![]() |
| কবি পরিচিতি |
উত্তরাধুনিক কবি জিনাত জাহান খান যুগ-সন্ধিক্ষণের নৈরাশ্য,বৈকল্য ও প্রত্যয়হীনতার বৃত্ত থেকে শক্তি, ও বিশ্বাস বাস্তবতার ধ্রুবলোকে প্রতিস্থাপনে দৃঢ় প্রত্যয়ের স্বাক্ষর রেখেছেন তাঁর কবিতায় । '' নীল কাছিমের দ্বীপ '' কবির প্রথম কাব্যগ্রন্থ এটি ২০১৪এর একুশের বই মেলায় প্রকাশিত , বইটির কবিতাগুলো কখনো প্রপাতের মত উচ্ছল্ ছল ,ছল কখনোবা বয়ে যাওয়া শান্ত নদীর জল । তাঁর শব্দের ইন্দ্রজালে আর উপস্থাপনার বহুমাত্রিকতায় মুগ্ধ পাঠক ডুবে যান তন্ময়তার গভীরে ।
'' নীল কাছিমের দ্বীপ'' বইটির কবিতাগুলোয় রয়েছে বৈচিত্রের বৈভব, এক রৈখিকতাকে ভেঙ্গে বহুরৈখিকতাকে টেনে আনার প্রত্যয় । অসমান্য শব্দের অনুমপ বিন্যাসে শব্দ হয়ে ওঠে অসমান্য কবিতা ,তাঁর গভীর অনুভবের শব্দ তরঙ্গ অনুরণন তোলে পাঠকের শিল্প সত্ত্বায় । বইটির এক একটা কবিতার বিষয়, মেজাজ প্রকরণ এক এক রকম । কবি তাঁর বক্তব্য প্রকাশে মোটেও প্রগলভ নন বরং মিতভাষী । তাঁর উপমা চয়নে বিশেষ বৈশিষ্ট্য লক্ষণীয় তার হাতে উপমাগুলো এক বিশেষ রুপ পায় আর বিকশিত হয় নতুন অর্থ নিয়ে , যা তাকে দিয়েছে স্বাতন্ত্র্য ।'' নীল আর সবুজে রুপাগলা জ্যোৎস্না '' কবিতাটি যখন পড়ি তখন পাঠকও অনুভব করেন জ্যোৎস্নায় দুলে ওঠা নীল নদী আর বৌ -মাছি একা উড়ে যায় ।কিংবা যখন চাঁদের অসুখ কবিতাটি পড়ি তখন কবিতার উপমাগুলো আমাদের মনে নির্মাণ করে রুক্ষ পাণ্ডুর সময়ের এক রুপছবি ।
রচনাশৈলীর নান্দনিকতায় তার প্রতিটি কবিতা পাঠকের কাছে খুবই হৃদয়গ্রাহী হয়ে উঠেছে । জিনাত জাহানের লেখার ধরনটা টা ভিন্ন বলেই কবিতার অঙ্গসৌষ্ঠব ও অনন্য, কিন্তু তাই বলে অচেনা নয় বরং অচেনা জগতকে চেনা শব্দের মাধ্যমে তিনি তুলে এনেছেন নিপুণ কারিগরের মত ।
কখনো পেছনে ফেলে আসা অতীত তাঁর মনে আলোড়ন তোলে দারুণ ভাবে ,চিলেকোঠার বাক্সবন্দী রোদ, ''প্রাচিন শিকড় '''' শব্দ যন্ত্রণা '' ইত্যাদি কবিতায় আমরা তারই প্রতিধ্বনি শুনতে পাই ।
'' ঋতুমতী প্রত্নবালিকা ও শীতের পাখিটি '' কবিতায় তিনি আকুল হন , চান সেই শ্যাওলার গন্ধ মাতাল শৈশব । চলমান সময়ের নানা অসঙ্গতি তাঁর মননে অস্থির আলোড়ন তোলে।'' স্রোতস্বিনী নদী'' , ''দ্বিধার দেয়াল'' ''গোপনে যে জল গড়ায় ' ইত্যাদি কবিতাগুলোতে সাবলীল ভাবে উঠে এসেছে যাপিত জীবনের প্রতিচ্ছবি । সংবেদনশীল কবি মনে ছাপ ফেলে সমাজের নানান অসংগতি ।
কবি জিনাত জাহানের কবিতায় আর এক বৈশিষ্ট্য দর্শন যার পরিচয় মেলে শিল্পবেদী , বোধ , দ্বিধা ও একা ইত্যাদি কবিতায় । ''একা ''কবিতায় তিনি যখন বলেন সমুদ্র ইতিহাস জানে /কোন এক অবোধ মুক্তো শিকারির।/আছে ঢেউ এও সমুদ্রে /ঢেউয়ে তুমি সমুদ্র পাবেনা/ ...... বাতাসের উদরে সমুদ্র-/ একা ভীষণ একা/ ঈশ্বরের মত । পাঠকও কিছুটা হলেও ভাবেন সমগ্র সৃষ্টির মাঝে বিলীন যে ঈশ্বর তিনিও কি একা? কি রুপ সেই একাকিত্ব? আর দীঘির জলে শালুকের কেঁপে ওঠার সাথে কেঁপে ওঠে বেদুইন মন ও ।
'' নির্জনতা'' ''মৎস্যকন্যা ও সার্কাস বালক '' প্রেক্ষাপট কবিতাগুলো আমাদের নিয়ে যায় আরেক আবহে ।''এক স্তবক আঁকর'' কবিতাটিতে তিনি বিরহী প্রেমিক ,আর '' অন্যঘুম'' '' আত্মকথন '' কবিতায় তিনি আক্রান্ত হন নস্টালজিয়ায়। এছাড়া আমাকে দারুন আলোড়িত করেছে তাঁর'' উড়াল লিপি' '''লবণ শিল্প'' ও ''বিন্দুর চলার পথে '',কবিতাগুলো ।
তাঁর বিশ্বাস মনগড়া নয়। তিনি জানেন সময়,দেশ,কাল পারিপার্শিকতার সমস্যা। একক প্রচেষ্টায় শুধু বর্তমান নয়, অদূরেও এর থেকে নিষ্কৃতি অসম্ভব। অসম্ভব জেনে তিনি তাঁর কবিতায় রুঢ় এ বাস্তবতা এড়িয়ে যাননি বরঞ্চ ভাবাতুর পাঠককে প্রবল আশাবাদে উজ্জীবিত করেছেন এভাবে : ......... ........রঙিন প্রস্তাবের ঘুড়ি উড়ছে। জ্যোৎস্নার ঢেউ খুলে, রোদের ঝাঁজের স্নান । যেন ঝরছে নীরব মাধুর্য ...,...
এখানে সব কবিতা নিয়ে বলা সম্ভব নয় তাই মাত্র কিছু কবিতা নিয়েই আলোচনা করা হোল । আর কোনটি কবিতা, কোনটি কবিতা হয়ে ওঠেনি তা বলার যোগ্যতা আমার নেই কারন আমি সমালোচক নই পাঠক মাত্র ।তবুও বলি তার কোন কবিতার চেয়ে কোনটা ভাল বা বেশী ভাল তা বলা সত্যিই মুশকিল কারন প্রতিটি কবিতায় মনন ও রচনাশৈলীতে অনন্য । তাঁর লেখায় ভর করে আছে প্রান - প্রাচুর্য , জীবন দর্শনআর বহুমাত্রিক জীবনের চালচিত্র ।
সবশেষে বলা যায়'' নীল কাছিমের দ্বীপ'' বইটি সত্যই অনবদ্য সাহিত্যপ্রেমীদের যথেষ্ট সমাদর পাবে আশা করি ,এইসবই আমার পাঠপ্রতিক্রিয়া মাত্র আমি বোদ্ধা নই সমালোচক নই সাধারন একজন পাঠক । এ আমার পাঠ প্রতিক্রিয়া ।

জিনাত জাহান খান
Reviewed by Pd
on
মে ০৯, ২০১৫
Rating:
Reviewed by Pd
on
মে ০৯, ২০১৫
Rating:

কোন মন্তব্য নেই:
সুচিন্তিত মতামত দিন