শিলিগুড়ি টার্মিনাসে ঢুকতেই গেটের মুখে Jnurm এর বাসটা তখন সবে বেরচ্ছে দার্জিলিং এ। কি মনে হলো উঠে বসলাম। টু বাই থ্রী সিটের জানালার পাশেই একটা সিট পেয়ে গেলাম। কনডাকটরের সাথে কথা বলে জানতে পারলাম এটা রোহিনী হয়ে যাচ্ছে না, যাবে তিনধরিয়া হয়ে। তিনধরিয়া ঢোকার আগেই রংটং। এখান থেকে রাস্তা ডানদিকে ভাগ হয়ে গেছে। ওই রাস্তা ধরে কিছুদূর গেলেই শিবখোলা। রাস্তার পাশে প্ল্যকার্ডে লেখা "শিবখোলা আডভেঞ্চ্যার ক্যম্প"। ডান দিকে রাস্তাকে ফেলে গাড়ি এগিয়ে গেল আরো সামনে। সকালের দিকে ছিল ঘন কুয়াশা। এখন ফটফটে নীল আকাশ আর কড়া রোদ। উত্তরের পাহাড় থেকে বয়ে আসা ঠান্ডা বাতাস কাঁপন লাগায় হাড়ে। শরীরে লেগে থাকে শিরশিরানি.... অনেক দিন আগে আসা তিনধরিয়ার স্মৃতি আমার কাছে আজও উজ্জ্বল। তবে সে প্রসঙ্গ আলাদা। জানালার পাশে চোখ রেখে খুজে চলি আমার ফেলে আসা দিন, পুরাতন পাহাড়ি মন্দির আর চা বাগান। ছড়ানো শহর তিনধরিয়া, উদেশ্যবিহীন আমার এ যাত্রাপথে গন্তব্য অনির্দিষ্ট। তাই দোনোমনো করতে করতে নেমে গেলাম তিনধরিয়া স্টেশনেই। ছোট্ট একটা পিঠব্যগ নিয়ে। দুধাপ যেতেই পথ চলতি একটা মমোরদোকান।
দুপুর ১১টা খুব খিদে পেয়েছে। মাথা গলিয়ে ভেতরে প্রবেশ করলাম পথচলতি ছোট্ট এই রেস্টুরেন্টে। ভেতরের প্রশস্ত কেবিনে তখন আমি একাই। আর কেউ নেই আশে পাশে। দোকানির বউ তার নিপুণ হাতে বানিয়ে চলেছে চিকেন মোমো। মালিক এগিয়ে আসতেই অর্ডার দিলাম একপ্লেট মোমো। কাঠের তক্তা দিয়ে বানানো দোকানে তখন জানালা দিয়ে আলো এসে পড়েছে আমার খাওয়ার টেবিলে। ধোঁয়াওঠা মমোর টেবিলে গরম গরম সুপে হাত রেখেছি, অমনি দূর থেকে ভেসে এলো ট্রেনের হুইসেল। চুনভাট্টি আর তিনধরিয়ার মধ্যে খেলনা ট্রেনটা তখন জিগ-জাগ গুলো পার হচ্ছে। তাড়াতাড়ি মমোর বিল মিটিয়ে স্টেশনে ঢুকলাম।
মজার এই ট্রেন সফরে তখন আমি ছাড়া আর কোন যাত্রী নেই তিনধরিয়া প্ল্যাটফর্মে। সেই অর্থে টিকিট কাউন্টারও নেই। সোজা ঢুকে গেলাম স্টেশনমস্টারের ঘরে। ট্রেন না আসা পর্যন্ত কোন টিকিট ইসু করা হয় না। এমনটাই নিয়ম। যাবো তিনধরিয়া থেকে কার্শিয়াং। হাতে টাকা নিয়ে স্টেশনমাস্টারের ঘরে অপেক্ষা করছি। ট্রেন এলে টিটি ঘরে ঢুকলো। স্টেশনমাস্টার টিটির সাথে কথা বলে আমায় ইসু করে দিলেন টিকিট। সিট ফাঁকা থাকলে তবেই মাঝপথে টিকিট ইসু করা হয়। এখন সব কামরাই ফার্স্টক্লাস। সর্বসাকুল্যে ২৫-৩০জন যাত্রী। তার মধ্যে কিছু বিদেশী পর্যটক। ১৭৫ টাকা ভাড়া তিনধরিয়া থেকে কার্শিয়াং। টিকিট হাতে নিয়ে পেছনের কামরায় উঠি...... ট্রেন হুইসেল বাজিয়ে রওনা দেয় ......... কু ঝিক ঝিক।
ব্রিটিশ ভারতে ১৮৭৯ সালে প্রথম দার্জিলিং এ ন্যারোগেজ রেলপথ সম্প্রসারণের কথা প্রস্তাব রাখা হয়। এবং সেই মত Gillanders Arbuthnot & Company কে দায়িত্বভার দেওয়া হয় এই কাজের জন্য। ১৮৮০ সালে এই রেলপথ তিনধরিয়া পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়। শিলিগুড়ি থেকে কার্শিয়াং পর্যন্ত এই রাস্তা খুলে দেওয়া হয় ২৩শে আগষ্ট ১৮৮০তে। ট্রেনে বসে মনে হচ্ছে আমি যেন লর্ড লিটনের সহযাত্রী। লর্ড লিটন এই পথে প্রথম যাত্রা করেছিলেন। কার্শিয়াং থেকে দার্জিলিং পর্যন্ত বাকিটা পথ তৈরি হতে লেগে যায় আরো একটি বছর। অবশেষে ১৮৮১সালের ৪ঠা জুলাই শুরু হয় শিলিগুড়ি থেকে দার্জিলিং এর ট্রেন চলাচল। খাঁড়া ঢালে ট্রেন উপরে ওঠানো’টা Gillanders Arbuthnot কম্পানির কাছে ছিলো একটা বিশাল বড় বাজি। তাই ভুমিঢালের সাথে সংগতি রেখে প্রকান্ড এই লৌহ শকটকে উঁচুতে তোলার জন্য নির্মাণ করা হলো শুকনা ও গয়াবাড়ির মধ্যে অনেকগুলি রিভার্স আর লুপ ।
এরপর ১৯১৯ সালে বাতাসিয়া লুপ নির্মান করা হয়। ১৯৩৪সালের ভূমিকম্পে এই রেলপথের প্রভূত ক্ষতিসাধন হলেও ব্রিটিশ ভারতের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের চেষ্টায় এই রেলপথ পুনরায় ঠিকঠাক করা হয়। দার্জিলিং হিমালয়ান রেলপথ, যা টয়ট্রেন নামে পরিচিত তা ১৯৯৯ সালে UNESCO র দ্বারা ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে নির্বাচিত হয়। এন জি পি থেকে শিলিগুড়ি টাউন – শিলিগুড়ি জংশন – শুকনা – রংটং - তিনধারিয়া – গয়াবাড়ি – মহানদী – কার্শিয়াং - টুং – দিলারাম – সোনাদা – জোরবাংলো – ঘুম হয়ে দার্জিলিং পর্যন্ত এই পথ ৭৮ কিমি দীর্ঘ।
চোখটা হঠাৎ ই লেগে এসেছিল। একটা ঝাকুনিতেই ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। ট্রেনের চাকায় মস্ত বড় একটা ত্রিপল পেচিয়ে গেছে। একটা চাকা ঘুরছে না কিছুতেই। জানালার কাঁচ দিয়ে ধুলো এসে সারা শরীর মাখিয়ে দিলো। দাঁতগুলো কিচ কিচ করছে এখন। নীল আকাশে কড়া রোদ। সারাদিন স্নান হয় নি আজ। এটাই গিদ্দে হিলস। নেতাজীর বাসা ছেড়ে অনেকটা চলে এসেছি। এখান থেকে কার্শিয়াং আর মাত্র ৩ কিমি।
এরপর ১৯১৯ সালে বাতাসিয়া লুপ নির্মান করা হয়। ১৯৩৪সালের ভূমিকম্পে এই রেলপথের প্রভূত ক্ষতিসাধন হলেও ব্রিটিশ ভারতের দায়িত্বে থাকা কর্মীদের চেষ্টায় এই রেলপথ পুনরায় ঠিকঠাক করা হয়। দার্জিলিং হিমালয়ান রেলপথ, যা টয়ট্রেন নামে পরিচিত তা ১৯৯৯ সালে UNESCO র দ্বারা ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইটে নির্বাচিত হয়। এন জি পি থেকে শিলিগুড়ি টাউন – শিলিগুড়ি জংশন – শুকনা – রংটং - তিনধারিয়া – গয়াবাড়ি – মহানদী – কার্শিয়াং - টুং – দিলারাম – সোনাদা – জোরবাংলো – ঘুম হয়ে দার্জিলিং পর্যন্ত এই পথ ৭৮ কিমি দীর্ঘ।
চোখটা হঠাৎ ই লেগে এসেছিল। একটা ঝাকুনিতেই ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। ট্রেনের চাকায় মস্ত বড় একটা ত্রিপল পেচিয়ে গেছে। একটা চাকা ঘুরছে না কিছুতেই। জানালার কাঁচ দিয়ে ধুলো এসে সারা শরীর মাখিয়ে দিলো। দাঁতগুলো কিচ কিচ করছে এখন। নীল আকাশে কড়া রোদ। সারাদিন স্নান হয় নি আজ। এটাই গিদ্দে হিলস। নেতাজীর বাসা ছেড়ে অনেকটা চলে এসেছি। এখান থেকে কার্শিয়াং আর মাত্র ৩ কিমি।
মনে হয় স্মৃতির এই যাত্রা যেন চলতেই থাকে ......... খেলনা ট্রেনে।
6 মন্তব্যসমূহ
ঘুরতে যাওয়া এখন দূর অস্ত কিন্তু তাতে কি তুষারদার বিস্তারিত ভ্রমন বর্ননা ঘুরতে না যাওয়ার আপশোসকে লাঘব করে।
উত্তরমুছুনতুই ছাড়া আমার সমস্ত ভ্রমণই , লবন ছাড়া খাবারের মত ... বিস্বাদ
উত্তরমুছুনসাধ্যের মধ্যে স্বাদ পূরন... অপূর্ব
উত্তরমুছুনPainting with words... Surely has the potential to become a complete Travelogue....
উত্তরমুছুনPainting with words... Surely has the potential to become a complete Travelogue....
উত্তরমুছুনধন্যবাদ ভাই
মুছুনসুচিন্তিত মতামত দিন