মুন্সী সাব অাইছেন, বিয়ে বাড়ির লোক জনের মধ্যে চাপা উত্তেজনা, কখন অাবার গুলি শুরু হয়। পাক মেলেটারীর ক্যাম্প দক্ষিণ পাড়ায় হামিদ মেম্বারের বাড়িতে, সে পীচ কমিটির ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ।
হাসির বিয়ে এত তাড়াতাড়ি হবে এমন কেউ ভাবেনি। ক্লাশ নাইনে পড়ুয়া মেয়ে, কেবল লক লকে কঁচিপাতার শোভা সারা গায়ে। হামিদ রাজাকার গত পড়শু এ পাড়ায় এসেছিলো। হাসি তখন ছাগলের বাচ্চার পিছনে দৌড়াচ্ছে। রাজাকার থমকে দাড়িয়ে চামছা মালেক কে জিগায় কার মাইয়ারে, মালেক কয় ক্যা বক্করের। হুম, ক্যাম্পের হাবিলদারের খুব শখ কঁচি মাইয়া। হাসি দাড়িয়ে কথা গুলি শুনেছে, বাড়ি গিয়ে ঘটনা দাদিকে জানালে দাদির চোখে ঘুম নেই। বক্করের সাথে কথা বলে তড়িঘড়ি বিয়ের এ অায়োজন।
বর রতন। দেখতে সুন্দর। গ্রামের হাটে মুদি দোকান অাছে। মা বাপ মরা ছেলে, ছোট বেলা থেকেই সবার প্রিয়, গ্রামের সবার অাদরে মানুষ।
৩০০০০ হাজার টাকা মহরানা ধার্য্য করে বিয়ে সম্পূর্ণ । সবাই অামিন ধরার কালেই শুরু হয় গুলি। প্রান বাচাতে মানুষের দিকবিদিক ছুটাছুটি, খবর অাসে মেলেটারী ক্যাম্পে কে যেন গুলি করেছে, ক্যাম্পের হাবিলদার ও তার সহযোগীরা পাগলের মতো যাকে পাচ্ছে তাকেই গুলি করে মেরে ফেলছে।
বিয়ে পড়িয়ে বাড়ি যাবার পথে মুন্সী চাচাকেও মেরে ফেলেছে ওরা। খান সেনা ও তাদের দোষর রাজাকাররা ঘরে ঘরে তল্লাশি করে যুবতি মেয়েদের কোথায় যেন ধরে নিয়ে যাচ্ছে। এ পাড়ার হাওয়া, বানেছা, ছালেহা, ফজিলা, হোসনা, মহিরনকে পাওয়া যাচ্ছে না।
ঘরের বাতি নিভিয়ে বর কনে বসে অাছে, এখন তাড়া কি করবে ? ভেবে পাচ্ছেনা, হাসি ভয়ে শক্ত হয়ে অাছে । রতন ভাবছে, কি করা উচিত, পাশে অসম্ভব সুন্দর নতুন বউ। বউয়ের মুখটি খুব দেখতে ইচ্ছে করছে তার। হাসি তার পাশে, তবু তার মনে হচ্ছে যেন যোযন দুরে। বিয়ের অাগে হাসিকে দেখলেই রতনের কেমন যেন লাগতো, অাবার না দেখলেও কেমন যেন লাগতো। রতন ভাবে হাসি কি তাকে ভালবাসতো, জানেনা, জানা হয়নি। রতন অন্ধকারে হাসির হাতে হাত রাখে।
গুলির শব্দ বেড়েছে, গ্রামের চার পাশে কুকুর, শিয়াল অার মানুষের চিৎকার, সবার একটি অাকুতি বাঁচাও বাঁচাও ।
সকালে গুলি কমে এসেছে । দু একজন মানুষ এদিক সেদিক যাওয়া, অাসা করছে। সাবেদ চাচা ফজিলার বাবা যাকে গত রাতে রাজাকাররা তুলে দিয়েছিল বাড়ি থেকে, সে হাসির বাবার সাথে খুব গোপন কি যেন বলছে অার কাঁদছে।
শহর অালী হাসিদের বাড়িতে এলে ঘটনা জানা যায় - ওরা ফজিলা সহ কয়েক জন যুবতীকে বিবশ্র করে, রক্তাক্ত অবস্থায় মেম্বারের বাড়ির পাশের জঙ্গলে ফেলে রেখেছে। শরীরে শুধু জখমের দাগ , কারও স্তন কামড়ে ছিড়ে ফেলেছে। সবার শরীরে শত নির্যাতনের চিহৃ । লাশ দেখে মনে হয়, ভোরের দিকে গুলি করে মেরে ফেলেছে।
রতন, হাসির কাছে জানতে চায়, অামাকে বিয়ে করে তুমি খুশি হও নাই । হাসি মাথা নিচু করে থাকে । রতন অাবার জানতে চায়, কও ? হাসি মাথা নাড়ে হইছে। রতন দৌড়ে গিয়ে বউকে চেপে ধরে, চুমু খায় গালে,গলায় , হাসি মাথা তুলে স্বামীকে দেখে। মুখে রাজ্যের লজ্জা, বলে ছাড়েন লজ্জা লাগে।
গ্রামের সব অভিভাবকদের চোখে মুখে ভয়, কখন কার বাড়ির মেয়েদের নিয়ে যায় রাজাকার দোষররা। সবার মাঝে মৃত্যুর ভয় ও সম্মান হারানোর ভয়।
রতন হাসির সাথে গল্প করছে, যুদ্ধ শেষে তারা দুজন শহরে যাবে, সিনেমা দেখবে, কেনাকাটা করবে। হাসি মুগ্ধ হয়ে শুনছে স্বামীর গল্প। রতনের অাদর ভীষন ভালো লাগছে তার, মনে হচ্ছে এটা পৃথিবী না স্বর্গ। দুজনের চোখেই অন্যরকম ক্ষুধা, একটা ঝড়ের পূর্বাভাষ । রতনের ঠোট হাসির ঠোটে।
ঠক ঠক করে কে যেন দড়জায় কড়া নাড়ে। অনিচ্ছায়, হাসিকে ছেড়ে উঠে দাড়ায় রতন। হাসি চেয়ে থাকে দড়জার দিকে, কখন সে অাবার তার কাছে অাসবে।
হামিদ মেম্বার রতনের সাথে কথা বলছে, রতন বারে বারে মাথা নাড়ছে, না না বলছে, মেম্বারের চামচা অাবেদ ও ফারুক রতনের গলা চেপে ধরে অাছে, হাসি দড়জার ফাঁক দিয়ে দেখছে সব, চিৎকার করার শক্তিও তার নেই। ফারুক চামচা, রতনের বুকে বন্দুক ধরে অাছে। হামিদ মেম্বার ঘরে ঢুকে হাসিকে জড়িয়ে ধরে, বলে অাহ, তোমার বাসরের অায়োজন করেছি। অাইজ তোমার বাসর অইবো। রতন হাসির দিকে চেয়ে অাছে, হাসিও চেয়ে অাছে রতনের দিকে, কারও মুখে কথা নেই, দুজনের মধ্যে শুধু বন্দুকের দুরত্ব ------।
রতন পাগলা, গ্রামে গ্রামে ঘুরে বেড়ায়, হাসে কাঁদে, হাসির মৃত দেহটা যেখানে পড়েছিলো, সেখানে বসে থাকে, মাঝে মাঝে চিৎকার করে, হাসি, হাসি । অামার কাছে অাও, অামার বড় ডর করতাছে। বাতাস চিরে সে চিৎকার, মেম্বারের বাড়ির পাকা দেয়ালে লেগে, হাওয়ায় মিশে যায়।
হামিদ রাজাকার অাজ যে মুক্তিযোদ্ধা, দেশের সুর্য সন্তান। শত প্রমান তার জন্য প্রমান নয়। দেশ তবুও স্বাধীন, বিষফোড়া সহ স্বাধীন। রতন ঘুরে বেড়ায়, স্বাধীন ভাবেই, তবে তো দেশকে স্বাধীন বলাই যায়।
![]() |
| পরিচিতি |
জাহাঙ্গীর হোসেন
Reviewed by Pd
on
মার্চ ২৬, ২০১৫
Rating:
Reviewed by Pd
on
মার্চ ২৬, ২০১৫
Rating:


কোন মন্তব্য নেই:
সুচিন্তিত মতামত দিন