স্নেহা / শৌ ন ক


দাদা
ভঙ্গুর স্বপ্ন ভেঙে গেছে, ভাঙেনি আকাশ...
এ আকাশ অফুরন্ত স্বপ্নের আকাশ...
স্বপনের মধ্যেই আমি টের পেয়েছি আমার চারপাশ জুরে শুধুই বীজিত হাঁসির হাসনাহেনা...
ঘণ্টার পর ঘণ্টা পরে থাকা তোমার ৩/৪ জলচিঠি...মাথায় পরছে জললাঠি... শ্রেণীক্রমো অনুযায়ী ৩ দিয়েই শুরু করি... সত্যি সত্যি আমি হাসনাহেনার গন্ধ পাচ্ছি দাদা...এ কোন মন ভোলানো কল্প নয়...সুখ ভোলানো দুঃখ নয়...
বসন্ত দিনের এমন আকাশে পাল্টা-পাল্টি অভিযোগে ফাল্গুনেরাও আঙ্গুলি নির্দেশনায় করছে কানাঘুসা...
হা হা হা দাদা মমোটা কেন এতো জ্বালাচ্ছে সেটা তুমিও যেমন জানো...আমারো তেমনি জানা... ঠিক তেমনি জানা, যেমনটা জেনেছো আমার-দোলার হাসি-কান্নার পোড় খাওয়া বোলের সাথে তোমার মেঘদূত হয়ে আমার পাশে ছুটে আসা...
মানুষের মাঝে বিচিত্র সব রং দেখতে দেখতে...
আমার দৃষ্টিশক্তিটাও অনেকটা কমে গেছে দাদা...
রাজার বিষণ্ণতাকেই দেখলাম শুধু...
রাজাকে কোথাও নয়...
৭মিনিট সময় নিচ্ছি...নামাজটা পড়ে আসছি...
অপেক্ষা করতে পারবোনা দাদা...সত্যি আমি কফি খাবো, খুব কড়া...তোমারটা বাদামী, আমারটা কালো...
আমার কফিটা দারুন হয়েছে.........তোমার...?
বই মেলায় কেন তোমার যাওয়া হচ্ছেনা সে প্রশ্ন তোমায় আমি করবনা...আমি ভয় পেয়ে যাচ্ছি তোমার ভিতরের অশান্ত নীলিমার মেঘ-বৃষ্টির খেলা দেখে...আমি কি টের পেয়ে যাচ্ছি...? রক্ত দিয়ে বর্ণ কিনা, সেই বর্ণে কবিতা আঁকা...
তুমি বইমেলায় যাবে দাদা...এটা আমার আদেশ, উপদেশ কোনটাই নয়...আমার ভিতরের বিষাক্ত রক্তদের ফুসফাসমাত্র......
শুনো দাদা...
আমি জন্মেছি এক সাদা পৃথিবীতে, পথ হেঁটেছি সাদা মাটিতে...হঠাৎ এক বর্ষায় আমার পৃথিবীটা ক্লেদাক্ত হয়ে গেলো... ক্লেদাক্ত পৃথিবীর মাটিতে হাঁটতে হাঁটতে এক ফোটা কাঁদা ছিটকে এসে বসে গেলো আমার বুকের আঙ্গিনায়...সেই থেকে আমি ধোঁয়া...ধোঁয়া...ধোঁয়া...
আমি কতোবার শ্রাবণের মেঘে সাঁতার দিয়েছি...
বহুবার নিজেকে ঝলসে নিয়েছি
সূর্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে...
বিশুদ্ধ মানুষ হবো বলে...
দাদা আর কতোকাল নিজেকে পোড়ালে একটি শুদ্ধ কষ্টি পাবো আমি...???
আমিওতো কিচ্ছু চাইনি দাদা...
অপরাজিত প্রেম, ভালোবাসার আকাশ, নীল জোছনা...
যখন কেও আমায় বলে ভালোবাসি তোকে...ভালোবাসা তোমায়... আমি ক্রমাগত ঐ পারে যাওয়ার জন্য ব্যাকুল হয়ে পড়ি...কারন ঐ পারে তাঁকে হারানোর ভয় নেই...যেমনটা আছে এই পারে...

পরশুইতো কথা হোল মাঈন, আমাদু, হিমি, ভূমীর সাথে...কাল তৌহিদ ভাইর নির্ভেজাল কণ্ঠ...নির্ভরের কাঁধে অনির্ভর জ্বরটা জানতেই পারলামনা একবিন্দু... ভূমীর জমিনটা মনে হচ্ছে বড় অনুর্বর হয়ে গেছে...
দাদা ছিঁচকাঁদুনীর কান্না থামাও... মায়ের হাতের বিশ্বাসী ফুলটা, ছিঁচকাঁদুনীকে ছোয়াও...
মাঈন, আমাদুকে বলে দাও ওদের অমন ভালোবাসায় আমার পুশোবেনা...আমার চাই মুক্ত-সত্য ভালোবাসা...তৌহিদ ভাই, দোলা, রুবী, জয়রাতো ভঁয়ে আমার পথই মাড়ায়না...
আজকাল সবাই আমাকে টুকরো টুকরো মিথ্যে ছুঁড়ে মারছে, যেমন করে তুমি দিচ্ছো আমায়...
হ্যাঁ দাদা সব গান যেমন একসুরে হয়না...তেমনি নিজের মধ্যে গুটিয়ে রেখে সব বিষণ্ণতাকেও বিসর্জন দেয়া যায়না...তুমি কতোটাই ক্ষতের গর্তের গভীরে ডুব দিয়েছো, আমি দিব্য-দৃষ্টির অন্তরালেও তা টের পাচ্ছি হাড়ে হাড়ে...তোমার এহেন সস্তা মাপের বিষণ্ণতায় সত্যি দাদা আমি বড়ই বিস্মিত ও বিচলিত...সব কবিতা টিকে থাকার জন্য মহাকালের পাতার প্রয়োজন হয়না...দরকার মনের বিশালতার............
যে হাঁতে কবিতা তৈরী হয়, সেই মুখে বইমেলা বিদ্বেষ বিষণ্ণতা, রক্ত-বর্ণের এই মাসে এমন কথা নিতান্তই বেমানান নয় কি...? এমন বাক্য স্নেহার অন্তরাত্মাকে কি এক বিন্দুও কাঁদাবেনা...?

কয়েক ঘণ্টা অপেক্ষা করবে দাদা...???
আমি একা দাঁড়িয়ে কিছুক্ষন কাঁদতে চাই...
অনেকটা মেঘের সাথে পাল্লা দিয়ে......

স্নেহা। ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০১২।





স্নেহা।
নাটোরে বনলতা সেন
তোমার বসন্ত
আমাদের নগরীতে বাহারী
কংক্রিট ফুল।
ছোট বোন যখন তার
ছোড়দার কাছে আবদার করে
পলাশ শিমূল প্রথম ফাগুনে
কি যে অসহায় লাগে
রিটোনে কোকিলের ডাক
আর স্ক্রিনসার্ভারে পালাশ শিমূল
রেখে ছোড়দা লেখেন
বসন্তের কবিতা আর
নাটোরের বনলতা আগুনহাসি হেসে
বলেন জীবনানন্দ শেষ হলো কি
হাজার বছরের চলা আর জীবনের লেনদেন?যদি শেষ হয়
ওদের দিয়ে যেও বসন্ত খানিক!

তুষারপাতে তুই নিঃশ্চয় এখন ঘুমে।আজ রঙধনু রঙের গ্যাস বেলুন কিনে উড়িয়েছি এতক্ষণে হয়ত ওরা তোর কাছে পৌঁছে গেছে।নয়ত পথ হারিয়ে অন্যকোথাও চলা থামিয়েছে।আজ পহেলা ফাগুন তাই তোর কথা মতই একটা হাসনাহেনার চারা জুড়ে দিয়েছিলাম বেলুনের নীচে।গাছটা মাটি পেয়ে অচেনা কোথায় বেঁচে উঠবে কিনা জানিনা যদি বেঁচে ওঠেও আমরা কোনদিন জানবো না গাছটা আমাদের বিশেষভাবে তোর।তবু এটুকু আশা আমরা করতেই পারি যদি তার ফুল আসে সে সুবাসে আর কেউ না জানলেও প্রকৃতি জানবে এই সুবাস তোর!

তোর চিঠি পাচ্ছিনা অনেকদিন,তুষারপাতে কি আটকে গেলো নাকি জলচিঠি?তোর শরীর এখন কেমন?আর মাত্র দুদিন তারপর মেলাজুড়ে তোর স্বপ্নের বই সুবাস ছড়াবে পাঠকের মনে।
এইমাত্র প্রথম কোকিলের ডাক শুনলাম মনে হলো তুই ডাকলি দাদা ও দাদা।কি বিস্ময় বল?আমুদার দাবী যেহেতু আমি বইটা তোকে দিয়ে মোড়ক খুলবো ভেবেছিলাম তাই তুই না পড়া পর্যন্ত আমরা কেউ সেই বই পড়বো না।দাবীটা মেনে নিলাম তাই তো হওয়া উচিত।

বিকেল হয়ে এলো সূর্যদেবতা এখনই ধ্যানমগ্ন হবেন একরাশ আঁধার ছড়িয়ে।কৃত্রিম আলো জ্বলে উঠবে ঘরে ঘরে আর মনে মনে জেগে উঠবে ভালবাসা দিবসের প্রেম এই তো জীবন তাই না রে?

কফিটা এখনো এলো না।এই সময় কফিটা না এলে খুব ফাঁকা ফাঁকা লাগে।বাকী তোর বন্ধুদের মতো।

ভাল থাকিস রঙধনু বেলুনের মত..
দাদা


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ