তৃতীয় অংশের পর হৃষিকেশ- হরিদ্বারঃ
শেয়ারের ট্যাক্সিতে এসে পৌঁছালাম দেরাদুন, সকাল ন’টা তখন। এখান থেকে বাসে আমরা যাবো হৃষিকেশ। সাড়ে দশটার দিকে একটা বাস আসতেই উঠে পড়লাম আমরা। কালো পিচের রাস্তা দু’পাশে সবুজ গাছের সারি। বাসে উঠলেই ঘুম পেয়ে যায় আমার। তন্দ্রাভাব কাটতেই দেখলাম বাস হৃষিকেশ বাস স্ট্যান্ডে ঢুকছে। নেমে পড়লাম আমরা। হোটেল বুক করা নেই। চারিদিকে তাকিয়ে দেখলাম, জায়গাটা দেখে মনে হলো না যে, সেখানে কোনো হোটেল পাওয়া যেতে পারে। ওখানেই দু’এক জন পথযাত্রী কে জিজ্ঞাসা করে জানলাম, ভালো কিছু পেতে গেলে আমাদের যেতে হবে লক্ষ্মণঝোলা। বাসস্ট্যান্ড থেকেই অটো ভাড়া করে পৌঁছালাম লক্ষ্মণঝোলা তখন প্রায় আড়াইটা বাজে। সুন্দর কটেজ আকারে সাজানো বাগানের মধ্যে রুমগুলি। পরিষ্কার একটা ঝকঝকে প্রকৃতির মাঝে পৌঁছাতেই মন থেকে মুছে যেতে লাগলো ক্লান্তি। তাড়াতাড়ি স্নান সেরে ফ্রেশ হয়ে হোটেলের রেঁস্টোরাতেই খাওয়া সেরে বেরিয়ে পড়লাম রাস্তায়। এই হোটেল থেকে হাঁটা পথের দূরত্বেই রয়েছে লক্ষ্ণণঝোলা ব্রিজ। অচেনা জায়গায় পায়ে হেঁটে নিজের পথ খুঁজে নিতে এক অন্যরকম রোমাঞ্চ লাগে। যেখানেই যাই, আমরা এভাবেই পায়ে হেঁটে ঘুরি। কিছুটা এগোতেই একজনকে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘ভাই লছমনঝোলা ব্রিজ যানেকা রাস্তা কিধর হ্যায়?’ লোকটি যে পথ নির্দেশ দিলেন সেই পথে এগোতে এগোতে কোথায় যে পৌঁছে গেলাম বুঝতে পারলাম না। আবার ফেরার পথে পা বাড়ালাম।হাঁটতে হাঁটতে কিছুটা এসেই দেখলাম কিছু লোক ডান দিকের একটা রাস্তা দিয়ে কোথায় যেন চলেছে। আমরাও সেই পথেই এগোতে লাগলাম।
কিছুটা যেতেই বুঝতে পারলাম ঠিক পথেই এসেছি। পথের দু’ধারে অসংখ্য মন্দির। ডান দিকেই রয়েছে গঙ্গামন্দির। অপূর্ব সুন্দর ভাবে সুসজ্জিত। মন্দিরের পিছনে নিচ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে গঙ্গা। চারপাশে ছড়ানো নুড়িপাথর। কিছুটা সময় কাটিয়ে আবার এগোতে লাগলাম। পায়ে পায়ে পৌঁছে গেলাম ঝুলন্ত ব্রিজের সামনে। সেই কোন ছোট্ট বেলায় দিদার কাছে গল্প শুনেছিলাম এই ঝুলন্ত ব্রিজের। মনে মনে ভাবতাম কেমন হতে পারে সে ব্রিজ! চোখের সামনে সেই কল্পনার বাস্তব উপস্থিতি দেখে এক অন্য রকম অনুভূতি জাগলো মনে। ৪৫০ ফুট লম্বা আর ৬ফুট চওড়া এই তারের দঁড়ি দিইয়ে তৈরি এই ব্রিজটির নাম রামায়নের পৌরাণিক চরিত্র লক্ষ্মণের নাম অনুসারে রাখা হয়ে। কথিত আছে লক্ষ্মণ দুটি পাটের তৈরি দঁড়ির উপর দিয়ে পার হয়েছিল গঙ্গা, ঠিক সেই স্থানেই পরবর্তী সময়ে গড়ে তোলা হয় এই ব্রিজটি। আস্তে আস্তে হাঁটতে লাগলাম ব্রিজের উপর দিয়ে, নিচে বইছে গঙ্গা। ওপারেও মন্দিরের অভাব নেই।
হাতে আমাদের তো বেশি সময় নেই। পরের দিনই রওনা হবো হরিদ্বারের পথে। দেখলাম ওখান থেকেই ট্রেকার যাচ্ছে রামঝোলার দিকে। চেপে বসলাম। মিনিট দশেক লাগলো রামঝোলা সেতুর সামনে পৌঁছাতে। একই গঠনের সেতু দুটি। গারোয়ালের দুটি পৃথক জেলা tehri ও pauri কে সংযুক্ত করে রেখেছে সেতু দুটি। রামঝোলা সেতু হেঁটে এপাড়ে এসে সামনেই একটা বাজার দেখলাম। একটা চায়ের দোকান দেখে ঢুকে পড়লাম দুজনে। সন্ধ্যে নেমেছে তখন আকাশ জুড়ে। বাজারের দু’পাশে অসংখ্য দোকানে জ্বলে উঠেছে আলো। সবই পাথর,ঠাকুরের মূর্তির দোকান। ঘুরে দেখা ছাড়া কেনার কিছুই ছিল না। হাঁটতে হাঁটতে বাজারের বাইরে এসে দেখলাম শেয়ারের গাড়ি যাচ্ছে লক্ষ্ণণঝোলার দিকে। চেপে বসলাম গাড়িতে।
কিছুটা যেতেই বুঝতে পারলাম ঠিক পথেই এসেছি। পথের দু’ধারে অসংখ্য মন্দির। ডান দিকেই রয়েছে গঙ্গামন্দির। অপূর্ব সুন্দর ভাবে সুসজ্জিত। মন্দিরের পিছনে নিচ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে গঙ্গা। চারপাশে ছড়ানো নুড়িপাথর। কিছুটা সময় কাটিয়ে আবার এগোতে লাগলাম। পায়ে পায়ে পৌঁছে গেলাম ঝুলন্ত ব্রিজের সামনে। সেই কোন ছোট্ট বেলায় দিদার কাছে গল্প শুনেছিলাম এই ঝুলন্ত ব্রিজের। মনে মনে ভাবতাম কেমন হতে পারে সে ব্রিজ! চোখের সামনে সেই কল্পনার বাস্তব উপস্থিতি দেখে এক অন্য রকম অনুভূতি জাগলো মনে। ৪৫০ ফুট লম্বা আর ৬ফুট চওড়া এই তারের দঁড়ি দিইয়ে তৈরি এই ব্রিজটির নাম রামায়নের পৌরাণিক চরিত্র লক্ষ্মণের নাম অনুসারে রাখা হয়ে। কথিত আছে লক্ষ্মণ দুটি পাটের তৈরি দঁড়ির উপর দিয়ে পার হয়েছিল গঙ্গা, ঠিক সেই স্থানেই পরবর্তী সময়ে গড়ে তোলা হয় এই ব্রিজটি। আস্তে আস্তে হাঁটতে লাগলাম ব্রিজের উপর দিয়ে, নিচে বইছে গঙ্গা। ওপারেও মন্দিরের অভাব নেই।
হাতে আমাদের তো বেশি সময় নেই। পরের দিনই রওনা হবো হরিদ্বারের পথে। দেখলাম ওখান থেকেই ট্রেকার যাচ্ছে রামঝোলার দিকে। চেপে বসলাম। মিনিট দশেক লাগলো রামঝোলা সেতুর সামনে পৌঁছাতে। একই গঠনের সেতু দুটি। গারোয়ালের দুটি পৃথক জেলা tehri ও pauri কে সংযুক্ত করে রেখেছে সেতু দুটি। রামঝোলা সেতু হেঁটে এপাড়ে এসে সামনেই একটা বাজার দেখলাম। একটা চায়ের দোকান দেখে ঢুকে পড়লাম দুজনে। সন্ধ্যে নেমেছে তখন আকাশ জুড়ে। বাজারের দু’পাশে অসংখ্য দোকানে জ্বলে উঠেছে আলো। সবই পাথর,ঠাকুরের মূর্তির দোকান। ঘুরে দেখা ছাড়া কেনার কিছুই ছিল না। হাঁটতে হাঁটতে বাজারের বাইরে এসে দেখলাম শেয়ারের গাড়ি যাচ্ছে লক্ষ্ণণঝোলার দিকে। চেপে বসলাম গাড়িতে।
পরদিন ভোরবেলা স্নান খাওয়া সেরে একটা অটো বুক করে বেরিয়ে পড়লাম হরিদ্বারের উদ্দেশ্যে। ওখানে স্টেশনের খুব কাছে রাহী মোটেলে আমাদের ঘর বুক করা ছিল। খুব বেশি দূরত্ব নয়, ঘন্টা খানেকের মধ্যেই আমরা পৌঁছে গেলাম হরিদ্বার। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আবার বেরিয়ে পড়লাম বাজারে। আমাদের হোটেল থেকে হরকিপৌরি ঘাট বেশ অনেকটা, তবে হাঁটা যাবে না এমন নয়। চওড়া কালো রাস্তার দু’পাশে গায়ে গায়ে লেগে থাকা দোকানপাট। লোভনীয় সব জিনিস। শুনেছিলাম হরিদ্বারে দাদা-বৌদি’র হোটেলের নাম। বাঙালি খাবার পাওয়া যায়। সেই হোটেল খুঁজে বের করে দুপুরের ভোজ সেরে ঘুরতে লাগলাম বাজারের অলিতে গলিতে। ঠিক সন্ধ্যের মুখে হরকিপৌরি ঘাটে গিয়ে বসলাম বাঁধানো সিঁড়িতে। কয়েক সিঁড়ি নিচ দিয়ে বয়ে যাচ্ছে গঙ্গানদী। তীব্র তার স্রোত। স্নান করা জন্য ঘাটের সাথে বাঁধা মোটা মোটা লোহার শিকল। অনেকেই তখন শিকল ধরে পুণ্য স্নানে ব্যস্ত। ছোটো ছোটো ছেলেদের দেখলাম, চুম্বকের সাহায্যে জলে দেওয়া পয়সা গুলো তুলে নিচ্ছে। ঠিক অন্ধকার রঙ আকাশে লাগতেই ঘাটের ওপারে শুরু হলো গঙ্গা আরতি। নিমেষে এক অপূর্ব সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি হলো চারপাশে।গঙ্গার জলে আরতির আগুনের ছায়া, সে এক অপূর্ব মোহময়ী পরিবেশ। গঙ্গা অন্ধকারের কালো স্রোতে ভেসে চলেছে ছোটো ছোটো আলো, মানুষের মনস্কামনা বুকে নিয়ে। জোনাকির মত রাতের হরকিপৌড়ি ঘাট আলোক মালায় সেজে আছে।এক মনমুগ্ধকর পরিবেশ। আমরা যে বার হরিদ্বার গিয়েছিলাম, তখন মহাকুম্ভের সময়। আমাদের যাওয়ার দু’দিন আগেই গিয়েছে শাহী স্নানের পুণ্যতিথি। তাই গঙ্গার ঘাটে তখনও বেশ কিছু নাগা সন্ন্যাসী চোখে পড়লো। তাদের নগ্ন দেহের বিচিত্র সজ্জা, ছায়-মাটি মাখা, বিশাল জটা, কারোর মাথার উপর চুড়ো করা আবার কারোর ঘার, পিঠ, বুকে দলা পাকিয়ে ঝুলে আছে জটা।
আমরা কনখল যায়নি। পরেরদিন ভোরবেলায় পৌঁছে গেলাম বিষ্ণুঘাটে। আগের দিন খোঁজ নিয়ে জেনেছিলাম,স্নান করার জন্য বিষ্ণুঘাট বেশ ভালো। ঘাটে পৌঁছে দেখলাম, দু’একজন স্নান করছে। উফ্! সে স্নানের কথা জীবনে কোনোদিন ভুলবো না। তীব্র স্রোতে সামান্য ফুল,বেলপাতা চোখের নিমেষে গায়েব হয়ে যাচ্ছে। দেখতে পাচ্ছি মাঝে মাঝেই ভেসে যাচ্ছে শাড়ি, গামছা আরও কত কি। ডুব দেওয়ার সময় শিকল থেকে হাত ছেড়ে গেলে যে কি পরিণতি হতে পারে তা জলে নেমে টের পেলাম। স্রোতের টানে শিকল ধরেও দাঁড়িয়ে থাকা যাছে না তখন, এদিকে কি ভীষণ তীব্র ঠান্ডা জল যে, পায়ের ডুবে থাকা অংশের অস্তিত্ব টের পাওয়া দায়। নাক বুজে ঝপ করে ডুব দিতেই মনে হলো ঠাণ্ডায় দম বুঝি বন্ধ হয়ে গেল।
আমাদের ফেরার ট্রেন রাত বারটায়, সারাদিন হাতে। স্নান সেরে হোটালে ফিরে আবার বেরিয়ে পড়লাম বাজারে। শপিং করতে করতেও মানুষ ক্লান্ত হতে পারে টের পেলাম সেদিন। বিকেলে আর একবার গঙ্গার ঘাটে ক্লান্তি মিটিয়ে ফেরার প্রস্তুতি। ঘড়ির কাঁটা টিকটিক এগিয়ে চলেছে রাত বারটার দিকে............ আমরা এবার হাঁটতে লাগলাম ফেরার পথে।
সমাপ্ত।
সমাপ্ত।
0 মন্তব্যসমূহ
সুচিন্তিত মতামত দিন