একা একা চোখের জল ফেলে মাছুম। অনেক ক্ষণ সে নিজেকে নিয়ে ভাবছে অার কাঁদছে।
পৃথিবীতে এত মানুষ সবার কি বাবার পরিচয় অাছে? তবু সবাই মাছুমকে দেখিয়ে বলে কেন ঐ যে জাইরা পুলা, কিছু অার ভাল লাগেনা তখন, ৯ বছর বয়সেই মরে যেতে ইচ্ছে করে ।মাছুম শুনেছে, ওর মা যখন ওকে জন্ম দেয় তখন কেউ ছিলনা মায়ের পাশে, ইচ্ছে করলেই তো তাকে মেরে ফেলতে পারতো, কেন মারেনি ? মা টাও গলায় দড়ি দিলো...
মাছুম বড় একা এ পৃথিবীতে, তার কেউ নেই। কুকুরের বাচ্চার মত এর ওর বারান্দায়, খড়ের ঢিপিতে মাথা গুজে থাকে। বৃষ্টি, শীতে কেউ হাত ধরে ঘরে তুলেনি ,কেউ মাথায় হাত দিয়ে বলেনি অায় বাবা বুকে অায়। মাছুমের বুকফাঁটা কান্নায় তখন ভাড়ি হয় বাতাস। কত দিন সে দেখেছে লালনে মা লালনকে খাইয়ে দিচ্ছেন, একটি বার সে মনে মনে চেয়েছে খেতে, মায়ের হাতের খাবার কেমন লাগে জানতে, বলতে পারেনি। লালনের মা তাকে বেজন্মা বলে ডাকে যে।
গত ঈদে সে নামাজ পড়তে গিয়েছিলো মাঠে, নামাজের চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ছিল তার গায়ের নতুন শার্ট দেখানো, মাঠে এত মানুষ, তার খুব ভাললাগে দেখতে। সবার সাথে সেও নামাজ পড়বে। ঈদ গাহে যাবার পর সবার প্রশ্ন - তুই এহানে ক্যা ? জাইরা পুলার অাবার ঈদ অাছে? একজন বলে তুই না গত বার দূর্গাপুজা করলি ওগর হাথে । মাছুম উত্তর দিতে পারেনা, চোখের জল ফেলে ফিরে অাসে মাঠ থেকে, ভাবে ঈদের নামাজ অার পুজার চেয়ে পেটের খাবার টা যে অনেক বড় তার কাছে।
অাবার ঈদ এসেছে, খাঁ বাড়িরা প্রতিবার গরিব মানুষদের নতুন জামা কাপড় দেয়, এবারো দিলো। মাছুম গিয়েছিলো তবে লাইনে দাড়ায়নি,লাইনে দাড়ালেই লোকে মন্দ কথা কয়। অতো গুলো দরিদ্র মানুষের মাঝে সে মহাদরিদ্র, ধর্মে দরিদ্র মানুষকে সহযোগীতা করার কথা বলা অাছে সে জানে, মহা দরিদ্রের কথা কি বলা অাছে ?
জানেনা সে। এবার অার ঈদে যাবেনা সে, জঙ্গলে মায়ের কবরের পাশে সারা দিন শুয়ে থাকবে, মায়ের সাথে কথা কবে, শিখে নিবে গলায় দড়ি কিভাবে দেয়া যায়। বাছির দাদি বুড়িটা মইরগেছে ,একদিন ঐবুড়িডা তার সামনেই সফির মায়ের সাথে গল্প করেছেন মাছুমের মাসম্পর্কে, মেয়াডা কি সুন্দর অাছিলো, মা মরা মাইয়া,বাপে অাবার বিয়া কইরা গেলোগা,তারা হুনছে হেও মরছে।
পাড়ার সবাই মাছুমের মায়েরে মতিন পোদ্দারের বাড়িতে কাজ করবার জন্য দিয়া অাসে, খাইয়া পইরা মানুষ হবো। তখন বালির বয়স ৭/৮ হবে। ধীরে ধীরে বালি বড় হলো ঠিকই,সাথে নিয়ে লজ্জা অার ঘৃনা।
বালি বুড়িকে নিজে বলেছে। বালির পেট হবার পর যখন তাকে বাড়ি থেকে বেড় করে দেয়া হয়, তখন সে মাছুম না হওয়া পর্যন্ত এখানেই ছিলো । বুড়ি জানতে চেয়েছে, কেরা রে ? বালি চুপ করে থেকেছে। বুড়ি যখন বলেছে তাইলে তুই অামার বাড়িতে অার থাকপার পারবিনা,ভয়ে বলেছে দুইজন, কার কথা কমু দাদি।
বুড়ি জানতে চেয়েছে কেরা কেরা। বালি চুপকরে থেকেছে, বুড়ি অাবার ভয় দেখালে বলেছে পোদ্দার অার ওর পুলা। বালি তার পিঠ টা খুলে বুড়িয়ে দেখিয়ে বলেছে , অামি রাজি হইনাই, দেহ ওরা অামারে কত মারছে। কারো কইলে বিলে পানার নিচে ডাবাইয়া থুবো কইছে, কারও কইতে পারিনাই, এহন অামার কি অবো, দাদি অামি মইরা জামু।
মাছুম হবার পর বুড়ি চেষ্ঠা করেছিল, বিচার ডেকে গ্রামের মানুষকে জানাতে । শালিসের দিন বালি অার কিছু বলতে পারেনি, শালিসে পোদ্দার ওতার ছেলে দুজনই উপস্থিত। শালিসের মানুষরা অনেক জানতে চেয়েছে কিন্তু বালি শুধু কেদেছে, বলা হয়ে উঠেনি তার -------।
সে রাতেই মাছুমকে একাকরে বালী চলে গেলো। বুড়ি কিছুদিন মাছুমকে বুকে অাগলিয়ে রেখেছিল, সেও নেই। সমাজের লোকেরা অনেকে বলাবলি করে পোদ্দারের চেহারার সাথে মাছুমের মিল, মনে হয় সেই হবে।
মাছুম ক্লান্ত শরীরে, অনাহারে কখন ঘুমিয়ে পরেছে জানেনা , যখন ঘুম ভাংঙ্গে তখন মাঠে মাঠে ঈদের অানন্দ নিয়ে কথা হচ্ছে। দুর থেকে মাছুম দেখে মাঠে পোদ্দার সাহেব গলা ফাটিয়ে বক্তব্য দিচ্ছে ঈদে গরিবের হক সম্পর্কে, পোদ্দারের ছেলে মাইক ধরে অাছে। পোদ্দার সাহেব যে মাঠ কমিটির সভাপতি।
মাছুম হাটা দেয় মায়ের কবরের দিকে ---জঙ্গলে।
![]() |
| পরিচিতি |
মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর
Reviewed by Pd
on
জানুয়ারি ২৬, ২০১৫
Rating:
Reviewed by Pd
on
জানুয়ারি ২৬, ২০১৫
Rating:


কোন মন্তব্য নেই:
সুচিন্তিত মতামত দিন