জয়া চৌধুরী

উইন্ডমিলের সঙ্গে প্রথম পরিচয় আমার দোন কিখোতের দেশে। দোন যেখানে টিংটিংয়ে রোসিনান্তের পিঠে চেপে মাঠের পর মাঠ পেরোতে থাকেন সাগরেদ সাঞ্চো পাঞ্জাকে নিয়ে দূরে গমকল গুলোর চাকা ঘুরতে থাকে কিখোতে বেচারী ঝামেলায় পড়তে থাকেন কতবার কত স্বপন জাগরণে। সেই উইন্ডমিলের দোতলায় অবশেষে উঠলাম আমি।

“দোতলায় কাঠের মেঝে, মাঝে চৌকো বড় গর্তে মোটা একটা দন্ড গোল হয়ে ঘুরছে বনবন, তার সঙ্গে চাকা লাগানো...নিচের ঐ ঘুরন্ত দন্ডের মাথাটা এখানে মস্ত বড় তিনটে পাখায় বনবনিয়ে ঘুরছে...” আমিও পায়ের পায়ে উঠে গেছি ওখানেই। পাখার তীব্র হাওয়ার বেগে দময়ন্তীর সঙ্গে আমিও পড়ে যাব বুঝি ভয় হয়।

উপন্যাসের শুরুতেই এক আশ্চর্য ভ্রমণে বেড়িয়ে পড়ি আমি। কখনও নেদারল্যান্ডসের বিজন দুর্গে কখনও কেভিনের হাত ধরে কখনও ঋভুর সঙ্গে বেরোই। দময়ন্তীর জীবনের সব অন্তরঙ্গ দুঃখে শোকে ভালবাসায় পাঠককে ভাসিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন লেখক। মাতা পুত্রীর সম্পর্ক মানবজাতির প্রাথমিক সম্পর্ক গুলোর একটা। যুগ যুগ ধরে বহু চর্চিত বহু রচিত খচিত এই মানবীয় অন্তর্বেদ, অথচ পড়ার সময় একবারও মনে হয় না আগেও তো পড়েছি। 


লেখার অসামান্য সাবলীলতা আর মনোজগতের লাগাম যেন লেখকের মুঠোয়। ইউরোপীয় গাম্ভীর্যের রোম্যান্সের সঙ্গে মফঃস্বলের মেয়ের মুহুর্মুহু সাক্ষাৎ বিতৃষ্ণা সপ্রেম ফেনিল বিচরণ। শহুরে মালিন্যের ক্লেদ পড়তে পড়তে বাঙালি পাঠক ক্লান্ত। তাকে ঘনঘন ধাক্কা মানে কিক দিতে আজকাল সাজানো হয় যৌনতার ছক্কা পাঞ্জা। অথচ চোখ সরালেই মন শূন্য হয়ে যায় লেখা থেকে। পাঠ শেষে ঠোঁটে লেগে থাকে শিউলি পাতার বিষ। তারই মধ্যে শ্রদ্ধেয়া পাপিয়া ভট্টাচার্যের লেখাটি মুগ্ধ হয়ে পড়তে থাকেন পাঠক। শ্বাস বন্ধ করে ঘাড় নামিয়ে তৃষ্ণার্ত একটানা পাঠের পরে শেষমেশ উপন্যাস শেষ হয়। চোখ সরাতে ইচ্ছে করে না বই থেকে। মনে হয় এইবার আবার শুরু করি পড়া প্রথম থেকে ফের।


আলোধুলোমাখা / পাপিয়া ভট্টাচার্য/ প্রকাশক- গাঙচিল / দাম ২৫০ টাকা
পুস্তক পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ জয়া চৌধুরী


জয়া চৌধুরী জয়া চৌধুরী Reviewed by Pd on নভেম্বর ২৮, ২০১৭ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

সুচিন্তিত মতামত দিন

banner image
Blogger দ্বারা পরিচালিত.