রাবেয়া রাহীম

রাবেয়া রাহীম

নৈশব্দের নোনাজল - (দ্বিতীয় পর্ব )

আকাশ জুড়ে সাদা মেঘের ভেলা এক আকাশ মন খারাপ নিয়ে উড়ে চলে ধীর গতিতে
শোবার ঘরের জানলাটা দিয়ে সারি সারি বিল্ডিং এর ফাঁকে
আকাশ দেখতে থাকি আনমনে, মেঘগুলো ভেসে ভেসে কোনদিকে যায়?
সামনে? না পেছনে? পুরনো স্মৃতি, পুরনো বন্ধুর মুখ, পুরনো জীবন..
সম্মুখে এগিয়ে যাবার সঙ্গে কি হারিয়ে ফেলি!
হারায় কি?
মধ্যরাতে ব্যালকোনীতে--তাকিয়ে দুরের আকাশে অগুনিত তারা,
আমার মতই একলা জেগে আমার পানে
চেয়ে আছে কি !
আবেগ আর অভিমানে হৃদয়ের গভীরে জমা হয় কান্নার যত জল
ভালোবাসাকে কাছে পাওয়ার শেষ ইচ্ছেতেই কি!
রাতের নিস্তব্ধতা ভাঙ্গে সাগরের গর্জন---তোমাকে কাছে পাওয়ার আমন্ত্রণ কি!
কেন জানি ইদানিং হঠাৎ চমকে উঠি, মনে হয় এই নাম ধরে ডাকলে বুঝি !
তুমি ডাকো কি ?

তোমাতেই নিজেকে হারাই বার বার, স্মৃতি হাতড়িয়ে তোমায় খুঁজে পাওয়ার নিরন্তর চেষ্টায়
গুপ্তধনের মতো নিজেকে খুঁড়ে চলেছি-
প্রচণ্ড শীতকালে তোমার ব্যক্তিগত সন্ধ্যা হতে চেয়েছিলাম,
চাওয়া আর পাওয়ার ভেতর ব্যবধান আজন্ম হয় কেনো !
সহস্র মাইল দুরের এক শহরে তুমি---কিন্তু মনে হয় ঘরের জানালাটা খুলে দিলেই
আবার দেখব তোমার সেই চেনা হাসি!
কী দ্রুত দিন বদলে যায় অথচ মনে হয় এইতো সেদিন---ভরাট কন্ঠে আবৃত্তি করে যাচ্ছ তুমি
আর খুব কাছেই আপন মনে নিশ্চিন্তে মুগ্ধ আমি--কোথাও যাওয়ার তাড়া নেই
নেই কোন পিছুটান আছে শুধুই আবেশ!

কিছুটা উষ্ণ আবহাওয়া, আর সাথে হাল্কা শীতল বৃষ্টির নরম চাদরে
প্রচন্ড শীতের পর আমেরিকায় এখন যেন বসন্ত উৎসব শুরু
লোকাল খবরের কাগজে পড়লাম তোমার কথা--"কবি অনিকেত নিউইয়র্কে এই শনিবারে"
ভাবতেই খুব আনন্দ হচ্ছে তুমি তোমার স্বপ্নের চুড়ায় পৌঁছতে পারলে,
কাল শনিবার সকাল সাড়ে এগারটায় তুমি নিউ ইয়র্ক আসবে----সেই সুদুর বঙ্গ দেশ হতে!!

মেঘের ফাঁক থেকে সূর্য্য আধো ঘুম নিয়ে চোখ মেলে তাকানো শুরু করছে মাত্র
আর আমি রন্ধ্রে রন্ধ্রে অবাক শিহরণে কাঁপতে থাকি আজ তোমায় দেখবো বলে!
সময় গড়িয়ে যায়--- তোমাকে দেখলাম ধীর পায়ে হেঁটে মঞ্চের দিকে এগিয়ে এলে,
তোমাকে দেখলাম বহুদিন পর, তোমার হাঁটার মধ্যে কেমন যেন এক ধরনের ছন্দ ছিল--
তোমার দেহের সেই সুগন্ধ ঝিকিমিকি রোদের কিরণের মত চারপাশ ছড়িয়ে পড়েছে কি !
তবে, মঞ্চ তুমি ঠিকই উজ্জ্বল করে রেখেছ তোমার অবাক করা ব্যক্তিত্ব দিয়ে !

চেহারাটা অনেক বদলে গেছে তোমার--
একাকীত্ব আর নিঃসঙ্গতার প্রভাব স্পষ্ট,
একটু রোগা হয়ে গেছো কি!
ঠোঁটে নিকোটিনের দাগ আরও বেশী গভীর,
সিগারটের সাথে ঘণিষ্ঠতা আবার বেড়ে গেলো কি!
আমি তোমাকে দেখছিলাম কিছুটা দূর থেকে----
কল্পনায় তোমাকে নিয়ে ফ্রেম আঁকছিলাম
কিছুটা আড়াল করে সেল ফোনে অনেক গুলো ছবি তুললাম তোমার,
তুমি জানতেই পারলে না কিছু;
এই মুহূর্তে চোখ যেন প্রিয় নদী, বয়ে যাচ্ছে বুকের সমান্তরাল হয়ে---
হঠাত অসাবধানে একটুকরো কাগজ খসে পড়ে তোমার হাত গলে---
ব্যস্ত তুমি মাড়িয়ে যেতেই--
কুড়িয়ে পাওয়া মানিক যেন তুলে নিলাম
আহ কি প্রশান্তি! তোমার ছোঁয়া ! পড়ে যাই তোমাকে--
অনেক দিন পর আবার
অবাক আমি আনন্দশ্রুতে ভাসতে থাকি--
এ তো দুজনার একসাথে লেখা কবিতা !!
"উতল জলে কেঁপে উঠে ধরিত্রী বলে,
উদ্দেশ্যহীন চলতে গিয়ে তোমার সাথেই শুরু হল
এ জীবনের চাওয়া-পাওয়া---তাই, চলো দুজন দুজনার শ্বাস হয়ে বাঁচি"
সত্যি এভাবে এখনো মনে পড়ে আমাকে ? ---
এক অলৌকিক অপার্থিব আলোকে-আবেশে
এপিটাফের সতেজ ফুলের মতই
আমি তোমায় দিয়ে সাজিয়েছি আমার কবিতার পাতা
"সমর্পণ" কথাটি বুঝেছি তোমায় ভালোবেসে!!

বাহিরে ভীষন ঝড় বয়ে যাচ্ছে! দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে গাছ,লতা, গুল্ম,
শোঁ শোঁ শব্দে কাঁপন ধরে বুকে, প্রলয় নৃত্যে মেতেছে প্রকৃতি, কিছুক্ষণ পরপর বাজ পড়ার শব্দ!
বিজলীর আলোয় আলোকময় চারপাশ, জানালার সার্সি গড়িয়ে নামে বৃষ্টি ঢল!
ফটো গ্যালারীতে তোমার শান্ত সৌম্য মূর্তির ছবির ভেতর হারিয়ে যায় মন ।।

তোমার অনুভবের অনুভূতিতে বুদ হয়ে অনায়াসে ভালোবেসে যাই তোমায়,
হৃদয়ের অন্তরালে জমতে থাকে কত শত স্মৃতি কথা
রোমন্থনের মাঝেও কোথায় লাগে যেন ভরসা----মুছে যায় সব হতাশা
নেশা নেশা ভালবাসা কি একেই বলে !
আজকাল মনে হয় তোমাকে ভালোবেসে যাওয়া ছাড়া আমার অন্য কোনও পথ আর নেই,
ঘরোয়া আড্ডায় কবিতার আসরে তোমাকে নিয়ে কথা হয়
আমি আনন্দিত হই, পুলকিত হই;
আবৃত্তি করি অনিকেত কে--একটা শেষ না হওয়া গল্পের নায়ক,
যে ভালবেসে ছিল, ভালবাসতে শিখিয়েছিল,
না ছুঁয়েও কি করে সারাক্ষণ ছেয়ে থাকা যায় বুঝিয়েছিল----
সে আমার অনিকেত !



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ