আজ সকাল থেকেই ঝিমলির মুখ ভার, কাল বাচ্চু ফের ওকে পূরোনো বলেছে। ওদের দুটো বাড়ির পরেই বাচ্চুদের বাড়ি।ছুটির দিন গুলো নিজেদের বাড়ির থেকে ওদের বড়িতেই বেশি সময় কাটে তার। স্কুলের দিন গুলোতে বিকেলে একটু কাইমার কাছ থেকে ঘুরে যায়। বাচ্চুর মা ওর কাইমা। কাইমা অর্চনাও ঝিমলিকে নিজের মেয়ের মতোই ভালোবাসে। অর্চনার মাতৃমন লালায়িত ছিল একটি মেয়ের জন্য। তাই একমাত্র সন্তান বাচ্চু সারা মন প্রাণ জুরে থাকলেও মনের অগোচরে একটু খালি জায়গা রয়ে গিয়েছিল। ঝিমলিকে পেয়ে পূরণ হয়েছিল সেই জায়গা। শনিবার বিকেল থেকেই ঝিমলি ওই বাড়ি।
অর্চনা চা করে ঝিমলিকে ডাকলেন, “একটু আয় নারে ঝিমলি তোর কাকুর প্লেটটা নিয়ে যাবি”।
ঝিমলি কাকু অজিতেশ বাবুর সাথে বসে টিভি দেখছিল। “দেখেছ কাকু আজও কাইমা আমায় চা করতে দিলনা”। ঝিমলির সুরে বেজে উঠল অভিমান। অজিতেশ বাবু ঝিমলিকে আদর করে বললেন, “দরকার নেই, কাল তুই আর আমি চা করব, তুই যা প্লেটটা নিয়ে আয় দুজনে খাই”।
ঝিমলি রান্নাঘরে যেতেই অর্চনা ওকে আদর করে বলল, “তুই একটু বড় হয়ে যা তারপরেতো চা করবি”।
-8 ক্লাসেও বুঝি বড় হয়না, আর কত বড় হব?
“কলেজে যখন পড়বি তখন বড় হবি, নে চল প্লেটটা ধর” বলে ওকে প্লেটটা ধরিয়ে নিজে চায়ের ট্রেটা নিয়ে এগিয়ে চললেন।
চা খেতে খেতে অজিতেশ বাবু অর্চনাকে জিজ্ঞেস করলেন, “মামনিকে জামাটা দেখিয়েছ, পছন্দ না হলে পাল্টে আনবো”।
-কাইমার কেনা জামা আমার পছন্দ হবেনা তাইকি হয় কাকু, ওটাতো আমার অষ্টমি পূজোর জামা।
‘পূরনো মেয়ের নতুন জামা ...শুনেই হাসি পাচ্ছে আমার’-- সুর করে বলতে বলতে বাচ্চু ঘরে ঢুকল।
-কাইমা দেখো আবার আমায় ওই রকম বলছে... আবছা কান্নার সুরে ঝিমলি বলে উঠল।
-দেখ বাচ্চু এইবার তুই কিন্তু মার খাবি, কেন ওকে পূরনো পূরনো বলিস। অজিতেশ বাবু বকে উঠলেন। অত সুন্দর নামটাকে বিকৃত করে কেউ?
ঝিমলির ভালো নাম পর্ণা, পর্ণা মল্লিক। বাচ্চু ওকে প্রায়ই হালকা ফুলকা রাগিয়ে দেয়। তবে বেশিক্ষন এই রাগারাগি ওদের থাকেনা। সেই ছোট্ট বেলার বন্ধু ওরা। বাচ্চুর ভালো নাম অর্ণব, অর্ণব মুখার্জী। ওর এখন ক্লাস টেন। পড়ার খুব চাপ। পর্ণাও লেখাপড়ায় খুব ভালো। জীবনে বড় হয়ে দাঁড়ানোই ওর লক্ষ। ওদের বন্ধুত্ব এখন ধিরে ধিরে ভালোবাসার রঙে রঙিন হচ্ছে ওদেরই অজান্তে। কিন্তু বাচ্চু যখন ওর নাম নিয়ে রাগায় তখন ওর মাথা গরম হয়ে যায়।
-কাইমা আমি বাড়ি যাচ্ছি, পড়তে বসব ... বলে বেড়িয়ে গেল। ঝিমলি মনে মনে ঠিক করে নিল ও কাইমার কাছে তো যাবে কিন্তু ওই ছেলেটার সাথে কথা বলবেনা।
এদিকে ঝিমলি চলে যেতেই অর্চনাও ছেলেকে খুব বকলেন। ঝিমলির জামাটা না দেখেই চলে যাওয়াতে অর্চনারও মনটা খারাপ হয়ে গেল। বাচ্চু বুঝতে পারল আর ঝিমলিকে রাগানো চলবেনা। ওরা সত্যিই আর ছোটো নেই। খানিকটা পড়াশোনা করে ও ছুটলো ঝিমলির বাড়িতে। এই বাড়িটাও ওর নিজের বাড়ির মতোই। এই বাড়িতে ঢুকতে কোনো বাঁধা ধরা সময়ের দরকার হয়না।
-কাকিমা ঝিমলি কোথায়?
-সুধা রান্না ঘর থেকে বলল ... সে তো তোদের ঘর থেকে ফিরেই পড়তে বসেছে।
ঝিমলির পড়ার ঘরের সামনে এসে দেখল দরজা বন্ধ। কয়েকবার ডেকে সাড়া না পেয়ে বাচ্চু চুপচাপ ফিরে গেল নিজের বাড়ি। তার ছোট্ট মন আজ প্রথম ঝিমলির জন্য এক অজানা ব্যাথায় ভরে উঠল।
“অমন ভালোবাসার মুখে আগুন। না আছে রূপ না আছে জাতের মিল।
“অদ্ভুত তোমার মানসিকতা! যে মেয়েটাকে এতো ভালোবাসো তার জন্য এই তোমার ভাষা। তোমার সবটাই কি অভিনয়? তাহলে আজ আমি তোমার সব সুখ সুবিধের যোগান দিতে পারছি তাই তোমার পরম প্রীয়তম, কাল যদি অসুস্থ হয়ে পড়ি তুমিতো আমায় রাস্তায় ফেলে দেবে”।
“কি কথার ছিরি! ওই মেয়েটা আর তুমি কি এক? পাশাপাশি থাকলে অমন ভালোবাসা হয়েই থাকে তাই বলে চিরজন্ম তাকে মাথায় করে ঘুরতে হবে”?
-কাকে মাথায় নিয়ে ঘুরবে মা ... বলতে বলতে বাচ্চু ঢুকল।
-তোমার মার মতে ঝিমলির না আছে রুপ না আছে জাত, তাই তোমার আমার ইচ্ছে থাকলেও ঝিমলি এ বাড়ির বৌ হতে পারবে না।
-কি অবাস্তব কথা! বিয়ে করব আমি আর সিদ্ধান্ত নেবে তোমরা? ঝিমলিকে আমি বিয়ে করবোই” এই বলে বাচ্চু নিজের ঘরে গেল। বিছানায় শরীর এলিয়ে দিয়ে ভাবনার সাগরে ডুবকি দিল। ‘মা যা বলল তা কি সত্যি। মা ঝিমলিকে পছন্দ করে না। কিন্তু তা কি করে সম্ভব? মা তো ঝিমলিকে তার থেকেও বেশি ভালোবাসে। যাইহোক তার নিজের সিদ্ধান্ত হচ্ছে—“ঝিমলি কে ছাড়া জীবন তার চলতেই পারেনা। তার জন্য যে কোনো লড়াইএ সে প্রস্তুত”।
অর্চনা ছেলেকে বোঝাতে চেষ্টা করল অনেক ... কিন্তু কোনো ফল হল না। কান্নাকাটি করেও ছেলের মন টলাত পারল না। তখন অর্চনা ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল বাপের বাড়ি। অজিতেশ বাবু অনেক বোঝালেন কিন্তু অর্চনার এক কথা, “হয় ছেলের জেদ থাকবে না হয় সে থাকবে, এই রকম বেয়াড়া জেদি ছেলের সাথে সে থাকবে না”।
##
বেশ কয়েকদিন ওদের কথা বন্ধ। কাইমার সামনে ঝিমলি অত্যন্ত সহজ সরল, ভীষন স্বাভাবিক। কিন্তু আড়ালে ও বাচ্চুকে চেনেনা। বাচ্চু মনে মনে অস্থির হয়ে উঠল। ঝিমলির সাথে কথা বন্ধ করে থাকলে এতো কষ্ট তা আগে কোনোদিন বোঝেনি। কোনো উপায় না পেয়ে শেষে মা কে বলল, “মা তুমি ঝিমলিকে বলে দাওনা আমি আর কখনো ওকে রাগাবোনা, ও যেন আমার সাথে কথা বলে”।
“বুঝেছি তাই মেয়েটা কদিন এমন চুপচাপ, কেন তুই ওমন কথা বলিস? ছোটো থেকেই দেখছিস তো খুব ভাবুক আর ভীষন নরম মনের মেয়ে ও, কেন ওকে রাগাস”?
সেদিন অর্চনা ওদের আড়ি মিটিয়ে ভাব করিয়ে দিয়েছিল। সেদিন থেকে দুজনেই দুজনের কাছে নতুন এক পরিচয়ে ধরা পরেছিল। ভীষন অদ্ভুত এক ভালোলাগার আবেশ জড়িয় ধরেছিল ওদের কিশোর দুটো মনকে।
দিন মাস বছরকে ডিঙিয়ে ওদের ক্লাস এগিয়ে চলল। ওরা আরও বড় হল। ওদের জামা গুলো ছোটো হল, পরিনত হল মন। লেখাপড়া ছাড়াও আরও নানা দিকে নিজের নাম জড়াল ঝিমলি। বাচ্চুরও ইঞ্জিনিয়ারিঙের শেষ বছর। চাকরি পাবেই । অজিতেশ বাবুর ইচ্ছে ঘরে বৌমা আসুক। অর্চনাও রাজি। কোথায় কতো সুন্দরী মেয়ে আছে তা মনে মনে হিসেব করতে লাগল।
প্রায় দিন পাঁচেক পরে একদিন সকালে জলখাবারের থালাটা অজিতেশ বাবুর সামনে রেখে ছটা মেয়ের ছবি খুলে রাখলেন। “দেখতো কোন মেয়ে তোমার পছন্দ”?
-“বাব্বা তুমি মেয়ে জোগারও করে ফেলেছ! কিন্তু আমিও যে মেয়ে ঠিক করে রেখেছি গিন্নি”।
-“তাই নকি! কে গো”
-“আমাদের ঝিমলি, এমন মেয়ে তুমি কোত্থাও পাবেনা”।
-“অসম্ভব, হতেই পারেনা। আমার ছেলের বৌ হবে ওই কালো মেয়ে! তুমি চিন্তা করলে কি করে”?
-“অর্চনা মানুষের ওপরটা দেখে বিচার করোনা, তার মন টা দেখো। তাছারা তুমি মেয়ে হয়ে বুঝতে পারছনা বাচ্চু আর ঝিমলি পরস্পরকে ভালোবাসে”।“কেন তুমি বুঝতে চাইছনা অর্চনা, ওদের জীবন ওরা বাঁচবে, আমরা কেন হাত বাড়াব। রুপ দিয়ে বিচার করোনা” অজিতেশ বাবু চেষ্টা করলেন বোঝাতে।
“আমার একমাত্র ছেলেকে নিয়ে এইটুকু ইচ্ছে কি আমার থাকতে পারে না? সব মায়েরাই নিজের ছেলের জন্য সুন্দর বৌ চায় আমি কি তার বেশি কিছু চেয়েছি”।
চলে গেল অর্চনা, কারও কথাই শুনলনা।
##
ঝিমলি মায়ের সঙ্গে মামার বাড়ি গিয়েছিল কদিনের জন্য। কাল রাতেই ফিরেছে। ও জানেনা ওর শান্ত জীবনে ঝড় উঠেছে ওরই অজান্তে। কদিন কাইমার সাথে দেখা নেই তাই সকলে উঠেই ছুটে এসেছে এবাড়ি।
-“ও কাইমা” দরজায় ধাক্কা দিতেই দরজা খুলে গেল। সামনেই ড্রইংরুম, ঢুকে দেখে সোফায় বাচ্চু শুয়ে। “এই বাচ্চু এখানে কেন শুয়েছিস। তার মানে রাতভোর টিভি দেখা হয়েছে, ওঠনা রে” বাচ্চুকে ঠেলতে লাগল ঝিমলি।
-“ঝিমলি মা মামারবাড়ি গেছে, জানিনা কবে আসবে” কান্না ভেজা গলায় বাচ্চু বলল।
-“কেন এমন হঠাৎ গেল, কোনো কাজে গিয়েছে কি”?
-“মা আমাদের সম্পর্কটা মানতে পারলনা”।
-“সেকি, কেন! কাইমা তো আমায় খুব ভালোবাসে। আমি মানতেই পারিনা। তুই চল আমার সাথে, আমরা দুজনে কাইমা কে ফিরিয়ে আনব”।
-“নারে ঝিমলি মা আসবে না, কোনোদিন আসবেনা। আমি জানি মাকে, মা ভীষন জেদি”।
-“বাচ্চু আমি কাইমা কে ভালোবাসি। আর ঝামেলাটা যখন আমায় নিয়ে আমিই এর সমাধান করব। তুই চল আমার সাথে, আমরা দুজনে গিয়ে কাইমা কে নিয়ে আসব”।
কিছুক্ষনের মধ্যেই দুজনে তৈরি হয়ে বেরিয়ে পরল। বারুইপুর থেকে বেহালা যেতে প্রায় সাড়ে তিন ঘন্টা লেগে গেল। মামার বাড়ির দরজাতেই অর্চনার সাথে দেখা। দুজনকে একসাথে দেখেই অর্চনার মাথা আগুন।
-“আমি তো বলেছি বাচ্চু তুমি যাকে ইচ্ছে বিয়ে করতে পারো, তবে কেন এসেছ এই মেয়েটাকে নিয়ে। দয়া করে তোমরা আমায় রেহাই দাও”।
ঝিমলি ছুটে গিয়ে অর্চনার বুকে মাথা রেখে কেঁদে উঠল, “কাইমা আমি ঝিমলি, আমায় ওমন করে ওই মেয়েটা বলনা। আমি তোমায় নিয়ে যেতে এসেছি। বিশ্বাস করো আমি বাচ্চুকে বিয়ে করবনা। আমি ওকে একটুও ভালোবাসিনা। আমার মতো কালো মেয়েকি কারও ঘরের বৌ হয়? বিয়ে সংসার এসব আমার জন্য নয় কাইমা। ওসব সুন্দর মেয়েদের জন্য। কাইমা আমি আর তুমি দুজনে মিলে খুব সুন্দর মেয়ে খুঁজে বাচ্চুর বিয়ে দেব। এখন চল আমরা একসাথে ফিরে যাই”।
ঝিমলির কথা শুনতে শুনতে বাচ্চু পাথরের মূর্তিতে পরিনত হয়েছিল। এখন ঝিমলি চুপ হতে আবার সে শব্দের সন্ধান ফিরে পেল। শুনতে পেল মা বলছে, “যা বলছ তুমি, তা তোমার মনে থকবে তো”?
-“থাকবে কাইমা, নিশ্চই মনে থাকবে। তুমিতো জানো কাইমা ঝিমলি মিথ্যে বলেনা”। বাচ্চু অবাক হয়ে দেখল কেমন করে তার মা তার জীবন্ত দেহ টাকে টেনে ছিঁড়ে একটা নোংরা শবে পরিনত করে দিল।
কিছুদিন পরেই অর্চনার বন্ধুর বোনঝির সাথে খুব ধুমধাম করে বাচ্চুর এনগেজমেন্ট হল। মেয়েটার নাম ঐন্দ্রিলা। অপূর্ব সুন্দর দেখতে। বড়লোকের আহ্লাদি মেয়ে। অর্চনাকে মামনি বলে। বাচ্চুকে বলেছে “বাচ্চু নামটা আমার পছন্দ না, কেমন যেন সেকেলে। আমি তোমায় বুবু ডাকব”।
কাইমাও ডাকেনি তাই ঝিমলিও যায়নি কিন্তু সব কথাই ঝিমলির কানে এসেছে। ঝিমলি এখন ব্যাস্ত এখানকার পাট তুলতে। খড়গপুরে মাসির বাড়িতে যাবে। সেখানে চেষ্টা করবে জীবনটাকে নতুন ভাবে গড়তে।
##
##
খড়গপুরের এক প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা পর্ণা মল্লিক। সকলের ভালোবাসার মধ্যমণি হয়ে আছে। কিন্তু শান্তি নেই তবুও। মাঝে মাঝেই মনে হয় বারুইপুরের সেই বিষাক্ত হাওয়াটা যেন হঠাৎ তার শরীরকে ছুঁয়ে বেড়িয়ে গেল। শুরু হয় শরীরে অসহ্য জ্বালা। তাই পর্ণা চেষ্টা করতে লাগল আরও দুরে চলে যেতে। সফল হল তার চেষ্টা। ছোট্ট পাহাড় ঘেরা শহর বেলপাহাড় তার শান্তির আঁচলের তলায় ডেকে নিল পর্ণাকে। পর্ণা হল সেখানকার স্কুলের অঙ্কের টিচার, আর সকলের ভালোবাসার জন পর্ণা দি।
টাটা কোম্পানির স্কুল তাই তার সীমানার ভেতর সব কিছু। যেন বাইরের সংস্পর্শ থেকে নিজকে সম্পূর্ণ আলাদা করে সরিয়ে রাখার চেষ্টা। পর্ণার ভীষন ভালো লাগল এই পরিবেশ আর তার থাকার জন্য এই ছোট্ট কোয়ার্টারটা। যার বারান্দায় দাঁড়ালে দেখতে পাওয়া যায় দুরের ওই সিতারাম পাহাড়। সময় তার পাতার ছাওয়া ছড়িয়ে দিয়েছে পর্ণার অশান্ত মনের ওপর। পর্ণা এখন অনেক শান্ত। দিনের ব্যাস্ততার পর সন্ধে থেকেই পর্ণা বারান্দায়। আস্তে করে গান চালিয়ে কোনোদিন বই পড়ে কোনোদিন বা এমনিই বসে থাকে। সামনে রাস্তার ব্যাস্ততা দেখে। অল্প স্বল্প রুপোলি তারের ছোঁয়া পড়েছে চুলে। একটু যেন ভারিও হয়েছে। চোখে উঠেছে চশমা। সব মিলিয়ে সুন্দর আকর্ষনিয় ব্যাক্তিত্তের অধিকারিণী ।
সেদিনও এমনি বসে আছে এমন সময় সোমাবৌদি আর অরুন দা এসে হজির। ওরা ওকে নিজের বোনের মতোই ভলোবাসে।
“এই মেয়েটা চল কটা দিন কলকাতা থেকে ঘুরে আসি” গেট খোলার সাথে সাথেই অরুনদার গমগমে আওয়াজ ছড়িয়ে পড়ল বাড়িময়। পর্ণা আর দুটো চেয়ার ভেতর থেকে এনে ওদের বসতে দিয়ে বলল, “হঠাৎ এই সময়ে কলকাতা কেন দাদা”?
“আর বলিসনা আমার ভাসুরপোর বিয়ে, তাই তোর দাদার ইচ্ছে এই বোনটাকেও সঙ্গে নেবে” খুশির স্বরে সোমা বলে উঠল।
“আমি গিয়ে কি করব? তোমাদের পরিবারের কাজ, আমি সেখানে পুরো অচেনা”।
“ভুল বললি, আমাদের বাড়ির সবাই তোকে চেনে, গেলেই বুঝবি”।
“অত কথার কি আছে, তুমি যাচ্ছ এইটাই শেষ। কোনো প্রশ্ন না তর্ক না, আর স্কুলের ছুটির ব্যপারটা আমার ওপর ছেড়ে দাও। নায়ার কে আমি ইতিমধ্যেই বলে দিয়েছি, এখন তোমার পার্বতি কে বল একটু চা-এর ব্যাবস্থা করতে”।
“দাদা বলতে হবেনা চা এলো বলে” হাসতে হাসতে পর্ণা বলল।
চা খেয়ে গল্প গুজব সেরে ওঠার আগে সোমা আর একবার মনে করিয়ে দিল যাবার দিনটা।
হায় রে! যে কলকাতা থেকে পর্ণা সরে থকতে চায় সেই কলকাতাই যেন দু হাত বাড়িয়ে এগিয়ে আসছে। দাদার কথার অমান্য,- বাপরে চিন্তাও করা যয়না!
শেষ পর্যন্ত কলকাতা যাবার দিনও এসে গেল। বেশ আনন্দ করেই ট্রেনে সময় কাটল। বাড়ি পৌঁছে তো অবাক! সবাই ওকে চেনে। মনেই হচ্ছেনা যে এই প্রথম তার এই বাড়িতে আসা।
“কি রে অচেনা কাউকে পাচ্ছিস” একসময় দাদা জিজ্ঞেস করলেন। “আমার বোন আমার বাড়িতে অচেনা হতে পারে কি”?
খুশিতে ঘাড় দুলিয়ে পর্ণা হেসে উঠল। সকলের সাথে আনন্দের সাথি হয়ে সেও রওনা হল বিয়ের দিন।
কনে যাত্রির লোকেদের খুব সুন্দর আপ্যায়ন হল। হঠাৎ এক ভদ্রলোককে দেখে মনের কোনে ঝিলিক দিয়ে উঠল বাচ্চুর মুখ। ধুসস! এখানে কোথায়? অবচেতন মনের ইচ্ছে অনেক সময় চোখের সামনে বাস্তব হয়ে আসে।
“আমার যদি ভুল না হয় আপনি ঝিমলি”?
‘একি, সেই ভদ্রলোকইতো দাঁড়িয়ে। তবে কি আমি যা ভেবেছি তাই সত্যি!’
“না না আপনার ভুল হচ্ছে কোথাও”।
“অসম্ভব এই আওয়াজ আমার ভুল হতে পারেনা। তুমি কোথায় পালাবে? ধরা পড়ে গেছিস রে”।
চোখ সামলাবে না, শক্ত গলায় অস্বিকার করবে। কিছুই পারলনা। বোকার মতন মাথা নিচু করে নখের মধ্যে কিছু খুঁজতে লাগল।
“ঝিমলি চল একটু ফাঁকা দেখে বসি। আগে বল আমাদের দুজনের ভালোবাসাকে তুই একলা কাঠগড়ায় তুলে কি করে ফয়সালা শোনালি? আমি সেদিন চুপ করে তামাসা দেখেছিলাম তাই ভগবান আমার জীবনটাকেই তামাসা বানিয়ে দিয়েছেন, আয় এইখানটায় বসি” চেয়ারে ঝিমলিকে বসিয়ে নিজেও একটা চেয়ার টেনে বসল।
“সুন্দর বৌ নিয়ে তোমার তো সুখের সংসার”।
“এতোখানি জীবনে সুখ পাখিকে দেখতেই পেলাম না তো সংসার করবো কি করে”?
“সে কি”!
“প্রথম দিন থেকেই ঐন্দ্রিলা নিজের খোলোস ছাড়তে শুরু করেছিল। বাবা বুঝতে পেরেছিল তার বাচ্চুর জীবনটা মার জেদের হাড়কাঠে বলী চড়ে গেছে। ঐ চিন্তায় বাবার শরীর ভেঙ্গে গেল। দুবছর অশান্তির রাজ্যে কাটিয়ে চিরদিনের জন্য শান্তির রাজ্যে চলে গেল। মাকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠাবার খুব জেদ করেছিল কিন্তু আমি তা হতে দিইনি। সেই জেদে পার্টি আর মদের নির্লজ্জ ফোয়াড়া উঠতে শুরু করল। মাকে খুব কষ্ট দিয়েছে। শেষের দিনগুলোতে মা তোকে খুব মনে করত। আমাকে বলতো তোর খোঁজ করতে। বারবার তোর নাম করে ক্ষমা চাইতো আপনমনে”।
“ঐন্দ্রিলা কি এখনো মদ খায়”?
“খায় কিরে ওতো মদেই ডুবে থাকে, ঝিমলি এখন আর বসা চলবে না। কেউ না কেউ খুঁজতে এসে যাবে। তোর কথা কিছুই শুনলাম না। তুই আজ বিয়ের পর আমার সাথে চল। তোকে আমার ভীষন দরকার, আমরা আবার নতুন করে বাঁচব”।
“নারে যে তার ছিঁড়ে গিয়েছে তা জোড়া দেওয়া যায়না। জুড়লেও আবার ছিঁড়বে। তুই চেষ্টা কর ঐন্দ্রিলাকে ফিরিয়ে আনতে। ভালোবাসায় সব হয়”।
“একদিন মা আমার জীবনের সব সুখ কেড়ে নিয়েছিল, আজ তুইও আমায় ঠেলে দিলি। আমি চললাম, আর কখনো আমি আসবোনা তোর সামনে” বলেই ঝড়ের বেগে বেড়িয়ে গেল।
ঝিমলি কিছু বলার সময়ই পেলনা। কোথায় খুঁজবে এখন? যদি কিছু করে বসে। অস্থির হয়ে পর্ণা সোমা বউদির কাছে এল, যদি কিছু করতে পারে।
“বউদি আমার একজনের সম্পর্কে কিছু খবর চাই। ভদ্রলোক মেয়ে পক্ষের আত্মীয় নাম অর্নব মুখার্জ্জী। আমি পরে তোমায় সব বলব এখন প্লিজ তুমি একটু চল”।
সোমা এসে মেয়ের ভাইকে জিজ্ঞেস করতেই—“আরে উনিতো আমার বস। খুব ভালো মানুষ। আমায় ছোটো ভাই-এর মতোই ভালোবাসেন। কিন্তু কি হয়েছে বলুনতো”?
“আমার ননদের উনি দুর সম্পর্কের আত্মীয় হন, ওনার সাথে একটু কথা বলতে চায়”।
“আচ্ছা, আমি বলছি ওনাকে”।
কিন্তু বিয়ে বাড়ির ঝামেলায় সে কথা আর কারোরই মনে থাকলো না। পরদিন হাসি কান্নার মাঝে বর বউকে নিয়ে সবাই ফিরে এল। দুপুরে খাওয়ার পরে বেশ জমানো আড্ডা বসেছে এমন সময় সোমা এসে বলল, “পর্ণা, সেই ভদ্রলোকের খুব জোর এক্সিডেন্ট হয়েছে। বেঁহুশের মধ্যে কোনো এক ঝিমলির নাম ধরে ডাকছে। চেনা জানা সকলের কছেই খোঁজ করা হচ্ছে কেউ—
“বৌদি আমিই সেই ঝিমলি, তোমায় সব বলব তুমি আমায় এক্ষুনি নিয়ে চল তার কাছে” বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ল ঝিমলি।
প্রথমটা সোমা অবাক হলেও চট করে নিজেকে সামলে নিয়ে দুহাতে ঝিমলিকে জড়িয়ে নিয়ে বলল, “চিন্তা করিসনা সব ঠিক হবে।
##
তিনদিন পর ডাক্তারদের প্রচন্ড চেষ্টা, ভগবানের আশীর্বাদ আর ঝিমলির আকুল প্রার্থনাতে বাচ্চু চোখ খুলে তাকাল। তবে চোখ খুললেও কেউ কাছে যাবার অনুমতি পেল না। এতদিন যে উদ্বিগ্ন আর চিন্তার মাঝে সবাই ছিল আজ তা থেকে মুক্ত। ঝিমলি একজনকে জিজ্ঞেস করল, “ওনার স্ত্রীকে দেখছিনা। তিনি কি খবর পাননি”?
“খবর দেওয়া হয়েছিল কিন্তু ম্যাডাম সরাসরি অস্বীকার করলেন, বললেন ওই নামে তিনি কাউকে চেনেন না। দেখা যাক স্যার কি করেন”।
একসময় নার্স খবর দিয়ে গেল, ‘যে কেউ একজন দেখা করতে পারেন’। ঝিমলি এগিয়ে গেল ধীর পায়ে। হাতে মাথায় ব্যাণ্ডেজ বাঁধা বাচ্চুর শুকনো মুখ দেখে ঝিমলি কেঁদে ফেলল। বাচ্চুর গায়ে মাথায় খুব আস্তে হাত বুলিয়ে ঝিমলি জিজ্ঞেস করল, “এতো রাগ তোর, আমায় একলা ফেলে রেখে চলে যাচ্ছিলিস”!
কোন উত্তর নেই কেবল করুন হাসি ফুটে উঠল শুকনো মুখটায়।
চোখের জল মুছে শান্ত হয়ে ঝিমলি বলল, “হাসপাতাল থেকে তোকে আমি আমার কাছে নিয়ে যাবো। তোর যাকে যা জানাবার আছে জানিয়ে দে”।
“অফিস ছাড়া আর তো কেউ নেই আমার” কি নিদারুন ব্যাথা কথা গুলোর মাঝে! ঝিমলি আবার কেঁদে ফেলল।
নার্স এসে ঝিমলি কে অনুরোধ করল বাইরে যেতে। কি আর করবে নিয়ম তো মানতেই হবে। তাছারা অনেক কাজ ও আছে। একজন অসুস্থ মানুষকে নিয়ে বারো ঘন্টার জার্নি , হাসি খেলার ব্যাপার নয়। অরুন- দা তো চলে যাবেন। হাসপাতাল থেকে বাড়ি এসে সোমা বৌদিকে সব বলল।
“তোর দাদা থাকতে এতো চিন্তা কেন তোর? সে ডাক্তারের সাথে কথা বলে নিয়েছে। তবে তুই যে ওনাকে সাথে নিয়ে যাবি তাতো জানতাম না, দাঁড়া দেখি সে কোথায়। কিছুক্ষন পর অরুন কে নিয়ে সোমা হাজির। ঝিমলি, অরুন আর সোমার কাছে সব খুলে বলল।
“বা! চমৎকার, এই না হলে আমার বোন” পর্ণার মাথায় হাত বুলিয়ে অরুন বলে উঠল। “কাল আমরা যাচ্ছি। গিয়ে ওখানকার ব্যাবস্থা আমি সব করে রাখব। আর এইখানের সব কিছুর দায়িত্ব ওদের স্টাফেদের, ওরাই হাসিমুখে সব ভার নিয়েছে”।
“ওরাই হাওড়াতে তুলে দিয়ে যাবে তো” সোমা প্রশ্ন করল।
“হ্যাঁ রে বাবা, খোঁজ নিয়ে জেনেছি অর্নব ভদ্রলোক খুবই মাই-ডিয়ার লোক। সকলেই খুব ভালোবাসে ওনাকে”।
“তবুও একটু চিন্তা তো হচ্ছে, এইরকম একটা রোগী নিয়ে একলা—
“বৌদি চিন্তা করো না আমি ঠিক পারবো। ডাক্তারদের সাথে কথা বলে তবেই আমি ওকে ট্রেনে তুলব”।
অবশেষে সেই দিন এসেই গেল। বাচ্চুকে নিয়ে ঝিমলি রওনা হল। বাচ্চুর মুখেও লেগেছে খুশির ছোঁয়া। পরদিন ভোর সাতটায় বেলপাহাড় স্টেশন। অরুনদা আরও দুজনকে নিয়ে এসেছেন তাই ঝিমলিকে আর কিছুতেই হাত লাগাতে হল না। বাড়ি পৌঁছে দেখল সবই রেডি সোমা বৌদির ব্যাবস্থায়।
বাচ্চুতো খুব খুশি এমন পরিবেশ পেয়ে। বারান্দাতেই বসে পড়ল।
“কি ব্যাপার, এইখানে বসে থাকলে চলবে। চান ফান করতে হবেনা”?
“চান টা তো বুঝলাম কিন্তু ফানটা কি”?
“দেখো রাগিওনা আমায়, ভালো হবেনা কিন্তু”।
“তা জানি, একেই দিদিমনি তার ওপর আবার অঙ্কের, যাদের কিনা নাকের ডগাতেই রাগ বসে থাকে”।
“দাঁড়াও আগে সুস্থ করে তুলি তারপর দিদিমনি কি জিনিষ বোঝাব, এখন চুপচাপ চলো চানে”।
ঝিমলির পরিচর্যায় আর ভালোবাসায় বাচ্চু খুব দ্রুত সুস্থ হয়ে উঠল। পেছনে ফেলে আসা নিদারুন কষ্টের দিনগুলো এখন অতীতের পাতায়। মনের পাতায় তাদের আর সাজানো হয়না, তাই তারা ক্রমশই অস্পষ্ট হয়ে আসছে। সকালে ঝিমলির স্কুল থাকে সেই সময়টা বাচ্চু বই পড়ে কাটায়। কাছেই বিরাট লাইব্রেরি, পাঁচ ছটা ভাষার বইতে ঠাসা। যাদের বিকেলের শিফ্টে ডিউটি থাকে তারাই এই সকাল বেলাটায় আসে। অনেকের সাথেই আলাপ হয়েছে।
বিকেলটা ওদের দুজনের। কোনোদিন ডিনাইনালা, কোনোদিন জামকানি, কোনোদিনবা ফিল্টার প্লান্টের মনোরম পরিবেশ আবার কোনোদিন ওরা চলে যেতো থরমল কোলিয়রি। খুব আনন্দেই দিন গুলো নিজের পাতা উল্টে চলল ওদের জীবন খাতায়।
আজ শনিবার, স্কুল ছুটি। আর বাচ্চুও সুস্থ। তাই আজ চণ্ডী পাহাড়ে বেড়াতে যাবে। পাহারের অনেক নিচে আছে চণ্ডী মন্দির আর পাহাড়ের ওপরে লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দির। পাহাড়ের কোল বেয়ে বয়ে চলেছে ইব নদী।
দুপাশের জঙ্গলের মাঝখান দিয়ে ছুটে চলেছে জীপটা। “কেমন লাগছে বল”? বাইরের দিকে চোখ রেখেই প্রশ্ন করল বাচ্চুকে।
“কি বলি! যদি গায়ক হতাম গেয়ে শোনাতাম, যদি কবি হতাম খাতার পাতা ভরে ফেলতাম কিন্তু সামান্য মানুষ হয়ে—
“থাক মশাই, কিছুই বলতে হবেনা” ঝিমলি ওর হাতটা নিজের গালের ওপর চেপে ধরে বলল।
“স্বপ্নেও ভাবতেও পারিনি ঝিমলি আবার আমরা একসাথে হতে পারব”।
“এর নাম ভালোবাসা। ভালোবাসা যে আত্মার সাথে আত্মাকে বেঁধে দেয়। দুটো মনকে মিশিয়ে দেয়। কারও ক্ষমতা নেই এই দুই প্রাণকে আলাদা করে”।
ধিরে ধিরে পাহারের রাস্তা দিয়ে জীপ ওপরে উঠে লক্ষ্মী নারায়ণ মন্দিরের সামনে দাঁড়ালো। পূজো দিয়ে ওরা ঘুরে ঘুরে বিরাট মন্দিরটা দেখল। সঙ্গের খাবার খেয়ে একটু বিশ্রাম নিয়ে বেড়িয়ে পড়ল চণ্ডী মন্দিরের উ্দ্দেশে।
“ওই দেখো চণ্ডী মন্দির”।
“এতো ওপরে, তুমি যে বললে অনেক নিচে”!
“নিচেই তো, দেখোনা কত সিঁড়ি নামতে হবে”। চারিদিকের দৃশ্যগুলোকে ক্যামরায় বন্দি করে দুজনে সিঁড়ি দিয়ে নামতে শুরু করল। প্রায় পঞ্চাশ সিঁড়ি নামার পর সামনে এলো একটা লোহার সিঁড়ি।
“খুব সাবধানে নামবে, তাড়াহুড়ো করবে না” বাচ্চুকে সাবধান করে ঝিমলি সিঁড়িতে পা রাখল।
একদম তলায় নেমে বাচ্চু অবাক, “কি অপূর্ব জায়গা”!
“হ্যা রে, এই জায়গাটা খুব সুন্দর”।
“আমি কিন্ত একটু বসব, এখুনি যাবনা। সূর্যাস্ত দেখেই উঠব”।
“চিন্তা করিসনা, আমি ড্রাইভারকে বলেই এসেছি”।
ওরা দুজনে মন্দিরে পূজো দিয়ে বাইরে এসে দাঁড়াল। আকাশের গায়ে হালকা রঙ ছড়িয়েছে। ওদের পা ছুঁয়ে বয়ে চলেছে ইব। বর্ষার জলে ইব এখন যৌবন মদে মত্ত তটিনী। বাচ্চু ঝিমলির পাশে গিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরে এক গভীর চুমু এঁকে দিল ওর ঠোঁটে। ঝিমলির দুটো প্রশ্ন ভরা চোখ স্থির হয়ে গেল বাচ্চুর মুখের ওপর।
“জীবনের প্রথম বেলায় আমরা নাইবা পারলাম আমাদের ভালোবাসার ডিঙিটা নিয়ে ভাসতে, কি ক্ষতি তাতে”? দুহাতের মাঝে ঝিমলির মুখটা তুলে বাচ্চুর আকুল প্রশ্ন।
“কোনো ক্ষতি নেইতো বাচ্চু, জীবনের অস্তরাগে বেলা শেষের যে সুর বাজে সেই সুরে বাঁধব আমাদের জীবনের সুর, দিনের শেষ আলোয় বাইবো জীবনের ছোট্টো ডিঙি”।
বাচ্চু ঝিমলিকে জড়িয়ে কেঁদে ফেলল। এতোদিন যে কষ্ট ঝিমলির বুকে চাপা ছিল আজ তার বাঁধ ভেঙে গেল। দুজনকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল সেই জলের স্র্রোত। খানিক পরে বাচ্চু নিজেকে সামলে নিয়ে ঝিমলিকে বলল, “ওই দেখো আকাশের বুকে, নদীর জলে, শেষ বেলার অস্তরাগের আলো ছড়িয়ে পড়েছে। এই আলো বিধাতার আশীর্বাদ আমাদের জীবনের ওপর”।
দুজনে এক সাথে প্রণাম করল অস্তগামি সূর্য্য কে।
0 মন্তব্যসমূহ
সুচিন্তিত মতামত দিন