সাঈদা মিমি












শেষ পর্ব

মেঘলীলা কি জেনেছিলো 
এমন দিনের ব্যথা? 
(সামছু কাকার স্মৃতিচারণ)

মেঘলীলা আদরের কন্যা ছিলো ইয়াসিন কুতুবির, তিনি সামছু কাকার জ্যাঠাতুতো ফুপার কন্যা। মন্দ বলতে এই, পাগলাটে ছিলো মেয়েটা, সিনেমা দেখতো খুব, বাবা এসব পছন্দ করে না জেনেও সে যেতো লুকিয়ে। মেঘ সুচিত্রা সেনের মত সাজতো, তেমন চাউনি দিতো, সে জানতো সে সুন্দরী এবং পাড়াজ্বালানী, বিয়ের প্রস্তাব প্রতিদিনই আসতো তার, কিন্তু সে যাকে চায় তাকে হতে হবে উত্তমকুমারের মত । প্রভু ইচ্ছেটা জানলেন, তারপরই  ফিল্মি কায়দায় ধাক্কাটা লাগলো খু ফু’র পিতা ছু ফু দানদানের সঙ্গে! কি রূপ, কি পৌরুষ, মেঘলীলা মরলো ।

তখন তেমন দিনপত্তর ছিলো না যে মেয়ে প্রেমে পড়ে মা বাবা কে বলবে, বড়ই রক্ষণশীল সমাজ, বড়জোর গল্প উপন্যাসের বইয়ে করে চিঠিপত্রের লেনদেন হতো । কিন্তু মেঘ তো জানেনা ঐ রূপবান যুবকের কি নাম? তার নিবাস? এদিকে মন উড়ছে, খেই হারিয়ে ভুলে গেছে নাওয়া, খাওয়া, ঘুম… কারোই চোখ এড়ায় না. কিন্তু মুখ ফুটে কাউকে কিছু বলাও যাচ্ছে না । দেখা হলো আবার, সিনেমা হলের বাইরে, আবারও, তারপর আরও কয়েকবার, দুজনেই প্রেমোম্মাদ, নাম ঠিকানা জানা হলো কিন্তু মেঘের মনের মানুষ ভিনদেশি, পারস্যের ব্যাবসায়ী মালিক সুবহানী, মুশকিল আরও বাড়লো, পিতা তাকে পরদেশীর হাতে তুলে দেবেন কেন? কিছুতেই রাজি হবেন না । মেঘের অস্থিরতা বাড়তে থাকলো, ছু ফু ও কাহিল, তাদের দেখা হওয়ার জায়গা জগদিশ সিনেমা হল, তাও বড় অল্প সময়, লেডিস কর্ণারে প্রবেশের আগে আর বিরতির সময় পাঁচমিনিট, সেই সময়টুকুতেই পবিত্র প্রেম আলোকিত হলো, হায়, তখন যদি মেঘ জানতো, ছু ফু একজন শুদ্ধ জ্বিন!

মায়ের দৃষ্টি এড়ায় না, বড় ভাবি কে মনের কথাগুলো বলে মেঘ, এই কথাও বলেছে, শেষতক বড় বৌ শ্বাশুড়ি কে বিস্তারিত জানালো, চিন্তায় পড়লেন মেঘের মা, জানালেন স্বামীকে, বড়ই ভয়ে ভয়ে কিন্তু অবাক কাণ্ড, হুংকার দিলো না বাঘের মত মানুষটা! মেঘ তার একমাত্র কন্যা, একটু ভালো মাত্রার পাগল, তার ইচ্ছা মেয়েকে বিয়ে দিয়ে ঘরজামাই রাখবেন, এখন এই সওদাগরের খবর নিতে হয়, ভিনদেশি মানুষ! কুতুবি লোক লাগিয়ে দিলেন, ছু ফু’র সাথে কথা হলো, আহা, নুরাণী চেহারা আর ধনীও বটে, বাবা মা নাই, পিছুটান কম, আর সবচেয়ে বড় কথা, সে ঘরজামাই থাকতে রাজি ।

মেঘলীলার দুটো বড় সমস্যা রয়েছে, সে ঘুমের মধ্যে হাঁটে এবং নিশির ডাক শুনে বাইরে চলে যায়, তখন মানুষের বিশ্বাসে কিছু অতিমাত্রিক ভুত প্রেতের আনাগোনা ছিলো, তাই মেঘ কে তাবিজ টাবিজ পড়তে হয়, একেবারেই নিয়ম মানে না মেয়েটা, ভরদুপুরে শিমুল গাছের সাথে কথা বলে, তার প্রায়শই হ্যালুসিনেশন হয়, এই সময় হলে ডাক্তার বুঝে ফেলতো মেঘ একজন সিজোফ্রেনিক, তখন হুজুরেরা বুঝেছিলো মেঘেলীলার ওপর উপরি নজর আছে, এই মেয়েকে রূপ দেখে বিয়ে করতে চাইবে অনেক কুমার, কিন্তু তার কীর্তি দেখে পালাবে । অনেক ভেবেই ছু ফু দানদান ওরফে মালিক সুবহানীর সাথে বিয়েটা দিয়ে দিলো মেঘের বাবা, সামছু কাকা শুনেছে, সেদিন নাকি তিনটি মিস্টির হাঁড়ির হিসেব মেলেনি ।

মেঘ ইলিউশানে ভুগতো, হ্যালুসিনশন হতো তার, অজ্ঞাত কারণে প্রতিমাসের দুটো দিন বেখাপ্পা থাকতো তার আচরণ, তখন কাউকেই চিনতে পারতো না সে, সেই শুন্য দৃষ্টির সামনে অস্বস্তিতে ভুগতো ছু ফু দানদান, গর্ভাবস্থায় এই সমস্যা আরও বাড়তে থাকলো, এমনকি সেই রাতে যেদিন একটা অজগর কে পাশে শুয়ে থাকতে দেখেছিলো সে, উম্মাদের মত ছুটে বের হয়েছিলো কামরা থেকে, চিৎকার করে হুমড়ি খেয়ে পড়েছিলো বাবা মায়ের দরজায়, মালিক সুবহানীও এসেছিলো মেঘলীলার পিছু পিছু, তাকে দেখে আরও আতঙ্কিত হয়ে পড়ে মেঘ, প্রসব বেদনা উঠে তার…….. এরপরের ঘটনা সামছু কাকার স্মৃতিতে ধোঁয়া ধোঁয়া, মালিক কে পরদিন পাওয়া যায়নি, আর একটা বাচ্চা হয়েছিলো, সে শুনেছে দুটো কচি শিং নাকি ছিলো তার মাথায়, দেরি না করে রাতের অন্ধকারেই বাচ্চাটাকে এতিমখানার গেটে ফেলে আসা হয়, মেঘলীলাকে বলা হয়, বাচ্চাটা মারা গেছে, আর এ ঘটনার পর মেঘ পুরোপুরি উম্মাদ হয়ে যায় ।

ওরে দিন যে গেলো, সন্ধ্যা হলো, 
পার করো আমারে 
(কিসসাবুড়ি; একটি নক্ষত্রের পতন) 

কিসসাবুড়ির দেখা নাই অনেকদিন, কি হলো তার? দাদি বেশ উদ্বিগ্ন কিন্তু আমাদের তিনি যেতে দিচ্ছেন না ওই আখড়ায়, একে তো সে কালিমন্দিরে থাকে, তার ওপর ওটা প্রেতনিবাস, আমাদের ওপর ভর করে দিলে! শেষে রাখাল মোহন কে পাঠানো হলো, সে এসে খবর দিলো, বুড়ি খুবই অসুস্থ, বিছানা থেকে উঠতে পারছে না । আর থাকতে পারলেন না দাদি, বোরখাটা পরেই ওদিকে হাঁটা দিলেন, যেহেতু দাদি খুবই পরহেজগার মানুষ এবং আমরা তার ছায়ায় নিরাপদ, তাই আমিও গেলাম, নাসু গেলো, হিরু ও গেলো, এই প্রথমবারের মতন আমরা কিসসাবুড়ির আখরায় প্রবেশ করলাম ।

ঘরটার দিকে তো তাকানো যাচ্ছে না, ধূলা আর মাকড়সার ঝুল, স্যাঁতসেতে একটা বেদি আছে, মূর্তি নেই, চৌকোনো ঘরটায় দুটো জানালা, সেগুলোর কবাট নেই, এইরকম একটা জায়গায় কিসসাবুড়ি থাকে! দাদি খবর পাঠালেন কর্মচারী আবদুল কে, বুড়ি কে এখান থেকে নিয়ে যেতে হবে, কিন্তু যাবে না বুড়ি, তার একটাই গোঁ, এখানেই মরবে সে, দাদি যখন পেরে উঠছেন না তখন আবদুল বলে উঠলো, কিসসা মা, খু ফু কিন্তু মোর হুজরায় আয়, অর পলানের জন্যে মোর ঘর বেস্ট… এই কথা শুনে বুড়ির চোখ ঝিকমিকিয়ে উঠলো, সে এখন দাদির সঙ্গে যেতে প্রস্তুত । ওই ঘর থেকে কোলে করে তুলে আনলো তাকে আবদুল, তার তেলচিমসা কাঁথা-বালিশ আর দুই চারটে হাঁড়ি পাতিল বয়ে আনলো মোহন কিন্তু দাদি ওসব পোটলা করে ছুঁড়ে দিলেন ভাড়ার ঘরে, পরিস্কার বিছানা দেয়া হলো তাকে, ডাকা হলো ডাক্তার ।

-খুফু তর ঘরে আসে? 
-না দাদিআম্মা, ওয়া তো মুই বুড়িরে রাজি হরাইতে মিছা কইল্হাম 
-ভালোই করছস নাইলে বুড়ি আইতো না… কিন্তু বুড়ির অবস্থা ভালো না, ডাবল নিউমোনিয়া, ডাক্তার বলে গেছে, একগাদা অষুধ দিয়েছে, পথ্য ঘনঘন, অবস্থা এতটাই সঙ্গীন যে হাসপাতালে নেয়া যাচ্ছে না, এর ওপর তাকে স্যালাইন দেয়া যাচ্ছে না, লাংস তর্তি পানি, নাকে নল ঢুকিয়ে খাবার আর অষুধ দেয়া হচ্ছে, আমি দাদির সাথে ঘুমাই মাঝে মাঝে, এইতো গেলো রাতে আমার ঘুম ভেঙেছে, দেখি, সাদা সাদা কি যেন ঘুরছে বুড়ির চারপাশে, ভয়ে আমি অবশ হয়ে যাই, দাদিকে বলেছি, কাউকে জানাতে নিষেধ করেছেন দাদি, এরপর একদিন কতরাত কে জানে, দেখি বুড়ি কথা বলছে, “এই মিত্যুকালে মোর পাশে থাহো খু ফু, মুই তোমার লগেই রইল্হাম সারাজেবন…” আমার গা ছমছম করে ওঠে, পরদিন দাদি কে জানিয়ে দেই, তার সঙ্গে আর ঘুমাবো না ।

দাদির কামরায় চারটে খাট, অত ছোট কামরা নয়, একটা ফুটবল খেলার মাঠের মতই, দুটো খাট আবার দোতলা, ঈদ পার্বনে আমাদের বাড়ি ভরে যায় মেহমানে, তখন কোন ঘরই খালি থাকে না, “খবরদার তুই মোর শিয়র গোনে নড়বি না…” আমরা চমকে তাকাই, কিসসাবুড়ি কেমন অতিন্দ্রিয় সুরে কথা বলছে! কার সাথে? আর কারো কন্ঠ নেই, কিছু হইবে না তর, বান কাডার মন্ত্র মুই জানি, সামছু মেয়া তর কোন ক্ষতি হরতে পারবে না” ওপাশ থেকে কোন কথা আমি শুনতে পাই না, “কি কইলি, মোর গতরে শুটকির গোন্ধ? যহন ভর করছিলি এই গোন্ধ পাও নাই?” আবারও সব নিশ্চুপ, “দেতে চাইল্হাম তোরে ক্ষেমতা, এহন দিমু না, দুর হ” তারপর কি এক অমানবিক শক্তিতে নাকের নল টেনে খুলে ফেলে সে, আর গলগল করে রক্ত বেরিয়ে আসে নাক মুখ দিয়ে।

খুফুর অস্তিত্ব নিয়ে আমরা সন্দিহান, ঘোরের মধ্য দিয়েও মানুষ অনেক পথ হাঁটে, আবার ডাক্তার এসেছিলো, বুড়ি কে নল লাগিয়ে দিয়ে গেছে কিন্তু তার অবস্থার উন্নতি নাই, বুধবার দুপুরে সে দাদিকে বলছিলো, খু ফু মোর পাশে থাকলে না ভাবিছাব, কত হইররা কইল্হাম, আইজ মুই বুড়ি, কুচ্ছিত, একদিন তো সুন্দরী আল্হাম….. এভাবে দিন গড়া,য় দাদি বুড়ি কে এনে রেখেছে কারণ, বুড়ির জন্যে তার একটা মায়ার দিক আছে, দাদায় সকালে কাজে যায় আসে রাত এগারটায়, বাবাও, কাকারা, এক ফুপা থাকে আমাদের সাথে, সেও একটা দর্জির দোকান চালায় । এই কিসসাবুড়ি না থাকলে কি হতো? কত কাহিনীর ঘোর, মমতা দিয়ে বলা গল্প, গল্পের ফাঁকে গীত, দাদি বুড়িকে নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে ফেলে রেখে আসতে পারলো না, তবুও বুড়ি চলে গেলো অন্যপাড়ে, ভাদ্রের নেশা জাগানো শুক্লপক্ষে ।

আমার জায়গা আমার জমি ঘর বানাইয় কুইঠাল রয়?
পাড়া দিমু কইলজার মধ্যে বুঝবি কারে বলে ভয়... 
(খুফু দানদানের কল্পিত মেমোরেণ্ডাম) 

আমি বড় হয়েছি কোথায়? ক্রসব্রীড জ্বিন কাহরু গাতাম এর কাছে । সে থাকতো লালবাগ কেল্লার সুড়ঙ্গে, ওই পথ বুড়িগঙা নদীতে গেছে, এই পথেই ঘসেটি বেগম কে এনে ফুটো নৌকায় করে নদীতে ভাসিয়ে দেয় ইংরেজরা, কাহরু চাচা কাছে শুনেছি, এই মৃত্যু ঘসেটির প্রাপ্য ছিলো, বাঙালী বড় খারাপ জাতি, আমার মহামান্য পিতা সেই বাঙালীর ক্রোমোজম আমাকে দিলো? কিভাবে আমি ভদ্র হবো? কাহরু চাচা কোহরামে চলে গেলেন, আর আমি ধরা খেলার কুতুবির হাতে, খেতাম না, তখনও লালবাগের সুড়ঙ্গ সিলগালা করে আটকে দেয়া হয় নাই, মানুষ সুড়ঙ্গে নামতো আর আমরা ছয়সাতজন মিলে তাকে মেরে উধাও করে দিতাম,  সেই সুড়ঙ্গ বন্ধ ঠিকই হইলো কিন্তু আমি তার আগেই কুতুবির দাস হয়ে গেলাম, মন্ত্রবলে সে আমায় বন্দি করে রাখলো । সামছুর কাছে কৃতজ্ঞ হইতেই হয়, সে আমারে মুক্ত করছে, কিন্তু হালায় লোভি আর পেট পাতলা, আমার গল্প জনে জনে বলেছে ।

লালবাগের সুড়ঙ্গে এখন হাজার হাজার জ্বিন, এত ভীড় ভালো লাগে না, চাপলাম দেলার বাপের ঘাড়ে, মুন্সিবাড়ির বাঁশঝাড় দখল করার ফন্দি নিয়া, এখন ইংরেজের পুত হাতে বানছে তাবিজ, আর বাঁশঝাড় কেটে বাড়ি তৈরি হচ্ছে, এদিকে আমার নিদ্রাবাড়িতে কুঠিয়ালের পুত বিল্ডিং বানাইতেয়াছে, গৃহমন্ত্র ভাঙছি বদ কুকুরের পেশাব দিয়া, তৈরী কর বিল্ডিং, থাকতে দিমু না, এখন কিছু বলতাছি না, আগে ঘর বানানো শেষ কর ,আমি আমগাছে বসে আরাম করি ।

অনেকদিন সামছু মিয়ারে ত্যাক্ত করার সুযোগ পাই নাই, একদিন আরাম আয়েশ ভুলে গিয়েছিলাম, দেখলাম সে শয্যাশায়ী, হাতে স্যালাইন, মুখে অক্সিজেন, একটু মায়াই হইলো, কিছু বললাম না, এদিকে কুঠিয়ালের পো তিনতলা শেষ করে চারতলার কাজে হাত দিয়েছে, তিনতলা ঘষে মেজে রঙ করা হচ্ছে, এখানে সে তার পরিবার কে উঠাবে, জমবে তখন মজা, আমি তো ইন্তেজার করছি, কবে তুই তর পরিবাররে উঠাবি এখানে, আমিও আইক্কাঅলা বাঁশ নিয়া আমগাছে অপেক্ষমান, একসপ্তাহের মধ্যে সবাইরে তাড়াবো, আমার জায়গা আমার জমি ঘর বানাইয়া কুইঠাল রয়? পাড়া দিমু কইলজার মধ্যে, বুঝবি কারে বলে ভয়... এইসব সাতপাঁচ ভাবতেছি, এমন সময় কোহরামের সিল মারা খবিশা নারী ঝিনুমালা এসে হাজির, আমিই খবর দিয়ে আনিয়েছি ওকে, এইবার দুইজন শলাপরামর্শ শুরু করি ।

কুঠিয়ালের ছেলেমেয়ে আটটা, বৌয়ের পেটে একটা, সাবাস মরদশ্রেষ্ঠ, পাঁচ কন্যা, তিন পুত্র, পেটেরটাও কন্যা, আমি দেখে এসেছি, এরা পোটলাপুটলি নিয়ে হাজির হয়েছে দুইদিন আগে, সব গুছিয়ে বসার পর, সন্ধ্যা সাতটা চৌত্রিশে আমি ইলেকট্রিক মিটারের পাশ থেকে কার্টআউট খসিয়ে নিয়ে রাখলাম ছেলেমেয়েদের পড়ার ঘরের টেবিলে, সারা এলোকায় বিদ্যুত ঝলমল করছে অথচ কুঠিয়ালের ঘরে বাত্তি নাই! ব্যাটায় গেলো মিটারের কাছে, দেহে কার্টআউট নাই, একি তামাশা! সারা ঘরে হালুম হালুম করে দাপালো সে, ছেলেমেয়েদের বকাঝকা করলো, সবাইর এক কথা, তারা কেউ জানে না, শেষতক এক মিস্ত্রি এনে সব ঠিক করালো, পরদিন কার্টাউট পাওয়া গেলো পড়ার টেবিলে, বেবোধাগুলা কিছু বোঝার আগেই বেধরক পিটুনি খেলো কুঠিয়ালের হাতে, আহা, কি শান্তি ।

কাহিনী তো মাত্র শুরু, কুঠিয়ালের বড় ছেলে সাদেক, একটু বেকুব ধরণের, আগে তো তারা বাঁশ আর চাটাই দিয়ে ঘেরা টয়লেটে যেতো, এখন কামরা লাগোয়া বাথরুম, বাপে কিসব হাইকমোড লাগিয়েছে, তার ওপর দুই পা দিয়ে বসতে সাদেকের ভারী কষ্ট হয়, সে পাইপ ধরে অনেক কষ্টে বসে প্রাকৃতিক কর্ম সারে, এই গেরাইম্মাটারেই নির্বাচন করলাম, সেদিনও সে হাইকমোডে পাইপ ধরে ঝুলে কোনরকমে বসে ছিলো, এমন সময় এক অজগরের রূপ ধরে কমোডের ভিতর দিয়ে মুখ তুললাম, গাধাটায় প্রথমে দেখে নাই, একটা ফিসফিস শব্দ শুনে চোখ গেলো তার নিচের দিকে, “খামু তরে, আইজ খামু....” একটা অজগর কমোডের ভিতর? আবার কথা বলছে! আর সহ্য হয় না সাদেকের, ট্যাংকের গ্যাস পাসিং পাইপ ধরে ঝুলে কোরবানির পাঠার মত চিৎকার করতে থাকে ।

-ওই, তুই কমোডে ঠ্যাং উডাইয়া বও কা? 
-কেমনে বমু? আমনে এইডা কেমুন পাইখানা বানাইছেন? 
-হারামজাদা গেরাইম্মা ভুত, অইয়ার উপরে আরাম হইররা পাছা দিয়া বইবি, ঠ্যাং থাকপে নিচে, হেইয়া উপরে যায় কা? বাপ ছেলের কথোপকথন চলছে । একটু আগে দরজা ভেঙে উদ্ধার করা হয়েছে সাদেক কে, পাইপের সাথে ঝুলন্ত, কমোডের আরামদায়ক কেদারায় পা, 
-চিল্লাইছো কা? 
-একটা হাপ, মাইনে অজগর.. কমোডের ভিতরগোনে মুখ বাইর হইররা কয়, মোরে খাইবে.. কুঠিয়াল কে একটু চিন্তিত দেখা যায়, বৌটা আবার পোয়াতী, বাচ্চা হওয়ার সময়ও কাছে, ভয় পেলে মুশকিল, এসব ভাবনাকে প্রশ্রয় না দিয়ে ছেলের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে সে, ‘অইভাবে বইলে কাউয়ারেও গজল গাইতে দেখবি, দুর হ মোর সামনে গোনে.... সাদেক দুর হয়, কমোডে বসার পদ্ধতি জেনে সে খুশি, এদিকে কুঠিয়াল অঘোর তান্ত্রিক আর বেচু পীরের সঙ্গে মোলাকাতের কথা ভাবছে ।

খুব একটা ভয় দেখানো গেলো না, সাদেক ভাবলো, এসব তার মগজের ভুল ছিলো, মগজ চোখরে ভুল কমাণ্ড দিয়েছে । কুঠিয়ালের মতিগতি বুঝি না, সে একদিন গেলো শশ্মানে, অঘোর বাবার কাছে, আরেকদিন পীরজাদা বেচু তান্ত্রিকের আখরায়, এসব কি বলছি আমি? আমার মাথা কি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে? সেই সন্ধ্যায় আমি কুঠিয়ালের পোলামাইয়ার মাথার ওপর পেশাব করে দিলাম, ওদের পড়ার ঘরে, ওরা উঠে দৌড় লাগালো, সঙ্গে বিভৎস চিৎকার, কুঠিয়াল পড়ার ঘরে ঢুকে দেখে, সিলিংয়ের ওপর থেকে ঝিরঝিরে পানি পড়ছে অথচ সিলিং শুকনা, যা বোঝার বুঝে নিলো সে, এই দৃশ্য দেখলো তার বৌ ও, ভয়ে তার প্রসব বেদনা উঠে গেলো ।

কুঠিয়াল যখন হাসপাতালে তার বৌয়ের সাথে, আমি সুযোগ বুঝে তার বিবাহযোগ্য বড় মেয়েকে জড়িয়ে ধরলাম, মেয়েটা ঘুমে ছিলো, প্রথমে বুঝে নাই, এরপর সে অনুভব করলো, ভালুকের লোমের মত কি যেন তাকে জাপ্টে ধরেছে, ইন্নালিল্লাহ বলে সে এক গা শিউরানো চিৎকার দিয়ে উঠলো, একে একে জ্বলে উঠলো ঘরের বাতি, পরের ঘটনা সংক্ষিপ্ত, বেচু পীর আর অঘোর তান্ত্রিক এলো । দুইজনকেই আমি ডরাই, বেচু কালাযাদুতে ওস্তাদ, অঘোর শবসাধনায় সিদ্ধ, দুইজনে মিলে ঘরে এমন বান্ধা দিলো যে, ইবলিশ কুকুরের পেশাবেও কাজ হবে না । আমার ক্ষমতা ক্রমে কমে আসছে, একেকটা বিফলতা আমার ক্ষমতাকে সংকীর্ণ করে দিয়েছে, এখন আমি অদৃশ্য হওয়ার দ্বিতীয় মাত্রার বেশি উঠতে পারি না, আমার পক্ষে কোহকাফে যাওয়া আর সম্ভব নয়, আমি কোহরামে চলে যাওয়ার স্বিদ্ধান্ত নেই ।

অবশেষে এক হইলো সামছু কাকা, দেলার বাপ,
খু ফু’র কপাল পুড়লো বুঝি, হায়রে একি মনস্তাপ
(আমার ধারাভাষ্য আর বড়দা'র নাক)

সামছু কাকা একটু সুস্থ হয়েছে কিংবা হচ্ছে, ধীরে ধীরে, শান্তি নেই তার মনে, দেহেও, বুঝে গেছে বয়সের খেলা, অই হারামজাদা খু ফু দানদান তাকে ভয় দেখানোর পর পিতলের বদনাটা পড়লো পায়ের ওপর, লুঙ্গি নাপাক হলো, তারপর দাস্তবমি, এইরকম অবস্থায় কে বা কারা তাকে হাসপাতালে নিলো তা সে জানে না, কেবল জানে এবার সাক্ষাত মৃত্যুর হাত থেকে ফিরে এলো সে, কুতুবিও ক্ষিপ্ত, ‘আর কোন খেলা খেইললেন না ভাইজান’ খু ফু’রে আটকান, এইবার য্যান গড়বড় না অয়, এইরকম চললে মোর ব্যাবসা লাটে ওঠবে’ সামছু কাকা সিরিয়াস, সময় তালুকদারের বাড়ি কিনেছে খোকা কুঠিয়াল, সেই বাড়িতে যা যা ঘটেছে তা নিয়ে এলাকা তোলপাড়, কিভাবে বাড়ি বন্ধক দেয়া হয়েছে সেইটাও টক অব দ্য মফস্বল, আর দেরী নয়, ঈমাম সাহেবের সাথে কথা হয়েছে, দেলার বাপকেও খবর দেয়া হয়েছে, ফাইনাল প্ল্যান তৈরী হচ্ছে ।

দেলার বাপ একটা অস্থির সময় পার করছে, এই খু ফু হালার লগে ঘনিষ্ঠতাই তার কাল হয়েছে, মদ আর তাবিজ একসাথে কাজ করে না ফলে, সে দুঃস্বপ্ন অধিক দেখে এবং ঘুম ভাঙার পর তার দেহে অনেক কালশিটে অথবা খামচির দাগ পাওয়া যায়, যদিও সে সামছু কাকা কে বলেনি, দেলার মা এবং দেলা প্রায়শই তাকে নির্যাতন করে, একমাত্র তুলা মিয়ার হস্তক্ষেপের কারণে সে বেশিরভাগ সময় রক্ষা পায়, এসব কথা থাক, দেলার বাপ কে যেতে হয়েছে অঘোর তান্তিকের কাছে, কি বিশাল দর্শন মানুষ! সারা দেহে শশ্মানের মড়া পোড়া ছাই, জট পাকানো দাড়িগোঁফ, আর কি গোন্ধরে… দেলার বাপ ভাবে, ‘হালায় গোসল হরে না’ কিন্তু এসব কথা পেটেই থাক, সামনেই কালি অমাবশ্যা, অঘোর বাবা শবদেহের ওপর সাধনায় বসবেন, পাশেই পেশাবের চক্রে বসতে হবে দেলার বাপ কে, এবার কোন বস্ত্রই থাকতে পারবে না শরীরে, বেচু পীর শশ্মানে আসবেন না, তিনি ভরে বসবেন তার ঘরেই, আর সামনে থাকবে একটা সাদা জনসন কোম্পানির কাঁচের বোতল ।

একদিন দফার বাপ এসে হাজির, সে বেচু পীরকে সহায়তা করতে চায়, সেদিন সামছু কাকার চেহারা হলো দেখার মতন, ঈমাম সাহেব তো প্রায় তেড়ে এলেন,
-হালার বুইড়া, মগরামির আর জায়গা পাও না? এহানেও আইছো আডা লাগাইতে? বাইরঅ এইবার, লোক জানান দেওয়া যাইবে না, অধিক সন্ন্যাসে গাজন নষ্ট…. --হ্যাকা হুজুর, আমনে গাঁজা খায়েন! এইবার দফার বাপের ওপর হালুম করে পড়লেন ঈমাম সাব, ফলটা হলো এই যে, দফার বাপ এলাকায় রটিয়ে দিলো’ মোগো ঈমাম সাব হুজুরে গাঁজা খায়, মুই দেখছি…’ এইসব জটিল সময়ে এইরকম কথাবার্তা জনগণকে উৎসুক এবং দুই ভাগে ভাগ করে দিলো, এই সমস্যা এড়াতে দফার বাপের সাথে একটা সমঝোতা হলো, সে দেলার বাপের চক্রে বসে জিকির করবে, “ওরে ছু ফু’র বাচ্চা খু ফু, তোরে বোলায় বোতলে/ ধুমা হইয়া ঢুইক্কা পড় তুই বোতলের নলে…” এমন সময় খবর আসে রূপচান মামু কে বেচু পীরের আখড়ায় থাকতে হবে, তিনকেজি মিস্টি নিয়ে তাকে আসতে হবে, গোলাপ জলে স্নান করে, ধোয়া পরিস্কার কাপড় পরে, আতর মেখে, মামু ভুক্তভোগী, তাকে যেতেই হয় ।

আমদের ভয় লাগে, জয়নাল মামা কই চলে গেলেন আর দেখিনি, রূপচান মামুর যদি কোন ক্ষতি হয়? মা চিন্তায় কাহিল, বাবার এইসবে কোনো ভাবান্তর নেই, পুরো বিষয়টাকে এক মাথামোটাদের ফাঁদ বলে তিনি ঘোৎ জাতীয় শব্দ করে অফিসে চলে যান । আমাদের লেখাপড়া লাটে ওঠে, এরমধ্যে দেলার মা এসে জানিয়ে যায়, দেলার বাপের রক্তবমি হচ্ছে, রাতে মাল খেয়ে ফিরেছিলো, ওই নাপাক অবস্থায় তাবিজে কাজ হয় না, খু ফু এসে গলা ঠেসে ধরেছিলো, গোঁ গোঁ শব্দে তার ঘুম ভেঙ্গে যায়, তারপর দেলার বাপ কে ধাক্কা দিয়ে ওঠায় সে, তখন থেকেই রক্তবমি, মা এইসব শুনে আরও দিগ্বিদিক হয়ে পড়েন, খু ফু’র ছায়া কারও ওপর পড়া মানেই জীবন নিয়ে টানাহেঁচড়া, তবে দুইদিন পরে আমরা জানতে পারি, দেলার বাপের লিভারে পচন ধরেছে ।

সন্ধ্যায় হারিকেন বাতির আলোয় আমরা চার ভাইবোন পড়ছি, দফার বাপ এলো হাপাতে হাপাতে, দেলার বাপ কে এই অসুস্থ শরীরেও যেতে হয়েছে শশ্মানে, দফার বাপ এসেছে আমাদের ঘরে লুকাতে,
-ক্যান নানা, তুমি না সাহস কইরা নিজেই গেলা!
-ওরে মুই বুইড়া মানু, আইজ কালি অমাবশ্যা, শশ্মানে যাইয়া দেহি অঘোর তান্ত্রিক একটা মড়ার উপর বইয়া কি যেন পড়তেয়াছে আর দেলার বাপ অজ্ঞান অইয়া পইড়রা আছে, এইয়া দেইখ্খা মোর কইলজার সব পানি হুগাইয়া গেছে, গেল্হাম বেচু পীরের ওহানে, হালায় কালা যাদুকর, ভরে বইছে আর তর মামু গাঞ্জা খাইতেয়াছে…. আমরা ভয়ে জড়সড়, মা তখুনি পারলে ছোটেন পীরের আখড়ায়, বাবা গেলেন রেগে, এক পাও বের হবে না সাবিনা, এইসব ফাতরামি দেখার সময় আমাদের নাই, আর, এই যে চাচা, এইখান থেকে ভাগেন, বাবায় হুকুম দিয়ে ভিতরের ঘরে চলে গেলেন, মা দফার অসহায় বাপ কে লুকিয়ে রাখলেন ভাড়ার ঘরে ।

তামাম শহরে এখন একটাই গল্প, খু ফু দানদান বোতলবন্দী হয়েছে । ভোররাতে রূপচান মামু যখন ফিরলেন, তখন তার চোখ রাক্ষসের মত লাল, সারা শরীর থেকে পচা গোবরের গন্ধ আসছে, দিকপাশ না দেখে মামু নিজের ঘরে ঢুকে দিলেন ঘুম, দেলার বাপ কে ঠ্যালাগাড়িতে শুইয়ে নিয়ে এলো তুলামিয়া, তখনও সে অজ্ঞান, বাবা নিত্যদিনের মতন গটগট করে অফিসে চলে গেলেন, আমরা স্কুলে কিন্তু ছেঁড়া ছেঁড়া গল্পগুলিকে জোড়া লাগাতে ব্যর্থ হলাম । অবশ্য বিকেল নাগাদ সবাই জেনে গেলো কাহিনী, অঘোর তান্ত্রিক এক সদ্য মড়ার ওপর বসে মন্ত্রপাঠ করছিলো, সেই দৃশ্য দেখে দেলার বাপ অজ্ঞান হয়ে যায়,
-ইশ, সদ্য মড়ার ওপর বসবে আর পুলিশ কিছু বলবে না? এটা হয়? ওটা ছিলো ম্যানিকিন, ডামি একটা মড়া
-এই চুপ চুপ, অঘোর তান্ত্রিক শুনলে অথর্ব বেদের সবচেয়ে কঠিন মন্ত্রটা ছুঁড়ে দেবে
-বেশ তারপর কি হলো?
-অঘোর বাওয়া মন্ত্রবলে খু ফু’র ঠ্যাং ধরে টেনে এনে, তাকে ধোঁয়া বানিয়ে ছুঁড়ে দিলো
-সে কি? কেমন ধোঁয়া? রিঙ না বল?
-ধুত্তোরি, বলবো না
-বলো না মামু…
-বেশ, শোন, সামছু মিয়া ছিলো ঠিক অঘোর আর বেচুর মাঝামাঝি, তিন রাস্তার মোড়ে, সে গুনগুন করে বলছিলো, ‘আমার হাতেই তর রূহু বান্ধা আছে, আবডাল নাই/ এহন যা বোতলের কাছে তর ছায়া দেখতে চাই’ .....এই অবস্থায় সে দুই হাত মাথার ওপর তুলে বাউলদের মত ঘুরছিলো, তখন অবশ্য তার মোহরের কথা অনেকবার মনে হয়েছে, সেইটা নিয়ে দীর্ঘ বেইজ্জতির কথাও সে ভুলে নাই।
-আর বেচু পীর?
-আরে, সে তো ছিলো ভরে, খু ফু’র ধোঁয়াশরীর টেনে আনছিলো বোতলের কাছে….
সবই বুঝলাম, বড়’দা গলা খাকারি দিয়ে জিজ্ঞেস করেন, তখন তুমি কি করছিলে মামু? তোমার একটা ভূমিকা থাকা তো জরুরী! মামু বড়’দার এমন কথায় রুষ্ট হন,
-আমি তখন বাতাসা খাচ্ছিলাম
-মামু তুমি তখন গাঁজা খাচ্ছিলে, বড় দা বলেই ফেলেন
-গুর্দা ছিঁড়ে ফেলবো বাজে কথা বললে, নিজের চোখে দেখেছি, ধোঁয়াটা একটু একটু করে বোতলে ঢুকলো, যেন যেতে চায় না, জোর করে টেনে আনা হচ্ছে
- বোতলটা আমরা দেখেছি, অনেক চেষ্টা করেও কোন অবয়ব পাইনি, যেন একদলা কুয়াশা আটকে রয়েছে বোতলের ভিতর, ওটার মধ্যে তোমরাই ধোঁয়া ভরেছো…বড়'দা ফাইনালি নাক গলিয়ে দিলেন, চূড়ান্ত মতামত। মামু কটমট করে তাকালেন বড়'দার দিকে, চোখে ছিঁচকে বিষ।
সর্বশেষ ভাষ্য দিলো দেলার বাপ, বোতলের মুখ সিলগালা করে দেয়া হয়েছে, কিন্তু সেটাকে সাগরে ফেলা হবে নাকি মাটিতে পুতে দেয়া হবে সে বিষয়ে সামছু কাকা এবং ঈমাম সাহেব সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না ।

সার্বজনীন সংবাদ শিরোনাম: বেলি মাসির ছোট মেয়েটার হাসি মিশ্রিত একজাতীয় খিঁচুনি হচ্ছে, খু ফু দানদানের ধরা পড়ার তিনদিন পর সে গোঁসাইদের হালট দিয়ে হেঁটে খুফুনিবাস নিমগাছের তলায় বসেছিলো, তারপর থেকেই লিলির এই অবস্থা । অলি কাকার ছেলেটাকে পাওয়া যাচ্ছে না, তার বয়স মাত্র পাঁচবছর দুইমাস, থানা-পুলিশ, মাইকিং শেষে তাকে পাওয়া গেলো বসির শিকদারের রেইনট্রি গাছের মগডালে,
-সর্বনাশ, এম্মে উঠছো কেম্মে?
-মুই উডিনাই, বাতাসে উড়াইয়া আনছে...
জবাদের আমবাগে তেরোজন খেলছিলাম, আমরা পলাপলি (লুকোচুরি) খেলতে যেয়ে লুকিয়েছি, খুফু টিলার মাটির (স্তুপ করে রাখতে রাখতে টিলার মত হয়ে গেছে) আড়ালে, দেখি, দেড়ফুটি এক কালো চিমসে লোক আমার দিকে তাকিয়ে হাসছে, তার দাঁতগুলি আইভরির মত সাদা, কোটরাগত চোখ জ্বলছে, আমি অজ্ঞান হয়ে পড়ি। দেলার বাপ ভর সন্ধ্যায় ফিরছিলো মাতবর পুকুর মাঠ দিয়ে, দেখলো, একটা অতিদানবীয় সুরমা রঙের ষাঁড় দাঁড়িয়ে আছে, তার দিকেই চোখ, প্রথমে সে ভেবেছিলো এটা রামরাম বাবুর ছেড়ে দেয়া ধর্মের ষাঁড়, কিন্তু সেটা তো সাদাকালো চক্রাবক্রা! এমন সময় মগরেবের আজান দিলো, সান্ধ্যপূজার ঘন্টাও বাজলো, ষাঁড় বাবাজি গায়েব, দেলার বাপ উষ্ঠা খেতে খেতে কোন পথে ছুটলো তা সে নিজেই জানে না । সামছু কাকা আধা দিবানিদ্রায় ছিলেন, এমন সময় তার অনুভূতি হলো এরকম, হাতেম ঘরের কোনায় কি যেন রেখে যাচ্ছে, হাতেম আসবে কোত্থেকে? সে শুনেছে হাতেম এখন শহরের বড় দোকানের মেনেজার, তড়বড় করে উঠে বসে সে, ঘরের কোনায় একটা আধেক ছাই ভরা মাটির হাঁড়ি আর দুইটা পিদিম, তার বুকের ধড়ফড়ানি বাড়তে শুরু করে..... নেতিয়ে পড়া শহরটা জমে ওঠতে শুরু করে আবার।



~ কবি পরিচিতি ~ 
সাঈদা মিমি সাঈদা মিমি Reviewed by Pd on অক্টোবর ১৬, ২০১৪ Rating: 5

কোন মন্তব্য নেই:

সুচিন্তিত মতামত দিন

banner image
Blogger দ্বারা পরিচালিত.