আগে ভোর হলেই যে পাখিগুলো ডাকাডাকি শুরু করে দিত, এখন তারা আর ডাকে না। ডাকলেও, অন্য রকম শোনায়। এখন হয়তো ওরা অন্য কথা বলে-টলে, ডাকে না আর। পাখিদের তো প্রায় দেখতেই পাই না। দিনগুলোও কেমন পালটে পালটে যাচ্ছে।
মিত্রা দের বাড়ি টা পেরিয়ে যেখান টায় মন্দিরের দিকে যাবার রাস্থা, তার ঠিক বাঁ দিক দিয়ে কিছুটা এগোলেই মজুম দীঘি, দীঘি টা কোন এক কালে হয়তো কোন মজুমদার দের ছিল তাই অমন নামকরণ। যাক গে আসল কথাটা হল ওই দীঘির ঠিক পাশেই বড় ফাঁকা জমি তেই হোতো আমাদের দোল খেলা, দীঘির পুরো পাড় জুড়ে পলাশের আগুন জ্বলত যেন, আমরা ছোটরা সেই কোন সকাল থেকে রঙের শিশি, বেলুন বালতি, হাজির হতাম ওই মাঠে, তারপর চলত প্রায় দুপুর অবধি এদিক ওদিক দাপাদাপি, গোটা মাঠের রঙ তার পরের একমাস অবধি রঙে ঢেকে থাকতো। মা পিসি, জেঠিমা দের কথা মনে হয় ওই একটা দিনের জন্য শুনতাম না......... তারপর যখন ফিরে আসতাম, গোটা শরীর ঢেকে থাকতো বহু রকমের রঙে... সে রঙ তোলার মজাটাই ছিল আলাদা... এখন আর দোল খেলিনা, রঙে অ্যালার্জি... বহুদিন বাদে গত বছর দোলের দিন বাড়িতে ছিলাম, দেখলাম বেলা দশটার সময় গোটা তিনেক বাচ্চা রঙের পিচকিরি নিয়ে মিনিট কুড়ি রঙ খেলেই বাড়ি ফিরে গেল। বিকেলে মাঠে গিয়ে দেখি মাঠের একটা জায়গায় রঙের কিছু ছিটে ফোঁটা, দীঘির পাড়ের পলাশ গাছ গুলো বোধহয় সবগুলোই কেটে দিয়েছে...... এ মাঠে বোধহয় আর বসন্ত আসেনা...... ঠিক সন্ধ্যে হবার মুখে দূর থেকে দেখেছিলাম কারা যেন নাড়া পোড়োড়াচ্ছে। ওই মাঠ যখন পলাশের আগুনে ঢেকে থাকার কথা, তখন তাকে ঢেকে রাখছে শূন্যতা শুধু........এই তো কদিন আগেই বাড়ি গিয়ে দেখি সেই মাঠের ওপর তৈরি হচ্ছে নতুন বাড়ি, তার নিঃসঙ্গ তা কাটাতে হয়তো বা......
রঙ খেলা হারিয়েছে বহুদিন জীবন থেকে আমার... রঙের ছোঁয়াও হারিয়েছে আজ তিন বছর হল। খুব হটাৎ করেই সব ছেড়ে কিছু না জানিয়েই চলে গেছে সরমা, ও পৃথিবীর অন্য প্রান্তে বসে হয়তো এখন আমার মতোই রঙের আশায় দিন কাটাচ্ছে ... ওর ও হয়তো মাথার রঙে হালকা ধূসরতা নেমেছে আমারি মতো... চোখের দৃষ্টি তে হয়তো হালকা কুয়াশার ঘোর...... কবিরা বলেন বসন্তের রঙ নাকি ধুসর...... আচ্ছা সরমা তবে কি সত্যি আমরাও বলতে পারি এই ধূসর রঙের এই জীবনে ----- বসন্ত এসে গ্যাছে...... তুমি কি শুনছো আমাকে.........
সুদীপ্ত চক্রবর্তী
Reviewed by Pd
on
মার্চ ২৩, ২০১৭
Rating:
Reviewed by Pd
on
মার্চ ২৩, ২০১৭
Rating:

কোন মন্তব্য নেই:
সুচিন্তিত মতামত দিন