পলাশ কুমার পাল

সেলাই
ফোঁড়ের পর ফোঁড়ে জুতোটা গোটা হয়ে উঠছে। অথচ তন্ময়ের মনটা খচখচ করতে থাকে। কেটে যায় যেন। বৃদ্ধ পাঁচুজেঠু বড় হয়ে তার জুতোটা হাতে করেছে। জীবিকা এমনই? নিজেকে বড্ড ছোটো মনে হচ্ছে। সে নিজে কেন পারেনি, কেন নিজে সারিয়ে নেয়নি। আবার মনে হয় সে নিজে সারিয়ে নিলে পাঁচুজেঠু কীভাবে উপার্জন করবে। ওনাকেও তো রোজগার করতে হবে।

"আটটাকা দেবে!"

জুতোটা তন্ময়ের বামপায়ের দিকে বাড়িয়ে, অন্য জুতো পালিশ করতে শুরু করে দেয়।

তন্ময় খুচরো দশটাকার নোট পাঁচুজেঠুকে দিয়ে প্রণাম করবে কিনা ভাবতে থাকে। বাজারের মধ্যে মুচির পায়ে ব্রাহ্মণ হয়ে হাত দেবে? প্রণাম না করলেও যে মানুষটাকে অপমান করা হবে। ছোটো থেকে শিখেছে বড়োদের গায়ে পা লাগলে প্রণাম করতে হয়। আর পাঁচুজেঠু তো তার জুতো হাতে করছে।

"এই নাও!" কাঁপা কাঁপা হাতে দু'টাকা ফেরত্ দেয়। টাকা নেওয়ার সময় তন্ময় দুহাতে পাঁচুজেঠুকে প্রণাম করে।

"এই, এই, কী করলে?" বলেই অবাক পাঁচু তন্ময়ের মাথায় হাত রাখে।

কোঁচ খাওয়া চামড়ার মাঝে চোখ দুটো খুশিতে ছলছল করে ওঠে। এতটা সম্মান আগে কেউ দেয়নি। মনটা জুড়ে যায় পাঁচুর।

"আশীর্বাদ করি বাবা, বড়ো হও! সুখী হও!"

কেউ কখনো এমনভাবে তো বলেনি। মনটা অনেকটা হালকা হয় তন্ময়েরও। সাথে মনের কাটা অংশটাও জুড়ে যায়। সে চোখ নামিয়ে দেখে জুতোর নিপুণ সেলাই।


পলাশ কুমার পাল পলাশ কুমার পাল Reviewed by Pd on আগস্ট ৩১, ২০১৭ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

সুচিন্তিত মতামত দিন

banner image
Blogger দ্বারা পরিচালিত.