ত নি মা হা জ রা | কর্ম সংস্থান

ত নি মা হা জ রা | কর্ম সংস্থান





কর্ম সংস্থান

■ ত নি মা হা জ রা

আরিফুলের এজেন্সি "ধর-তক্তা-মার-পেরেক" এ তল্লাটে আজকাল বেশ নামকরা। উঠতি মাস্তানরা এনরোল করাতে আসে বেশ দূর দূর গ্রাম থেকে। ফোন নং আর পাসপোর্ট সাইজ ছবি দিয়ে প্রোফাইল খুলে যায় তারা।

যেমনটি যেমনটি কাজ আসে তেমনটি তেমনটি ডাক পড়ে । কাজ পাইয়ে দেবার জন্য আরিফুল ২০% কমিশন খায়। আয়াসেন্টার বা ড্রাইভারসেন্টারের মতোই অথেনটিক পুরো ব্যাপারটা।তবে ঘা-ক্ষত, মরাবাঁচা, পুলিশের হাতে ধরা পড়া এসব অবশ্যই নিজস্ব রিস্কে।

সুখপুকুরের বিধায়ক নকুড় মন্ডলের তিনতিনবার জেতা নির্বাচনক্ষেত্রের অবস্থা এবার কেমন এট্টু যেন টালমাটাল। এলাকার বেশিরভাগ লোকই অশিক্ষিত, চাষা, ভীতু গরীবগুর্বো, সহজেই দুপাঁচ কেজি চাল কিংবা দুটো শাড়ি কম্বল পেলেই আহ্লাদে গদগদ হয়ে যার পাশে বলবে তার পাশেই ছাপ্পা মেরে আসে কিন্তু এবারের আবহাওয়া কেমন যেন গুমোট। পার্টির লোকাল চ্যাংড়াগুলোকে দিয়ে রগড়ে ধমকেও খুব একটা কাজ হবে বলে মনে হচ্ছে না। আসন্ন নির্বাচনে তাই হারজিত নিয়ে রিস্ক নিতে চায় না নকুড় মন্ডল। জিতবার বন্দোবস্ত সব আটঘাট বেঁধে পাকাপোক্ত করেই এগোতে চায়। পরে আফসোস করে আর লাভটাই বা কী?

আরিফুলের এজেন্সির খবরটা এনেছিল জনার্দন। জনার্দন হচ্ছে নকুড়ের বাঁহাত, যত দুর্গন্ধ সাফ করার কাজ তার ঘাড়েই।

জনার্দন বল্ল, চিন্তা করবেন না দাদা, আরিফুল কোয়ালিফায়েড আর এক্সপেরিয়েন্সড ছেলে সাপ্লাই দিয়ে দেবে। তারা কড়কে ভোট আদায় করে আনা, বুথ দখল করা সব বিষয়েই ওয়েল ট্রেনড। কেউ বেশি চুলবুল করলে গোপনে দু'চারটেকে নামিয়েও দেবে। তবে টাকার ব্যাপারটায় কিন্তু কোনো কম্প্রোমাইজ নেই, এই হাতে কাজ ওই হাতে টাকা।

এইসব সুবিধেগুলো আজকাল বেশ ভালো হয়েছে। সারাবছর গুন্ডা পোষার হ্যাপা নেই, দরকার অনুযায়ী বুকিং করলেই হল। তাছাড়া এরা প্রফেশনাল, মরলে শনাক্ত করে কোনো পার্টির রঙফঙ হদিশ করাও যাবে না।

নকুড় বল্ল, আহা! এতো অতি উত্তম প্রস্তাব হে জনার্দন। এতে তো কিছু ছেলের কর্মসংস্থানও হবে হে। এতে করে যাকে বলে নিজের এলাকার জনগণের সেবা করার অধিকারটুকুনও বজায় থাকবে আমার। বিধায়ক হিসেবে জনগণের ভালোর জন্য এই সামান্য দায়িত্বভার তো আমাকে নিতেই হবে। তাহলে আমাদের প্রচারে এটাও ফলাও করে বলে দাও নব যুবকদের কর্মসংস্থানের জন্য আমরা বিশেষ কর্মসূচিও গ্রহণ করেছি।

সুতরাং নকুড়ের কথা মতো জনার্দন আরিফুলকে ফোন লাগায়। আরিফুলের "ধর তক্তা মার পেরেক" এজেন্সির ছেলেরা এসে কাজে লাগে এবং তার ফলবশতঃ বিপুল ভোটে জিতে নকুড় মন্ডল পুনরায় জনগণের সেবার জন্য নির্বাচিত হন।

আরিফুলের এজেন্সিতে নাম লেখাবার জন্য ছেলেদের লম্বা লম্বা লাইন পড়তে থাকে। পেটো তৈরি, বোমা বাঁধা ইত্যাদি কাজে ক্রাশ কোর্স করার জন্য ফর্ম জমা পড়ে বিস্তর।

আরও পাঁচ বছরের জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করে দেবার মহান ব্রতে নিজেকে নিবেদন করেন নকুড় মণ্ডল। পার্টি থেকে সগৌরবে প্রচার করা হতে থাকে যে, এই অঞ্চলের যুবকদের নব্বই শতাংশের বেশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন স্থানীয় বিধায়ক নকুড় মণ্ডল।

শুধু এলাকার গরীব গুর্বো লোকগুলোই ভারি বোকা, এই সব উন্নয়নের কিছুই তাদের মাথায় ঢোকে না। তারা সন্ধের পরে বাইরে বেরোতে ভয় পায়, মেয়েদের ইজ্জত নিয়ে অহেতুক দুশ্চিন্তায় তাদের গলা শুকিয়ে যায়। মাঝে মাঝে রাত বিরেতে বোমা পড়ে, দুচারটে ছেলে পিলে গায়েব হয়ে যায় কোথায় যেন।

ধুরছাই! এমন মানুষ ফলে টইটুম্বুর দেশে অমন দু-দশটা ফল ঝরে কি শুকায় তাতে কী এসে যায়, ভরা গাঙে অমন দু চারটে লাশ ভেসে গেলে কাক শকুনেরও আরাম করে আহার জোটে।

সরকার এমন সব দিকে সবার খেয়াল রাখে, আহা, মানুষ তো কর্মসংস্থান পেয়ে সুখে আছেই, কাক শকুনেরও পেট ভরে, ঢেকুর ওঠে।।

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ