মুর্শিদাবাদ বইমেলা

মুর্শিদাবাদ বইমেলা


"শীতকাল কবে আসবে সুপর্ণা? " শীতকাল মানে ভাস্কর চক্রবর্তী। শীতকাল মানে পাতাঝরা। শীতকাল মানে শেষ, শীতকাল মানে শুরু। শীতের শেষে বসন্তের উত্তর। আর বইমেলা। বাঙালীর বারো মাসে তেরো পার্বণের পরে যে পার্বণটি থেকে যায় আর তার রেশ রেখে যায় তা হল বইমেলা। পশ্চিমবঙ্গ থুড়ি বাংলা রাজ্যের জেলায় জেলায় এই পার্বণ রমরম করে চলছে। চলছে এই জেলা মুর্শিদাবাদেও। লালগোলা বইমেলার পর মুর্শিদাবাদ জেলার নাম-শহরে হয়ে গেল মুর্শিদাবাদ বইমেলা। 'বইমেলা পাঁচবার বইমেলা বাঁচবার' এই থীম ছিল মুর্শিদাবাদ শহর বইমেলার। 

গত ২০ ডিসেম্বর থেকে ২৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত বইমেলা চলল লালবাগের সিঙ্গি হাইস্কুল মাঠে। মুর্শিদাবাদ শহর অর্থাৎ লালবাগ ঐতিহাসিক স্থান হিসেবে এমনিতেই ভিড় পর্যটক দের। তার ওপর বইমেলা আরেকটি মাত্রা যোগ করেছে। স্কুল কলেজ পড়ুয়াদের পাশাপাশি কচিকাঁচা দের হাত ধরে বইমেলায় জড়ো হয়েছিলেন মানুষজন। যদিও বইপোকা মানুষের সংখ্যা বেশ কমে গেছে। স্টল ঘুরে ঘুরে বই ঘেঁটে দেখে বই কেনা মানুষজন এর সংখ্যা যে বেশ কম তা স্পষ্ট হল কয়েকটি পাবলিকেশন ও স্টল মালিকদের বক্তব্যে। লোকাল কিছু বই বিক্রেতার পাশাপাশি কলকাতা থেকেও এসেছিলেন কিছু পাবলিকেশন। প্রথমেই ঢুকে পড়লাম 'ইচ্ছেফড়িং' এর স্টলে। 'ইচ্ছেফড়িং' এই জেলার একটি উল্লেখযোগ্য ছোটদের পত্রিকা ও পাবলিকেশন। 'ইচ্ছেফড়িং' এর জন্মলগ্ন থেকে যুক্ত ছিলাম। তাগাদা দিয়ে বাচ্চাদের জন্য লেখা আদায় করে নিতেন সম্পাদিকা অনুপমা বন্দ্যোপাধ্যায়। স্টলের দিকে এগিয়ে যেতে যেতেই হাত নেড়ে জিজ্ঞেস করলাম 'চিনতে পারছ?' জবাব 'খুব চেনা লাগছে গো। বলতো কে তুমি? বললাম। স্টলে ঢুকে ওঁর চেয়ার দখল করে বসে পড়লাম। বই বিক্রি চলতে থাকল। গল্প চলতে থাকল। ইচ্ছেফড়িং উলটে পালটে দ্যাখা চলতে থাকল। এক দঙ্গল স্কুল পড়ুয়া হাজির। জিজ্ঞেস করলাম 'কোন স্কুল তোমাদের? ' বলল 'আয়েষবাগ হাই স্কুল'। আবার হুড়মুড় করে চলেও গেল সেই দল। সম্পাদিকা অনুপমা বিক্রিবাট্টার সাথে সাথে বলতে থাকলে বইমেলা ও বই বিক্রি সংক্রান্ত তাঁর নানান অভিজ্ঞতা। 'লেখা পাঠাও। অনেক দিন ইচ্ছেফড়িং এ লেখোনি তুমি'। রসিদ কাটতে কাটতে বললেন সম্পাদিকা।
তারপর রসিদ টা আমার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন 'যোগ টা দেখে দাও তো, তাড়াহুড়ো তে ভুল হয়নি তো? ' দেখে বললাম 'একদম পাক্কা চারশো পনেরো। কোনো ভুল নেই।' এই আন্তরিকতাটুকুর উষ্ণতা বিনিময়ের নাম বইমেলা। স্টল থেকে বেরিয়ে অন্য স্টলের দিকে পা বাড়াবো তখনই হাজির মুর্শিদাবাদ রেডিও স্টেশনের প্রতিনিধি। অনুপমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সাক্ষাৎকার নিলেন তিনি, আমাকে দিয়ে স্বরচিত কবিতা পাঠ করালেন। বইমেলা স্টল গুলোর সামনে দিয়ে হাঁটতে থাকলাম স্লো মোশনে। আলাপ হল মুর্শিদাবাদ শহর বইমেলার সম্পাদক শুভাশিস পালের সঙ্গে। নমস্কার প্রতি নমস্কার বিনিময়ের পর টুকরো কিছু কথা সেরে জেনে নিলাম 'পাতাবাহার' স্টল টি কোন দিকে। দেখিয়ে দিলেন। হাজির হলাম 'পাতাবাহারে'। আলাপ করলাম প্রশান্ত দা র সাথে। বই ঘাঁটতে লাগলাম। 'পাতাবাহার', 'খোয়াবনামা', 'বিবেকানন্দ বুক সেন্টার' এর বেশ মূল্যবান কিছু বই আছে স্টলে। কিনলাম। 

শান্ত দা র অভিজ্ঞতা জানালেন যে তেমন বই বিক্রি নেই। যদিও কোনোকালেই কোনো প্রকাশকের বিক্রি তেমন নেই বলেই জানি। 'ছবি তুলি আপনার?' স্মার্ট ফোনের দৌলতে কতটা স্মার্ট হয়েছি তা দেখতে ও দ্যাখাতে চাওয়ার মোক্ষম সুযোগ এই বইমেলা চত্বর। হ্যাঁ বা না বলার আগেই খচাৎ করে দু তিনটে ছবি। বেলা শেষ হয়ে আসছে তখন মেলায়। 'পাতাবাহার' থেকে বেরিয়ে আরেকবার ইচ্ছেফড়িং স্টলে এলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই হাজির হল ভার্তৃপ্রতিম সুদীপ ঘোষ। মুর্শিদাবাদ শহরেই ওর বাড়ি। বইমেলা তে এসেছে শুনেই দেখা করতে এল। পায়ের লিগামেন্ট ছেঁড়া ব্যাথা বেড়েছে শীতে। তবু এল। 


লিপিকা ঘোষ
এটাই বইমেলা। সুদীপ ঘোষ আমাদের জেলার একজন কবি ও সম্পাদক। কম বয়সী কবিদের মধ্যে ওর লেখার হাত বেশি বয়সী পোড় খাওয়া কবিদের হার মানায় অনেক ক্ষেত্রেই। 'কালগাড়ি' পত্রিকা টি নিজস্ব উদ্যোগে বেশ অনেকদিন ধরে প্রকাশ করে চলেছে। দুই সম্পাদকের মধ্যে আলাপ করিয়ে দিলাম। চলল সম্পাদকীয় আলাপচারিতা। আমি শ্রোতা। 

ইচ্ছেফড়িং স্টল থেকে বেরিয়ে বাড়ি ফেরার পথ ধরলাম সুদীপ ঘোষ ভাই টি র সাথে কথা বলতে বলতে। মেলা প্রাঙ্গনের বাইরে এসে আরো কিছু কথা। 'দাও দিদি তোমার কয়েকটা ছবি তুলে দিই'। আমার মোবাইলে সুদীপ কিছু ছবি তুলেও দিল। বললাম 'তোর সঙ্গে আমার? দুই ভাই বোনের ছবি?' বলল 'বহরমপুর বইমেলায় হবে দিদি, আড্ডা, বই, আর ছবি'। সূর্যাস্তের আলো ও ফুরিয়ে এল। ফিরলাম কিছু বই, আর কিছু মুহূর্ত নিয়ে। থীম টি বড় সুন্দর 'বইমেলা বাঁচবার'। বাঁচি। অপেক্ষা এখন বহরমপুর বইমেলার। 

প্রতিবেদক -
 লিপিকা ঘোষ 
মুর্শিদাবাদ 




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ