চন্দ্রমোহন জৈন ওরফে রজনীশ ওরফে গডম্যান ওশো কে ভারতের মানুষ চেনেন নানা কারণে। আমাদের আধ্যাত্মিকতায় য় দেশে গডম্যানের সংখ্যাও অগণিত। তাদের সম্বন্ধে নানান রুচি ও অরুচিকর কথা ব্যক্তি বিশেষে পত্রপত্রিকায় পড়াও যায়। আশির দশকে বাংলায় আলোকপাত বলে একটি অনুসন্ধান মূলক সাময়িকী পত্রিকা বের হত। আমার প্রথম বিস্তারে রজনীশ সম্বন্ধে জানা তখন। তার আগে বিচ্ছিন্ন ভাবে পত্রিকায় তাঁর সুকীর্তি বা কুকীর্তি কিছু কিছু জানা ছিল অবশ্য। সে সময় আমার কিশোরী বয়সের জ্ঞান বুদ্ধিতে বেশ অপছন্দই হয়েছিল। কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একটা বিষয় আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে যায়। সেটা হল তোমার ভেতরে কিছু সম্পদ না থাকলে নির্গুণ তুমি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে পারবে না বা পারলেও তা সাময়িক হবে। অনুরাগী গড়ে তুলতে হলে তোমার মধ্যে সারবস্তু থাকতেই হবে। অতএব কিছুটা হলেও বিমুখতা কেটে যায় তখন আমার। তোরিফা নাজমিনা মণি-র ই-বুক ওশো এবং রুমি হাতে এল যখন বেশ কৌতূহল ভরেই বইটি পড়তে শুরু করি। জালালুদ্দিন রুমি সম্বন্ধে আর পাঁচজনের মতই তাঁর বিখ্যাত টুকরো টুকরো শায়রী জানা ছিল। কিন্তু বইটিতে আসল নজর কাড়ল যেটি তা হল রুমির কবিতাগুলিকে দর্শনের তীক্ষ্ণ যুক্তি দিয়ে বিচার করা। এবং এই বিচারটিই করেছেন ওশো। বেশ বুদ্ধিদীপ্ত তাঁর ব্যাখ্যাগুলি এবং রুমির অবিস্মরণীয় কাব্যিক জাদুর চমৎকার অনুবাদ করেছেন তোরিফা। দর্শনের বই সাধারণতঃ কঠিন হয় কারণ দর্শন সাধারণ পাঠকের আয়াসসাধ্য নয়। সব দর্শনের বই তো আর রামকৃষ্ণ কথামৃতের মত অসামান্য সরল হয় না। অতএব ভাবনার যে হোঁচট মাঝে মাঝে পাঠক খান এখানে তা কতটা অনুবাদকের কারণে আর কতটাই বিষয়বস্তুর জটিলতার কারণে তা তর্ক সাপেক্ষ। তাঁর ওপর কিছু শব্দ অন্ততঃ এপার বাংলার পাঠকের কাছে কঠিন বা অপরিচিত লাগবে বলেই মনে হয়। যেমন “কাফেলা” কিংবা “আমন্ত্রয়িতা” “ঝলসিত” ইত্যাদি আবার ধরুণ প্রবুদ্ধ ও সম্বুদ্ধ এই দুটি শব্দ সম্বন্ধে অনুবাদক যদি ফুটনোট দিয়ে রাখতেন তাহলে বইটি পরার মাঝে অভিধান দেখতে ছুটতে হত না। আর একটি জিনিষ লক্ষ্য করলাম যে বাংলা ভাষাও এখন ওপার বাংলা আর এপার বাংলার শব্দচয়ন বেশ আলাদা রকম হয়ে গেছে। নূতন শব্দ জানতে ভালই লাগে তবে কি না পাদটীকা থাকলে আমাদের মত মূর্খ পাঠকদের কাছে এটি আরো আকর্ষণীয় হয়ে উঠত বলেই মনে হয়।
পরিশেষে তোরিফা মণি কে অন্তরের শুভেচ্ছা জানাই দর্শনের মত খটমট জিনিসকে এতটা আয়ত্বাধীন করে আনবার জন্য। রজনীশ সম্বন্ধে আমার ব্যক্তিগত বিরক্তিটা কেটে গেল এ বই পড়ে আর রুমি সম্বন্ধে আরও জানার তৃষ্ণা বেড়ে গেল ... এ দুটি প্রাপ্তি কি যথেষ্ট নয় একজন অনুবাদকের সৃষ্টির মহানত্বের পরিমাপক হিসেবে?
শেষ করি ওশো-র প্রিয় লাইনটি দিয়ে
আমরাই মুকুর এবং তার মাঝে মুকুরিতও আমরাই .....
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ
জয়া চৌধুরী
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ
জয়া চৌধুরী
ওশো এবং রুমি / জয়া চৌধুরী
Reviewed by Pd
on
মে ০৯, ২০১৭
Rating:
Reviewed by Pd
on
মে ০৯, ২০১৭
Rating:

কোন মন্তব্য নেই:
সুচিন্তিত মতামত দিন