দ আমাদের অন্তরেই বিরাজিত। বাইরের প্রকৃতি কেবল তা উপভোগ করার সহায়ক মাধ্যম হিসাবে কাজ করে। যতই আমরা নিজেদের দেহ-মন থেকে পৃথক করতে পারব, ততই আমাদের জাগতিক বস্তুর প্রতি অনাসক্তি আসবে এবং ততই আমরা অন্তরের এই প্রকৃত নির্জনতার পূর্ণ স্বাদ গ্রহণ করতে পারব।
প্রকৃত নির্জন বাসের উপযোগিতা:
“The fruit of SILENCE is prayer.
The fruit of PRAYER is faith.
The fruit of FAITH is love.
The fruit of LOVE is service.
The fruit of SERVICE is peace!”(Mother Theresa)
যখন আমরা নীরবতার সাধনা করি, অন্তর তখন হয়ে ওঠে প্রার্থনা-মুখর। নিরন্তর প্রার্থনার ফলে জন্মায় এক অটুট বিশ্বাস। এই বিশ্বাস থেকে আসে প্রেম—যে প্রেম স্বার্থপর ব্যক্তি প্রেম নয়, ‘সর্বভূতে আমার প্রেমময় বিরাজমান’—এই বোধে সার্বজনীন প্রেমের উদয় হয় এবং যথার্থ সেবার ইচ্ছা জন্মায়। নিঃস্বার্থ সেবার মাধ্যমে হৃদয়ে আসে গভীর প্রশান্তি।
যদিও মানসিক অবস্থা ভেদে নির্জনবাসের প্রভাব ব্যক্তিবিশেষে ভিন্ন ভিন্ন, তথাপি, নির্জনবাস সাধারণভাবে আমাদের দুটি উপকার করেঃ—(১)আমরা মনের কার্যকলাপ সম্বন্ধে সতর্ক হয়ে উঠি—এ যেন মনকে নিয়ে একাকী বেড়াতে বের হওয়া। দৈনন্দিন হাজারো কর্মব্যস্ততার মধ্যে থেকে মনের এহেন নিরীক্ষণ সম্ভবপর নয়। (২)মনের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে আমরা ওয়াকিবহাল হয়ে উঠি। প্রাত্যহিক জীবনে আমরা মনটাকে যেন সহস্র টুকরোয় ভাগ করে বিভিন্ন বিষয়ে ফেলে রাখি। একান্ত অবসরে যখন অন্যান্য কাজ থেকে নিষ্কৃতি মেলে, তখন চোখ বন্ধ করে ঈশ্বরের মুখোমুখি হতে গিয়ে দেখি মন বেরিয়ে পড়েছে বিশ্ব-পর্যটনে! আমাদের জপ-ধ্যানে গভীরতা না আসার সঠিক কারণটি তখন মর্মে মর্মে অনুভব করতে পারি। আমরা নিজেদের প্রতি আগের থেকে বেশী দায়িত্ববান হয়ে উঠি এবং নিজের অক্ষমতাকে কর্মব্যস্ততার অজুহাত দিয়ে সান্ত্বনা পুরষ্কার দেওয়ার মনের এই কৌশল প্রয়োগের চেষ্টা বন্ধ করি। নির্জন বাসের মাধ্যমে আমরা আমাদের মনের শক্তি পরীক্ষা করার সুযোগ পাই, এর অক্ষমতা, সীমাবদ্ধতা প্রভৃতি খুব ভাল ভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারি। নিজেদের ঠকানোর চেষ্টা করতে তখন লজ্জা বোধ হয় এবং আমার ব্যস্ততা, আমার পরিবেশ—ইত্যাদির উপর দোষারোপ না করে আমাদের দৈনন্দিন কর্মকেই ‘স্পিরিচুয়ালাইজ’, অর্থাৎ সাধনার অঙ্গ হিসাবে পরিণত করার জন্য যত্নবান হতে শিখি।
বাহ্য নৈঃশব্দের সঠিক ব্যবহার:
আমাদের মনের প্রধান দুটি দিক। একটি মানস—যেখানে সমস্ত ঘটনা ছায়াছবির মত চলতে থাকে, আমরা বলে থাকি ‘সমস্ত দৃশ্য মানসপটে ভেসে উঠছে’। মনের এই স্তরে সর্বদা সংকল্প-বিকল্পের টানাপোড়েন চলতে থাকে। মনের আরেকটি অংশ হল বিচারপ্রবণ, যেখানে সমস্ত ঘটনা ও দৃশ্য তোলাপারা করে বিচারের পরে মন একটি সিদ্ধান্তে পৌঁছায় (discriminative faculty). একে বলে বুদ্ধি। এই বুদ্ধির সবচেয়ে শক্তিশালী (dynamic) দিক হল ‘ইচ্ছাশক্তি’। এটি মনের অতি সূক্ষ্ম অংশ। বুদ্ধি যত পরিশীলিত হতে থাকে, ইচ্ছাশক্তি ততই জোরাল হয়ে ওঠে। সাধারণ মানুষ, যারা সেই অর্থে আধ্যাত্মিক চেতনা সম্পন্ন নন এবং নিজেদের দেহমনাতিরিক্ত জ্যোতির্ময়, অবিনশ্বর আধ্যাত্মিক সত্তা রূপে চিন্তা করতে অভ্যস্ত নন, তাদের ক্ষেত্রে এই বুদ্ধি অংশটি ততটা সক্রিয় থাকে না, ইচ্ছাশক্তিও থাকে সুপ্ত। তারা মনের স্থূল অংশ দ্বারা ইন্দ্রিয়জ বিষয় ভোগে ব্যাপৃত থাকেন। তখন তার সকল কার্যই হয় স্বার্থ প্রণোদিত এবং সে সহজেই পরিস্থিতির শিকার হয়ে পড়ে। যতক্ষণ আমরা মনের দাসত্ব করি, কোনও অসুবিধা অনুভব করি না। মন যা চায়, ‘আবদেরে খোকা’র শত আবদার আমরা তৎক্ষণাৎ পূরণ করি। কিন্তু অসুবিধা সৃষ্টি হয় তখন, যখন আমরা মনকে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা আরম্ভ করি, এর তথাকথিত বায়না মানতে অস্বীকার করি। মন বেঁকে বসে, সে আমাদের সহযোগিতা তো করেই না, উপরন্তু ভয়ানক বিদ্রোহ শুরু করে। এর ফল হয় মারাত্মক। অধিকাংশ ক্ষেত্রে মনের দাবী না মানার মাশুল চোকাতে হয় শারিরীক অসুস্থতার মাধ্যমে। ভগব্দগীতার ষষ্ঠ অধ্যায়ের পঞ্চম ও ষষ্ঠ দুটি শ্লোক এক্ষেত্রে প্রণিধান যোগ্য— “উদ্ধরেদাত্মনাত্মানং নাত্মানমবসাদয়েৎ/আত্মৈব হ্যাত্মনো বন্ধুরাত্মৈব রিপুরাত্মনঃ” এবং “বন্ধুরাত্মনস্তস্য যেনাত্মৈবাত্মনা জিতঃ/অনাত্মনস্তু শত্রুত্বে বর্তেতাত্মৈব শত্রুবৎ”। এখানে একটি ‘আত্মা’ শব্দে জীবাত্মা এবং অপর দুটি ‘মন’ ও ‘বুদ্ধি’ বোঝান হয়েছে। অসংযত মনই আমাদের আত্মোন্নতির পথে বাধাস্বরূপ। বিবেক যুক্ত মন বা পরিশীলিত বুদ্ধি দ্বারা অসংযমী মনকে বশীভূত করতে পারলে সেই মনই জীবাত্মার প্রকৃত বন্ধু হয়ে উঠবে। কিন্তু এই অসংযত, অশান্ত মনকে কিভাবে বশে আনা যায়? সাধকের এই চিরন্তন প্রশ্ন অর্জুনের মুখে উচ্চারিত হয়েছে—“চঞ্চলং হি মনঃ কৃষ্ণ প্রমাথি বলবদ্দৃঢ়ম্/তস্যাহং নিগ্রহং মন্যে বায়োরিব সুদুষ্করম্”। যার উত্তরে শ্রীকৃষ্ণ বলছেন, “অভ্যাসেন তু কৌন্তেয় বৈরাগ্যেণ চ গৃহ্যতে”(গীতা>৬/৩৪,৩৫)। অর্থাৎ, হে কৃষ্ণ, আমার মন যে বড়ই চঞ্চল, ভীষণ বলবান, আমার ইন্দ্রিয়গুলোকে জোর করে টেনে নিয়ে যেতে চাইছে ভোগে, একে আমি কি করে বশে আনব? ভগবানের উত্তরঃ অভ্যাস দ্বারা ক্রমে বিষয় ভোগে বৈরাগ্য আসবে। অভ্যাস। যে কোনও বিষয় শিক্ষা করতে গেলেই চাই অসীম ধৈর্য ও নিষ্ঠা সহ পুনঃ পুনঃ অভ্যাস, সে নৃত্যই হোক, সঙ্গীতই হোক বা আধ্যাত্মিকতা। অভ্যাসের কোন বিকল্প নেই। তাই অভ্যাসের গুরুত্ব অনস্বীকার্য। নির্জন বাস আমাদের মনের সঙ্গে বোঝাপড়া করার এই অভ্যাসের সুযোগ করে দেয়। শ্রীরামকৃষ্ণ বলছেন, “সংসারে থেকেও এক-একবার নির্জনে বাস করতে হয়। সংসারের বাহিরে একলা গিয়ে যদি ভগবানের জন্য তিনদিনও কাঁদা যায় সেও ভাল। এমনকি অবসর পেয়ে একদিনও নির্জনে তাঁর চিন্তা যদি করা যায়, সেও ভাল”(পৃঃ৮৯)।
নির্জন বাসের মানসিক প্রস্তুতি:
মাদার থেরেসাকে একবার জিজ্ঞেস করা হল, "মাদার, আপনার সিস্টারদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার সময় কোন্ বিষয়টিকে আপনি সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিবেচনা করেন?” উত্তরে তিনি বললেন, "Silence. Interior and exterior silence. Silence is essential in a religious house. The silence of humility, of charity, the silence of the eyes, of the ears, of the tongue. There is no life of prayer without silence." অন্য এক সময়ে তিনি নীরবতা সম্বন্ধে তাঁর দর্শন ব্যাখ্যা করে বলেন, “আমরা ঈশ্বরকে দেখতে চাই, কিন্তু কোলাহল ও অস্থিরতার মধ্যে তাঁর দর্শন মেলে না। দেখ, গাছ থেকে শুরু করে ফুল, ঘাস প্রভৃতি প্রকৃতির প্রত্যেকটি বস্তু কিভাবে সম্পূর্ণ নীরবে বিকশিত হয়ে ওঠে!” অবশেষে দৃঢ় ভাবে তিনি বললেন, “ভগবান নীরবতার বন্ধু। তিনি কথা বলেন নৈঃশব্দের ভাষায়। তাঁকে আবিষ্কার করতে হলে, তাঁর সঙ্গ পেতে হলে, তাঁর সঙ্গে কথা বলতে হলে, তাঁর কথা শুনতে হলে, এবং তাঁর বানী হৃদয়ের গভীরে ধারণ করতে হলে আমাদেরও নীরব হতে হবে। নীরবে ঈশ্বরের সঙ্গে আমাদের একাকী হতে হবে যাতে আমরা রূপান্তরিত হয়ে নব জন্ম লাভ করতে পারি। নীরবতার মধ্যে দিয়েই আমরা জীবন সম্পর্কে নূতন দৃষ্টিকোণ লাভ করি, নীরবতার মধ্যে দিয়ে আমরা ভগবৎ কৃপায় পূর্ণ হয়ে উঠি, তখন আমাদের প্রতিটি কর্ম হয়ে ওঠে আনন্দময়”।
কথামৃতে শ্রীরামকৃষ্ণ নির্জন বাস সম্বন্ধে যে উক্তিগুলি করেছেন, সেগুলি অবশ্য প্রণিধান যোগ্য। তিনি বলছেন, “সংসারের ভিতর ও বিষয়কাজের ভিতর রাতদিন থাকলে ঈশ্বরে মন হয় না। মাঝেমাঝে নির্জনে গিয়ে তাঁর চিন্তা করা বড় দরকার। প্রথম অবস্থায় মাঝে মাঝে নির্জন না হলে ঈশ্বরে মন রাখা বড়ই কঠিন”(পৃঃ১৯)। আবার ঐ একই দিনে মাষ্টারমশাইকে বলেছেন, “তেল হাতে মেখে তবে কাঁঠাল ভাঙতে হয়! তা না হলে হাতে আঠা জড়িয়ে যায়। ঈশ্বরে ভক্তিরূপ তেল লাভ করে তবে সংসারের কাজে হাত দিতে হয়। কিন্তু এই ভক্তিলাভ করতে হলে নির্জন হওয়া চাই। মাখন তুলতে গেলে নির্জনে দই পাততে হয়। দইকে নাড়ানাড়ি করলে দই বসে না। তারপর নির্জনে বসে, সব কাজ ফেলে দই মন্থন করতে হয়। তবে মাখন তোলা যায়। আবার দেখ, এই মনে নির্জনে ঈশ্বরচিন্তা করলে জ্ঞান বৈরাগ্য ভক্তি লাভ হয়। কিন্তু সংসারে ফেলে রাখলে ওই মন নীচ হয়ে যায়। সংসারে কেবল কামিনী-কাঞ্চন চিন্তা”(পৃঃ২০)।
দৈনন্দিন জীবনে অনাসক্তির অভ্যাস:
গীতায় শ্রীকৃষ্ণ বলছেন, “অনিত্যমসুখং লোকমিমং প্রাপ্য ভজস্ব মাম্,”(৯/৩৩) অর্থাৎ “জগৎ-সংসার দুঃখময়, অস্থায়ী। এখানে যখন এসেই পড়েছ, মনপ্রাণ দিয়ে আমার ভজনা কর।”
শ্রীরামকৃষ্ণ শিখিয়ে দিচ্ছেন সংসারে থেকে কি ভাবে অনাসক্তির অভ্যাস করতে হয়। “সব কাজ করবে কিন্তু মন ঈশ্বরেতে রাখবে। স্ত্রী, পুত্র, বাপ, মা—সকলকে নিয়ে থাকবে ও সেবা করবে। যেন কত আপনার লোক। কিন্তু মনে জানবে যে, তারা তোমার কেউ নয়। বড় মানুষের বাড়ির দাসী সব কাজ কচ্ছে, কিন্তু দেশে নিজের বাড়ির দিকে মন পড়ে আছে। আবার সে মনিবের ছেলেদের আপনার ছেলের মতো মানুষ করে। বলে ‘আমার রাম’ ‘আমার হরি’, কিন্তু মনে বেশ জানে—এরা আমার কেউ নয়। কচ্ছপ জলে চরে বেড়ায়, কিন্তু তার মন পড়ে আছে আড়ায়—যেখানে তার ডিমগুলি আছে। সংসারের সব কর্ম করবে, কিন্তু ঈশ্বরে মন ফেলে রাখবে।”(পৃঃ২০)
রামপ্রসাদের কণ্ঠেও ধ্বনিত হয় একই বানী—‘ঈশ্বরই একমাত্র সত্য’—“ভেবে দেখ মন কেউ কারো নয়, মিছে ভ্রম এ সংসারে, ভুলোনা দক্ষিণাকালী বদ্ধ হয়ে মায়াজালে।”
(১) কর্মের প্রতি সঠিক মনোভাব গড়ে তোলা—সর্বভূতে আমার প্রেমময় বিরাজ করছেন এই বোধে শুষ্ক কর্তব্য বোধে নয়, বরঞ্চ প্রেমের ভাব নিয়ে সেবাজ্ঞানে কর্ম করা, যা পূজারই নামান্তর। স্বামীজীর বিখ্যাত কবিতা-- “বহুরূপে সম্মুখে তোমার, ছাড়ি কোথা খুঁজিছ ঈশ্বর/জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর!”
(২) নিত্য জপ-ধ্যান, বিচার ও প্রার্থনা—শ্রীশ্রীমা সকাল সন্ধ্যে দু’বেলা ঠিকঠাক জপ-ধ্যান করার উপর খুব গুরুত্ব দিতেন, তিনি বলতেন, “জপ-ধ্যান মনের হাল ধরে থাকে”। শ্রীরামকৃষ্ণ বলতেন, “বিচার করা খুব দরকার। কামিনী-কাঞ্চন অনিত্য। ঈশ্বরই একমাত্র বস্তু…জনক রাজা নির্জনে কত সাধন করেছিলেন, সাধন করলে তবে তো সংসারে নির্লিপ্ত হওয়া যায়”(পৃঃ৩৮)।
নির্জন বাস কোন স্বাস্থ্যকর পরিবেশে আরোগ্য লাভ করতে যাওয়া নয়—এ হল এক রূপান্তরের যাত্রা, যেখানে পুরাতন সত্তার মৃত্যু হয় আর এক নূতন সত্তার জন্ম হয়।
(৩) বাস্তবে প্রয়োগ—জীবনে চলার পথে প্রত্যেক দিনই নীরবতা সাধন করার অনেক সুযোগ আমাদের সামনে উপস্থিত হয়, ঈশ্বরের করুণায় পূর্ণ আস্থা স্থাপন করে আমরা মানুষের প্রতি ভালবাসায় এই সাধনা চালিয়ে যেতে পারি।
১) যখন কেউ আমাদের অপমান করে, নীরবে মাথা পেতে তা যেন গ্রহন করতে পারি।
২) যে আমাকে অভিশাপ দেয়, তার উদ্দেশ্যে যেন আশীর্বানী উচ্চারণ করতে পারি।
৩) জনসমক্ষে যখন কেউ আমার নিন্দা করে, হাসিমুখে যেন তা উপেক্ষা করতে পারি এবং খুশিমনে, শান্ত ভাবে তার জন্য ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা জানাতে পারি।
৪) আলোচনা সভায় আমার আগে বলার সুযোগ পাক অন্যেরা।
৫) সবচেয়ে বিরক্তিকর কিংবা অসম্মানজনক কাজ করতে হলেও কারুর মনোযোগ পাওয়ার জন্য ব্যস্ত না হয়ে, নীরবেই যেন তা পালন করতে পারি।
৬) যদি আমাদের উপর অন্যায় হয়ে থাকে, তবে ন্যায়বিচারের জন্য ও নিজ ভাবমূর্তি রক্ষার জন্য নিজের বাক্য ও কর্মের উপর নির্ভর না করে সম্পূর্ণ ভাবে ঈশ্বরের বিচারের উপর যেন আস্থাশীল হতে পারি।
৭) চরম সাফল্যের মুহূর্তেও যেন নীরব থাকতে পারি, মানুষ নয়, ঈশ্বরের প্রীত্যর্থে করতে পারি সর্ব কর্মানুষ্ঠান।
নৈঃশব্দের মধুর সঙ্গীত—সাধক জীবনের পরম প্রাপ্তি:
It is not joy nor sorrow,
But that which is between,
It is not night nor morrow,
But that which joins them in.
It is sweet rest in music;
And pause in sacred art;
The silence between speaking;
Between two fits of passion --
lt is the calm of heart….
It is death between two lives,
And lull between two storms,
The void whence rose creation,
And that where it returns…..
It is the Goal of Life,
And Peace-- its only home!
(Swami Vivekananda>Complete Works>vol.4>Poem ‘Peace’)
শ্রীশ্রীমা সারদাদেবীর জীবন ছিল প্রকৃত নির্জন বাসের আদর্শ উদাহরণ। তিনি সংসার ত্যাগ করেন নি, সংসারে থেকে সমস্ত সমস্যার মুখোমুখি হয়ে সাহসের সঙ্গে তার মোকাবিলা করেছেন, কিন্তু তাঁর মন ছিল সদাই “সর্বভূতস্থ চাত্মানং সর্বভূতানি চাত্মনি/ঈক্ষতে যোগযুক্তাত্মা সর্বত্র সমদর্শন”—এই সমত্ব বোধে দৃঢ় প্রতিষ্ঠিত। সাধারণ মানবীর মতই তিনি বিভিন্ন পরিস্থিতিতে অকৃত্রিম আনন্দ প্রকাশ করতেন বা কান্নায় আকুল হতেন। কিন্তু তাঁর সেই কান্নায় দুঃখ বা সমবেদনার থেকেও বেশী থাকত সহমর্মিতা (empathy), যার মাধ্যমে তিনি দুঃখী মানুষটির শোক হরণ করে নিতেন। তিনি তাঁর জীবন দিয়ে দেখিয়ে দিয়ে গেছেন, কি ভাবে দেহ-মন যে কোন পরিস্থিতিতেই থাকুক না কেন, অজস্র কর্মের মধ্যেও হৃদয়ে যদি নীরবতার প্রশান্তি বিরাজ করে, সংসারে থেকেও পূর্ণ অনাসক্ত থাকা সম্ভব। দক্ষিণেশ্বরে থাকাকালীন রাত তিনটে থেকে শুরু করে সমস্ত দিন অতন্দ্র পতিসেবা ও ভক্তসেবা, উদ্বোধনে ও জয়রামবাটিতেও অগণিত ভক্তকে দীক্ষাদান ও অবিরাম কাজের মধ্যে থেকেও তিনি বলতেন, হৃদয়ে আনন্দের পূর্ণ ঘট বিরাজ করছে।
নির্জন বাস ও নীরবতা অভ্যাসের মূল্য কতখানি, তার চরম পরীক্ষা হয় তখনই, যখন তা আমাদের অপরের প্রতি প্রেমে উজ্জীবিত করে তোলে। যখন নির্জনে, নীরবে আমরা প্রেমময় ঈশ্বরের সান্নিধ্যে বাস করি, আর তাঁর প্রেমের অমৃত আমাদের পবিত্র করে, শান্তিতে ভরিয়ে তোলে, তখন আমরা অপরকেও প্রকৃত অর্থে আরও বেশী ভালবাসতে পারি। আমরা অনুভব করি, এই নীরবতা যে শুধু আমাদের একান্ত মুহূর্তগুলিকেই ভরিয়ে তুলেছে, তা নয়। তা বাক্ সংযমেরও শিক্ষা—যার ফলে আমাদের সম্পর্কগুলি আরও মধুময় হয়ে ওঠে। রিচার্ড ফস্টার তাঁর ‘Celebration of Discipline’-এ বলেছেন, “আরও সংবেদনশীলতা, আরও বেশী করুণা—এই হল নির্জন বাসের ফসল। তখন সঙ্গে থেকেও অসঙ্গ হওয়ার স্বাধীনতা অনুভব করা যায়। মানুষের প্রয়োজনের প্রতি আরও বেশী মনোযোগ দেওয়া যায় এবং তাদের যন্ত্রণায় আরও বেশী সাড়া দেওয়ার ক্ষমতা লাভ হয়” (পৃঃ ৯৫)।
যিশু তাঁর শিষ্যদের বলেছিলেন, “ঘরের কোনে নির্জনে প্রার্থনা কর! জনহীন স্থানে একলা চলে এস! ক্ষণিক বিশ্রাম নাও!” সেন্ট ফ্রান্সিস বলেছেন, “পাখী যেমন আকাশে উড়ে উড়ে শ্রান্ত হয়ে বৃক্ষ শাখায় এসে বিশ্রাম করে, হরিণ যেমন গ্রীষ্মের প্রখর তাপে ঘন ঝোপের আড়ালে নিজেকে লুকিয়ে শীতল ছায়া উপভোগ করে, সেরকম আমাদেরও আত্মার বিশ্রামের জন্য খুঁজে নিতে হবে নৈঃশব্দের আশ্রয়।” তা পর্বত গুহায় বা অরণ্যের গভীরে নাও হতে পারে, আমাদের হৃদয়ের গভীরে ডুব দিয়ে এমনকি তুমুল কর্মব্যস্ততা বা কোলাহল মুখরতার মধ্যেও আমরা সেই প্রশান্তির সমুদ্রে অবগাহন স্নান করে নব নব রূপে সঞ্জীবিত হয়ে উঠতে পারি। নির্জনতার সন্ধানে হৃৎকন্দরে ডুব দেওয়ার সাধনই হল দৈনন্দিন জীবনে শান্তির গোপন রহস্য, আর এই সাধনার জন্য দূরে কোথাও যাওয়ার প্রয়োজন নেই, যেকোনও সময়, যে কোনও অবস্থায় আমরা তা অভ্যাস করতে পারি।
“Herein lies the whole secret of Existence. Waves may roll over the surface and tempest rage, but deep down there is the stratum of infinite calmness, infinite peace, and infinite bliss.”
(Complete Works of Swami Vivekananda>Vol.4)
[কৃতজ্ঞতা স্বীকার: সারদেশ্বরী আশ্রম, বাগবাজার, কলকাতা থেকে প্রকাশিত বার্ষিক পত্রিকা ‘শুভম’-এ প্রথম প্রকাশিত]
sumanasaha948@gmail.com
0 মন্তব্যসমূহ
সুচিন্তিত মতামত দিন