নিয়াজ উদ্দিন সুমন

নিয়াজ উদ্দিন সুমন











এক।এক।

যে মাটিতে গভীর নিদ্রায় শান্তিতে ঘুমিয়ে আছে মাস্টার বাবুর পরম প্রিয় মা-বাবা। যে ভিটে-মাটির সোদা গন্ধে হারিয়ে যায় সকল ক্লান্তি, জাগ্রত হয় ভাললাগার ভিন্ন অনুভুতি । যত্নে গড়া বাড়ির ভিতরে-বাহিরে, শান বাধানো পুকুর ঘাটে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে আছে সন্তানদের শৈশব-কৈশরের মনোরম দিনের মধুময় স্মৃতিগুলো আর সবখানে লেগে আছে তাদের নরম হাতের র্স্পশ। ঘটে যাওয়া হাজারো ঘটনার সাক্ষি হয়ে বাড়ির চারপাশের এখনো দাড়িয়ে আছে সারি সারি তাল, নারিকেল, আম-কাঠাঁল, আর দেবদারু গাছ। গত চারদশক ধরে যে মাটির টানে ছুটে যাওয়া হয়নি কখনো কোন খানে। সকল আবেগকে মাড়িয়ে বাস্তবতাকে সঙ্গী করেস্বপরিবার চলে যেতে হবে নিজ জন্মভুমি ছেড়ে। যার পরতে পরতে লেগে আছে ভাললাগার ভালোবাসার শিহরন।


দুই।

র্দীঘ চল্লিশ বছরের বন্দী দশা থেকে মুক্ত হয়ে নিজেকে দেশের একজন নাগরিক বলে পরিচয় দিতে পারবে খুব শীঘ্রই, এমন খবর শুনে মাস্টার বাবুর দেহ-মনে বয়ে গেল বাধ ভাঙ্গা আনন্দের উচ্ছাস। সকল সুযোগ-সুবিধা বঞ্চিত নাগরিকত্বহীন জীবন-যাপনের অবসান হতে যাচ্ছে চার দশক পরে বাংলাদেশ–ভারত ঐতিহাসিক ‘মুজিব-ইন্দিরা চুক্তির’ আওতায় সিটমহল বিনিময় বাস্তবায়নের মাধ্যমে।


তিন। 

একদিকে প্রাপ্তির আনন্দ অন্যদিকে হারানোর বেদনা। এই যেন মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। কিছু পেতে হলে কিছু ছাড় দিতে হয় এই কথাটি চরম সত্য ছিটমহল বাসীদের ক্ষেত্রে। যে প্রকৃতি পরিবেশের আলোছায়ায় বেড়ে উঠা তা ছেড়ে মানিয়ে নিতে হবে নতুন কোন পরিবেশে নতুন ভাবে।পাড়া-প্রতিবেশী, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবী যাদের কে সুখে-দুখে সবসময় কাছে পাওয়া, যাদের ভালবাসায় হৃদয় আঙিনা ভাললাগায় প্রতিনিয়ত সিক্ত হওয়া, তাদের মায়ার বন্ধন পিছনে ফেলে চলে যেতে হবে আগামী নতুন দিনের সম্ভবনার পথে। ভাবতে ভাবতে মাস্টার বাবুর চোখের কোনে জল এসে জমা হয় । মুর্হূতে হাসিমাখা মুখ মুলিন হয়ে যায় নিষ্ঠুর বাস্তবতায়।


নিয়াজ উদ্দিন সুমন নিয়াজ উদ্দিন সুমন Reviewed by Pd on অক্টোবর ২৯, ২০১৬ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

সুচিন্তিত মতামত দিন

banner image
Blogger দ্বারা পরিচালিত.