শ্রীশুভ্র











"৭১এর দুরন্ত ডিসেম্বর!"


১৬ই ডিসেম্বর! বিজয় দিবস! ৪১ বছর আগে এই দিনেই ভারত বাংলাদেশ সম্মিলত বাহিনীর হাতে আত্মসমর্পণে বাধ্য হয় বাংলাদেশে অবস্থানরত পাক দখলদার বাহিনী!

১৯৭১ এর ২৫ মার্চ জাতির জীবনে যে অভিশাপ নেমে আসে, ১৬ ডিসেম্বর সেই শাপমুক্তির দিন! মধ্যবর্তী প্রতিটি দিন বাঙালির ইতিহাসের এক অনন্য অধ্যায়! যে অসম সাহসিকতায় বলিষ্ঠ নেতৃত্বে
এবং সমগ্র জাতির আত্মত্যাগে এই স্বাধীনতা অর্জিত হয় তা বিশ্ব ইতিহাসের এক স্বর্ণালী দৃষ্টান্ত! এই সংগ্রামে ৭১ এর ডিসেম্বরের প্রথম দুই সপ্তাহ এক দূরন্ত যবনিকাপাতের রোমাঞ্চকর অধ্যায়! কি কি উল্লেখযোগ্য বিশেষ বিশেষ ঘটনা ঘটেছিল এই দুই সপ্তাহে? আসুন একবার ফিরে দেখা যাক ৭১এর সেই দুরন্ত ডিসেম্বর!



ডিসেম্বর ৩! ১৯৭১!

আনুষ্ঠানিকভাবে ভারত পাকিস্তান যুদ্ধ ঘোষিত হল!

বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর লেফটেন্যান্ট সুলতান মাহমুদ
এবং ফ্লাইং অফিসার বদরুল আলম হেলিকপ্টার আক্রমনে নারায়ণগঞ্জের একটি তেলর ডিপো সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত করেন! ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট শামসুল আলম ও ক্যাপটেন আকরামের অতর্কিত আক্রমণে বিধ্বস্ত হল চট্টগ্রাম তেলডিপো!

প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য ২৩ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ জাতির উদ্দেশ্যে এক বেতার ভাষনে বলেন নির্ভীক মুক্তিবাহিনীর ক্রমাগত হামলায় নাজেহাল বিপর্যস্ত পাক দখলদার বাহিনীর অবশ্যম্ভাবী পরাজয় রুখতে পাকিস্তানী শাসক গোষ্টী বিশ্বর নজর বিক্ষিপ্ত করার প্রচেষ্টায় ভারতের সাথে যুদ্ধ বাধাতে পারে!


ডিসেম্বর ৪!

সম্মিলিত যৌথবাহিনীর নেতৃত্বে নির্ভীক মুক্তিবাহিনী বাংলাদেশের বিভিন্ন ফ্রন্টেই খুব দ্রুততার সাথে এগিয়ে চল্ল! গত আট মাসের মুক্তিযুদ্ধের তীব্রতায় ভীত হতোদ্যম পাক দখলদার বাহিনী যৌথবাহিনীর এই প্রবল আক্রমনে দিশেহারা হয়ে অধিকাংশ ফ্রন্টেই পিছোতে বাধ্য হয়! অপরদিকে ভারতের অংশবিশেষ দখল করে ভারতকে যুদ্ধ বিরতিতে বাধ্য করার পাক দূরভিসন্ধি
ক্রমেই অসার বলে প্রতীয়মান হতে থাকে! কারণ ভারতের পশ্চিম রণাঙ্গনেও পাক সামরিক বাহিনী ক্রমান্বয়ে পর্যুদস্ত হতে থাকল! ভারতীয় বিমানবাহিনীর জাহাজ ভিক্রান্ত থেকে চট্টগ্রাম ও কুমিল্লার বিমানবন্দর সহ পাক সামরিক লক্ষ্যবস্তুর উপর হামলা তীব্র করা হল!

আন্তর্জাতিক রঙ্গমঞ্চে পাকিস্তানের পরম মিত্র মার্কিণ সরকার যাদের সরবরাহকৃত অস্ত্রে ৩০লক্ষ্য বাঙালি নিধন করা হয়; এই সময়ে পাকিস্তানকে নিশ্চিত সামরিক বিপর্যয় থেকে বাঁচানোর জন্য এইদিন রাষ্ট্রপুঞ্জের নিরাপত্তা পরিষদে যুদ্ধ বিরতি এবং নিজ এলাকায় সৈন্য প্রত্যাহারের প্রস্তাব পেশ করে! মূল উদ্দেশ ছিল প্রস্তাব পাশ হয়ে গেলে রাষ্ট্রপুঞ্জকে শিখণ্ডী খাঁড়া করে মার্কিণ সামরিক তত্তাবধানে রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিরক্ষাবাহিনীর ছদ্মবেশে বাংলাদেশে মার্কিণ সামরিক বাহিনীকে ঢুকিয়ে দেওয়া! একবার এই ষড়যন্ত্র সফল হয়ে গেলে বাংলাদেশের স্বাধীনতা বর্তমানের প্যালেস্টাইনের সমগোত্রীয় হয়ে যেতে পারত! কিন্তু সোভিয়েত ভেটোয় তা বানচাল হয়!

ডিসেম্বর ৫! ১৯৭১!

স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশকে এইদিন সর্বপ্রথম দেশ হিসেবে ভুটান আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি জানল! যৌথবাহিনীর অভিযান চলতে থাকল অপ্রতিহত গতিতে! ভারতীয় বিমানবাহিনীর তীব্র আক্রমণ জারি থাকল দখলদার পাক বাহিনীর নিয়ন্ত্রনাধীন বিমান বন্দরগুলি এবং সামরিক লক্ষবস্তুর উপর! এইপ্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য এই সময়ে বিমানবাহিনীর কার্যদক্ষতায় ভারতীয় সামরিকবাহিনী পাকিস্তান থেকে প্রভূত উন্নত ছিল! ফলে আকাশ যুদ্ধে ভারতীয়বাহিনীকে প্রতিহত করতে গিয়ে ক্রমান্বয়ে পর্যুদস্ত হতে থাকল পাকিস্তান! ফলে পাকিস্তানের সামরিক নির্ভরতা ঝুলতে থাকল মার্কিণ সরাসরি সহায়তার উপর! মার্কীণ ৭ম নৌবহর এই উদ্দেশ্য তখন প্রস্তুত!

ডিসেম্বর ৬!

বাংলাদেশকে বহু প্রতীক্ষিত ভারত সরকারের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি প্রদান! দখলদার পাকবাহিনীর লেঃ জেঃ নিয়াজি যশোরের শক্তিশালী সামরিক ঘাঁটি পতনের আশু সম্ভাবনায় ভীত হয়ে যশোর ত্যাগ করলেন! যৌথবাহিনী সিলেট দখল করল! এইদিন ভারতীয় গানবোট "প্যাণ্ডেলা"র নেতৃত্বে বাংলাদেশের দুটি গানবোট "পলাশ ও পদ্মা" হিরণ পয়েন্ট দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করল!

ডিসেম্বর ৭!

ঢাকার তেজগাঁ ও কূর্মিটোলা বিমানবন্দর দুটি ভারতীয় বিমান হামলায় ধ্বংস হয়ে গেল! ফলে পাকিস্থানের বিমানবহর প্রভূত ক্ষতিগ্রস্ত হলো! অন্যদিকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান ম্যনেক শ এর পক্ষ থেকে দখলদার পাক সেনাদের আত্মসমর্পনের ডাক দেওয়া হলো! পাকবাহিনী অবরুদ্ধ প্রায়!

ডিসেম্বর ৮!

বঙ্গোপসাগরে পলায়নরত একটি পাকিস্তানী গানবোটকে ধাওয়া করল প্যাণ্ডেলা! কিন্তু পাক গানবোট দ্রুতগতিসম্পন্ন হওয়ায় অভিযান অসফল হয়! এদিকে বাংলাদেশে অবস্থানরত শক্তিশালী পাক সামরিক ঘাঁটিগুলিকে পাশ কাটিয়ে যৌথবাহিনী অত্যন্ত দ্রুতগতিতে ঢাকার দিকে এগোতে থাকল! ফলে নিয়াজিকে সম্পূর্ণ বিভ্রান্ত করে দিয়ে যৌথবাহিনী এইভাবে পাকঘাঁটিগুলির সাথে ঢাকার যোগাযোগের পথ বিচ্ছিন্ন করে দিতে থাকল!
এদিকে কিছুটা দিশাহারা ইয়াহিয়া খান বিশ্বজনমতকে নিজের দিকে আনার জন্য ভুট্টোকে প্রধানমন্ত্রী এবং নুরুল আমিনকে উপপ্রধান মন্ত্রী নিয়োগ করে পাক সরকারের বেসামরিকীকরণের দেখনদারি চাল দিলেন! ও মার্কিণ সাহায্যের জন্য চাপ বাড়ালেন!

ডিসেম্বর ৯!

ভারতীয় বিমান বাহিনীর নিরন্তর আক্রমণে মংলা চালনা সমুদ্র বন্দর সহ নিকটবর্তী এলাকায় সব নৌ ও সমুদ্র যান ধ্বংস হয়ে যায়! এই অবস্থায় পাকিস্তানকে সাহায্যের জন্য মার্কীণ সরকার ৭ম নৌবহরকে বঙ্গোপসাগরের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার নির্দেশ দিল! আণবিক অস্ত্রে সজ্জিত ৭ম নৌবহর বঙ্গোপসাগরে একবার ঢুকে গেলে ভারতীয় নৌপ্রতিরোধ খুব বেশিদিন বজায় থাকত না! এবং যুদ্ধের গতিপথ সম্পূর্ণ ঘুরে যেত! এতটাই শক্তিশালী ছিল এই মেরিন বাহিনী! এই নৌবহর থেকে পাকিস্তানকে প্রত্যক্ষ উন্নততর বোমারু বিমান সহায়তা দেওয়া সহজ হতো! সহজ হতো গোলাবারুদ সামরিক ট্যাঙ্ক ইত্যাদির যোগান দিয়ে, মার্কীণ মেরিন সেনাদের পাকবাহিনীকে সাহায্য করা!

ডিসেম্বর ১০!

এইদিন পলাশ ও পদ্মা গানবোট দুটি প্যাণ্ডেলের নেতৃত্বে খুলনা শিপইয়ার্ডের কাছে এসে পাকসৈন্যদের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্য পাকিস্তানী পতাকা উড়িয়ে এগোতে থাকে! কিন্তু ইতিমধ্যে প্যাণ্ডেলার রাডারে ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি ন্যাট জঙ্গী বিমান দেখা গেলে পলাশ ও পদ্মা থেকে পাকিস্তানী পতাকা নামানোর নির্দশ দেওয়া হয়!
কিন্তু পলাশের দায়িত্ব প্রাপ্ত নৌসেনা রহূল আমিন এই নির্দেশ অগ্রাহ্য করে এগোতে থাকলে ভারতীয় বিমান হামলায় পলাশ ও পদ্মা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়! এই ভুলের মাশুল দিলেন আমিন সহ ষোলজন নৌসেনা! লেফটেন্যান্ট আব্দুল আওয়ালের নেতৃত্বে এগারোজন নৌসেনা পাড়ে উঠে এলে দখলদার বাহিনীর হাতে বন্দী হন!

১০ই ডিসেম্বরেই ঢাকার সামরিক লক্ষ্যবস্তুর উপর বিমান হামলা করল ভারতীয় বিমানবাহিনী! বাংলাদেশে পাকদখলদার বাহিনীর পরাজয় নিশ্চিত বুঝেই  ঢাকার জাতিসংঘের প্রতিনিধির কাছে পূর্বাঞ্চলীয় সামরিক কমাণ্ডের পক্ষ থেকে মেঃ জেঃ রাও ফরমান আলী প্রস্তাব দিলেন যে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে তাদের পাকিস্তানে ফিরে যেতে দিলে নির্বাচিত গণ প্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে! এই প্রস্তাব নিরাপত্তা পরিষদে উপস্থাপিত হলেও সম্ভবত মার্কীণ যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সাহায্যের আশ্বাস পেয়েই পাক প্রেসিডেন্ট জেনারেল ইয়াহিয়া এই প্রস্তাব প্রত্যাহার করেন!

এরমধ্যে উত্তরাঞ্চলে চীনের সৈন্য সমাবেশ পরিস্থিতি আরো ঘোরালো করে তুলল!

ডিসেম্বর ১১!

বঙ্গবন্ধু এখনো বন্দী! প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদ কার্যত বড়ো একা! যশোরের মুক্তাঞ্চল পরিদর্শন করে এদিনই তিনি মুজিবনগরে ফিরে আসেন! মুক্তিযুদ্ধের অগ্রগতি এখন  আন্তর্জাতিক পরিস্থিতির সাথে জড়িয়ে গেছে! পাকিস্তানের নিশ্চিত পরাজয় রোধে রাষ্ট্রপুঞ্জে মার্কীণ যুক্তরাষ্ট্রের নানান প্রচেষ্টার প্রেক্ষিতে ভারত স্পষ্ট জানিয়ে দেয়, বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তান সকল সৈন্য প্রত্যাহার না করা অব্দি ভারত কোনো অবস্থাতেই যুদ্ধ বিরতি মানবে না! এদিকে ৭ম নৌবহরের আগেই বঙ্গোপসাগর ও ভারত মহাসাগরে সোভিয়েত সাবমেরিন বহর অবস্থান নিয়ে নেয়! এবং চীনের সিন-কিয়াং সীমান্তে সোভিয়েত সৈন্য সমাবেশ শুরু করে!

ফলে সোভিয়েতের এই সময়োচিত দুরন্ত কৌশল চীন এবং মার্কীণ যুক্তরাষ্ট্রকে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বানচাল করার দুরভিসন্ধির বিষয়ে হুঁশিয়ারি দিল! চীন সাথে সাথে রাষ্ট্রপুঞ্জে, ভারত পাক যুদ্ধে সামরিকভাবে জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা বাতিল করে দিল! এবং সোভিয়েত সাবমেরিন বহরের উপস্থিতিতে মার্কীণ ৭ম নৌবহর মালাক্কা প্রণালীতেই দাঁড়িয়ে থাকল পরবর্তী নির্দেশ পাওয়ার জন্য!
এইভাবে পাকিস্তানকে চিন এবং মার্কীণ সামরিক বাহিনীর প্রত্যক্ষ সহায়তা থেকে বঞ্চিত রাখা এবং ভারত পাক যুদ্ধে মার্কীণ যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি জড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনা প্রতিহত করার বিষয়ে সোভিয়েত ইউনিয়ন বিশেষ ভুমিকা নেওয়ায় যুদ্ধের গতিপথ মুক্তিযুদ্ধের অনুকূলেই থাকে!

ডিসেম্বরেই ১১ তারিখে কাদের বাহিনীর সাহায্যে মধুপুর এলাকায় ভারতীয় প্যারাসুট বাহিনী নামাতে ঐ অঞ্চলের দখলদার পাক
সেনাদের মধ্যে ভয়ের সঞ্চার হওয়ায় তারা ঢাকার উদ্দেশ্যে পালাতে থাকল!

ডিসেম্বর ১২!

যৌথবাহিনী মুক্তিবাহিনীর সাহায্যে ময়মনসিংহ জামালপুর অতিক্রম করে টাঙ্গাইলে কাদের বাহিনী ও ভারতীয় প্যারাসুট বাহিনীর সাথে মিলে ঢাকার অভিমুখে এগোতে থাকলো! ইতিমধ্যে বিমান হানায় চট্টগ্রাম ও চলনা বন্দর সম্পূর্ণ বিদ্ধস্ত! অকেজ হয়ে গিয়েছে কক্সবাজার ও চট্টগ্রাম বিমানবন্দর!  মুক্তিযোদ্ধারা অকুতভয়ে যৌথবাহিনীর সাথে ঢাকার দিকে এগোতে থাকল অপ্রতিহত গতিতে!  পরাজয় নিশ্চিত বুঝে কাপুরুষ দখলদার বাহিনী করল এক ঘৃণ্য চক্রান্ত!

ডিসেম্বর ১৩! ১৯৭১!

রাজাকার আলবদর আলশামস বাহিনীর সাহায্যে কারফিউ এর রাতে ঢাকা মহানগরী থেকে বহু সংখ্যক
বুদ্ধিজীবীকে গ্রেপ্তার করা হলো! উদ্দেশ্য পরিস্কার! পরাজয়ের মুহূর্তে বাংলাকে মেধাশূন্য করে দিয়ে যাওয়া! যার সুদূর প্রসারী প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের ভবিষ্যতে!

রাষ্ট্রপুঞ্জে নিরাপত্তা পরিষদে, মরণ কামড় দেবার জন্য মার্কীণ যুক্তরাষ্ট্র আবার যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব পেশ করল!
ঠাণ্ডা যুদ্ধের ভারসাম্যের সুযোগে তৃতীয়বারের জন্য সোভিয়েত ভেটোতে মার্কীণ অপচেষ্টা এবারেও ভেস্তে গেল!  পুবাইলে প্রত্যক্ষ সংঘর্ষে পরাস্ত হয়ে পাকবাহিনী ঢাকার দিকে পিছলো! ভারতীয় পিটি-৭৬ ট্যাঙ্কবহর এদিন মেঘনা নদীও পেড়িয়ে গেল!

ডিসেম্বর ১৪! ১৯৭১!
জাতীয় শোকদিবস!

এইদিন পূর্বপাকিস্তানের মন্ত্রীসভার বৈঠক চলাকালীন গভর্নমেন্ট হাউসের ওপর বিমান হামলায় ভীত হয়ে গভর্নর ডঃ মালেক মন্ত্রীপরিষদের সদস্যবৃন্দসহ পদত্যাগ করে রেডক্রসের আশ্রয় নেন! চীন ও মার্কীণ যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধে অংশগ্রহনের সম্ভাবনা বিলীন বুঝে ইয়াহিয়া খান লেঃ জেঃ নিয়াজীকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দিলেন! কিন্তু নিঃশর্ত আত্মসমর্পনের উল্লেখ না থাকায় নিয়াজীর যুদ্ধ বিরতির প্রস্তাব দিল্লী ও বাংলাদেশ প্রত্যাখ্যান করে!

নিশ্চিত পরাজয় বুঝে বন্দী বুদ্ধিজীবীদের মীরপুরে নৃশংসভাবে হত্যা করল রাজকার আলবদররা পাকবাহিনীর সাথে! আজও এই অন্যায়ের কুফল বইতে হচ্ছে জাতিকে!

ডিসেম্বর ১৫!

অবরুদ্ধ ঢাকার বাইরে গোটা দেশ মুক্তাঞ্চলে পরিণত! পর্যদুস্ত পাকবাহিনীর সেনারা পালাবার পথে জনসাধারণের হাতেও প্রহৃত হচ্ছে! বৈদেশিক সাহায্যের আশা শেষ! বিশ্বে পাকিস্তান আজ উপহাসের পাত্র! এই অবস্থায় জেনারেল নিয়াজী
বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকে পরের দিন সকাল সাড়ে নয়টা অব্দি বিমান হামলা বন্ধ রাখার অনুরোধ জানালে আক্রমণ বিরত থাকে!
বস্তুত এই অনুরোধ করা হয় নিঃশর্ত আত্মসমর্পনের প্রস্তুতি হিসেবে! পাক জেনারেল ইয়াহিয়া খানের হাতে আর কোনোই বিকল্প ছিল না! কারণ দখলদার পাকবাহনী তখন মৃত্যুভয়ে ভীত! এবং সমস্ত সরবরাহ বন্ধ! ঢাকা বাদে গোটা বাংলাদেশ পাকবাহিনীর হস্তচ্যুত স্বাধীন মুক্তাঞ্চলে পরিণত!

সামনে নতুন দিন!


বিজয়দিবস ডিসেম্বর ১৬! ১৯৭১!

অবশেষে ভুমিষ্ঠ হল স্বাধীন
বাংলাদেশ! লক্ষ্য লক্ষ্য মানুষের আত্মত্যাগ ও শহীদ হওয়ার মধ্যে দিয়ে বহু রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হল অমূল্য স্বাধীনতা! কারুর দয়ায় নয়! ভিক্ষে করে নয়!
ঘরে ঘরে যুদ্ধ করে দূর্মূল্য এই স্বাধীনতা অর্জনের মুহূর্তে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু তখনো শত্রুদেশে বন্দী! অক্লান্ত ত্যাগী নেতা প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন মুজিবনগরে!

এগিয়ে এল সেই মাহেন্দ্রক্ষণ! ঢাকা রেসকোর্স ময়দানে বিকেল চারটেয়ে আনুষ্ঠানিক আত্মসমর্পনের সময় ঠিক হল! সবুজ দেশের বুকে স্বাধীনতার লাল সূর্য্যের দুরন্ত উত্থান ১৬ই ডিসেম্বর ১৯৭১! বিশ্বের বুকে উড়ল স্বাধীন বাঙালির বিজয় পতাকা! জয় বাংলা!

বাংলাদেশ!



বর্ধমান ।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

3 মন্তব্যসমূহ

  1. যেন জীবন্ত ।

    উত্তরমুছুন
  2. দেবাশিস কাঞ্জিলালবুধবার, ডিসেম্বর ১৯, ২০১২

    শ্রীশুভ্র-র প্রতিবেদনটি পড়ে মুগ্ধ হলাম।
    এত সুন্দর ধারাবাহিকতার সাথে সেই ঝোড়ো সময়কে এই লেখায় তিনি বিধৃত করেছেন,তা প্রশংসার দাবী রাখে।
    এই লেখাটি সমস্ত বাঙ্গালির কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল হয়ে রইল।

    উত্তরমুছুন
  3. সত্যি দেবাশিস বাবু ঠিক বলে গেলেন , এই লেখাটি বাঙালীর কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ দলিল হয়ে রইল।

    উত্তরমুছুন

সুচিন্তিত মতামত দিন