মন্দিরা ঘোষ

মন্দিরা  ঘোষ


তিন কথা

১।

ভর দুপুরে ভিতরকথা এলোচুলে গা শুকোয়,
ছাদের আলসে জুড়ে শীতরোদের পাহারা।
দগদগে নগ্নতাসব গা ঘষে মেঝেয়,
চুনসুরকির কর্কশতায়য় জ্যান্ত হয়ে ওঠে।
চোদ্দটি অমাবস্যা নেমেছিল একে একে।
হৃৎপিন্ড আর যকৃতের আর্তনাদে
চাঁদ আড়াল থেকে হেসেছিল।
শ্মশান পিশাচের ভিড়ে তখন গুহামুখ
ছাইভস্মে ঢাকা;
শকুনের ডানায় মুখ লুকিয়েছিল
আকাশের নীল।
একে একে চোদ্দটি অমাবস্যার মহাভারত
লেখা হল শরীরের ভাঁজে ভাঁজে।
সেই সব মহাভারত টুপ টুপ নামে
ছাদময় এখন,ভীষণ  শীতেও
পোষাক নেই গায়ে;
নগ্ন হয়ে হৃৎপিন্ড সেঁকে রোদে।


২।

আস্তিনের ভিতর হাত রেখে  চুপ করে
বসে থাকো!
অবশিষ্ট  গোলাবারুদে পচন ধরুক,
তুমি নির্বিকার চাদরে মুখ ঢেকে
দেহজ উত্তাপে হাত সেঁকো।
সময় অসময় গর্জে ওঠে তোমার
কালাশনিকভ অথবা ধর্মীয়  কষাঘাত;
অবোধের রক্ত মেখে উল্লসিত তুমি
বিরুদ্ধাচরণে পৌরুষ দেখাও বহিরাঙ্গের
আতিশয্যে।খুঁজে দেখো তোমার
নিজস্ব অস্ত্রভাণ্ডার!
পৌরুষহীন নিতান্তই একটি রাসায়নিক
শারীরবৃত্তীয়  প্রক্রিয়া।
দম্ভহীন নিরস্ত্র হয়ে একবার ভিতরদেশে এস।
এত অলৌকিক  রূপে কালির মুখোশ  পড়ে আছো?
এই পৃথিবীর জল বাতাস নারী নিরপেক্ষ সব,
নিরপেক্ষ ভালবাসা মেখে নাও একবার;
ফুল লতা নারী দিয়ে জীবন সাজিয়ে দেখো
কত সুন্দর এই পৃথিবীর বুক!

৩।

তাঁর  আসার বড় প্রয়োজন  আজ,
চাঁদ তারা মেঘ ছুঁয়ে,কুয়াশা সরিয়ে
জন্মভুমির ধূলোয়।
ধ্বংসের মুখে এখনো কিছু গাছের পাতা
সবুজ আবীর ছড়ায়;
মৃত পাখিদের ভিড়ে দু একটি বুলবুলি চড়াই
বেদনার গান গায়।
পথটি ঢাকা আছে ভস্মভূমির ছায়ে,
স্বার্থের উল্লাসে বাতাসের ঘরে সুখ নেই;
রক্ত মেখে বসে থাকে শকুনের বিহ্বল  ঠোঁট।
আমরাও যেতে পারি শুধু দুহাতে রক্তলালা মাখা!
যে কটা গোলাপ পড়ে আছে বুকের ভিতর
এস খুলে রাখি পথের পাশে;
তাঁর  আসার পথটি মসৃণ  করি
মাথা পেতে রেখে।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ