বুকের ভেতর চাপা অস্বস্তি নিয়ে ঘুম ভাংল তুলির । বলতে গেলে সারারাত ঘুমই হয়নি , ভোরের দিকে চোখ লেগে এসেছিল অবসাদে । আজ সে অফিসেও যাবে না । উঠে ফ্রেশ হয়ে নিল তারপর চা নিয়ে বাইরে তাকাল জানালার কার্নিশে একটা কাক উদাস চোখে তাকিয়ে আছে দূরে দৃষ্টিতে বিবমিশা , তুলি ভাবল এতো আমারই মত প্রবঞ্চিত !! নিজের মনেই হেসে ফেলল ওদের যাযাবর জীবনের সাথে তার জীবনের তফাৎ কি খুব বেশি ? কাল যা ঘটে গেল তাতে ও বেশ বুঝতে পারছে টলে গেছে পরস্পরের বিশ্বাসের ভীত ।
তুলি ভাবছে সে কি করবে এখন ? তবে যাই হোক এ অপমান হজম করবেনা সে , যা করার করবে আজ । সজলের কথাগুলো ভুলতে পারছেনা কিছুতেই । কিন্তু তুলি কথাগুলোর কোন কারন বুঝতে গতকাল খুব খাটুনি গেছে অফিসে ফিরতে বেশ দেরী হয়েছিল ,তখন খুব মাথা ব্যাথাও করছিল তাই তাড়াতাড়ি খেয়ে শুয়ে পরতে চাইছিল সে আর সজল চাইল কথা বলতে তখন তুলি বলেছিল কথা বলতে পারছিনা সজল খুব কষ্ট হচ্ছে ..এস ঘুমিয়ে পড়ি ।
.সজল রেগে গিয়ে বলল ;আমার সাথে কথা বলতে গেলেই তোমার অসুখ বিশুখ শুরু হয় আর অন্যদের সাথে ত ঘন্টার পর ঘণ্টা বেশ গল্প করতে পারো । অথচ আমাকে উপদেশ শুনতে হয় তোমাকে যেন আরও বেশি সময় দিই ,তুমিত নিজের হাতে অনেককেই নাস্তা তৈরি করে খাওয়াও শুধু তা কেন নাখেলে অনুযোগ কর কই আমার বেলায় যত ,অসুখ ,আমিত কেউ নই । মাসে মাসে ভদ্রভাবে হাতে কাড়ি কাড়ি টাকা তুলে দিই তাই ফুর্তি করতে পার কেন এ বাড়িটা কি ক্লাব ঘর হয়ে গেল ? কোন আব্রু বলে কিছু নেই বাড়ির ?
তুলি বলল কি বলছ এসব ? কেনই বা বলছ ? আমি কি করেছি খুলে বল ? সজল বলল ন্যাকামি করনাত যাও তুমি ঘুমাও তুলি আর পারছিল না সুপ্তর কাছে গিয়ে শুয়ে পড়লো ।
সকালে উঠে ওরা কেউ কারো সাথে কোন কথা বলল না আসলে , সজল সেই সুযোগই দিল না । ফুলির মাধ্যমেই জরুরী কথা বার্তা সারল তারপর সুপ্তর সাথে কথা বলে অফিসে চলে গেল ।তুলির দিকে একবারও তাকালো না পর্যন্ত , বিয়ের পর থেকে এই ১০ বছরে কত হয়েছে কিন্তু এই প্রথম ও এরকম ব্যবহার করলো ।তুলি ভাবতেই পারছেনা শেষ পর্যন্ত অবিশ্বাস !! নাহ এর চেয়ে মরে যাওয়া ভালো ।
সজলের কাছে মেসেজ পাঠিয়ে তুলি মোবাইল বন্ধ করলো, চিঠিটা রেখে এল সুপ্তর টেবিলে উপদেশ আর আদরে লেখা চিঠি । তারপর ধীরে ধীরে চায়ের কাপে চুমুক দিচ্ছে , ভেবে নিচ্ছে আর কি কি কাজ বাকী এখনো ? যদিও সুপ্তর জন্য খুব মন খারাপ হল তবুও সিদ্ধান্ত পাল্টাবেনা কিছুতেই । সুপ্তর টেবিলে একটা ফাইল , খাম আর চাবিও রাখল ওখানে ওর সব কিছু আছে যা রাখা ছিল সুপ্তর জন্যই।
তুলিকে কি করতে যাচ্ছে তা বুঝতে একটুও কষ্ট হলনা ফুলির , ফুলি এসে দাঁড়ালো বলল জানি খালাম্মা আপণে কষ্ট পাইতাছেন কিন্তুক আমারও কিসু কথা আছে আপনের শুনা দরকার তারপর যা করনের কইরেন ,ইতিমধ্যে অবশ্য সে সজলকে ফোন করে এসেছে ,যেন এখনই বাড়ি আসে , তুলি বলল বল কি বলবি ?
ফুলি বলতে শুরু করলো , সব দোষ আমার না ...খালু না জিগাইলে কি আর এত কতা কওনের সাওস অয় ? হে নিজে আমারে শিখাইয়া দিছে , তুই কইবি এগুলান সব সত্যি ।কি যে সত্যি তা জানার প্রবৃত্তি হয়না তুলির । তবুও ফুলি বলতে থাকে খালু কয়, ''বাবুর স্যার আসলে তোর খালা খুব গল্প করে নারে ?'' আমি কি কমু কন? কইলাম কই না খালাম্মা ভাইয়ার পড়ার খবর লয় আরত কথা কইতে দেহি নাই কিন্তুক খালু কইছে না তুই সবাইকে বলবি এ কথা । আমি কামের মানুষ আমার কি এগুলান কওন সাজে?
তুলি ঠাণ্ডা গলায় বলে , এবার তুই যা এখান থেকে । ফুলি গেলনা বলল আপনে কি করতাছেন এসব আপনে না থাকলে ভাইয়ার কি অইব ? আপনের পায়ে পরি শান্ত হইয়া আমার কথা শুনেন খালাম্মা ।
তুলি রেগে বলল যেতে আমি তোকে যা এখান থেকে ।
ফুলি ফের বলে আরেক্ষান কতা যে শুনতে অইব , তুলি তাকায় ওর দিকে ,
ফুলি বলে, খালু আমারে একা পাইলেই খালি কাচে ডাকে ,মাজে মইধ্যে পা টিপা দিতে কয় ...আমার খুব ডর করে , আপনের নামে খারাপ কতা কইয়া খালু নিজের আকাম ঢাকবার চায় । ...
তুলি শীতল গলায় প্রশ্ন করে কতদিন থেকে ?
---ফুলি উত্তর দেয় অনেকদিন থেক্কাই ?
---আমি কই থাকি তখন ?
---ক্যান রবিবার আপ্নের অফিস থাকে না ওই দিন ।
---বুড়ি বুয়া কোথায় থাকে তখন ? ।আর মা ?
----বুড়ি খালা ওই বারান্দায় গুড়ামাচ আর শাক কুটে খালু রবিবারে বেশি কইরা মাচ আর শাক আনে ,আর নানিত বারান্দায় রইদে বইয়া থাকে ।
ফুলি বলে যায় অনেক কথা , ততক্ষণে বাড়ি ফিরে আসে সজল ।
তুলি খুব শান্ত হয়ে ওকে জিজ্ঞেস করে আমার অনুপস্থিতিতে আমাকে নিয়ে কাজের মেয়ের সাথে এ ধরনের আলোচনা করতে তোমার লজ্জা করল না ? এত নিচে নেমে গেছ তুমি যে ওকে নিয়ে একান্তে ...বাকি কথাগুলো ওর মুখে এলনা মানে বলতেই পারলনা ।সজল জানতে চাইল আমি কি বলেছি ?
---কি বলেছ তা মুখে আন্তেও আমার ঘেন্না হচ্ছে আমি সত্যিই চলে যাবো । শেষ পর্যন্ত অবিশ্বাস করলে ? তাও ওই ছেলের বয়সি ছেলেটাকে নিয়ে ?
একটু একটু করে সজলের চোখের ওপর থেকে পর্দা সরে যেতে থাকে ও বুঝতে পারলো সব কিছু । উঠে গিয়ে ফুলিকে ডাকে , বলে তোকে আমি বলতে বলেছি যে ও শুভর টিচারের সাথে ঘণ্টার পর ঘণ্টা গল্প করে না তুই বলেছিশ এসব আমাকে ? আরও বললি যে আমি যেন তোর খালাম্মাকে বেশি বেশি সময় দেই । কি বল এখন ?ফুলি বলে ...
----কি কন খালু এগুলান ? খালাম্মা আমার মায়ের মত এগুলান আমি কখন কইলাম ,আপনাগ অশান্তি সন্দেহ আমার গায়ে ঠেলেন ক্যান?
সজল বোকার মত এদিক অদিক তাকায় যেন অকুলে কুল খুজতে থাকে । এক্সময় রেগে উঠে বলে একদম মিথ্যে বলবি না মিথ্যে বললে চড় মারবো বললাম !
----ডর দেহাইয়েন না খালু ! কিসের থাপড় দিবেন ? না রাখলে কন যাইগা মুখ করেন ক্যা ? কইলে আমিও কইতে পারি অনেক কতা।
তুলি মুখ খোলে বলে ...
---- তুমি ওকে দিয়ে পা টিপিয়েছ তাই না ? আর আমি না থাকলে অযথাই ডেকে ডেকে কথা বল । তুমি ওর সর্বনাশ করতে চাইলে শেষ পর্জন্ত !আমাকে আজ তুমি আর দেখতে পেতে না শুধু আমি না থাকলে তুমি ফুলের মত মেয়েটার চরম সর্বনাশ করার সুযোগ পাবে তাই এখনো বেঁচে আছি । ওকে আমি ওর মায়ের হাতে তুলে দিয়ে যা করার করবো ।
---- এতক্ষনে ফুলি আবার কথাবলে এসব কি কন খালাম্মা ? আমার মান ইজ্জত লইয়া কতা ছি ছি ...আমি এগুলান কি কইছি আপনেরে ? আপনে নিজে আমারে ডাইক্কা লইয়া কইলেন এগুলান কতা , খালুত বাপের মত ছিঃ ছিঃ ।
তুলি আর সজল দুজন দুজনের দিকে বোকার মত তাকিয়ে ভাবে এ কি মেয়ে !! ওরা বুঝতে পারে গলদটা কিসে ? শুধু বোঝে না এত নাটকের কারণটা কি ? এসময় সুপ্ত স্কুল থেকে ফিরে আব্বুকে- আম্মুকে এসময় বাসায় দেখে খুব খুশি হয় বলে আজ চল বাইরে বেড়াতে যাব ।
তুলি বলে যাব আম্মু আজ রাতে আমরা বাইরে খাব তার আগে আমাকে কাজ করতে দাও । সে ফুলিকে ডেকে বলে এক্ষুনি তোর কাপড় গুছিয়ে নে তোর মাকে খবর দিয়েছি এলে চলে যাবি ... ফুলি বাধ্য মেয়ের মত সব গুছিয়ে ঘর থেকে বের যায় ।
পরিচিতি |
0 মন্তব্যসমূহ
সুচিন্তিত মতামত দিন