ফারহানা খানম



ঘুম ভাংতেই মনটা আনন্দে  ভরে গেল জলির , কপালে মায়ের ছোঁয়া টের পেল। চোখ মেলতেই মা চলে গেলেন টেবিলের ওপর রেখে গেলেন একটা বক্স  জন্মদিনের  উপহার।

তাড়াতাড়ি উঠে পড়ে সে এখনি দৌড়াতে হবে ভার্সিটিতে সেমিস্টার এর  পঞ্চাশ হাজার টাকা জমা দিতেই হবে আজ , বক্সটা পরে রইল জলি মুখ ধুয়ে রেডি হয়ে নিচে এল খেতে খেতে টাকাটা নিল ,মা বললেন কিরে উপহার পছন্দ হল ?

পরে দেখবো মা তুলে রাখ টাকা জমা দেয়ার আজ লাস্ট ডেট গেলাম ...বলেই সদর দরজা পেরিয়ে সোজা রাস্তায় তখনই মোবাইল বেজে ওঠে ,বিরক্তি নিয়ে ফোনটা বের করে ব্যাগ থেকে ,আনন্দ খেলা করে মুখে , রাজীবের ফোন ওর নতুন বন্ধু ফেসবুকে পরিচয় গতকাল ওকে বাইকে করে বাড়ি পৌঁছে দিয়ে গেছে ,রাত ঠিক বারোটায় মেসেজে উইশ করেছে আর ১৫০০ টাকা রিচার্জ করেছে গিফট হিসেবে ।

হ্যালো বলতেই অনেক হৈচৈ শুনতে পেল । জলি বেশ ভয় পেল একরাত্রির মধ্যে ওর কি হল আবার ? প্রথমেই মনে হল এক্সিডেন্ট করেনিত রাতে ? তখনি রাজীবের কণ্ঠ শোনা গেল ,ক্যামন যেন ফ্যশফ্যশে গলা  বলল ,
-----জলি শুনছো 
-----হ্যা বল কি হয়েছে তোমার ? 
-----আমি খুব বিপদে আছি জলি তুমি হেল্প কর প্লিজ প্লিজ ...
-----কি করতে হবে বলবে ত ?
------তুমি একটু কথা বল আলম ভাইএর সাথে এখন উনি আমাকে উদ্ধার করতে পারে কথা বল । জলি কিছু বুঝে ওঠার আগেই আর একটা কণ্ঠ ভেসে আসে ...
শুনুন আপনি ত ওনার বোন হন তাইনা ?
আমতা আমতা করে বিমুঢ় জলি  জবাব দেয় হ্যা এছাড়া  কোন কথা যোগায় না মুখে।  ওকে বোন বলে পরিচয় দিল কেন রাজীব এ আবার কি ? টুকরো টুকরো ভাবনা হাওয়ায় দোল খায় মনে ।
ওপাশ থেকে বলে ওঠে তাহলে চল্লিশ হাজার টাকা পাঠান উনি থানায় ছাড়াতে হলে এই টাকা নিয়ে আসুন ।
----আমি কি করে যাবো ? আমি কিছু চিনিনা ...
-----শুনুন থানা সবাই চেনে চলে আসুন ,  উনি ফুর্তি করতে গিয়ে ধরা পড়েছে এখন ভাইকে চাইলে টাকা দিন ধরুন 
জলি পুতুলের মত ফোন কানে ধরে দাঁড়িয়ে থাকে এসময় রাজীবের গলা শুনতে পায়, জলি বলে ওঠে ... 
---ছিঃ তুমি এরকম ?
কাতর মিতনি ভেসে আসে  ...
----বিশ্বাস কর জলি আমার দোষ নেই আমি বেরিয়ে এসে সব বলবো তুমি হেল্প কর কারো দিয়ে টাকাটা পাঠাও ।
জলি  কিছুক্ষন ভাবে,  তারপর এই বিষয়টা নিয়ে মারুফের সাথে কথা বলে আর  ওই লোকটির কাছে থানায় টাকাটা পাঠিয়ে দেয় ওর কাজিন মারুফ এর হাতে , মারুফ বার বার বলে  কেন দিচ্ছ আপু এতোগুলো টাকা  একটা লোফার কে বাঁচাতে?

জলি বলে  না মারুফ ওকে নয় দিচ্ছি নিজের সম্মান  বাঁচাতে আর কিছু জানতে চেও না ।ওর সেমিস্টারের টাকা দেয়া হল না চুপ করে এসে রুমে ঢুকে শুয়ে থাকে । চোখের পানিতে ভিজতে থাকে বিছানা মা ঘরে এসে খুব অবাক হন জানতে চান কি হয়েছে ?

জলি বলে আমার টাকা ছিনতাই হয়ে গেছে মা ...।

---মা বুকে নিয়ে বলেন তোর কোন ক্ষতি হয়নি এই অনেক টাকা যাকগে ওদিক টা আমি দেখছি ...
পরদিন চাঞ্চল্যকর মামলার বিস্তারিত বিবরণ পড়ে জলি আর ভাবে কি বোকা আমি ? কি করে অচেনা লোকের সাথে সম্পর্ক করেছিলাম ? ওকে ভালো ও লাগতে শুরু করেছিল বেশ !

সেদিনই আবার থানা থেকে ফোন আসে আর ও টাকা চাই জলি চুপ করে লাইন কেটে দেয় ,আবার ফোন এবারে হুমকি ভাইকে ছাড়িয়ে নেবেন না ?  কেমন ভাই আপনার ? আপনার বাবা  মা কই দিন দেখি কথা বলি  ছেলেকে ছাড়িয়ে নেবে না ? নাকি আপনিও রাতের ওই মেয়েটির মত একজন ।

ঘেন্নায় গা গুলিয়ে ওঠে মোবাইলটা টা বন্ধ করে দেয় চিরতরে আর ফেসবুক আইডিও বন্ধ করে দেয় । নিজের ওপর প্রচণ্ড ঘৃণা জন্মায় । জন্মদিনের উপহারটা আর খুলে দেখা হয়নি এখনো ।

পরিচিতি  
ফারহানা খানম ফারহানা খানম Reviewed by Pd on জানুয়ারি ২৬, ২০১৫ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

সুচিন্তিত মতামত দিন

banner image
Blogger দ্বারা পরিচালিত.