#১
বাংলাদেশে এখন সাম্প্রদায়িক নিম্নশ্রেণীর কবিদের জয়জয়কার। শুধু কবি কেন, সাম্প্রদায়িক বুদ্ধিজীবীরা এখন সাম্প্রদায়িক তরুণ এবং ধর্মাশ্রয়ী রাজনীতির মুখপাত্র হয়ে উঠেছে। কথাটা অবশ্য ভুল, কেননা এরাই আসলে রাজত্ব করে আসছে স্বাধীন বাংলাদেশে।
কারণ কি?
কারণ এই দেশ এবং এই দেশের মানুষ এর চেয়ে উন্নত চিন্তা কিংবা শিল্প ডিজার্ভ করে না। আমরা যাদের প্রগতিশীল আধুনিক এবং অসাম্প্রদায়িক সৃষ্টিশীল মানুষ হিসেবে এতোদিন দেখে এসেছি, তারা কেউ প্রকৃতপ্রস্তাবে কল্কে পায়নি বরং তাদের প্রতি একধরণের ঘৃণা বর্ষিত হয়েছে।
সেই কাল গত হয়েছে। এই ধরণের কবি বুদ্ধিজীবীরা গর্তে প্রবেশ করেছে। ২৪ এর অভ্যুত্থান তাদের এই শাস্তি দিয়েছে। এর মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়েছে সাম্প্রদায়িক মানুষই এই দেশ চায়। পেয়ে গেছে।
এখন এইসব কবি সাহিত্যিকরা গুমুত যাই লিখুক, তা সমাদৃত হবে, প্রশংসায় মুখের ফেনা তুলে ফেলবে এবং রাষ্ট্রীয় সব পুরস্কার বগলদাবা করবে। এই পুরষ্কারগুলি আগে বাগাতো ঐ তথাকথিত প্রগতিশীল কবি লেখকগণ। আর বুদ্ধিজীবীরা যা বলবেন তা গিলবে স্বর্গীয় সুধার মত আর অশেষ পূণ্য অর্জন করে পরকালের পুরস্কার পাবার আশায় দিন গুনবে।
#২
এখানে শিল্প কিংবা রাজনীতি বিচার্য নয়, বিচার্য কে কতটা সাম্প্রদায়িক, তা। রাজনীতির বিষয় আশয় এখানে ইহলৌকিক নয়, পারলৌকিক। এখানে সমস্ত বিষয়, সমস্ত ঘটনা মানবসম্পর্কের শ্রেণিসংগ্রামের ফল নয়, এসব পূর্বনির্ধারিত। এখানে বস্তবাদ পরম বস্তুবাদ। এখানে ভাববাদই একমাত্র সব আসানের দর্শন। এখানে দারিদ্র্য, শোষণ, নিপীড়ন সবকিছু অদৃশ্য শক্তির খেলা। পরীক্ষা চলছে। ফলাফল প্রকাশিত হবে অন্যজগতে এবং মিলবে পুরস্কার। শাস্তিও মিলবে। সূতরাং এইজগতে কিচ্ছু করার দরকার নাই। সয়ে যেতে হবে।
এখানে যে যত পরমের গুণগান গাইবে, সে তত বড় কবি, সে তত বড় বুজুর্গ। ইহজাগতিক সবকিছু এখানে পরিতাজ্য। এখানে আর কোন বিষয়আশয় থাকবে না।
এখানে 'পরিসর' মানেই ধর্মীয় পরিসর। আদিম প্রবৃত্তি এবং অসহায়ের সংস্কৃতি ছাড়া আর কিছু চলবে না এবং এটাই এখানে বেশ পূজনীয়।
#৩
নজরুল যদি হামদ নাদ, বিশেষ করে 'ও মন রমযানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ' না লিখতেন তাহলে এদেশের মুসলিমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাঙ্গণ থেকে কবেই তার কবর ভেঙে ফেলতো। অবশ্য তিনি লিখে গেছিলেন 'মসজিদের পাশে আমায় কবর দিও ভাই', ফলে এই গানের কথা এদের বেশ প্রিয় এবং নজরুলকে তাদের নিজেদের লোক ভাবে। নজরুল না থাকলে এরা হয়তো তালিম হোসেন, গোলাম মোস্তফা কিংবা ফররুখ আহমেদকে জাতীয় কবি বানিয়ে ফেলতো।
আল মাহমুদ যদি সোনালি কাবিন, পানকৌড়ির রক্ত লিখে থেমে যেতেন, তাহলে তার নামও এরা কস্মিনকালেও নিতো না যেমন শামসুর রাহমান, সৈয়দ হক, হুমায়ুন আজাদ এদের দুচোক্ষের বিষ।
অর্থাৎ সাম্প্রদায়িক না হলে এখানে কোনকিছুত না শিল্প না রাজনীতিতে কল্কে পাওয়া যাবে। ২৪ এর বিপ্লব এই অভূতপূর্ব সুযোগ এনে দিয়েছে। এখন চলবে এদের জয়জয়কার। আর ঘরে ঘরে এদের নামে মানুষ সিন্নি বিলাবে এবং বাচ্চারা কবিতা মুখস্থ করে অশেষ সওয়াবের অধিকারী হবে..
0 মন্তব্যসমূহ
সুচিন্তিত মতামত দিন