১ ঋতুমতী লালে
বাথরুমের জলের সাথে বয়ে যাচ্ছে জীবন। আর দু পা বেয়ে দূষিত রক্ত মিশে যাচ্ছে নর্দমায় ,দু দিনের ঋতুমতী অণুর হঠাৎ মাথা ঘুরে যায় আঁশটে গন্ধ আর লাল স্রোতের দৃশ্যমানতায় ।পড়ে যেতে গিয়েও কোমডের ওয়াটার কেস ধরে সামলে নেয় নিজেকে।চোখের নীচের জমা কালি,চিরুনি না লাগানো চুল আর অবিন্যস্ত নাইট গ্রাউনের মেয়েটিকে আয়না যেন বিদ্রূপ করছে,যেন চিৎকার করে বলতে চাইছে পোড়ামুখি মরার আর জায়গা পেলি না! ছয় মাসের অবৈধ স্ফিত পেট টা ঝুলে আছে মৃত্যু উপত্যকার মত।
অথচ গত তিন মাস আগেও আয়নার সামনে শরীরের শেষ সুতোটুকু ঝেড়ে ফেলে নিজেকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখাটা ছিল অণুর সব চেয়ে প্রিয় খেলা। নিজের উন্নত যৌবনের সাথে একাকীত্ব আর খানিক ছলাকলা মিশিয়ে দিলেই যে কোন পুরুষের বসন্ত লুটে নিতে সক্ষম এব্যাপারটা উপভোগ করতে বেশ লাগত অণুর !
অফিস কলিগরা ছোট বড় সকলের চোখেই সে মোহনীয় নারী, আর স্বজাতির চোখে গভীর ঈর্ষা তাকে আরও লস্যময়ি করে তুলেছিল । .পুরুষের এই চেটেপুটে খাওয়া কে বেশ তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করা যে কম মহার্ঘ্য নয় সেটা যে কোন নারীই জানে।অথচ নিজের ঘরেই নারী হয়ে ওঠা হল না।এই সব ভাবতে ভাবতেই শাওয়ার ছেড়ে দেয় শরীরের উপর ।যেন যাবতীয় ঘৃণা ধুয়ে আয়নায় মাখা বিষাদের লাল ধুয়ে নিয়ে যায় অন্তর্জলিযাত্রা দিকে।
২ ত্রিকোণ ধূসরতা
ফোন ঝন ঝন করে বেজে ওঠে , .উফ সবে ভোর চারটে , ধূসর কুয়াশায় ঘোর লাগা রয়েছে চোখে , দামি মোবাইল স্কিনে ফুটে ওঠে বসের নাম। আয়েসের ঘুম চটকে ফোন কানে তুলে নিয়ে বকতে থাকে, .হঠাৎ নজরে আসে বেড ফাঁকা ।ফোন রেখে অপেক্ষা করে ওর ফিরে আসার। আসলে 24×7 একভাবে কাজের চাপ প্রাইভেট জব উপায় নেই।টাকা জীবনের মূল্যবান বস্তু যা তোমার হাতে থাকলে তুমি মানুষ নচেৎ তুমি কিছুই না।সংসারের ইচ্ছে গুলো পূর্ণ করতে গিয়ে ছোটখাট বিষয় গুলো হাত ফোসকে যায়।
গলাটা ভীষণ ভাবে শুকিয়ে ওঠে দিব্যর ।উঠে গিয়ে সিগারেট ধরায়। ধোঁয়ার প্রথম অনুভূতি আপ্রাণ ধরতে চেষ্টা করে মাথা প্রতিটি কোষে অথচ জিভ তিতো হয়ে ওঠে নিজের মুখের কাছেই।সিগারেট অবিকল জীবনের মত, যেখানে পুড়তে থাকে সময়,আর ছাইয়ের মত তিন বছরের বিবাহিত জীবন নেমে যাচ্ছে নীচের ধুলোবালির দেশে,উড়তে থাকা ধোঁয়ায় উদাসীন বিন্দুতে অবৈধ তিলোত্তমা। অণুর বাথরুমে জল ভাঙার শব্দ আসছে। ধীরে ধীরে এক অসুস্থতা গ্রাস করছে ও যেন উন্মাদ হয়ে উঠেছে প্রেত আবিষ্কারে.
৩ স্বপ্নের রঙ নীল
ঘূর্ণিপাক প্রবল , বিস্তীর্ণ গঙ্গার বুকে নৌকো গুলি চোরা স্রোত ৰাঁচিয়ে এগিয়ে আসছে পাড়ের দিকে।পাঁচটি ছেলেমেয়ে ছুটে চ আসছে কাশ ফুলের মাঠ ভেঙ্গে গামছা উড়িয়ে ঘটি হাতে।নদীপাড় বরাবর ফুটি তরমুজ খেড়ির চাষ দূরে একছাবরা চালাঘরে পাহারাদার ।ফেরার পথে কোচর ভরে এক দুখানি ফল।হঠাত বৃষ্টি নামায় ঝাপসা হয়ে যায়। আগুনের চেয়েও রকেট-বেগে মন পৌঁছে যায় পুতুল খেলা ঘরে।ওই তো- অন্তু টোপর মাথায় ...
দূর থেকে ভেসে আসে যেন ....
-অণু,তুই কিন্তু আমার বউ হবি। রোগা হিলহিলে ছেলেটার চোখ দু'টি বড় বড়।
-বেশ , তোর বউই হব। আমায় ফিতে কিনে দিবি ,চুড়ি কিনে দিবি!
-দেব তো . বউ আগে পা টিপে দে।
-কেন রে!তোর পা টিপব কেন?পারব না যা।
-আমি তোর বর্।টেপ বলছি।
-না না না
-পারবি না তো!পারবি না তো!!!! (পুতুল বিয়ের কাজললতা ছুড়ে মেয়ের কপাল থেকে ফিনকি দিয়ে রক্ত) গল গল করে গরম প্রবাহে ভেসে যাচ্ছে শৈশব .ভেসে যাচ্ছে যৌবন।স্ফুলিঙ্গের মত ছলকে উঠছে মৃত্যু , চাপ চাপ রক্তের চিতায় শুয়ে পাখির ইস্পাত ঠোঁটের যন্ত্রণায় কুঁকড়ে উঠছে জীবন। কোথা থেকে একান্নবর্তী মূর্ছনায় নেশা ধরিয়ে দিচ্ছে --- "বল হরি হরি বোল"
এক সপ্তাহের জ্বরে-ভোগা সেই রোগা হিলহিলে ছেলেটি পারি নি যুদ্ধে জয়ী হতে , ওর বিস্ময় ভরা চোখ নিয়ে আজো যেন তাকিয়ে আছে । আজ দু হাত বাড়িয়ে ডেকে চলেছে -অণু তুই আমার বউ হবি আয় আয় আয়।
ঘেমে নেয়ে একাকার হয়ে ওঠে শরীর একি বিশ্রী স্বপ্ন। অজান্তেই হাত চলে যায় কপালের কাটা দাগে। দেখে দিব্য নাক ডেকে ঘুমচ্ছে ও ঘরের বেডে। হয়ত একেই বলে জীবন। কয়েক পাতা ঘুমের বড়িতেও কই মৃত্যু ? অথচ ভালবাসাহীন সম্পর্কের নীলবিষ জমতে জমতে এগিয়ে চলে আরাধ্য অন্তর্জলি যাত্রা।
![]() |
| পরিচিতি |
সোনালী মিত্র
Reviewed by Pd
on
মার্চ ২৬, ২০১৫
Rating:
Reviewed by Pd
on
মার্চ ২৬, ২০১৫
Rating:


কোন মন্তব্য নেই:
সুচিন্তিত মতামত দিন