একটানা উড়ছে তিনরং পতাকাটা। ওই ভেঁপুদের কার্ণিশে লেগে আছে পেটকাটির লেজ। মাঞ্জাটা ধার হয়নি ভালো। প্যাঁচ লাগতেই হাঁচড়পাঁচড় ; আর নেই আকাশে। সেই যে নেমে আসছে গোত্তা খেয়ে ; তারপর দুপুর হয়ে এলো। প্যাডেলে চাপ দিতেই চাকা গড়ালো। মোড়ের মাথায় তিনটে বক্স ! গমগমিয়ে গাইছে। জরা আঁখ মে ভর লে পানি , জো শহীদ হুয়ে হে উনকি . . .আচারের পাতাটা চাটতে চাটতে ভেঁপুজিজ্ঞেস করল
- শহীদ কাকে বলে রে ?
- যারা মরে গেছে ।
- দাদুর মতো ?
- না রে ! ওই যে হেডস্যারের ঘরে যাদের ছবি থাকে।
- ওদের ছবি থাকে কেন বলতো ?
- ওদের কে আজকের দিনে মালা দিতে হয়। গানটান গাইতে হয় । স্কুলে দেখলি না !
- ছবির ভেতর গান শোনা যায় ?
- কেন তোদের গোপাল তো ছবি থেকেই লাড্ডু খায়। খায়না ?
- কই আর খায় ?
- আরে এসব কি দেখা যায় ? ধরে নিতে হয়। এমনিই !
- হুম্ ! এমনি এমনিই কেমন স্কুল ছুটি বল্ ? ইস্কুলে কালোজাম খাইয়েছে। গান হলো ! রোজই এরকম হলে ?
- রোজরোজ কে মরবে ? ধুস !
- হাসপাতালে তো মরে রে ! দেখিস না মিত্রখালে কতো আগুন। ধোঁয়া উঠছে তো উঠছেই।
- ওরে ওমনি মরলে হয়না। দেশের জন্যে মরতে হয় !
- দেশের জন্যে ?
- হুঁ।
- ভারতবর্ষ আমাদের দেশ। ভারতবর্ষ নদীমাতৃক দেশ। ভারতবর্ষ স্বাধীন দেশ। হিমালয় ভারতবর্ষের . . . !
- থাম থাম ! ওসব জানি !
- তো সেই ভারতবর্ষের জন্যে আবার মরবে কেন ?
- কে জানে বাবা ! ভালবাসলে বোধয় মরেটরে ! সেদিন দাদা বলছিল মুন্নির গায়ে কেউ হাত দিলে জান দিয়ে দেবো। ওইরকমই হবে !
- হুম্ ! ভালবাসা ! সিনেমার মতো ! কিন্ত দেশ মানে তো নদী, জঙ্গল, পাহাড়টাহাড় . . . . ওইসব হয় ?
ভেঁপু সাইকেলে প্যাডেল মারে। ঠনঠনিয়ে চাকা ঘোরে। দুপুরটা এখন বিকেল বিকেল হয়েছে। টেম্পোচকে সুভাষ বসু, ক্ষুদিরামের গলায় মালা। পায়ের কাছে আবির রংপদ্ম। পতাকার গায়ে হাতে ব্যথা। চুপ করে বিকেল দেখছে একাই। ধেনো মাতাল বাংলা খেয়ে একাই নাচছে । বক্সে ভালবাসার গান বাজছে . . . জরা ইয়াদ করো কুরবানী ! স্বাধীনতা বুড়ো হয়েছে। পতাকা আর বইতে পারেনা আজকাল।
সায়ন্ন্যা দাশদত্ত
Reviewed by Pd
on
আগস্ট ১৫, ২০১৬
Rating:
Reviewed by Pd
on
আগস্ট ১৫, ২০১৬
Rating:

কোন মন্তব্য নেই:
সুচিন্তিত মতামত দিন