‘বেদুইন মনটা আমার, মানে না কোনো বাঁধন’। শীত এলেই মনটা উরু উরু তখন। প্রতিবারই তাই ডিসেম্বর এলেই ট্রেনের টাইমটেবল নিয়ে বসে পড়ি, সঙ্গে ভ্রমণসঙ্গী সাপ্তাহিক বর্তমান। অচেনা জায়গাকে জেনে নিতে গুগুলের সাহায্যে ঢুকে পড়ি অলিতে গলিতে। এই পুরো প্রস্তুতির ব্যাপারটাতেও থাকে ভ্রমণের এক পূর্ণাঙ্গ আস্বাদ। সালটা ২০১০, ফেব্রুয়ারী মাসের ১২ তারিখ এক শিবরাত্রির দিন আমি আর আমার পতিদেব পাড়ি দিলাম মুসৌরির উদ্দেশ্যে তবে শুধু মুসৌরি নয়, দেরাদুন দিয়ে শুরু করে আমাদের এই ভ্রমণ শেষ হবে হরিদ্বারে। ১২ তারিখ রাতে উপাসনা এক্সপ্রেস আমাদের নিয়ে ছুটে চললো। এবারের যাত্রার সহযাত্রী বেশ ভালোই ছিল। দুটি ছোটো পরিবার। হাসি ঠাট্টা, খাওয়া-দাওয়া, ধাঁধাঁ সব মিলিয়ে কখন যেন সময় কেটে গেল, ১৩ তারিখ ঠিক বিকাল তখন ট্রেন এসে পৌঁছালো হরিদ্বার স্টেশনে। এখানে উপাসনা দুটো ভাগ হয়ে যায়। একভাগ হরিদ্বারেই থাকে বাকি অংশ অন্য ইঞ্জিনের সাহায্যে চলে যায় দেরাদুন। আমাদের সহযাত্রীরা হরিদ্বারে নেমে গেল আর আমরা এগিয়ে চললাম দেরাদুনের দিকে। প্রায় ঘণ্টা দুয়েক পর পৌঁছে গেলাম দেরাদুন তখন আকাশ জুড়ে নেমে এসেছে আঁধার। স্টেশনের কাছেই জি.এম.ভি.এন (গাড়োয়াল মন্ডল বিকাশ নিগম)এর হোটেল ‘দ্রোণ’ এ আমাদের ঘর বুক করা ছিল। দীর্ঘ পথশ্রমের পর পরিষ্কার সাদা বিছানার চাদর দেখে মন লোলুব্ধ হয়ে উঠলো। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে ঢুকে পড়লাম লেপের তলায়।
পরদিন সকালে চায়ের কাপ হাতে ব্যালকনিতে দাঁড়াতেই দেখলাম অনতিদূরে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে এক নিচু পাহাড়। নরম সূর্যের আলো আর কুয়াশায় বেশ নীলচে দেখাচ্ছে তাকে। সকাল সকাল তৈরি হতে হবে। সারাদিন দেরাদুন ঘুরে আমরা পৌঁছাবো মুসৌরি। সেই মত ন’টার মধ্যে তৈরি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম আমরা। কাছেই ট্রেভেল এজেন্সির ট্যাক্সি স্ট্যান্ড থেকে একটা ট্যাক্সি ভাড়া নিয়ে আমরা বেরিয়ে পড়লাম। কথা হলো দেরাদুনের তিন-চারটি স্পট দেখে ওই ট্যাক্সিই আমাদের মুসৌরি পৌঁছে দেবে। গতরাতে যখন দেরাদুন এসেছিলাম তখন সন্ধ্যে হয়ে যাওয়ায় ভালো করে বুঝিনি দেরাদুন আসলে ঠিক কেমন কিন্তু দিনের আলোয় দেরাদুন দেখে সত্যিই এই শহরের প্রেমে পড়ে গেলাম। অপূর্ব সুন্দর সাজানো এই শহর। যেমন তার রাস্তাঘাট তেমন সব সুন্দর সুন্দর বাড়ি-ঘর। যেদিকে তাকায় মন মুগ্ধ হয়ে যায়। প্রতিটি বাড়িই যেন সাজানো রূপের ডালি নিয়ে বসে আছে, কি সুন্দর তাদের গঠন! দুইদিকে রাস্তার শোভা দেখতে দেখতে এসে পৌঁছালাম এফ.আই.আর (ফরেস্ট রিসার্চ ইন্স্টিটিউট)। গাড়ি চেকপোস্ট দিয়ে ভিতরে প্রবেশ করলো। বিস্তৃত এলাকা জুড়ে সাজানো সবুজ মাঠ। চারপাশটা বেশ ফাঁকা ফাঁকা আসলে সেদিন ছিল রবিবার। এদিক-ওদিক দু-এক জন দম্পতিকে ঘুরে বেড়াতে দেখলাম। যেদিকে তাকায় সবুজ আর সবুজ ঝকঝকে পরিবেশ।এইসময়টা ফুল ফোটার সুন্দর সাজানো বাগানে ঘুরে ঘুরে কিছুটা সময় কাটিয়ে গিয়ে ঢুকলাম মিউজিয়ামে। বিভিন্ন ধরনের গাছের অংশ ছাড়াও সেখানে অনেক কিছু সংরক্ষিত রয়েছে। মিউজিয়াম দেখে ফিরে এলাম গাড়িতে। ড্রাইভারকে জিজ্ঞাসা করে জানলাম এবার আমরা চলেছি ‘টপকেশ্বর’ শিবমন্দিরের উদ্দেশ্যে। দুপুর ১২টা প্রায়। গাড়ি এসে দাঁড়ালো। দেখলাম মন্দিরের অনেক আগে থেকেই শুরু হয়েছে মেলা। রাস্তার দু’ধারে দোকান। আগের দিনই গিয়েছে শিবরাত্রি। ড্রাইভারের কাছে জানলাম প্রতি বছরই শিবরাত্রিতে এখানে মেলা বসে।এসে দাঁড়ালাম মন্দিরের প্রবেশ দ্বারের সামনে। মুখের কাছেই জুতো রাখার স্থান। পুজোর থালাও ওখানে পাওয়া যাচ্ছে। জুতো রেখে পুজোর থালা নিয়ে ঢাল বেয়ে নেমে যাওয়া বাঁধানো রাস্তা দিয়ে নিচে নামতে লাগলাম। কিছুটা হাঁটার পর সামনে দেখলাম একটা নিচু ছাদের গুহার মুখ। ভিতরে রয়েছে শিবলিঙ্গ টি। গুহার ছাদ ভীষণ নিচু ও অসমান সামান্য অসাবধান হলেই লেগে যেতে পারে মাথায়। ভিতরে অদ্ভূত এক রহস্যময় পরিবেশ। কিছুতেই মাথা সোজা করার উপায় নেই। আস্তে আস্তে ঘুরপথে মন্দির থেকে বেরিয়ে এগিয়ে চললাম সন্তোষী মাতার মন্দিরের দিকে। অনেকটা সময় বয়ে গেছে ইতিমধ্যে। আরো একটা জায়গা তখনও আমাদের দেখা বাকি ‘সহস্রধারা’ । ওটা দেখে সন্ধ্যের আগেই পৌঁছাতে হবে মুসৌরি।![]() |
| রুমকি রায় দত্ত |
ক্রমশঃ
রুমকি রায় দত্ত
Reviewed by Pd
on
মার্চ ২৩, ২০১৭
Rating:
Reviewed by Pd
on
মার্চ ২৩, ২০১৭
Rating:


কোন মন্তব্য নেই:
সুচিন্তিত মতামত দিন