শূন্যতা দর্শনের
এক ব্যাপ্তিময় কবি তৈমুর খান
■ নাসির ওয়াদেন
আমরাও পাঠকেরা , কবি তৈমুর খানের জন্মদিনে খুঁজে পাই তাঁর পরাবাস্তবতার বহুমুখী ব্যত্যয়ে দ্বান্দ্বিকতাবোধের প্রচলিত সুর –ছন্দ –সৌন্দর্যায়নের চর্চা।
■ নাসির ওয়াদেন
আমরাও পাঠকেরা , কবি তৈমুর খানের জন্মদিনে খুঁজে পাই তাঁর পরাবাস্তবতার বহুমুখী ব্যত্যয়ে দ্বান্দ্বিকতাবোধের প্রচলিত সুর –ছন্দ –সৌন্দর্যায়নের চর্চা।
এই জন্ম ধুয়ে নেব ইতিহাসের ধুলো ঝেড়ে
এই জন্মে মানবীয় বাতাস মেখে নেব ।
নতুন করে রক্তপাতহীন, জাতিবিদ্বেষহীন সুখি সমাজ গড়ে তুলতে হাত দিতে হবে সবাইকে। তবেই এই প্রকাণ্ড অমহিমময় অধর্মের অনড় পাথরকে নড়ানো সম্ভব হবে। বেঁচে থাকার অভ্যাসে রপ্ত করতে হবে জীবনযুদ্ধের লড়াইয়ে সামিল হয়ে, সব মেঘে বৃষ্টি হওয়া, সব বৃষ্টিপাতে মেঘ ডাকে না, আগুনের বৃষ্টিপাতে কান্নার নির্ঝর পুড়ে যায়, মৃত্যুকে শাসন করেই বাঁচতে হয় কবিদের। কবি বলেন,
মৃত্যুকে শাসন করি নতুন জন্মাই
জীবনযাপন রাখি দহন চিতায় ।
বাংলা সাহিত্যের উঠোনে, বাঙালির সংস্কৃতির অঙ্গনে , বাংলা কবিতায় বাঙালির চেতনা জগতের ঐতিহ্য, আবেগ, সম্মোহন শ্বাশত হয়ে উঠেছে। কবিতার অবয়বে,গঠনশৈলিতে , বিবৃতি বর্ণনার অবসান,তথ্যের পুনরাবৃত্তির আমদানির যুগ সমাপ্ত। কবিতায় এসেছে অন্তর্মুখী সূক্ষ্ম জীবনবোধের প্রয়োগ, বেড়েছে নিবিড় রহস্যময়তা। অর্থ বা বিষয়হীন কবিতাইবর্তমানে বেশি গ্রহণযোগ্য যা কবির কবিতায়, কবিতার শব্দে, বাক্যে, অভিব্যক্তিতে বিদ্যমান।কবি Roger Zelazny বলেছেন — ‘ Don’t wake me for the end of the world unless it has very good special effects. ‘ তাই কবিতায় ভেসে আসছে স্বয়ংক্রিয়তা বা আত্মমগ্নতার প্রভাব। আধুনিক কবিতা হিসেবে ‘ দ্য এম্পটি স্পেস ‘ কবিতাতে কবি অতনু সিংহ সুন্দরভাবে empty space শূন্যতারই নিরন্তর প্রয়াস দেখিয়েছেন সুনিপুণভাবে। প্রতিটি সৃষ্টিই নিঃশব্দতা থেকে জাত, ভাবনাগুলো চিন্তার nothingness থেকে উৎপন্ন, শূন্যতা থেকে বেরিয়ে এসেছে essence, যা প্রতিটি সৃষ্টির মূল্যেই স্থিরতা বিদ্যমান। শরীরী মায়া থেকেই জন্ম নেয় নির্বাক নগ্নতা। এই ভাবেই প্রেমে-কামে শূন্য দশকের বারান্দা আলোকিত । ” শূন্য দশকের আকাশে মেঘ ও বৃষ্টি, অশনি ও অন্ধকার, আলো ও আহ্বান নিঃসঙ্গ শূন্যতায় ও ভাষায়, শব্দে ও ব্যঞ্জনায় ধরা দেয়। এক একটি জীবন রসায়নের অনুজ্ঞা থেকেই প্রচ্ছায়া নির্মিত হয়। তারই বিনির্মাণে কবিতার উচ্চারণ। আপাত নিরীহ কিন্তু অমোঘ ও অসম্ভব প্রাণদীপ্ত। বস্তুর মধ্যে প্রাণের ব্যঞ্জনা থেকে ক্রিয়ার গতিশীল প্রয়োগ আধুনিক কবিতা নির্মাণে নতুন পথ খুঁজে পেতে উৎসাহ দেয়। সবই শূন্য, সবই খালি, নাথিংনেসই এর মূলকথা, কেননা কবিরাই জানেন যে, জীবন মায়াময়, শূন্যময়, শিল্পের মধ্যে শূন্যময়তা বিরাজমান।
তাই, Nothingness not being nothingness, nothingness being emptiness. মিথ্যার দর্পণে আত্ম মুখমণ্ডল প্রদর্শন, যার আড়ালে শূন্যতার নিঃসঙ্গ চিত্রকল্প উপস্থাপিত ।কবি তৈমুর খান,’ বালকবালিকা’ কবিতায় কিছু নতুন বার্তা রেখেছেন ।
কালের নদীতে স্নান করিসময়ের তীরে
আমাদের ক্রিয়াকলাপগুলি ব্যস্ত হয়ে ওঠে
নির্জনের ফুলের ঘ্রাণে প্রেমের বার্তা যায় শব্দগুলি নৈঃশব্দ্যের মৌমাছি ।
কালের নদীতে স্নান করিসময়ের তীরে
আমাদের ক্রিয়াকলাপগুলি ব্যস্ত হয়ে ওঠে
নির্জনের ফুলের ঘ্রাণে প্রেমের বার্তা যায় শব্দগুলি নৈঃশব্দ্যের মৌমাছি ।
কবির জন্মদিনে কবি আমাদের ভালবাসা দিয়ে রাঙিয়ে দেবেন ভুবন। কবিও সেই রাঙা বিকেলের রংধনু শাড়ি, দুলে ওঠা বেণী, রাঙা চপ্পলে পেরিয়ে যাওয়া সামাজিক রাস্তাগুলি ভালবাসার শ্বেতচন্দন আর ফুলদল দিয়ে ভরিয়ে দেবেন হৃদয়। আমরা কবির দীর্ঘায়ু কামনা করি নিজস্ব বিশ্বাসের খাতার পাতায় আঁকিবুকি এঁকে । কবি তৈমুর খান একজন সার্থক কবি হিসেবে দীর্ঘ জীবন যাপন করুক।
কবিকথা :–কবি তৈমুর খানের জন্ম ২৮ শে জানুয়ারি ১৯৬৭। বীরভূম জেলার পানিসাইল গ্রামে। পিতা জিকির খান, মাতা নওরাতুন। বাংলা সাহিত্যের স্নাতকোত্তর। প্রেমেন্দ্র মিত্রের কবিতা নিয়ে পি এইচ ডি করেছেন,বর্তমান পেশা শিক্ষকতা ।১৯৮৫ তে কলেজ ম্যাগাজিনে প্রথম কবিতা প্রকাশ । ‘ বিকল্প ‘ও ‘দৌড় ‘ পত্রিকায় নিয়মিত কবিতা লিখতেন । ২০০২ সালে ‘ দেশ ‘ পত্রিকাতে প্রথম কবিতা প্রকাশিত হয়। দৌড় সহ নানা সম্মানে সম্মানিত । কবি মুলত নব্বই দশকের কবি ও গদ্যকার। কবিতা বিষয়ক গদ্যগুলি পাঠকের কাছে কখনো জটিল ও তথ্য ভারাক্রান্ত বলে মনে হবে না। কবিতার বহুমুখী ভাবনার সাথে বহুমুখী দরজাও খুলে দিয়েছেন। সামাজিক বৈষম্য, অর্থনৈতিক বৈষম্য, অভিঘাত , নানা প্রবঞ্চনা ও পীড়ন, কবিতায় প্রকাশ ।প্রকাশিত গদ্যগ্রন্থ :–আত্মসংগ্রহ (২০০৯), নব্বই দশকের কবি ও কবিতা (২০১০), প্রত্নচরিত ( ২০১১), আত্মক্ষরণ (২০১৬), কবির ভাঁড়ারের চাবি (২০১৮ দ্বিতীয় সংস্করণ )।কবিতাগ্রন্থ :–কোথায় পা রাখি ( ১৯৯৪), খা শূন্য আমাকে খা (২০০৩), আয়নার ভেতর তু যন্ত্রণা ( ২০০৪),বিষাদের লেখা কবিতা ( ২০০৪), একটা সাপ আর কুয়াশার সংলাপ ( ২০০৭), জ্বরের তাঁবুর নীচে বসন্তের ডাকঘর ( ২০০৮), তরঙ্গের লীলায় দেখি মাধুর্যের বসতি ( ২০০৮), এই ভোর দগ্ধ জানালায় (২০১০), দশমীর চাঁদ (২০১৬), বৃত্তের ভেতরে জল (২০১৭),ইত্যাদি ।উপন্যাস :–জারজ।
২৮ জানুয়ারি কবি তৈমুর খান এর জন্মদিন উপলক্ষে লেখাটি প্রকাশিত
0 মন্তব্যসমূহ
সুচিন্তিত মতামত দিন