
ওরাতো আর, আমার সন্তান নয়!
“ পথশিশু সে তো আমাদেরই সন্তান,
আমাদেরই সোনা মানিকের মত- তাহারও আছে তো প্রাণ!
দিতে হবে অধিকার-
তোমার আমার মতই তাহারো হক আছে বাঁচিবার।
নিশ্চিত আজি করিতে হইবে তাহার থাকা-খাওয়া,
শিক্ষা-বস্ত্র আরো চাহিদা শত, হইতে হইবে পাওয়া;
এই তবে হোক- তাহাদের তরে, মোদের আন্দোলন ”
এতেক বলিয়া, খানিক কাশিয়া- নেত্রী ক্ষান্ত হন ।।
নেত্রী থামিল, কিন্তু জনতা সে কি আর এতে থামে?
হাজার তালির দামামা বাজিল, নেত্রীর ডানে বামে;
জয় জয়কার চারিপাশে তার- ঠোঁটে ফোটে মৃদু হাসি,
সে হাসিতেই বুঝি, কুপোকাত হয়ে- ফান্ড ওঠে রাশি রাশি!
পথশিশুরা অধিকার পাবে বড়ই মহৎ কাজ,
দু চার দশ, যে যাহা পারিল লুটাইয়া দিল আজ।
গাঁটরি ভরিল টাকায় টাকায়, শিশুকল্যান জন্য
ছোট বালুকণা মহাদেশ হইয়া- নেত্রীরে করে ধন্য!
সেক্রেটারী কয় কানে কানে আসি, “এবার কি করি ম্যাডাম?
অনাথালয় নাকি এমিতখানা?” নেত্রী কয় ওরে থাম!
ভাষণ করিয়া লাগিয়াছে খিদা, গলা শুকাইয়া কাঠ;
জলদি ঘুরাও গাড়িখানা দেখি- পৌঁছাও পিজা হাট।
চিকেনের ঠ্যাং কুড়মুড় করি- নেত্রীর দাঁতে ভাঙে,
শুকনো ঝোলের দাগ ওঠে ফুটি লিপস্টিকের রঙে!
তিনখানা পিজা, চারখানা ঠ্যাং একলাই করি সাবাড়,
জলদি আন, বলিয়া আবার কোল্ড ড্রিংকস করে অর্ডার।।
চিবাইয়া চাবাইয়া গিলিয়া হেঁলিয়া- যেই নামিলেন পথে,
অমনি কোত্থেকে অচেনা উটকো- ছেলে এসে হাত পাতে;
জিড়জিড়ে হাড়, শীর্ণ শরীর মলিন ধোঁয়াটে চোখ,
পাঁজড় ক’খান হাতে যায় গোণা- উপবাসী ছোট মুখ!
কি করে! বলি, আঁতকাইয়া উঠি- নেত্রী দিলেন লাফ,
ছেলে ডরে কয়- মন্টু আমি. নাই মোর মা-বাপ।
তিনকূলে কেহ নাই বলিয়া- পথে পথে আমি ধুঁকি,
তিনবেলা মিলি- একমুঠো ভাত, পাইলেই আমি সুখী।।
সেক্রেটারি ডাকি ম্যাডাম কহে, ফিসফিস করি কানে-
শোন বলি যাহা- পুরো মন দিয়া, কেউ নাহি যেন জানে;
“কতটাকা বল হইয়াছে জমা পথশিশুদের তরে?”
“পুরো আটলাখ সাথে ন’হাজার একশত টাকা জুড়ে”!
নেত্রী তখনি একশত টাকা দিয়া শিশুটির হাতে,
ক্যামেরা আনিয়া, ফ্ল্যাশ জ্বালাইয়া- ছবি তোলে সেই সাথে!
ফিরিয়া নিবাসে, নেত্রী হাসে- হইয়া গিয়াছে কর্ম,
বলে, সেক্রেটারী- কর ত্বরা করি, পালন আপন ধর্ম!
আটলাখ রাখ ব্যাংকে আমার- ন’হাজার যাও তোমার,
ছবিখানা যেন কাল সকালেই- আলো করে সব পেপার;
হেডলাইন হবে বড় অক্ষরে- নেত্রী মোদের মহান,
দিলদরিয়া অন্তরে করে- গরীব দুঃখীরে দান!
আমতা আমতা করিয়া পাশের- গরীব চাকর কাশে,
বলে, “কি হবে ওই শিশুদের?” নেত্রী শুনিয়া হাসে!
দেখাইলে মমতা, ওদের তরে- পলিটিক্স কেমনে হয়?
আর যাই হোক- ওরাতো আর, আমার সন্তান নয়!
আমি এক বিদ্রোহী কলঙ্ক !
মার্চের কালরাত্ থেকে ডিসেম্বর’১২
এ এক আপাত সরল অঙ্ক,
বলে যাই নিশঙ্ক-
আমি এক বিদ্রোহী কলঙ্ক !
অবাধ বিচরণে আমার পুরোটা সময়-
হামাগুড়ি দিয়ে চলা,
তাই দেখেনি কেউ কভু-
আমার গর্বোদ্ধত শির!
দুর্নীতি আর কূটচাল- চিরকেলে স্বভাব,
তাই রন্ধ্রে রন্ধ্রে জমাট বাঁধা পশুত্বের শূককীট।।
অন্ধকার আমার প্রিয় রং
প্রিয় শব্দ রাজাকার,
আর প্রিয় পানীয়- রক্তের আকন্ঠ স্বাদ!
ধর্মের বর্মে ঢাকা দেহে- আমার জারজ স্বপ্ন,
খেলা করে বোনের লুন্ঠিত সম্মানে!
আর বিকিয়ে- লাখো প্রাণের আহুতিতে ,
লিখে যাই আমি-
ঈমানী পোশাক আড়ালে- নষ্টতর ইতিহাস!
আর পদতলে পিষ্ট করি জিহাদী স্লোগানে-
স্বজনের কান্না,
মায়ের শাপ;
হরতাল-খঞ্জরে জবাই করি দেশ!
অর্থনীতি-প্রগতির সবকটা রগ কুপিয়ে-
স্বজাতিকে দিই উপহার পঙ্গুত্বের ভবিষ্যত!
সন্তানের সম্মু্খে- লাশের পাহাড়ে রচিত করে যাই,
হিংস্রতার জ্বলন্ত উদাহরণ!
ভাবিনি কি একবারও?
যে সন্তানের সূচনায় হিংসার হাতেখড়ি,
উপসংহারে তার প্রতিফলন কি?
বিবেকের কাছে অবশেষে নিজেই পরাজিত!
তাই, বলে যাই চুপিসাড়ে নিশঙ্ক-
আমি নিঃসঙ্গ এক বিদ্রোহী কলঙ্ক !
চট্টগ্রাম ।
1 মন্তব্যসমূহ
লেখনীতে জোর আছে আরও লেখা পড়তে চাই
উত্তরমুছুনসুচিন্তিত মতামত দিন