বেশ পুলক হচ্ছিল জানেন? ওরা যখন কুঠার দা বেলচা দড়ি নিয়ে এল তখন বেশ আনন্দ হচ্ছিল গাছে চড়া দেখতে পাব বলে। সেই ছোটবেলায় দিদি চরত দেখতাম । সে আমার মত নক্কী ছিল না , ল্যাজ একটা তার বাল্যকাল থেকেই ছিল। তো তারপর আর এ দৃশ্য চোখে পরার সুযোগ হয় নি। কাঠুরে এসেই কোমরে দড়ি বেধে কাঠবেড়ালির মত তরতর করে উঠে গেল আর তার পরেই কাজ শুরু। সে এক মহাযজ্ঞ বাড়িতে । হই চই খট খট করে গাছের ডাল ছাঁটা, কাটা, আর কেটে লগ বানানো, উঠোনের একপাশে জড় করা। সঙ্গীটি কাজ সামলে উঠতে পারছিল না। গাছ তো শুধু নিম নয় আরও বেশ কটি। কিন্তু নিমের আভিজাত্যই আলাদা। চোখের সামনে ডালের গায়ে কোপ দিয়ে যখন টুকরো করছিল সামনে বসে হাঁ হয়ে গেলাম ডালের ভেতরকার রঙ দেখে। একবারে টকটকে লাল একটা আস্তরণ ছালের ঠিক নিচে। কত কাঠ কাটতে দেখি, কিন্তু কোন গাছের ছালের তলায় মানুষের হিমোগ্লোবিনের মত রক্ত রঙ দেখি নি! কাঠুরের সঙ্গীটি আমায় পরিপাটি করে নানান কথা বুঝিয়ে দিচ্ছিল। এই ছাল ভিজিয়ে নাকি খাওয়া হয়। আর খেলে একেবারে মৃত সঞ্জীবনী। পরদিন ভোরে সেকথা মনে পড়তেই টুক করে জড় করা লগির মাঝ থেকে কটি তুলে এনে রেখে দিলাম। মরিতে কে চাহে আর এ- জঞ্জাল জীবনে! আখের খোসা ছাড়ানোর মত করে ছাল ছাড়িয়ে রাখব একদিন। গাছ কাটার বার্তা ক্রমে রটি গেল পাড়ায়। দলে দলে লোক এসে ভিড় করল দুয়ারে। কাহারো পাতা চাই সংরক্ষণ করে রাখবেন। অসময়ে ভেজে খাবেন। কেউ বা বাড়ির অসুখে ডালপালা নিলেন। আমি নিজেও তো আলমারীর বইয়ের তাকে পাতা সুদ্ধ ডাল গুঁজে রাখতে সরিয়ে রাখলাম কটি। আমাদের বাড়িতে এ উপায়েই বরাবর পুস্তক সংরক্ষণ হয়। মায়ের নিত্যিদিনের চানের জন্য আয়া মেয়েটি পাতা নিয়ে রাখল। পরে পাতা গজাতে গজাতে শীত শেষ হয়ে যাবে তো। তদ্দিন কাজ চালাবে কী করে! এমনকী দেখলাম কাজের ফাঁকে বৃন্দা এসে টুক করে কটি কচি ডাল নিয়ে গেল দাঁতের ব্রাশ হিসাবে ব্যবহার করবে বলে। এমনকী এক ফাঁকে একটু বাইরে বেরিয়েছিলাম, দেখি জঞ্জালের গাড়িতে রাখা ডালপালার স্তূপের সামনে বিব্রত মুখে দাঁড়িয়ে আছেন প্রতিবেশী বিজ্ঞানী গিন্নি। জিজ্ঞেস করতেই বললেন কিছু ডাল নিতাম কিন্তু এ তো দেখছি কাজ শেষ হয়ে এল। আমি সানন্দে বাগান থেকে কুড়িয়ে দিলাম কিছু তাকেও। একটি বৃক্ষ তো শুধু কাঠ ও পাতার দানে ধনী নয় তার সবটুকুই যে মানুষের কাজে লাগছে দেখে মন ভরে গেল। স্তূপাকৃতি জঞ্জাল সাফাইয়ে আরো লোক লাগত। দেখি হুড়দুড় করে ৬/৭ জন চলে এল। তাদের সবাইকে নয় রাখা হল আরো দুজনকে যাতে তারা গোটা প্রক্রিয়াটায় সাহায্য করে। মনটা চট করে খারাপ হয়ে গেল। বেকারীত্ব এতই প্রবল যে যে কাজে দুজন লাগে সে কাজের প্রার্থী ছয়জন। তাও আবার একশ দিনের কাজ। অর্থাৎ বাকী ২৬৫ দিনের কাজের কোন নিশ্চয়তা নেই। এরপরে কী করে বরাবরকার মতই বাগানে জঞ্জাল ফেলার গর্ত খোঁড়া হল, পাতা পরিষ্কার হল, মায় চারধারে ব্লিচিং ছড়ানো হল এসবও কী আজাইরা লেখার বিষয়! রোজ রোজ লিখতে হলে এসবও পড়তে হবে গো পাঠক।
ঝকঝকে পরিষ্কার বাগানটায় যখন শীতের রোদ এসে আলোময় করে দিচ্ছিল, বেল গাছটার সামনে দাঁড়িয়ে ঝুঁকে দেখছিলাম সন্ধ্যামালতীটাকে। ওর কি ভাল লাগছে এত আলো পেয়ে? ফুল নাহয় আলো মরে এলে উপহার দেয় সে, কিন্তু শ্বাস নিয়ে বেঁচে থাকতে আর গর্ভবতী হতে ওরও তো সূর্যকে প্রয়োজন, নারীর যেমন প্রয়োজন পুরুষকে।
jayakc2004@yahoo.co.in
জয়া চৌধুরী
Reviewed by Pd
on
নভেম্বর ৩০, ২০১৮
Rating:
Reviewed by Pd
on
নভেম্বর ৩০, ২০১৮
Rating:


কোন মন্তব্য নেই:
সুচিন্তিত মতামত দিন