মাধবীলতা / দুটি কবিতা



মেঘ এলে
মাধবীলতা


তার ফোন থেকে তখন
বাঁশির সুর ভেসে আসে।

ওই শহরে বৃষ্টি হলেই অর্ফিয়াস গান গায়, বাঁশি বাজায়। আমাকে মেসেজ পাঠিয়ে বলে - "মেঘ এলে, বাতাস বইলে এই সুর কানে নিও, আমাকে পাশে রেখো।"

গান গাইলে অর্ফিয়াস সমাজ ভাঙে, শর্ত ভাঙে, প্রতিবারেই দেবতারা রুষ্ট হন, শাস্তি দেন।ওর সোনালী মশারিঢাকা পরিবারকে পাতালপুরীতে লুকিয়ে রাখেন।

সবশেষে, আরও কিছুক্ষণ
বিরহের মতো অস্তরাগ ছোঁয়া লাল আভা লেগে থাকে আমার দেওয়ালে।

রাস্তার ধারের ঝিমিয়ে থাকা দোকানগুলো তারপর জেগে ওঠে। আশেপাশের বাড়ি থেকে দিনযাপনের টুকরো শব্দ আবার ছিটকে আসে ঘরে।

অর্ফিয়াস সংসার ফেরত পায়।

আমি আর অর্ফিয়াস- আলাদা হয়ে যাই।


গোধূলি 

সূর্যাস্তের ঠিক পরেই ধুলোর গন্ধমাখা শীতল হাওয়া।
মৈত্র বাড়ির লাগোয়া হাসনুহানাদের ছুঁয়ে সুদূর মসজিদ থেকে ভেসে আসে আজানের ভাঙ্গা টুকরো।

আসবার আগে যতটুকু বিলীন হয় দূরত্বে,
তার সাথে আমার হারিয়ে যাওয়া একজোড়া চোখের বড় মিল খুঁজে পাই। বহুবছর আগে সে না বলে কয়ে পাড়ি দিয়েছিল দেশান্তরে... ফেরেনি।

আজান শেষে যে লালাভ আকাশে থমথমে চারিধার, তাকে দেখে আমার যমুনা মাসীর কপালের গোল টিপটার কথা মনে আসে। লোকে বলত- 'যমুনা হিজড়ে'। একদিন সবার আড়ালে এসে আমার কপালে শাড়ির আঁচল ঠেকিয়ে বলেছিল - "আমার আশীর্বাদ বৃথা যাবে না দেখিস। "

ধূপের ধোঁয়া জানলা দিয়ে এঁকেবেকে সদ্য আসা আবছা চাঁদে মিশলে- স্কুলের আভা দিদিমনির মৃদু হাসি ভেসে ওঠে আকাশের গায়ে। আভা দিদিমনি অবিবাহিতা, কাঁচা-পাকা চুল, চোখদু'টো যেন শান্ত গভীর ঝিল। বলেছিল, গাছ ছাড়া বাকি সবাই বিশ্বাসঘাতক।

গোধূলিবেলার স্নিগ্ধ পোশাকে 
রোজ এত নিভে যাওয়া মোমবাতির যন্ত্রণা জড়িয়ে থাকে কেন... কে জানে! 




-
মাধবীলতা /  মেঘ এলে / মিছিল /sobdermichil

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* মন্তব্য করতে পেজটি রিফ্রেশ করুন .