মৌমিতা চন্দ্র

পরিচিতি  










বসন্ত অথবা দুঃখবিলাস

            
নিত্য নৈমিত্তিক এই যে সুখ-
অযথা, ঘ্যানঘেনে
সহ্য হয় বলি কি করে
অর্চিষ্মান..

তুমি বলেছিলে-
তেমন হলে দুঃখ পোষো
বা গর্ভে ধরো নিজেই,
চুড়ান্ত ব্যস্ততা ওতে
এপার ওপার ছড়ানো সুখ সব
দেরাজে থাক আপাতত

হাসি পায় আজও..
টকটকে লাল মুখে-
কি গোঁসাই না করেছিলাম
ভেতর জ্বলুনিতে একঝাঁক পায়রা উড়ে গিয়েছিল
অর্চিষ্মান.. সত্যি বলি
এখন আমি তোমার কথাই মানি

বলাই হয়নি তোমায়-
ছোট্ট নরম দুঃখ একটা
মা বলে ডাকে আমায়,
তাকে নিয়েই ঘরবসত
তাকে নিয়েই চিন্তা এখন
স্নানযাপন অথবা মোহ অন্তহীন-
গোটা শহরের সমস্ত ফাটল
দুঃখ দিয়েই জড়িয়ে থাকি

রং উড়ল শান্তিনিকেতনে-
পলাশ ফাগুন অথবা হলুদ আবীর
মহুয়া মাদল ও নিয়মভাঙ্গা,
কাচের ফোঁটায়  শুকনো ধুলো

দুঃখ অমনি মা বলে ডেকে উঠল

পাহাড়তলির ছোট্ট রিসর্ট
ডুবন্ত পায়ে উপচে পড়ছে নরম গালিচা,
উদাস কাঠমেঝে-
বাঁ দিকের ফায়ার প্লেসে
ছায়া ছায়া কি সব যেন..

খিদে পেয়েছে দুঃখের

ব্যস্ত ট্রাফিক
চোখে মুখে ভেঙ্গে পড়া স্মার্টনেস,
রিনরিনে সুর মনের কোনে..
"আমার হাত ধরে তুমি নিয়ে চল সখা"
থিরপলকে উধাও সব-
হাতে হাত দীঘল সুখের..

ওই বুঝি দুঃখের ঘুম ভাঙল!

আলোড়ন বোঝো অর্চিষ্মান?
অথবা ব্যস্ততম সুর..
এগুলো সেই মনমরা ক্ষণ

কুলস্পর্শ করেছে এক এক ঢেউ,
অচেতন দাগ গুলো সব-
অক্ষর বিন্যাসে সাজানো মিছিল হয়ে গেছে।
দু'দুবার ব্যর্থ মৃত্যু প্রয়াসে-
ডুয়েট ঠোঁট এঁকে দিয়েছি যমরাজের শূণ্য মুখে
যদি এতে কিছু মায়াবী আলোড়ন আসে..
নতুন ভোরে চেনা গন্ধটুকু যদি ফিরে আসে..

থাক এসব-
সময় নেই আর..
স্কুল শুরু হবে দুঃখের

আবারো কিছু কাহিনী এঁকে দিয়েছি
কিছু পুরোনো যাপনচিত্র..

ধরা যাক শুরুটা এমন-
অন্ধকারে অসংখ্য রাস্তা বাড়ি ফিরে গেছে হেঁটে,
দুহাতের নিভন্ত প্রদীপে-
যেটুকু দেখা যায়
তোমার মুখই আসে শুধু
এতসব প্রশ্ন ঘিরে কত আর উতলা হওয়া যায়..
উত্তরই তো হারিয়ে যায় শীতে,
সামান্য বোধ আর ধিকিধিকি সুখ নিয়ে-
কলকাতা চষে বেড়াই এখন

ওই বুঝি দুঃখ খুঁজছে আমায়..
বড্ড ছোটো এখনও

দু-দাগ ওষুধ খেলেই-
এক পৃথিবী শুঁয়োপোকা
গুটি ভেঙ্গে প্রজাপতি হয়ে যেত,
এ আর এমন কি কথা-
দাদু ভালো কবিরাজ ছিলেন
পরোক্ষে এটাও বলি..
দাদু বংশধর চেয়েছিলেন,
উত্তরপুরুষের মুখে চুমুতে খুঁজেছিলেন অন্যসুখ

হাসছ বুঝি?
হেসেই নাও..,
আমি ও যাই-
স্নানের জল রোদ পাক
দুঃখ আমার শীতকাতুরে

নেহাত আমার নিথর বিকেল
দু-এক পশলা সুখ মেখেছে
তাতেই বা কি..?
হাত পুড়িয়ে যেটুকু শাক-
সে টুকু তো আমার আছে

এবার শীতে ডুয়ার্স বুঝি?
গাছ বাড়িতে থাকছ এবার..
ভালোই তো বেশ
যেও সাবধানে-
ঠান্ডা টুকু নজর রেখো

দুঃখ ও ঠিক তোমার মত-
বড্ড কাহিল এসব শীতে

নীল আর সাদা যুগলবন্দী
অস্পষ্ট দেখি এখনও..
অঝোর বৃষ্টির টুপটাপ ফোঁটা-
টানা ছায়াময় রাস্তা
মায়া ছড়িয়ে ছিল সেখানে..
মনে আছে
ছন্দ মিলিয়ে দু জোড়া শব্দ
উঠছে- নামছে..
নামছে-উঠছে

পুনর্জন্ম মানো অর্চিষ্মান?
জাতিস্মরে বুঝি বিশ্বাস নেই তোমার..

গভীর যে জোড়া চোখ-
বেমিসাল সুখ তাতে থিরথিরে..
নষ্টনীড় ভাষা যত কবিতার
নিরন্তর লবিবাজী করে গেছে

এ দীঘি কোথায় পেলি তুই?
সাঁতার জানিনা যে আমি..

উফ্ যন্ত্রনা..
ঘোর অন্ধকারে সব ডুবে গেছে হঠাৎ
বিষাদ আগুনে নিছক ছোঁয়াটাই ছড়িয়েছে শুধু,
এভাবে তো বলিনি কখোনো...
আমিও যে সাঁতার জানিনা সোনা

দুঃখ আমার বেশ ছটপটে এখন
অলস চোখে ভুল হবে ঠিক-
আপাদমস্তক ছোট্ট তুমি

পিছু ফিরতে বড্ড ভয় হয়
চলমান ফেব্রুয়ারি তে-
উদ্বৃত্ত থেকে যাবে কিছু কিছু দিন
এই সব মুহুর্তে ঠিক কোনো এক অস্থির কথামালা -
অশরীরি স্পর্শ দিয়ে যাবে রোজ..

এসব গতজন্মের কথা অর্চিষ্মান.
পোড়া ইঁট প্রিয় রুমাল এখন সপসপে ভিজে

ভরা বসন্তে হতশ্বাস এটুকু বিলাস-
দুঃখের গা মুছিয়ে দিই ভালোবেসে।।



মৌমিতা চন্দ্র মৌমিতা চন্দ্র Reviewed by Pd on মার্চ ২৬, ২০১৫ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

সুচিন্তিত মতামত দিন

banner image
Blogger দ্বারা পরিচালিত.