শিকড়ে ফেরা
ন্যাশনাল স্কুল অফ ড্রামার চেয়ারপার্সন রতন থিয়াম আদিবাসী সংস্কৃতির ওপর জোর দিয়েছেন। এটা খুবই ইতিবাচক সিদ্ধান্ত। আমরা কোট, প্যাণ্ট পরে মোবাইল হাতে নিয়ে বর্তমানে যে রূপ ধারণ করেছি তার পুরোটাই তো নকল। আমরা এটাকে সভ্যতা বলে মানলেও আসল সভ্যতার সঙ্গে এর কোনো সম্পর্কই নেই। বরং দিনের পর দিন এইসব নকল জিনিসের অনুশীলনে আমরা সভ্যতা থেকে অনেক অনেক দূরে সরে যাচ্ছি। শিকড়ে ফেরার জন্যই আমাদের আদিবাসী সংস্কৃতিকে জানা দরকার।
আজ আমাদের যা অবস্থা তাতে করে আমরা আমাদের দেখে মানুষ জাতিকে চিনতে পারব না। একজন আদিবাসীকে দেখলে একমাত্র আমরা বুঝতে পারি, মানুষ জাতির প্রকৃত সংজ্ঞা কী হওয়া উচিত। অদ্ভুত এক সরলতা তাদের জীবন বৈশিষ্ট্য। মানুষকে বিশ্বাস করার এক অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে তাদের মধ্যে যা আজকের দিনে একেবারই বিরল। আমাদের সামান্যতম বোধ যদি আজও অবশিষ্ট থেকে থাকে তাহলে বুঝতে পারব, আমরাও একদিন ওইরকমই ছিলাম। নকল সভ্যতা আমাদের গ্রাস করে ফেলেছে। আদিবাসীরা তথাকথিত শিক্ষিত নয়। আমাদের মতো শহুরে আদবকায়দায় তারা পোশাকও পরে না। কিন্তু ওদের যেটা আছে সেটা তো আবার আমাদের নেই। সেটি হল 'র', 'ক্রুড' এনার্জি। সরল জীবনযাত্রা থেকেই এটা তাদের মধ্যে আসে। দুবেলা দুমুঠো ভালো করে খেতে পায় না ঠিকই কিন্তু মানসিকভাবে ওরা ভীষণই শক্ত । নিজের সংস্কৃতিকে বুকে আগলে রাখে।
তাই রতন থিয়ামকে অসংখ্য ধন্যবাদ। যা কেউ করেন নি তাই তিনি করে দেখাতে চলেছেন। অনেক দেরীতে হলেও এটা দরকার ছিল। কারণ মানুষ হিসাবে মানুষকে চেনা দরকার। আমার মনে হয় মানুষ চেনার ক্ষেত্রে এই পদক্ষেপ বিশেষ কার্যকরী হবে।
উল্টে টাকা, পাল্টে টাকা
যে রাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ঘোষনা করলেন, ৫০০, ১০০০ টাকার নোট একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর বাতিল হয়ে যাবে, ঠিক তার পরদিনই বাজারে একটি লোক রাগে গজগজ করতে করতে বলে চলেছেন --------- "এইরকম মূর্খের মতো সিদ্ধান্ত কেন যে নেয়! কত সাধারণ মানুষের যে অসুবিধা হবে!" লোকটিকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। এমন নয় যে তার প্রচুর কালো টাকা আছে যেগুলি ধ্বংস হয়ে যাবার জন্যই এই বিষোদ্গার। না, তিনি একেবারেই সাধারণ মানুষ। না বুঝেই বলে চলেছেন এইসব কথা।
আমি মুখ খুলতে বাধ্য হলাম ---- আপনি এমন একটা সিদ্ধান্তের কথা বলুন যাতে একটা মানুষেরও অসুবিধা হবে না? একটা মানুষ যেমন সব মানুষকে খুশি করতে পারে না, ঠিক তেমন আপনি পৃথিবীতে যা-ই করুন কিছু মানুষ অসুবিধায় পড়বেই। তার মধ্যে আমি, আপনি যে কেউ থাকতে পারি। কিন্তু তা সত্ত্বেও আমাদেরকে ভাবতেই হবে, তাতে আমাদের দেশের সুবিধা হবে কিনা। দেশের যদি ভালো হয় তাহলে তাতে আমাদের সায় দিতেই হবে।
আমার ব্যক্তিগত অভিমত, এইরকম একটি ঘটনায় সাধারণ মানুষের সমর্থন থাকাই উচিত। আমাদের দেশে এমন অনেক মানুষ আছে, যারা তাদের আয়কে সঠিক ভাবে দেখায় না। নিজের বিশাল আয়কে কম করে দেখিয়ে সরকারকে কর ফাঁকি দেয়। কর ফাঁকি দেওয়া টাকাই কালো টাকা। এই কালো টাকাকে বাজেয়াপ্ত করার জন্যই তো এই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। নিজের চোখ এবং খবরের কাগজ মারফত আমি যা দেখেছি তাতে এটা বলতেই হবে যে, মানুষের অসুবিধা হয়েছে। কিন্তু পাশাপাশি এটাও বলতে হবে যে, মানুষ হুজুগে মেতেছে। এটিএম খুলতে না খুলতেই মানুষের লাইন। ব্যক্তিগতভাবে আমি চিনি এমন অনেক মানুষকে আমি দেখেছি তারা ইচ্ছা করে লাইনে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু তাই বলে আমি বেশ কিছু মানুষের কষ্টকে ছোটো করে দেখছি না। ব্যাঙ্কে লাইন দিয়ে দাঁড়াতে হচ্ছে বলে অনেকে দারুণভাবে রাগান্বিত। সত্যিই অনেক বৃদ্ধ বৃদ্ধার কষ্টকে ভীষণ বলে মনে হয়েছে। কিন্তু এমন অনেক মানুষকে জানি যারা সম্প্রতি একটি লোভনীয় অফারের সিম তোলার জন্য ঘন্টার পর ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়েছে। সিনেমা দেখার জন্য তো লাইনে দাঁড়ানো জলভাত হয়ে গেছে। তাহলে তারা ব্যঙ্কের লাইনে দাঁড়িয়ে সরব হচ্ছে কেন?
অনেক কষ্ট করে আমাদের রোজগার করতে হয়। আর কিছু মানুষ কোটি কোটি কালো টাকায় দেশের মানুষ তথা দেশকে কিনে নেবার অপচেষ্টা চালাবে, এটা হতে পারে না। একটা নতুন ব্যবস্থা চালু হতে সময় লাগে। সেই সময়টুকু আপনারা অন্তত দিন। আমাদের ভালোই হবে।
0 মন্তব্যসমূহ
সুচিন্তিত মতামত দিন