শহর উত্সোব
শহর বন্দর ভেসে গেলে
গ্রাম নামে চোখ জুড়ে
মেঘের ধোঁয়ায়
এসো
পুকুর পাড়ে বসে ঢালি
লেবু গন্ধ, করবী ফুলে করি অজস্র কাটাকুটি
সোনালী সন্ধ্যায়।
একতালে ফেলে আসা মেয়েবেলা
এমনকি শাদা সজনে ফুলে
যে ঋতুর হাকডাক
যে পুরোনো নিমগাছ
ধরে ও পাড়ার অনিতা মাসি
রোজ শোনাতো
"গলায় এখন রশি বেঁধে জলে ডুইবা মরো গো নাগর"
গায়ের বুকে সেই যাত্রাপালা কই?
কই সেই স্বর
মমতায় জড়ানো পালকের নিচে
হাঁসের ছানা
বিলের ধারে শেষ শীতের রাত
নাজুক শৈশব
ধানকুমারীর বুকে জমা কুয়াশার জলে
ঘুম ভেঙে যাওয়া
ভোর শিশুর খোলা হাওয়া
তৃষ্ণামর্মে ভেজা মাটি
শেকড়ের টান ঢেঁকির আওয়াজ;
বাঁধনহারা বৃষ্টির শব্দ সম্মোহন
ও বর্ষানিদ্রার নাভিমূল পেরিয়ে
প্রভাতের চেয়েও উজ্জ্বল মায়ের মুখ
দেখে দেখে
বাবার কৃষিকাজ-
যেন চকচকে সবুজ ঘাসের ঢেউ
বাঁশঝাড় ভেদ ক'রে
সূর্যের আলোয় উঠোনে বসে
চেনা ঘর
জীবন ছায়ায় সহাস্য সুন্দর;
এখন শুধু অস্ফুট শব্দ
মিশ্র বিষণ্নতা
শহর ঘিরে বড় হয় শুকনো গ্রাম
অপ্রতিরোধ্য দূরত্ব বাজিয়ে যাচ্ছে
শহর উত্সধব নাম।
কলম সহবাস
দু মুঠো অন্ধকারে ঝিমধরা
অস্তিত্বের দেওয়ালে
যত শোকতাপ পেন্ডুলামে ফলোয়িং
সংশয়ের শব্দে
সেইসবের কোন ফেরা নেই
নেই হাতের সঙ্গ পায়ের সঙ্গ
যখন কোন ছোট ঘটনার জন্য
শহর ফাঁকা হয়
দীর্ঘ হয়ে ওঠে দিন
সমাজ জাগে দুভাগ
তারা জানে শুধু পৌষ-মাঘ;
সেইসবের কোন ফেরা নেই
যেন একের পর এক ভেতর খোলা যায় না
বিষাক্ত সুর আত্মসতর্কতায়
না ফেরার হাহাকার!
না ফেরার কোনো গল্প হয় নাকি?
নদীচিহ্ন মুছে মুছে
ক্ষুধার্ত খুটিতে যত পারাপার
পৃথিবীর ঘর ছেড়েছে
ফেরার নামে দৃঢ় পায়ে
এপথে ওপথে
তাদের বিজ্ঞাপন উড়িয়ে আজ
চলুক শুধু কলম সহবাস।
প্রাচীন পাথর
এখন শুধু মিলিয়ে যাওয়ার পালা
ক্রমাগত প্রতিশোধে বড় বেশি লোভ।
বৃক্ষের ডালে যারা প্রকৃতি দেখে
নিঃশ্বাস ফেলে সবুজে
তারা জানে না
সবুজ ঠোঁটের বাসা কই?
চোখভর্তি ভোর, ধ্রুপদী নৃত্যের
যত দৃশ্যে
উধাও হয়েছে বারবার
সেখানেই দুভাগ হয়েছে যত পিঁপড়ের দল
তাদের জানা দরকার;
পথের বুকে মুখ গুঁজে
যে নারী হয়েছে পথ ভোলা
তার আলো তো কবেই ঢুকে পড়েছে অন্ধকারে।
প্রাচীন পাথর তবু জীবন ধেয়ে যায়।
তৃপ্তির ঘোরে
এখন আমি তার শোক ভাসাই
আদি দিগন্তের নীলাভ বেদনায়
চোখের জলে ভরপুর গঙ্গায় ।
0 মন্তব্যসমূহ
সুচিন্তিত মতামত দিন