ত নি মা হা জ রা​ | ঈশ্বরের_জন্ম



■পর্ব -১​

এসো ধর্ম থেকে বেরিয়ে এসে ঈশ্বরের জন্মকথা লিখি। আশার আকাঙ্ক্ষার ভ্রূণে আমাদের পারিপার্শ্বে যার বেড়ে ওঠা রোজ। মৃত্যুর দামামা দিয়ে বিভেদের আমন্ত্রণধ্বনি। তাঁকে খুঁজি, তাঁকে খুঁজি সারাৎসার টুকুনের রসে, মৃত​ মাতার গর্ভের ভিতর যেমন শিশু, তেমনই সংস্কার আর আচারের ভিতর দমবন্ধ সুন্দর ঈশ্বর।​

মানুষ সেটা নয় যা সে হয়ে আছে, মানুষ তাই যা সে হতে চায়। আর এই চাওয়ার আকাঙ্ক্ষাতেই ঈশ্বরের জন্মকথা।​

সে বিপদগ্রস্ত জীবন থেকে স্বস্তি চায়, সে রোগ থেকে বাঁচতে চায়, সে দারিদ্র্য থেকে পরিত্রাণ চায়, সে রূপহীন দেহে রূপ চায়, সে প্রেমহীন জীবনে প্রেম চায়, তাই তার আর্তি জানাবার জন্য বলিষ্ঠ একটা অস্তিত্বের প্রয়োজন, তার নামই ঈশ্বর।​

বেশিরভাগ মানুষই অধ্যাত্ম চেতনার উন্মেষের জন্য ঈশ্বরের দর্শন চায় না, চায় তার কামনা ও ভোগের প্রাপ্তির জন্য একটা অলৌকিক আবির্ভাবের হস্তক্ষেপ। এই অলৌকিক আস্থার আস্তানাকে তারা ঈশ্বর সাজায় নিজের বুদ্ধিমত্তা অনুসারে, নিজের কল্পনা অনুযায়ী। তাই ঈশ্বর তাদের ইচ্ছে অনুযায়ী সেজে ওঠেন নানা দেবালয়ে নানা সাজে, নানা রূপে।​ এভাবেই মানুষের হাতে বন্দি হয়ে পড়েন অথর্ব লাচার অক্ষম ঈশ্বর।।​


যুগে যুগে যুগাবতাররা আবির্ভূত হয়েছেন মানুষকে এই বদ্ধ ঈশ্বর ভাবনা থেকে মুক্তি দিতে, ঈশ্বরকে এই বন্দিজীবন থেকে মুক্তি দিতে।​

কবীর বলছেন,​

নর তুম ঝুটে জনম গবায়া,​

ঝুট কে ঘর ঝুটে আয়া, ঝুট নে পরিচায়া, ঝুটি থারি, ঝুটা ভোজন, ঝুট লে সব খায়া।।১

ঝুট কে ঘর ঝুটা আয়া, ঝুটে ভাব রচায়া, ঝুটা দুলহা, ঝুটি দুলহন, ঝুটে বাহন আয়া।।২

ঝুটে নর সব, ঝুটে নারী, ঝুটে বালক আয়া, ঝুটি ছাতি, ঝুটি কোঁখ, ঝুটা দুধ পিলায়া।। ৩

সচ ক হু মেঁ ঝুট ন বোলুঁ সাঁচে কো ঝুটলায়া, কহে কবীরা সৌই জন সাচ্চা, আপনে মাহি সামায়া।। ৪

নর তুম নাহ কো ধুম মচায়েঁ,​
করি আস্নান, ছুঁয়ো নহি কাহু,​

পাত্তি ফুল চড়ায়ে, মূর্তি সে দুনিয়া ফল মাঁঙে, আপনে হাথবানায়ে।। ৫


■ পর্ব -২

পুরাণ কথায় যে ঈশ্বর সৃষ্টির প্রয়াস, তার কারণ কী? তার উদ্দেশ্য কি লোকশিক্ষা?​ গল্পের আধারকে অবলম্বন করে সাধারণের মনের ভিতর প্রবেশ।​
Mythology অর্থ পুরাণকাহিনি। আর myth শব্দের অর্থ শ্রুতি। লেখনীর জন্মেরও আগে মুখে মুখে প্রচলিত এইসব কাহিনিমালার ঐতিহাসিক যাথার্থ্য ছিল কি ছিল না তা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নয়, গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে এর সারাংশ, যা লোকসমাজের মনন ও চিন্তণের উপরে প্রভাব বিস্তার করে যুগ যুগ ধরে।​

এই যে আমাদের বলে দেওয়া হচ্ছে কি পাপ আর কি পুণ্য, বলে দেওয়া হচ্ছে কোনটা করলে স্বর্গে যাবো, কোনটা করলে নরকে, আমাদের হৃদয়বৃত্তির উপরে, আমাদের মননের উপরে একটা কাহিনির মোড়কে আমাদের বিশ্বাসের উপরে নানা শাসন ও নিয়ন্ত্রণের কৌশলগুলো প্রয়োগ করা হচ্ছে আমাদের অলক্ষ্যে, এইভাবে কে বা কারা ঈশ্বর হয়ে উঠছে আমাদেরই অজান্তে আমাদের দুশ্চিন্তায়।​

এই মনুষ্যরূপী শূন্যতাকে কামড়ে ধরেই আমরা ঈশ্বরকে প্রশ্রয় দিয়েছি নানাভাবে নানারূপে।
আমার গল্পটা নিটোল নয় বলেই ঈশ্বর আছেন, আমার গল্পটা বিষাদের বিষাক্ত নদী পেরিয়ে পাড় দেখতে চায় বলেই ঈশ্বর আছেন, সেই তরনীর কল্পিত কান্ডারী হিসেবে আমাদের চিন্তা জুড়ে, আমাদের ত্রাতা হিসেবে।​

মৃত্যু থেকে আমাদের কেউ মুক্তি দিতে পারে না তবুও আমরা আরোগ্যের শিখর ছুঁতে চাই,সূর্যাস্তের অন্ধকার থেকেই সূর্যালোকের জন্মলাভ তবুও আমরা দিনকেই চাই, রাতকে চাই না, অন্যায়ের অস্তিত্বের মধ্যেই ন্যায়ের বিজয়যাত্রা তবুও আমরা অন্যায়কে স্বাভাবিক বলে ধরে নিই না।​

এই অর্থবিহীন জগতে আমরা যখন​ অস্তিত্বের মানে খুঁজি তাই যে ঈশ্বর একথা আমরা ক'জন অনুভব করি, ইশ আমাদের ইশারা করে সেই স্বরের দিকে যা আমাদের অন্তরাত্মার, আমাদের কান তা শুনতে পায় না, আমরা আলোর ভেতর আলো'কে খুঁজতে ব্যস্ত তাই আমাদের অস্তিত্বের এই সংকট, যদি অন্ধকারের মধ্যে আলোক বিন্দুতে লক্ষ্যস্থির করার চেষ্টা করতাম তাহলে যাত্রা আরও সুগম হতো।।​

(চলবে)​






একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ