দেখা যায় একজন পুরুষের থেকে একজন মেয়ে একটি বাচ্চাকে বেশি ভালোবাসে। অতিসরলীকৃত উত্তর হল, মেয়েরা শিশুকে গর্ভে দশমাস স্থান দেয়, বহু কষ্ট স্বীকার করে ইত্যাদি। এই মতের কোনও বিরোধিতা করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছে আমার নেই।
কিন্তু আমার মনে হয় এটা অত্যন্ত প্রাথমিক স্তরের কারন। স্বাতী পাল থেকে দেবযানী হয়ে আজকের লাভলী চাড্ডা পর্যন্ত আমরা যে মহিলা অপরাধী দের দেখছি, পুরুষ অপরাধী দের তুলনায় সংখ্যায় অতি নগণ্য তারা। আর এরা কেউই স্বয়ংসম্পূর্ণ নন, প্রত্যেকেই তাদের পুরুষ সঙ্গীর ওপর নির্ভরশীল হয়েই যা কিছু সংঘটিত করেছেন বা করেন।
এই মহিলা অপরাধী র সংখ্যা এত কম কেন, এর শিকড় খুঁজতে গেলে যে অবাক করা উত্তর বেরিয়ে আসে, তা পুলিশের ঘুষ খাওয়ার মত এক প্রকাশ্য গোপণ অপরাধ, যা সকলে স্বীকার করেও ফের সেই পথেই হাঁটেন। ওই অপরাধী রা দোষী প্রমাণিত হলে তাদের কয়েদবাস হবে।
কিন্তু আদতে মেয়েরা যে আজীবন কয়েদবন্দী এ কথা স্বীকার করবেন কেউ? যদি যে কোনো মেয়েকে এ কথা বলা হয়, সে বলবে, না না, আমি নই, অন্যরা। আমার পরিবার কত ভালো। আমার স্বামী, শ্বশুরবাড়ির লোকেরা ইত্যাদি কত ভালো।তারমানে সে নিজেও নিজের বন্দীত্ব সম্পর্কে সচেতন নয়।
কার্যত দেখা যায়, কোনো প্রাক অনুমতি ছাড়া তার কোথাও যাবার অধিকার নেই, নিজের মোবাইল এ রিচার্জ করানোর জন্য অন্যের ওপর নির্ভর করতে হয়, শারীরিক অসংগতি বা অসুস্থতার জন্য দরবার করতে হয় অন্যের কাছে, নিজের বা সন্তানের ছবি দেখানোর ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে অন্য কেউ, বাড়িতে পুরুষ সমেত বহু সদস্য থাকলেও রান্নাঘরে কাটে জীবনের অমূল্য বহু সময় এমনকি সে মেয়ে যদি রোজগেরে হয় তবুও রাতে বাড়ি ফিরে সেই রান্নাঘরে তাকেই ঢুকতে হয়, বাড়ির পুরুষ সদস্য সারাদিন কাজ করে নাকি ক্লান্ত থাকে।
"সংসার সুখের হয় রমনীর গুনে " - সেই কবে মা ঠাকুরমার দল মধ্যযুগীয় এই হাজতবাসের মধ্যে সুখ খোঁজার ভাবনা টাঙিয়ে রাখতেন বাড়ির দেওয়ালে, আজও সেখান থেকে কেউই বেরোতে পারেনি, তা গ্রাম বা মহানগর যেখানেই হোক না কেন। আর এই হাজতবাস মেয়েদের করে তোলে মানসিক দিক দিয়ে শিশুর সরলতার সমতুল্য। সেখানেই মিলে যায় শিশুদের সঙ্গে তাদের মনন। এই হাজতবাস করতে হয়না এরকম মেয়ে এই একবিংশ শতকেও সংখ্যালঘু। তাদেরই মুষ্টিমেয় অংশ তাদের পুরুষ সাথীর প্ররোচনায় অপরাধ সংঘটিত করে ফেলে।
কিন্তু আবারও সেই পুরোনো কথা, মেয়েরাই মেয়েদের বড় শত্রু। কুসংস্কারে ডুবিয়ে রাখে তারা নিজেদেরই, পাছে পরিবারের অকল্যাণ হয়, পাছে লোকে কিছু বলে!
("ইয়েমেনের 14% মেয়েরই বিয়ে হয় 15 বছর বয়সে, আর 52% মেয়েদের বিয়ে হয় 18 পেরোনোর আগেই।" - আনন্দবাজার, 02/08/2013)
কলকাতা ।
সৌমিত্র চক্রবর্তী
Reviewed by Pd
on
মে ০৯, ২০১৪
Rating:
Reviewed by Pd
on
মে ০৯, ২০১৪
Rating:

কোন মন্তব্য নেই:
সুচিন্তিত মতামত দিন