ছয় বছর বয়সে প্রথম দাদা বাড়িতে জলি। গ্রাম সম্পর্কে নোংরা ধারনা অনেক। হাত না ধুয়ে খাবার গ্রহন, হাইজেনিক ল্যাট্রিন না থাকা, মানুষের মুখে গন্ধ , বাচ্চাদের খারাপ কথা বলা ইত্যাদি। জলির মায়ের সাথে অদৃশ্য কোন কারনে দিদার মনের অমিল থেকেই দিদাকে কোন দিন দেখা হয়নি। হয়তো সেও নোংরাই হবে, ভাবে জলি।
দাদা একবার বাসায় গিয়েছিলে গাছের কলা, পেঁপে, পুকুরের বড় মাছ নিয়ে। বাসায় কিছু সময় থেকে ফিরেছেন গ্রামে। অামাকে কাছে ডেকেছেন, ভয়ে যাওয়া হয়নি। এবার মা ছাড়া মায়ের ইচ্ছায় চাচার সাথে গ্রামে অাশা।
জলি উঠনে দাড়িয়ে। কেউ একজন ঘর থেকে মায়া মাখা কন্ঠে হাঁকদেন । কেরা ওনু, পরীর বাচ্চা নাহি। বেড়িয়ে অাসেন, পৌঢ় মহিলা। চাচা তখনো অটো রিক্সার ভাড়া মিটাচ্ছেন। বৃদ্ধা কাছে এসে দাড়ান, জানতে চান। জলি তার নাম, শহর হতে এসেছে জানায়। বৃদ্ধা দ্বীধায় পড়েন, নিঃশ্চত হতে চান, তুমি জসির মাইয়া? জলি মাথা নাড়ে। মহিলা উচ্চস্বরে হাসতে থাকেন, তার চোখে পানি।
সে এমন হাসির সাথে পরিচিত নয়। কিছুটা বিরক্তি বোধ করে সে। বৃদ্ধার চিৎকারে বাড়ির সবাই বেড়িয়ে এসেছে । যে লোকটা তাদের বাসায় গিয়েছিল সেও গামছা কাঁধে সামনে দাড়িয়ে । পৌঢ় এখনো হাসি মাখা মুখে কেঁদে যাচ্ছেন। বৃদ্ধ লোকটি পাশে দাড়িয়ে ছানিপড়া চোখে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন। ভাড়া মিটিয়ে অভি উঠানে এসে দাড়ায়। বলে, মা কি হইলো ওরে ঘরে নিবানা, জলি এ ভাষা চাচার মুখে কখনো শুনেনি। চমকে উঠে সে , মনে পড়ে গ্রাম এসেছে । জলি চিনেফেলেছে বৃদ্ধা তার দিদা।
হ নিমু, ভানুর মাও কই গেলা, অজিফা তরা কুনু অামার মানিক অাইছে দেহসনা। ঘরথিকা একমুট ধান অান, পাঁচটা অামপাতা অান, ঘটিত পানি অান, পাও ধুয়াই অামার লক্ষিরে ঘরে তুলি। অামার উইটানে চান উঠছে, দেহসনা। দাদা হাত বাড়িয়ে, অায় বইন কাছে অায়, তরে ধইরা দেহি। জলি পাশে গিয়ে দাড়ায়। গ্রামের মানুষ বলাবলি করে, ক্যা মাইয়া বলে অাবোনা। অক্ত বইলা কতা।
দাদা জলির মাথায় হাত বুলায়, পাকা মোচ দাড়ির ফাঁক দিয়ে হাসে, জীবনে এমন অানন্দ সে অার পায়নি। জলি দাদার দিকে চেয়ে থাকে, কখন যে সে দাদার বুকে উঠেছে সেও জানেনা। কারও বুকে এত মমতা থাকে, সে বোধ, সে কখনো পায়নি। দাদির সব অায়োজন শেষ, কাচা হলুদ, বড় পিড়া ঘটিতে পানি ---। দাদার বুক থেকে দিদা তাকে কেড়ে নিতে চায়। বলে বুড়ার অাল্লাদ দ্যাহো , বইনডা অামার কত্ত দুর থ্যাইক্কা অাইছে, তারে বুকে নিয়া দাড়াইয়া অাছে।
জলি দাদার বুক থেকে বেরুতে চায়না, সে এত মজা কোন দিন পায়নি। দাদি জলির পা ধুয়ে, কপালে কাঁচা হলুদের টিপ দিয়ে, অাম পাতার মঙ্গল কামনা করে, ঘটির পানি মাটিতে ঢেলে উলুধনী দিয়ে ঘরে তুলে --। জলি ভেবে পায়না, এরা এমন করছে কেন। দাদি মিনিটে মিনিটে কাছে এসে বুকে জড়িয়ে ধরে, দাদা গল্পের ডালি নিয়ে বসে, গ্রামের মানুষ তো নোংরা হবার কথা। তাহলে এরা এত ভাল কেন?
জলি উত্তর পায়না। তবে কি জলি নোংরাকেই ভালবাসতে শুরু করেছে ? শেকড় বলে কথা।
জাহাঙ্গীর হোসেন
Reviewed by Pd
on
মে ০৯, ২০১৫
Rating:
Reviewed by Pd
on
মে ০৯, ২০১৫
Rating:


কোন মন্তব্য নেই:
সুচিন্তিত মতামত দিন