-‘কী নাম রে তোর? বাড়ি কোথায়?’
এস আই সান্যালের ডাক নাম কশাই সান্যাল। যেমন কড়া, তেমন দুর্মুখ। আরও অন্য অনেক বদনামও আছে তার। কিন্তু তার বাজখাঁই গলার আওয়াজ শুনেও মেয়েটা একটুও ঘাবড়ালো না, একদৃষ্টে তাকিয়ে রইল।
হাবিলদার বড়াল আশ্চর্য হয়ে বলল, ‘শালা একফোঁটা মেয়ের তেজ দেখুন!’
একফোঁটাই তো। বয়স বড়জোর ষোল। চেহারায়, অবিন্যস্ত চুলে, পরণের আটপৌরে শাড়িতে গ্রাম্য ছাপ স্পষ্ট। শ্যামলা রং হলেও মুখটা কমনীয়, আর চোখদুটো গভীর... একটু বেশীই গভীর কি?
সান্যালের মাথায় আগুন জ্বলে উঠলো। টেবিলের ওপর থেকে রুলটা তুলে মারবার ভঙ্গী করতেই হারু পাগলা আর্তনাদ করে উঠলো, ‘ওকে মারবেন না স্যার!’
রুলটা নামিয়ে রাখলেন সান্যাল। এইটুকু মেয়ে থার্ড ডিগ্রী সইতে পারবে না। ওঁর মার খেয়ে লক আপে লোক মারাও গেছে, ওপর মহল থেকে চাপ আসতে পারে। তার থেকে পাগলটাকেই ধরা যাক।
-মেয়েটা কে হয় তোর?
-কেউ না স্যার, আমি কুইড়ে পেয়েছি।
-ওহো, আজকাল রাস্তাঘাটে সমস্ত মেয়ে কুড়িয়ে পাওয়া যাচ্ছে বুঝি?
পাগলা শ্লেষটা গায়ে না মেখে বলতে লাগল,কাল রাতে বাবাঠাকুরের মন্দিরের পিছনে দাঁইড়েছিল। আর ছিল খুব অন্ধকার... চাপ চাপ কালো... এত কালো যে হাতে করে নিয়ে গায়ে মুখে মাখা যায়...
-চ্যোপ শালা! কাব্যি হচ্ছে? কোত্থেকে তুলে এনেছিস মেয়েটাকে? কী মতলব? ধান্দা করাবি?
সান্যালের চোখমুখের এই খুনে ভঙ্গী বড়াল চেনে। তাড়াতাড়ি বলে, স্যার, ওর পেটের কথা কীভাবে বেরোবে আমি জানি। নিয়ে যাব?
সান্যাল শান্ত হন। আবার মেয়েটার দিকে তাকান। শাড়ির তলায় সদ্যযুবতী। হ্যাঁ, পেটের কথা অন্যভাবেও বার করা যায়। সেটা আড়ালে করলেই ভাল। ইশারায় বড়ালকে সম্মতি জানান।
হিঁচড়ে ঘরের বাইরে নিয়ে যাওয়ার সময় হারু বলে “ওর গায়ে হাত তুলবেন না স্যার, অনত্থ হয়ে যাবে!”
সান্যাল জ্বলন্ত দৃষ্টিতে তাকান হারুর দিকে, তারপর যথাসাধ্য নরম স্বরে মেয়েটাকে বলেন, ভয় নেই, এবার বল। কী নাম তোর? বাড়ি কোথায়? হারু কে কতদিন চিনিস?
মেয়েটা কোনো কথা বলে না। টেবিলের ওপর টর্চলাইটটার দিকে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে।
সান্যাল ওর দৃষ্টি অনুসরণ করে টর্চ টা তুলে নেন। এটা? এটা আলো। দেখবি? এই দ্যাখ, জ্বলছে!
মেয়েটা যেন সম্মোহিতের মতো জ্বলন্ত টর্চটাকে দেখতে থাকে। সম্মোহিত! সান্যালের ঠোঁট মুচড়ে কুৎসিত হাসি ফুটে ওঠে। তার মানে, এখন তিনি যা বলবেন বা করবেন, তা আর কেউ জানতেও পারবে না! টর্চটা আস্তে আস্তে দোলাতে থাকেন, মেয়েটার মাথাও সেইমতো দুলতে থাকে। নাকের পাটায় বিন্দু বিন্দু ঘাম... কুঁড়ি বুকটা ওঠানামা করছে...
আস্তে আস্তে এগিয়ে আয়... আরো কাছে... মেয়েটা পায়ে পায়ে এগিয়ে আসে সান্যালের টেবিলের দিকে। সান্যাল একবার দরজার দিকে তাকান। কেউ আসবেনা এখন। উত্তেজনায় চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ান, তারপর ডান হাতটা মেয়েটার গালে ছোঁয়ান... তারপর কাঁধে...তারপর...
হঠাত প্রচণ্ড একটা বৈদ্যুতিক শক খেয়ে ছিটকে পড়েন সান্যাল। একবারে ঘাড় মুখ গুঁজড়ে চেয়ারের ওপর। সেই আওয়াজে দু’জন হাবিলদার দৌড়ে ঘরে ঢোকে, আর চোখধাঁধানো আলোতে তাদের চোখ ঝলসে যায়...
একটু ধাতস্থ হয়ে তারা দেখে কশাই সান্যালের ঘাড় ভাঙ্গা, মুখে গেঁজলা, কুৎসিত শরীরটা নিথর হয়ে চেয়ারে দুমড়ে পড়ে আছে, আর ফাঁকা ঘরে, জ্বলন্ত টর্চের আলো দেয়ালের ওপর পড়ে কী অদ্ভুত চিত্রবিচিত্র বর্ণমালা...
প্রকল্প ভট্টাচার্য
Reviewed by Pd
on
নভেম্বর ২৫, ২০১৫
Rating:
Reviewed by Pd
on
নভেম্বর ২৫, ২০১৫
Rating:


কোন মন্তব্য নেই:
সুচিন্তিত মতামত দিন