খুব বেশিদিন আগের কথাও নয়। তিনি বলেছিলেন যা গেছে তা যাক। যখন সারদায় গচ্ছিত আজীবনের সঞ্চয় হারিয়ে সাধারণ মানুষ সর্বস্বান্ত হয়ে দিশেহারা। আর আজকে একে একে দেশের সব সরকারী সংস্থাগুলি জলের দরে তুলে দেওয়া হচ্ছে বেসরকারি মালিকানার হাতে। সাড়ে সাত দশক ধরে তিলে তিলে গড়ে তোলা সরকারী সংস্থাগুলির বেসরকারীকরণে দেশবাসীর সমর্থন আছে কি নেই। থাকলে কত শতাংশ দেশবাসীর সমর্থন রয়েছে। সেটি জানার বিশেষ দরকার রয়েছে। এটা মনে করার বিশেষ কারণ নেই ২০১৪ এবং ২০১৯ এর লোকসভা নির্বাচনে জয়ী রাজনৈতিক শিবিরের প্রাপ্ত ভোট শতাংশই সরকারী সম্পত্তি ও সংস্থাগুলির বেসরকারীকরণের জনসমর্থনের মোট হিসেব। নিশ্চয় পরপর এই দুটি লোকসভা নির্বাচনে মানুষ বিজয়ী রাজনৈতিক শিবিরকে সরকারী সংস্থা ও সম্পত্তির বেসরকারীকরণ করার জন্যেই শাসন ক্ষমতায় নির্বাচিত করেনি। নির্বাচনের ইস্যুগুলির ভিতরে এই বেসরকারীকরণ নিয়ে প্রচার ও মাতামাতি কতটা হয়েছিল, সেটা অনেকেই জানেন। দুটি লোকসভা নির্বাচনের মূল ইস্যুগুলিও যে বেসরকারীকরণের থেকে ভিন্ন ছিল। সেকথাও অজানা নয় আমাদের। ফলে এটা ধরে নেওয়ার কোন কারণ নেই। পরপর দুটি লোকসভা নির্বাচনে মানুষ বিশেষ একটি রাজনৈতিক শিবিরকেই শাসন ক্ষমতায় নির্বাচিত করেছিল সরকারী সম্পত্তি ও সংস্থাগুলিকে জলের দরে হাতে গোনা কয়েকজন গুজরাটী ধনকুবেরকে বেচে দেওয়ার জন্যেই। ফলে আজকে যখন ঠিক সেই কাজটিই চলছে। চলছে একেবারে বুলেট ট্রেনের মতো ঝড়ের গতিতে। তখন তার পেছনে অধিকাংশ দেশবাসীর জনসমর্থন রয়েছে এমনটাও মনে করার উপায় নেই। অন্তত নির্বাচনী প্রচারের প্রভাবে প্রভাবিত ফলাফলে। বিগত দুইটি লোকসভা নির্বাচনের প্রধান ইস্যুগুলির দিকে তাকালেই সেকথা বোঝা যায়।
আবার তার মানে এও তো নয়। আজ যখন জলের দরে একের পর এক সরকারী সংস্থাকে বিশেষ কয়েকজন ধনকুবেরের হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে, তখন সেই মারাত্মক ভাবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি নিয়ে দেশবাসীর বিশেষ কোন মাথাব্যাথা রয়েছে। দেশবাসীর মাথাব্যাথা না থাকার একটাই কারণ। এই উপমহাদেশী ভারতবর্ষ। যা কোনদিনের জন্যেও একটি দেশ নয়। বিভিন্ন ভাষা ও সংস্কৃতির একাধিক জাতি গোষ্ঠীর সমাহারে একটি রাষ্ট্রীয় কাঠামো মাত্র।
তাও আবার বিদেশী ব্রিটিশের গড়ে দিয়ে যাওয়া। ফলে সেই রাষ্ট্রীয় কাঠামোকে কোন জাতিগোষ্ঠীর পক্ষেই নিজ দেশ বলে অন্তরে ধারণ করা সম্ভব নয়। ফলে ভারতবর্ষকে কেউই আপন স্বদেশ বলে উপলব্ধি করতে পারে না। পারা সম্ভবও নয়। কিন্তু সকলেই সেই রাষ্ট্রীয় কাঠামোর হাত থেকে অতিরিক্ত সুযোগ ও সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়ে অধিকতর মনযোগী। আর ঠিক সেই স্বার্থ থেকেই পরিচালিত হয় ভারতীয় গণতন্ত্র। প্রতিটি নির্বাচনের প্রধান ইস্যুগুলিই গোষ্ঠী স্বার্থকেন্দ্রিক হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু যদি এমন হতো, এই ভারতবর্ষের প্রতিটি মানুষই এই রাষ্ট্রীয় কাঠামোটিকেই আপন স্বদেশ, এবং প্রতিটি ভারতীয়কেই আপন স্বজন বলে উপলব্ধি করতে পারতো। একমাত্র তখনই ভারতবর্ষ প্রতিটি ভারতীয়ের কাছে নিজের স্বদেশ হয়ে উঠতে পারতো। নাগরিক সুযোগ ও সুবিধে হাসিল করার কোন রাষ্ট্রীয় পরিকাঠামো হয়ে পড়ে থাকতো না ভারতবর্ষ।
এর ফলে যেটি ঘটেছে। সেটি হলো এই, ভারতবর্ষ নামক ভুখণ্ডের মালিক হয়ে বসে সেই ভুখণ্ডের ধন সম্পদ লুঠ করলেও জনগণের বিশেষ কোন প্রতিরোধ দেখা যায় না। সকলেই মনে করে, আমার কি দায়। কিন্তু নিজের দেশকে নিজের সম্পত্তি বলে মনে করতে পারলে। জনগণ সেই দেশকে লুঠেরাদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্যেই সকলের আগে ঝাঁপিয়ে পড়ত। আজকে যখন জনতার চোখের সামনে দিয়েই ভারতবর্ষের সম্পত্তির অবাধ লুন্ঠনপর্ব চলছে। জনতা তখনও পারস্পরিক গোষ্ঠী স্বার্থের বৃত্তের ভিতরেই আটকা পড়ে রয়েছে। গোটা দেশকে অখণ্ড সত্তায় উপলব্ধি করতে পারছে না। পারলে জনতা পথে নেমে পড়তো এতদিনে। চোখের সামনে নিজের ঘরদোর জিনিসপত্র অন্য কেউ বেচে দিচ্ছে দেখেও নিশ্চয় ঘরের মালিক চুপ করে বসে থাকবে না। আসলে ভারতবর্ষ নামের রাষ্ট্রীয় ভুখণ্ডটির মালিক যে সেই ভুখণ্ডের প্রতিটি মানুষ। সেই সত্যটুকুই এই অঞ্চলের কোন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের ভিতরেই দানা বেঁধে ওঠনি আজও।
বিষয়টি একটু সহজ ভাবে বোঝার চেষ্টা করা যাক বরং। ধরুন আপনার নিজ বাড়ির দেখাশোনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য আপনি একজন কেয়ারটেকার নিয়োগ করবেন। একটা ইনটারভিউ ডাকলেন। দেখা গেল প্রার্থীদের ভিতরে একজনেরই এই কেয়ারটেকারের কাজের এক দশকের বেশি সময়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তার উপরে নিশ্চিন্তে ভরসা করা যায় বলেই মনে হলো আপনার। এমনকি, সে আপনার ঘরদোর পাহারা দেওয়ার জন্য কেয়ারটেকারের কাজের সাথে চৌকিদারির কাজও করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিল। আপনি স্বভাবতঃই আহ্লাদে আটখানা হয়ে তাকেই কেয়ারটেকার করে নিজের বাড়িটি তারই হাতে তুলে দিলেন। নিশ্চিন্ত হয়ে। এবার থেকে আপনার বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ উপযুক্ত মানুষের হাতে পড়েছে ভেবে। এরপর বছর পাঁচ সাত পর টের পেলেন বিশ্বস্ত সেই কেয়ারটেকার আপনার বাড়ির পৈতৃক সব জিনিসপত্র জলের দরে তারই কয়েকজন বন্ধুবান্ধবকে বেচে দিতে শুরু করেছে। ঠিক কি করবেন তখন আপনি? কারণ সেই বাড়ির আপনিই মালিক। আপনারই পৈতৃক জিনিসপত্রে ভরা ছিল যে বাড়ি।
না, দুঃখের বিষয়। ঠিক এইভাবে ভারতবর্ষ নামক রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভুখণ্ডটিকে আমরা কেউই অনুভব করি না। করতে পারিনি আজও। পারিনি বলেই দেশের নির্বাচিত সরকার দেশেরই সম্পত্তি সরকারী সংস্থাগুলি শাসকদল ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ব্যক্তিবিশেষের হাতে তুলে দেওয়ার সুযোগ পেত না এতদিন ধরে। দেওয়ার চেষ্টা করার প্রথম মুহুর্তেই আমরা পথে নেমে সেই কুকর্মের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করতাম অন্তত। ঠিক যেমনটা করল ভারতবর্ষের কৃষকরা। কারণ তাদের কাছে কৃষিজমি হচ্ছে তার প্রথম ও শেষ আশ্রয়। তারা যেমুহুর্তে বুঝতে পেরেছিল, নতুন তিন কৃষি আইনে তারা তাদের পৈতৃক জমিকে রক্ষা করতে পারবে না। কর্পোরেট শক্তি সেই সব জমি ছলেবলে এবং আইনের বলেই কেড়ে নেবে। এমনই নতুন আইন তৈরী করেছে গণতান্ত্রিক একটি দেশের জনগণের হাতে নির্বাচিত সরকার। সেই মুহুর্তেই তারা ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল রাজপথে। কৃষকদের কাছে যেমন নিজের জমি, আমাদের কাছে ভারতবর্ষ ঠিক তেমন নয়। নয় বলেই আমরা সরকারী সংস্থাগুলির বেসরকারীকরণের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী প্রবল এবং ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রয়োজনীতাই উপলব্ধি করতে পারিনি। করতে পারছি না।
অথচ দেশের মানুষের কাছে খবর পৌঁছিয়ে গিয়েছে এয়ার ইণ্ডিয়া মাত্র আঠারো হাজার কোটি টাকায় টাটা গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এদিকে দেশের প্রধান ও রাষ্ট্রপতির জন্য দুইটি বিদেশী বিমান কিনতেই খরচ পড়েছে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা। স্কুল পড়ুয়াদের কাছে রাখলেও অঙ্কটা জলের মতো পরিস্কার হয়ে যেত। কি পরিমাণ জলের দরে এয়ার ইণ্ডিয়ার বেসরকারীকরণ হয়েছে। কার স্বার্থহানী করে কাদের স্বার্থে। ঠিক একই ভাবে একের পর এক সরকারী বন্দর থেকে বিমানবন্দর। রেলস্টেশন থেকে সড়ক পথ। খনি থেকে খনিজসম্পদ। একে একে হাতবদল হয়ে গিয়েছে। জনতার হাত থেকে কয়েকজন বিশেষ ব্যক্তির হাতে। জনতা তার দেশের সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের ভার যার হাতে যাদের হাতে তুলে দিয়েছিল। তারা জনতার সম্পত্তি জনতাকে আড়ালে রেখে বেচে দিচ্ছে। জনতা যে বিষয়টি সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল নয়। তাও নয়। কিন্তু জনতা নির্বিকার। আমরা পূর্বেই দেখে নিয়েছি, জনতার এই নির্বিকার উদাসীনতার মূলে ঠিক কোন কারণ কাজ করছে। জনতা বিভিন্ন গোষ্ঠী স্বার্থের চক্রব্যূহে আটকা। সে হিন্দু। সে মুসলিম। সে নানান কিছু। কিন্তু স্বদেশী নয়।
ফলে এই যে একটি ধারা তৈরী করে দেওয়া হলো। সরকারী সংস্থার বেসরকারীকরণ। বর্তমান শাসকদলের বদলে অন্য রাজনৈতিক শিবিরকে নির্বাচিত করে ক্ষমতায় বসালেও যে এই ধারার কোন পরিবর্তন হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। নিশ্চয়তা নেই, অন্য কোন শাসক গোষ্ঠীর হাতে দেশের ক্ষমতা তুলে দিলেও, তারা হারানো সব সরকারী সম্পত্তি ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারবে আবার। তখন রাজ্যের প্রধানের মতোই না আবার ভারতীয়দের বলতে হয়, যা গেছে তা যাক। অবশ্য ভারতবর্ষের কোন সম্পত্তি কোন পথে কার স্বার্থে বেহাত হয়ে যাচ্ছে। সে হিসাবে দেশের নাগরিকের বিশেষ কিছু এসে যাচ্ছে না যখন। তখন আর বলতে অসুবিধে কি, যা গেছে তা যাক!
১৫ই জানুয়ারী’ ২০২২
কপিরাইট সংরক্ষিত
এর ফলে যেটি ঘটেছে। সেটি হলো এই, ভারতবর্ষ নামক ভুখণ্ডের মালিক হয়ে বসে সেই ভুখণ্ডের ধন সম্পদ লুঠ করলেও জনগণের বিশেষ কোন প্রতিরোধ দেখা যায় না। সকলেই মনে করে, আমার কি দায়। কিন্তু নিজের দেশকে নিজের সম্পত্তি বলে মনে করতে পারলে। জনগণ সেই দেশকে লুঠেরাদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্যেই সকলের আগে ঝাঁপিয়ে পড়ত। আজকে যখন জনতার চোখের সামনে দিয়েই ভারতবর্ষের সম্পত্তির অবাধ লুন্ঠনপর্ব চলছে। জনতা তখনও পারস্পরিক গোষ্ঠী স্বার্থের বৃত্তের ভিতরেই আটকা পড়ে রয়েছে। গোটা দেশকে অখণ্ড সত্তায় উপলব্ধি করতে পারছে না। পারলে জনতা পথে নেমে পড়তো এতদিনে। চোখের সামনে নিজের ঘরদোর জিনিসপত্র অন্য কেউ বেচে দিচ্ছে দেখেও নিশ্চয় ঘরের মালিক চুপ করে বসে থাকবে না। আসলে ভারতবর্ষ নামের রাষ্ট্রীয় ভুখণ্ডটির মালিক যে সেই ভুখণ্ডের প্রতিটি মানুষ। সেই সত্যটুকুই এই অঞ্চলের কোন জাতিগোষ্ঠীর মানুষের ভিতরেই দানা বেঁধে ওঠনি আজও।
বিষয়টি একটু সহজ ভাবে বোঝার চেষ্টা করা যাক বরং। ধরুন আপনার নিজ বাড়ির দেখাশোনা ও রক্ষণাবেক্ষণ করার জন্য আপনি একজন কেয়ারটেকার নিয়োগ করবেন। একটা ইনটারভিউ ডাকলেন। দেখা গেল প্রার্থীদের ভিতরে একজনেরই এই কেয়ারটেকারের কাজের এক দশকের বেশি সময়ের অভিজ্ঞতা রয়েছে। তার উপরে নিশ্চিন্তে ভরসা করা যায় বলেই মনে হলো আপনার। এমনকি, সে আপনার ঘরদোর পাহারা দেওয়ার জন্য কেয়ারটেকারের কাজের সাথে চৌকিদারির কাজও করে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিল। আপনি স্বভাবতঃই আহ্লাদে আটখানা হয়ে তাকেই কেয়ারটেকার করে নিজের বাড়িটি তারই হাতে তুলে দিলেন। নিশ্চিন্ত হয়ে। এবার থেকে আপনার বাড়ির রক্ষণাবেক্ষণ উপযুক্ত মানুষের হাতে পড়েছে ভেবে। এরপর বছর পাঁচ সাত পর টের পেলেন বিশ্বস্ত সেই কেয়ারটেকার আপনার বাড়ির পৈতৃক সব জিনিসপত্র জলের দরে তারই কয়েকজন বন্ধুবান্ধবকে বেচে দিতে শুরু করেছে। ঠিক কি করবেন তখন আপনি? কারণ সেই বাড়ির আপনিই মালিক। আপনারই পৈতৃক জিনিসপত্রে ভরা ছিল যে বাড়ি।
না, দুঃখের বিষয়। ঠিক এইভাবে ভারতবর্ষ নামক রাষ্ট্রীয় কাঠামোর ভুখণ্ডটিকে আমরা কেউই অনুভব করি না। করতে পারিনি আজও। পারিনি বলেই দেশের নির্বাচিত সরকার দেশেরই সম্পত্তি সরকারী সংস্থাগুলি শাসকদল ঘনিষ্ঠ কয়েকজন ব্যক্তিবিশেষের হাতে তুলে দেওয়ার সুযোগ পেত না এতদিন ধরে। দেওয়ার চেষ্টা করার প্রথম মুহুর্তেই আমরা পথে নেমে সেই কুকর্মের বিরুদ্ধে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলার চেষ্টা করতাম অন্তত। ঠিক যেমনটা করল ভারতবর্ষের কৃষকরা। কারণ তাদের কাছে কৃষিজমি হচ্ছে তার প্রথম ও শেষ আশ্রয়। তারা যেমুহুর্তে বুঝতে পেরেছিল, নতুন তিন কৃষি আইনে তারা তাদের পৈতৃক জমিকে রক্ষা করতে পারবে না। কর্পোরেট শক্তি সেই সব জমি ছলেবলে এবং আইনের বলেই কেড়ে নেবে। এমনই নতুন আইন তৈরী করেছে গণতান্ত্রিক একটি দেশের জনগণের হাতে নির্বাচিত সরকার। সেই মুহুর্তেই তারা ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তুলতে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল রাজপথে। কৃষকদের কাছে যেমন নিজের জমি, আমাদের কাছে ভারতবর্ষ ঠিক তেমন নয়। নয় বলেই আমরা সরকারী সংস্থাগুলির বেসরকারীকরণের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী প্রবল এবং ঐক্যবদ্ধ প্রতিরোধ গড়ে তোলার প্রয়োজনীতাই উপলব্ধি করতে পারিনি। করতে পারছি না।
অথচ দেশের মানুষের কাছে খবর পৌঁছিয়ে গিয়েছে এয়ার ইণ্ডিয়া মাত্র আঠারো হাজার কোটি টাকায় টাটা গোষ্ঠীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। এদিকে দেশের প্রধান ও রাষ্ট্রপতির জন্য দুইটি বিদেশী বিমান কিনতেই খরচ পড়েছে সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা। স্কুল পড়ুয়াদের কাছে রাখলেও অঙ্কটা জলের মতো পরিস্কার হয়ে যেত। কি পরিমাণ জলের দরে এয়ার ইণ্ডিয়ার বেসরকারীকরণ হয়েছে। কার স্বার্থহানী করে কাদের স্বার্থে। ঠিক একই ভাবে একের পর এক সরকারী বন্দর থেকে বিমানবন্দর। রেলস্টেশন থেকে সড়ক পথ। খনি থেকে খনিজসম্পদ। একে একে হাতবদল হয়ে গিয়েছে। জনতার হাত থেকে কয়েকজন বিশেষ ব্যক্তির হাতে। জনতা তার দেশের সম্পত্তি রক্ষণাবেক্ষণের ভার যার হাতে যাদের হাতে তুলে দিয়েছিল। তারা জনতার সম্পত্তি জনতাকে আড়ালে রেখে বেচে দিচ্ছে। জনতা যে বিষয়টি সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল নয়। তাও নয়। কিন্তু জনতা নির্বিকার। আমরা পূর্বেই দেখে নিয়েছি, জনতার এই নির্বিকার উদাসীনতার মূলে ঠিক কোন কারণ কাজ করছে। জনতা বিভিন্ন গোষ্ঠী স্বার্থের চক্রব্যূহে আটকা। সে হিন্দু। সে মুসলিম। সে নানান কিছু। কিন্তু স্বদেশী নয়।
ফলে এই যে একটি ধারা তৈরী করে দেওয়া হলো। সরকারী সংস্থার বেসরকারীকরণ। বর্তমান শাসকদলের বদলে অন্য রাজনৈতিক শিবিরকে নির্বাচিত করে ক্ষমতায় বসালেও যে এই ধারার কোন পরিবর্তন হবে তার কোন নিশ্চয়তা নেই। নিশ্চয়তা নেই, অন্য কোন শাসক গোষ্ঠীর হাতে দেশের ক্ষমতা তুলে দিলেও, তারা হারানো সব সরকারী সম্পত্তি ফিরিয়ে নিয়ে আসতে পারবে আবার। তখন রাজ্যের প্রধানের মতোই না আবার ভারতীয়দের বলতে হয়, যা গেছে তা যাক। অবশ্য ভারতবর্ষের কোন সম্পত্তি কোন পথে কার স্বার্থে বেহাত হয়ে যাচ্ছে। সে হিসাবে দেশের নাগরিকের বিশেষ কিছু এসে যাচ্ছে না যখন। তখন আর বলতে অসুবিধে কি, যা গেছে তা যাক!
১৫ই জানুয়ারী’ ২০২২
কপিরাইট সংরক্ষিত
0 মন্তব্যসমূহ
সুচিন্তিত মতামত দিন