মহর্ষি বশিষ্ঠের আশ্রমে চার রাজপুত্র অধ্যয়নে রত । তপোবনের শ্যামল শান্ত তরুলতা ছায়া নিবিড় পরিবেশে একদিন ঋষি রাজপুত্রদের জানালেন মহর্ষি শুক্রাচার্যের কথা । শুক্রাচার্য অসুর বংশজাত হওয়াওয়া স্বত্বেও মহর্ষি বশিষ্ঠ জানালে যে তিনি অত্যন্ত জ্ঞানী এবং একজন বিচক্ষণ মানুষ ছিলেন । একথা শুনে চার রাজপুত্র অবাক হলেও তাঁরা রাতে নিজ নিজ ঘরে ঘুমতে চলে গেলেন । কিন্তু রাজপুত্রদের মধ্যে যে বড় ছিলেন তিনি ব্যাপারটা ভুললেন না ।
শুক্রাচার্যের পরাজয় হয়েছিল দেবরাজ ইন্দ্রের হাতে । তাই তিনি দেবরাজ ইন্দ্রের মন্দিরে রাতের অন্ধকারে উত্তর খুঁজতে গেলেন। মহর্ষি বশিষ্ঠ আশ্রমে রাজকুমারকে খুঁজে না পেয়ে খুঁজতে খুঁজতে গেলেন ইন্দ্রের মন্দিরে । অন্ধকার মন্দিরের গর্ভগৃহের মাঝে মশালের আলোয় তিনি রাজ পুত্রকে দেখলেন ইন্দ্রের মূর্তির সামনে বসে পাথরের মেঝের মধ্যে লেখা কোন কিছু সে পড়ার চেষ্টা করছে । গুরু তাকে ডাকলেন, রাম......., তুমি কি করছ এখানে ?
রাম জানাল সে এই অজানা লিপি পাঠোদ্ধারের চেষ্টা করছে । গুরুদেব রামকে জানালেন যে এই লিপি অসুরদের লিপি, দেবতারা অসুরদের পুঁথিপত্র, জ্ঞান বিজ্ঞা, তাদের সব সব কিছু জ্বালিয়ে দিয়েছেন । তাই আজ আর সেই লিপি পাঠোদ্ধার সম্ভব না । রাম বশিষ্ঠের কাছ থেকে জানতে পারেন যে অসুরদের সভ্যতা অনেক উন্নতি ছিল এবং এরা ঐক্যবদ্ধ ছিলেন । তাই প্রথমে তাদের কেউ পরাজিত করতে পারেন নি । কিন্তু পরে ওরা দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যান । একদল যারা একটি বিশেষ শক্তিকে “একম” বিশ্বাস করত । আরেকদল তাঁরা বহু অলৌকিক শক্তিকে বিশ্বাস করে তাদের জন্য উপাস নাগার তৈরি করেন । এই ভাবে তাদের মধ্যে অবিশ্বাস এর সূচনাহয় এবং দেবতারা এর সুযোগ নিয়ে অসুরদের উন্নত সভ্যতা ধ্বংস করে দেন । এতো গেল রামায়ণের কথা । কিন্তু আজকের যুগেও দেব অসুরের যুদ্ধের এই ঘটনার কারণ ও তার পরিণতি প্রযোজ্য ।
জামাত থেকে উদ্ভুত জঙ্গীগ্রুপগুলো কল্পিত খিলাফত প্রতিষ্ঠার লড়াইটি চূড়ান্ত পর্যায়ে চালিত করছে পুরো দক্ষিণ এশিয়ায়। পাকিস্তান-ভারত-বাংলাদেশে তাদের নেটওয়ার্কটি সমানভাবে বিস্তৃত। এখন আল-কায়েদা ও আই এস ভারতীয় উপমহাদেশ বলেই ডাকছে এই পুরো অঞ্চলটিতে। আফঘানিস্তানে সোভিয়েত আগ্রাসন ঠেকাতে যুক্তরাষ্ট্র যে আফঘান মুজাহেদীন তৈরী করেছিলো সেখানে পাকিস্তান, ভারত এবং বাংলাদেশ থেকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক যোদ্ধা প্রশিক্ষণ এবং সোভিয়েত বিরোধী যুদ্ধে অংশ নেয়। এরাই নিজ নিজ দেশে ফিরে গড়ে তোলে ছোট ছোট জঙ্গীগ্রুপ যাদের লক্ষ্য শারিয়াহ আইন প্রবর্তন ও খিলাফত প্রতিষ্ঠা করা। যুক্তরাষ্ট্র যাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে তৈরী করে; তারাই যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু হয়ে যায়। কারণ আফঘানিস্তানে তালিবানদের কল্পিত খিলাফত প্রতিষ্ঠা করতে দেয়নি যুক্তরাষ্ট্র। তৈরী হয় আল-কায়েদা। আল-কায়েদার সন্ত্রাসী কার্যক্রম আমরা দেখেছি। আল-কায়েদা কিছুটা নিষ্প্রভ হয়ে যেতেই মাঠে নেমে পড়ে আই এস। এবার তারা স্পষ্ট করে বলে তাদের উদ্দেশ্যের কথা। ইসলামিক স্টেট বা খিলাফত প্রতিষ্ঠার লড়াইয়ে অবতীর্ণ নতুন এই জঙ্গী গ্রুপটি। আল-কায়েদা, আই এস বা পাকিস্তান-ভারত-বাংলাদেশের জঙ্গীগ্রুপগুলো সবাই এই যুদ্ধের রাজনৈতিক শাখা হিসেবে জামাত বা মুসলিম ব্রাদারহুডকেই অনুসরণ করে। উদ্দেশ্য অভিন্ন।
ভারতীয় উপমহাদেশে যেহেতু সর্বত্রই জামাত রয়েছে মূলধারার রাজনৈতিক দল হিসেবে; তাই জঙ্গীগ্রুপগুলোর বেড়ে উঠতে কোন বেগ পেতে হয়নি। ভোটের রাজনীতির স্বার্থে পাকিস্তানে মুসলিম লীগ নওয়াজ, ভারতে বিজেপি এবং বাংলাদেশে বিএনপি জামাতকে সফরসঙ্গী করেছে। এই প্রশ্রয়ে জামাত ব্যবসা-বানিজ্য প্রসার করেছে এবং খিলাফত প্রতিষ্ঠার লড়াইটি নিজেরাই চালিয়ে যাবার মতো অর্থনৈতিক সামর্থ্য অর্জন করেছে।
ভারতীয় উপমহাদেশের টাইটানিক জাহাজটি ডুবে যাচ্ছে এরকম একটি আশংকা জঙ্গীগ্রুপগুলো তৈরী করায়; পশ্চিমা বিশ্বে সেকেন্ড হোম তৈরীর ধুম পড়ে গেছে আত্মকেন্দ্রিক মধ্যবিত্ত ও বিত্তবানদের। জনমানুষের মনে ভীতি তৈরীর কাজটি জঙ্গীরা প্রতিনিয়ত করে চলে। এখন তারা লড়াইয়ের চূড়ান্ত পর্যায়ে এসে একটি অজুহাত খুঁজে নিয়েছে; সে অজুহাতের নাম অবিশ্বাসের দর্শন বা নাস্তিকতার বিরুদ্ধে লড়াই। কারণ যে সমাজে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রসার ঘটেনি, যেখানে যুক্তিচর্চার কোন আগ্রহ নেই; সেখানে চট করে ‘অনুভূতি’তে আঘাতের ধোয়া তুলে “আমরা” বনাম “ওরা” বিভাজন তৈরী করা খুবই সহজ। ওদিকে আগে থেকেই হিন্দু বনাম মুসলমান বিভাজনের ধোয়া তুলে পাকিস্তান ও বাংলাদেশে হিন্দুদের হত্যা-নির্যাতন-উচ্ছেদ লেগেই আছে যেখানে জামাতের সঙ্গে মূলধারার প্রায় সব দলের লুন্ঠকদের একটি ঐক্য অবিচল। ভারতে শিবসেনা অধ্যুষিত এলাকাগুলোতে মুসলমানদের ওপরে নির্যাতন জারী রয়েছে। পাকিস্তানে হিন্দুদের উচ্ছেদ প্রায় শেষ হয়ে এলে “শিয়া” ও “সুন্নী”র আমরা ও ওরা বিভাজন তৈরী করে হত্যা উচ্ছেদ চালিয়েছে জামাত সমর্থিত জঙ্গীরাই। বাংলাদেশে শিয়া সুন্নী না থাকায় এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি ও বিপক্ষের শক্তি বিভাজনটি আত্মীয়তা ও বেয়াইঘটিত কারণে সুস্পষ্ট না করা যাওয়ায় জামাত খুঁজে বের করেছে “আস্তিক” বনাম “নাস্তিক” বিভাজন। কারণ সমাজের সাংস্কৃতিক উত্তরণ না ঘটায় ভিন্নমত গ্রহণের সক্ষমতাই যেখানে বেশীর ভাগ মানুষের তৈরী হয়নি; সেখানে অবিশ্বাসের দর্শনের ভিন্নমতকে গ্রহণে সমাজ অক্ষম। এই অক্ষমতার সুযোগে ধারাবাহিক ব্লগার হত্যায় অনেক মানুষকেই নিষ্ক্রিয় দেখা গেছে। হত্যা যে সব সময়ই একটি অপরাধ এবং হত্যার পক্ষে কোন যুক্তিই থাকতে পারেনা, এই স্বাভাবিক বোধ তৈরী হয়নি এই অস্বাভাবিক সমাজে।
কয়েক বছর আগের একটি দৃশ্য হয়তো অনেকেরই মনে আছে। ওই দৃশ্যে দেখা যায় তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ সৌদি রাজার আয়োজিত এক ভোজসভায় তলোয়ার নিয়ে রাজার সঙ্গে নাচছেন। সেই তরবারি ছিল একটি বিশেষ অবস্থার প্রতীক ও আভাস।
আজ মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম জনগণ মুসলিম নামধারী একদল সন্ত্রাসীর হাতেই নিহত হচ্ছে! মৃত্যুর ব্যবসায়ীদের প্রেতাত্মারা সেখানে নিরপরাধ মানুষের মাথা দিয়ে ফুটবল খেলছে। হত্যা ও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে মুসলিম মেয়েরা কথিত জিহাদিদের হাতে! এ অবস্থায় প্রকৃত ইসলাম ও ধর্মান্ধদের সন্ত্রাসী ইসলামের পার্থক্য তুলে ধরা জরুরি হয়ে পড়েছে। পাশ্চাত্য প্রকৃত ইসলামী জাগরণকে সন্ত্রাসী ইসলামের মাধ্যমে প্রতিহত করতে চায় যাতে নিরাপদ থাকে বিশ্বব্যাপী তাদের লুণ্ঠন ও দখলদার ইসরাইলের ক্রমবর্ধমান আগ্রাসী তৎতপরতা। আর ইসলাম সম্পর্কে আতঙ্ক ছড়িয়ে দিতে পারলে পাশ্চাত্যে অমুসলিমদের ইসলাম গ্রহণের হিড়িকও কমে আসবে বলে ইসলামের শত্রুরা আশা করছে।
তথাকথিত মুসলিম সন্ত্রাস নিয়ে পাশ্চাত্য ও বিশেষ করে হলিউড নানা ছায়াছবিও নির্মাণ করছে। তবে সম্প্রতি পাশ্চাত্যের গোপন ও প্রকাশ্য-মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী দল 'আইএসআইএল' উত্থান কোনো চলচ্চিত্র নয় বরং বাস্তব ঘটনা।
সন্ত্রাসী দল আল-কায়দার নতুন সংস্করণ ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক এন্ড লিভান্ট বা সংক্ষেপে 'আইএসআইএল' একটি ওয়াহাবি-সালাফি জঙ্গি সংগঠন। গ্রুপটির নাম থেকেই বোঝা যায় উগ্র বা কথিত সালাফি ইসলামের ভিত্তিতে ইরাক ও আশশাম তথা বৃহত্তর বা প্রাচীন সিরিয়ায় (লেবানন ও ফিলিস্তিনসহ) একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা গ্রুপটির উদ্দেশ্য।
অনেকেই মনে করেন আফগানিস্তানে সাবেক সোভিয়েত দখলদারিত্ব ও প্রভাব মোকাবেলার জন্য আমেরিকাই বিন লাদেনকে দিয়ে গঠন করেছিল আল-কায়দা ও আরো পরে গঠন করে তালিবান। তালিবান ও আল-কায়দাকে দ্বিমুখী বা ত্রিমুখী কাজে ব্যবহার করেছে সিআইএ। প্রথমতঃ ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে এক শ্রেণীর যুবককে শত্রুর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা, দ্বিতীয়তঃ প্রথম এই উদ্দেশ্য হাসিলের পর তথা সরলমনা ধর্মান্ধ যুবকদের ব্যবহার করার পর ইসলামের নামে ধর্মান্ধতার বিস্তার ও জঙ্গিবাদী শাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বিশ্ববাসীর কাছে ইসলাম সম্পর্কে আতঙ্ক ও খারাপ ধারণা ছড়িয়ে দেয়া এবং তৃতীয়তঃ এদেরকে সন্ত্রাসী তৎপরতায় ব্যবহার করে সেই একই সন্ত্রাস দমনের নামে দেশে দেশে হস্তক্ষেপ করতে সক্ষম হয় আমেরিকা।
যাই হোক, ২০০৩ সালে ইরাকে মার্কিন হামলার সময় সর্বপ্রথম গঠিত হয়েছিল 'আইএসআইএল' গ্রুপ। তখন গ্রুপটির নাম ছিল ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক। ২০০৬ সালের ১৫ অক্টোবর বেশ কয়েকটি সন্ত্রাসী গ্রুপের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার পর 'আইএসআই'-এর আনুষ্ঠানিক আত্মপ্রকাশের কথা ঘোষণা করা হয় এবং আবু ওমর আল বাগদাদি গ্রুপটির নেতা বলে জানানো হয়।
'আইএসআইএল'-কে আমেরিকা ও ইসরাইল ছাড়াও অর্থ, অস্ত্র, রসদ ও গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে সহায়তা দিচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি সরকার।
'আইএসআইএল'-এর কিছু বৈশিষ্ট্য:
১.তাদের বেশিরভাগই হচ্ছে বহিরাগত অর্থাৎ বিদেশী এবং তাদের খুব কম সংখ্যকই ইরাকের অধিবাসী। আর এদের প্রতি রয়েছে সৌদি দরবারি ওয়াহাবি মুফতিদের সমর্থন। ওয়াহাবিদের মতে তারা নিজেরা ও হাম্বলী মাজহাবের অনুসারী ছাড়া হানাফি ও অন্য মাজহাবগুলোর সব ইমাম ও তাদের অনুসারীরা সবাই কাফির এবং এদের হত্যা করা বৈধ। অর্থাৎ সুন্নিদের তিন মাজহাব ও শিয়া মাজহাবের অনুসারীরা সবাই কাফির এবং এদের হত্যা করা বৈধ। 'আইএসআইএল'-এর সন্ত্রাসীদের প্রত্যেককেই প্রতি মাসে ১০০০-১৫০০ ডলার বেতন দেয়া হয়। এত বিপুল পরিমাণ অর্থ সৌদি আরব, কাতার, কুয়েত ও আরব আমিরাত যোগান দিয়ে যাচ্ছে।
২. এইসব সন্ত্রাসীরা যে সব অঞ্চল দখল করেছে সেখানেই নৃশংস ও জঘন্য হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। নারী, শিশু, বৃদ্ধ-বৃদ্ধা কাউকে এরা রেহাই দেয়নি। শুধু তাই নয় এর আগে সিরিয়ায় দেখা গেছে, এইসব সন্ত্রাসীরা মানুষ হত্যা করে নিহতদের বুক ও পেট চিড়ে হৃদপিণ্ড, কলিজা ইত্যাদি বের করে এনে চিবিয়ে খেয়েছে এবং এ সব দৃশ্যের সচিত্র ভিডিও ফুটেজও এরা প্রকাশ করেছে ইন্টারনেটে। 'আইএসআইএল'-এর সেনারা এরিমধ্যে তাদের দখলকৃত অঞ্চলে হাজার হাজার বন্দী সেনাকে নির্মমভাবে হত্যা করে সেসবের ছবি ইন্টারনেটে পোস্ট করেছে। তাদের সেনারা নানা অঞ্চলে ইরাকি নারীদের ধর্ষণ করেছে বলেও খবর এসেছে। 'আইএসআইএল'-এর আধ্যাত্মিক উৎসাহদাতা ওয়াহাবি মুফতিদের ফতোয়া অনুযায়ী বিজিত অঞ্চলের নারীদের স্ত্রীর মত ব্যবহার করা হালাল বা বৈধ। এরিমধ্যে মসুলে জোর করে নারীদের বিয়ের অথবা ধর্ষণের ঘটনার পর চার জন নারী আত্মহত্যা করেছে বলে খবর দিয়েছে জাতিসংঘ। ইরাকে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা বিদেশি মদদপুষ্ট সন্ত্রাসী দল আইএসআইএল মসুলে ১২ জন সুন্নি আলেমকে হত্যা করেছে। দলটির প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করতে অস্বীকৃতি জানানোয় এই ১২ জন সুন্নি আলেমকে তারা নৃশংসভাবে হত্যা করেছে বলে গত শনিবার আল ইরাকিয়া টিভি খবর দিয়েছে।
অন্য এক ঘটনায় আইএসআইএল-এর সন্ত্রাসীরা মসুলের কেন্দ্রীয় মসজিদের ইমামকে হত্যার পর তার লাশকে টুকরো টুকরো করে। তাদের দৃষ্টিতে ওই ইমামের অপরাধ ছিল এটা যে তিনি তাদের দলে যোগ দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলেন। স্থানীয় আলেমরা এই নৃশংস ঘটনা ঘটার কথা জানিয়েছেন।
৩. 'আইএসআইএল'-এর সন্ত্রাসীরা ইসলামসহ নানা ধর্মের অনুসারীদের পবিত্র স্থানগুলোকে ধ্বংস করছে এবং লুটপাট ও নির্বিচার গণহত্যায় লিপ্ত হচ্ছে। অথচ পবিত্র ধর্ম ইসলাম যুদ্ধ-কবলিত অঞ্চলে বেসামরিক পুরুষ, নারী, শিশু ও বৃদ্ধদের হত্যা তো দূরের কথা সেখানকার গাছপালা, ফসল, ক্ষেত-খামার, পশু, পানি ও পরিবেশের ক্ষতি করাকেও নিষিদ্ধ করেছে। এমনকি ইসলামী নীতি অনুযায়ী যুদ্ধ-বন্দী বা আত্মসমর্পণকারী ব্যক্তিকেও হত্যা করা নিষিদ্ধ। আন্তর্জাতিক আইন ও রীতি ছাড়াও জাহেলি যুগেও আত্মসমর্পণকারী ব্যক্তিকে হত্যা করা কাপুরোষোচিত কাজ বলে বিবেচিত হত।
ইসলাম যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত কাফির বা অবিশ্বাসী ব্যক্তির লাশকে বিকৃত করাও নিষিদ্ধ করেছে। কিন্তু 'আইএসআইএল'-এর সন্ত্রাসীরা যুদ্ধে নিহত সেনাদের লাশ বিকৃত করা, গাড়ী-চাপা দেয়া ও পদদলিত করা ছাড়াও নিহতদের মাথাকে ফুটবল বানিয়ে ক্রীড়া-কৌতুক করার মত পৈশাচিক উল্লাসে মেতে উঠেছে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে, কেউ যদি একজন নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করে তাহলে সে যেন গোটা মানব জাতিকে হত্যা করলো।
৪. 'আইএসআইএল'-এর সন্ত্রাসীদের অনেকেই আরব দেশগুলোতে হত্যাকাণ্ড ও ডাকাতির মত সন্ত্রাসী তৎপরতায় জড়িত হওয়ায় তাদের মৃত্যুদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের মত কঠোর শাস্তি কার্যকর হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু বিদেশে গিয়ে কথিত জিহাদের নামে সন্ত্রাসী তৎপরতা চালানোর শর্তে এদের মুক্তি দেয়া হয়েছে।
৫. এই সব তাকফিরি সন্ত্রাসী যারা নিজেদেরকে জিহাদি বা মুজাহিদ বলে দাবী করে তারা ফিলিস্তিন দখলদার ইহুদিবাদী ইসরাইলের দিকে ভুলেও একটি গুলিও ছুঁড়েনি। একজন ইসরাইলি সেনাকেও হত্যা করে নি। অথচ এ সব সৌদি-কাতারি-তুর্কি-মার্কিন-ইঙ্গ-ফরাসি-জার্মান সমর্থনপুষ্ট তাকফিরি ( সালাফী ) ওয়াহাবি সন্ত্রাসীরা যেমনিভাবে পাকিস্তান, আফগানিস্তান ও ইরাকে (ওয়াহাবি নয় এমন) লক্ষ লক্ষ নিরীহ মুসলমানকে হত্যা করছে ঠিক সেভাবে তারা সিরিয়ায়ও যারা ওয়াহাবি মতাবলম্বী নয় তাদের মধ্য থেকে গত তিন বছরে হাজার হাজার মুসলমান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বীকে নৃশংসভাবে হত্যা করেছে!
৬.এইসব বিদ্রোহী ও তাকফিরি ওয়াহাবি (সালাফি) সন্ত্রাসী গ্রুপ ও সংগঠন যেমন সৌদি-কাতারি-তুর্কি- শাসকগোষ্ঠী কর্তৃক সমর্থিত ও সাহায্যপ্রাপ্ত ঠিক তেমনি তারা সাম্রাজ্যবাদী বিধর্মী পাশ্চাত্য কর্তৃকও সমর্থিত ও সাহায্যপ্রাপ্ত!
৭.এরা সবাই অত্যন্ত নিষ্ঠুর, হিংস্র ও পাশবিক চরিত্রের বরং পশুর চেয়েও অধম। কারণ, এদের অনেকেই বন্দীদের হত্যা করে তাদের দেহ চিড়ে ফেঁড়ে হৃদপিণ্ড কলিজা ইত্যাদি চিবিয়ে খেয়েছে যা আমরা আগেও উল্লেখ করেছি।
৮.এদের প্রতি আপামর ইরাকি ও সিরিয় জনগণের কোনো সমর্থন নেই।
৯.এদের নিজেদের মধ্যেও কোন ঐক্য নেই ,আর এ কারণে এরা প্রায়ই পরস্পর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। আর খোদা না করুক এরা কোথাও ক্ষমতাসীন হলে এই সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর মধ্যে আরও সর্বাত্মক,ব্যাপক ও মারাত্মক স্থায়ী রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও গৃহযুদ্ধ চলতেই থাকবে। এরা সিরিয়ায় সাহাবিদের মাজার ধ্বংস করেছে। ইরাকেও নবী বংশের দুই ইমাম তথা বিশ্বনবী (সা.) আহলে বাইতের সদস্য হযরত ইমাম হাসান আসকারী (আ.) ও ইমাম আলী নাকী (আ.)'র মাজারের গম্বুজ ধ্বংস করেছিল। এরা বিশ্বনবীর নাতি ও কারবালা বিপ্লবের মহানায়ক হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)'র মাজার ধ্বংসের প্রতিজ্ঞা করেছে। এরাই সিরিয়ায় হযরত ইমাম হুসাইন-আ.'র বোনের মাজারে হামলা করেছে, তিন-চার বছরের শিয়া মুসলিম শিশুকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছে, দুই কুর্দির গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগে-থেকে জ্বালানো আগুনে পুড়িয়ে মেরেছে ও তার ভিডিও প্রচার করেছে, গর্ভবতী শিয়া মুসলিম নারীর পেট চিরে শিশু বের করে উভয়কে হত্যা করেছে, বন্দী শিশুকে দিয়ে যুবক বন্দীকে হত্যা করে তার ভিডিও প্রচার করেছে, কিশোরদের ধরে এনে হত্যা করেছে এবং বহু বেসামরিক লোককে নৃশংসভাবে হত্যা করে তাকফিরি-ওয়াহাবি ইসলামের কথিত বীরত্বের ভিডিও প্রচার করেছে। এইসবই ইরাক ও সিরিয়ায় যুদ্ধরত সন্ত্রাসীদের পাশবিকতার আরো কিছু প্রমাণ।
এখন এই সব জঙ্গী গোষ্ঠি যা করছে তাহল ভারত বাংলাদেশ পাকিস্তান এই সব দেশের সহজ সরল মুসলিমদের ধর্মের নামে তাঁদের ব্রেন ওয়াস করে তাদের দিয়ে অন্যধর্মের মানুষের ওপর আক্রমন চালাচ্ছে ।
আচ্ছা আমি ধরলাম যে আই এস জঙ্গীরা পুরো পৃথিবীটাকে ইসলাম ধর্মের আওতায় এনে ফেললেন । কিন্তু তার পরিনতি কি ? সিরিয়া সহ মধ্য এশিয়া আফ্রিকার দেশ গুলির ওপর এরা যে ভয়ঙ্কর অত্যাচার চালাচ্ছে তাই করবে । এক একটা মেয়েকে ২০ থেকে ২২ জন নিত্য ধর্ষন করে , নরমুন্ড নিয়ে ফুটবল খেলবে আর কি ।
IS জঙ্গীরা যেভাবে হত্যা লিলা চালাচ্ছে, এরা কি শুধু অমুসলিমদের ওপর অত্যাচার চালাচ্ছে ? না এরা মুসলিম দেরও হত্যা করছে, ইসলামী মেয়েদের যৌন-দাসী বানাচ্ছে । এদের অপকর্মের ভার নিশ্চয় সমগ্র মুসলিম সমাজ নেবে না ।
হ্যাঁ, জানিতো এরা IS জঙ্গিদের মতন এক শ্রেণী, যেখান দিয়ে গেছে শুধু ধ্বংস লিলা চালিয়েছে । তবে এরা কিন্তু এদের লুঠতরাজের শিকার
কিন্তু এদের ধর্মের মানুষও হয়েছেন । তা জানার জন্য ইতিহাসটা ভালো করে পড়তে হবে ভাই । বাবর নামাতে এরকম ভয়ঙ্কর সুলতানদের কথা পড়েছি । বাবরের নিজের বড় দিদি এবং বাবরের প্রথম শ্রী আয়েশাকে এদের অত্যাচারের শিকার হতে হয়েছিল ।
মাঝে মাঝে খুব দুঃখ হয় যখন দেখি কিছু সুবিধাবাদী মানুষ নিজেদের স্বার্থ সিদ্ধির জন্য আমাদের ঐক্যের মধ্য ভাঙ্গন ধরাচ্ছে । মুসলিম শাসকরা আমাদের দেশে এসে এই দেশকে ভালবেসেছিলেন এবং নিজের দেশ ভেবেই উন্নয়ন করেছিলেন । সম্রাট আকবরকে যুগযুগধরে ভারতবাসী মনে রাখবে এক সু শাসক হিসাবে । এই প্রসঙ্গে একটা উদাহরণ দিই । একবার পর্তুগীজরা গাধার গলায় কোরানকে বেধে ঘুরিয়ে ছিল । একথা জানতে পেরে আকবরের মা তাকে বলেন তুমি কুকুরের গলায় বাইবেল বেধে ঘোরাও । তখন তিনি মাকে বলেন মা আমি শুনেছি বাইবেল খুব পবিত্র গ্রন্থ, ওরা যে অপরাধ করেছে, আমিও যদি তাই করি, তা হলে ওদের আর আমার মধ্য পার্থক্য কি থাকল । পাঠকদের জানিয়ে রাখি এই তথ্য আকবর-নামা পড়ে আমি জেনেছি ।
এই ছিলেন আমাদের সম্রাট আকবর । এই প্রসঙ্গে আরেকটা কথা জানাই হুমায়ূন-নামা পড়ে জেনেছি গোয়ালিয়র এর রাজকন্যাকে লাঞ্ছনার হাত থেকে হুমায়ূন রক্ষা করেছিলেন, তাই গোয়ালিয়রের রাজমাতা খুশি হয়ে তাকে "কোহিনূর" উপহার দিয়েছিলেন ।
আজ ইংরেজরা না আসলে ভারতবর্ষের অনেক উন্নয়ন যেমন হত না, তেমনি তারা যাবর আগে সাম্প্রদায়িকতার বীজটাও পুতে দিয়ে গেছিলেন, যাকে এখনকার রাজনৈতিক দল গুলো ভোটের রাজনীতিতে ব্যাবহার করছে । কেউ গরু কাটা বন্ধ করছে আবার কেউ দুর্গাপূজার অনুমতি দিচ্ছেন না । এতে আমাদের মতন সাধারণ ভারতবাসীর কোন লাভ হচ্ছে কি ? আমাদের মধ্যে দাঙ্গা বাধিয়ে দিয়ে এরা ভোটে জিতবে, আমাদের শোষণ করে সেই টাকায় নিজেরা ফুর্তি করবে । মাঝখান থেকে প্রান যাবে আমাদের বোকা ভাই বোন গুলোর ।
পান্ডবরা চিরকাল নিজের পিতা না থাকায় ধৃতরাষ্ট্রকে নিজের পিতার মতনই দেখতের তার ন্যায় অন্যায় সব কথাই পান্ডবরা মাথানত করে মেনে নিতেন । কিন্তু ধৃতরাষ্ট্র কোনদিনই পান্ডবদের নিজের প্রত্র ভাবেননি । তিনি সব সময়ে চেয়েছেন তার পুত্ররা সমস্ত রাজত্বের একমাত্র অধিকারি হোক এবং পান্ডবদের তিনি আগাছার মতন তুলে ফেলতে চেয়েছিলেন, তাই জন্য দূর্যোধন যখন ভীমকে খাবারে বীষ মিশিয়ে নদীতে ফেলে দিলেন কিংবা দৌপদীর বস্ত্রহরন করলেন তিনি বুখবন্ধ করে রেখেছিলেন । সেই সময় ধৃতরাষ্ট্র যদি পান্ডব ও কৌরবদের সমান চোখে দেখতেন এবং দুর্যোধনের অন্যায় কাজ গুলো প্রশ্রয় না দিতেন তা হলে হয়ত কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধ এড়ানো যেত ।
হিন্দু আর মুসলিম দুই ভাই, তাই তাদর সমান চোখে দেখা উচিত । কারোর অন্যায়কে প্রশ্রয় না দিয়ে শুধরে দেওয়াই আমাদের কর্তব্য, তাহলেই জাতীয় ঐক্য বজায় থাকবে ।কত যুগ আগে গীতাতে এত বড় কথা আমাদের ভগবান কৃষ্ণ বুঝিয়ে গেছেন আর আমরা এখনও বুঝতে পারছি না !
এবার বলব DR A.P.J ABDUL KALAM এক আত্মজীবনী থেকে নেওয়া একটা ঘটনা । কালামের প্রিয় বন্ধু ছিলেন রামেশ্বরমের শিব মন্দিরের প্রধান পুরোহিতের ছেলে যিনি পরবর্তী কালে প্রধান পুরহিত হয়েছিলেন । কালাম আর তার বন্ধু স্কুলে প্রথম বেঞ্চে বসতেন । একদিন স্কুলে নতুন টিচার আসবে, সবাই অপেক্ষা করছে কখন নতুন টিচার আসবেন । কিছুক্ষণ পর নতুন টিচার আসলেন এবং তিনি এসেই কালাম ও তার বন্ধুর দিকে ভালো করে দেখলেন । কলাম পঞ্চায়েত স্কুলে পড়তেন । তাই স্কুলের নির্দিষ্ট কোন পোশাক ছিলনা । ছেলে মেয়েরা বাড়ীর পোশাক পরে যেত । কালাম মুসলিম ছেলেদের মতনই পোশাক পরে গেছিলেন । কলাম মুসলিম তাই নতুন টিচার তাকে শেষ বেঞ্চে পাঠিয়ে দিলেন ।
এই ঘটনা বাড়ী ফিরে কলাম এবং তার বন্ধু তাঁদের মুসলিম এবং হিন্দু পুরোহিত বাবাকে জানালেন । পরের দিন রামেশ্বরম শিব মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ও কলামের বাবা স্কুলে গিয়ে নতুন শিক্ষকের বিরুদ্ধে অভিযোগ জানায় যে যে শিক্ষক ক্লাসের বাচ্চাদের মধ্যে ধর্মীয় বিদ্বেষ
তৈরি করেন সে বাচ্চাদের কি শিক্ষা দেবেন । সেই দিনই সেই নতুন শিক্ষককে স্কুল থেকে বার করে দেওয়া হয় ।
ব্যাপারটা কিন্তু ইস্ট বেঙ্গল আর মোহনবাগানের খেলা না । যে ওরা এক গোল দিলো তো এবার দু গোল আমরা দেব । ব্যাপারটা ড্রয়িংরুমে বসে লুডো খেলার মতনও না যে ও আমার দুটো গুটি খেলো নে এবার আমি চারটে গুটি খাব । তা কিন্তু একেবারেই না । আমি গর্বের সাথে বলছি আমি হিন্দু যে ধর্ম আমাদের সহনশীলতা শিখিয়েছে, যে ধর্মের মূল গ্রন্থ শ্রীমৎ ভগবৎ গীতায় আমাদের শান্তিতে সহাবস্থানের কথা শিখিয়েছে । প্রেম ও শান্তির বানী শিখিয়েছে , অধর্মের বিনাশের শিক্ষা দিয়েছে । আমাদের কাছে এত মূল্যবান দর্শন যখন আছে তখন আমরা অন্যকে অনুকরণ করে কেন অস্ত্র তুলে নেব ? গীতাতে অধর্মের বিনাশের কথা বলেছে ।তাই আক্রমণ যদি করতেই হয় বর্তমান যুগের এই অধার্মিক লোক গুলোকে করুন । সমগ্র সম্প্রদায়কে না । হজরত মহম্মদ কখনই বলেন নি নির্দোষ মানুষ গুলোকে ধরে ধরে হত্যা করতে এবং নারী শরীর নিয়ে ব্যবসা করতে । তাই যার নিজেদের ধর্মের কথা মানে না তারা তো অধার্মিকই ।
পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি গদ্য-পদ্য রচিত হয়েছে মানবপ্রেম আর দেশপ্রেম নিয়ে। কিন্ত খুবই অদ্ভুত বেপার যে প্রেম কাব্যে বর্ণিত ঘটনাবলীর অধিকাংশ প্রেক্ষাপট বিরহ, হত্যা আর যুদ্ধের ঘটনা! অনেকেই বলে থাকেন প্রেম নাকি ঐশ্বরিক, তবে আমি কোন মতেই বিশ্বাস করিনা দেশপ্রেম ঐশ্বরিক, এটা মানুষের নিজেরই পয়দা যা প্রেমের ঘোর এনে দেয়, আর প্রেম ঘোরে বুদ্ধি লোপই প্রেম কাব্যের প্রধান উপজীব্য, আর ইতিহাসও এবিষয়ে সেই সাক্ষ্যই দেয়। কবে কে কখন দেশপ্রেম নামক এই আফিম আবিষ্কার করে তা জানা না গেলেও এইটা কোন আম জনতা করেনি সেটা আমি সহস্রভাগ নিশ্চিত। এইটা আবিষ্কার যিনি করেছিলেন তিনিই আসল শাসককুলের জনক যা আজ পর্যন্ত এই শ্রেণীকে টিকিয়ে রেখেছে নির্বিঘ্নে, শাসককুল শ্রেনী স্বার্থে দেশপ্রেম এর গায়ে সব সময় লাল সালু দিয়ে রেখেছে। শ্রেনী স্বার্থে মালিকরা সাহিত্য শ্রমিকদের দিয়ে মহাকাব্য রচনা করিয়ে এর কাল্পনিক মাহাত্ম্যে সমগ্র মানব জাতিকে ভুলিয়ে রেখেছে আজতক।
বর্তমান বিশ্ব উৎপাদনের সিংহভাগই ব্যয় হয় রাষ্ট্র নামক দানবের উদর পুর্তিতে। ইতিহাস এর সবচেয়ে অত্যাচারী রাজা তার রাজ্যের মোট উৎপাদন এর যত ভাগ খাজনা আদায় করত, বর্তমানে সবচেয়ে জনকল্যাণমূখী রাষ্ট্র তার চেয়ে অনেক বেশি কর আদায় করে! নিজ উৎপাদন এর অতি ক্ষুদ্র অংশ ভোগ করে সেই উৎপাদক মানুষ নিজের জীবন ধারণ করে। অন্য কথায় বলা যায় রাষ্ট্র যন্ত্র তার নাগরিকদের ততখানিই দেয় যত টুকু না হলে চামড়ার ব্যাগে হাড্ডি গুলো আর ধরে রাখা যায় না, উৎপাদন প্রক্রিয়া বহাল রাখার জন্য।
মানুষের নিজের জীবনের চেয়ে প্রিয় আর কিছু নাই এইটা ঐতিহাসিক ভাবে প্রমাণিত । আফিম না খাইলে কেউ হাঁসি মূখে স্বেচ্ছায় নিজের জীবন দেয় আর অন্যকে হত্যা করে উল্লাস করে? ! খুন খারাবি প্রেম হয় কি করে!? হে মহান দেশপ্রেম তোমার শক্তি অসীম কিনা সে বিষয়ে নিশ্চিত না হইলেও তোমার যে আয়ু সসীম এ নিয়ে আমার কোনই সন্দেহ নাই। এজন্য কি আরও একটা বিশ্বযুদ্ধ দরকার।
দিনদিন পরিস্হিতি ভীষন খারাপ হয়ে যাচ্ছে । তবে এরকম পরিস্হিতি সব যুগে সব দেশেই তৈরি হয়েছিল । সমাজের বুকে কিছু কৃষ্ঞ গহ্বর আছে যেমন মহাকাশের মাঝে এক একটা কৃষ্ঞ গহ্বরে এক একটা মহাবিশ্ব ঢুকে যেতে পারে । প্রত্যেক দেশে এক একটি কৃষ্ঞ গহ্বর আছে যারা নিজেদের স্বার্থে এক একটি সম্পূর্ন দেশকে গিলে খাচ্ছে । যার পরিনাম ভুগতে হচ্ছে আমাদের । তাই সেই মানুষ গুলির প্রতি দ্বেষ দেশের প্রতি বিদ্বেষের যেন কারন না হয় ।
কয়েকদিন আগেই এই বলিউড সুপারস্টার বলেছেন ভারতে ধর্মীয় অসহিষ্ণুতা বেড়ে চলেছে তাদের মধ্যে এক ধরনের ‘ভয়’ ও ‘নিরাপত্তাহীনতা’ তৈরি হয়েছে। তিনি বলেছিলেন, দেশের অবস্থা এখন এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে ভারত ছেড়ে চলে যাওয়া উচিত কি না, তা নিয়েও স্ত্রীর সঙ্গে তার আলোচনা হয়েছে। আমির খানকে তৈরি করল ভারতীয় দর্শকরা, পিকে তে হিন্দু ধর্মের ভগবানদের বহু রকম ভাবে ছোট দেখাবার চেষ্টারে আমির খান ভারতবর্ষে কয়েকশো কোটি টাকার ব্যাবসা করে ফেললো, প্রশংসা পেলো, কিন্তু আমিরখান কি একটা কথা ভেবে দেখেছেন যে এরকম কোন ছবিতে মুসিম ভগবানকে যদি তিনি ছোট করে দেখাতেন তা হলে এই ছবিটাকে কোন মুসলিম দেশের মানুষ কি মেনে নিত ? না নিত না । সবাই জিহাদ ঘোষনা করত । কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশে এত গুলো মানুষ যারা আমিরকে পছন্দ করে তাদের মনে আঘাত দিয়ে দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত কখনই সমর্থন যোগ্য না ।
সব শেষে বলব আমি একজন লেখিকা । সমাজের প্রতি আমার একটা দায়বদ্ধতা আছে , আমি এমন কিছু লিখব না যে "খোল দো" ,"আগুন পাখী " বা "ঠাণ্ডা গোস্ত" নামে ঘটনা গুলো সমাজে পুনরাবৃত্তি হোক । আমাদের দেশ ভারতবর্ষকে সাম্প্রদায়িক ঐক্যের দেশ বলা হয়, কারণ এমন দেশ আর পৃথিবীর কোথাও নেই যেখানে এত রকমের ধর্মীয় সম্প্রদায় এক সাথে বসবাস করে । এ আমাদের গর্ব আমাদের অহংকার ।
প্রকৃতি,ভাষা এবং ধর্মীয় বৈচিত্র্য থাকা সত্যেও আমরা ঐক্যবদ্ধ;তাই তো এই দেশকে বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্যের দেশ বলে ।
0 মন্তব্যসমূহ
সুচিন্তিত মতামত দিন