"একেবারে মেমসাহেব এসেছেন, বামুনের ঘরের মেয়ে হয়ে নৈবেদ্য সাজাতে জানেননা, পুজোর কাজ জানেন না।"
" আমি পড়াশোনা, গান বাজনা ছাড়া কিছুই করিনি বিয়ের আগে মা।"
" কেতার্থ করেছো। আমার মেয়েরা তো পড়াশোনা করে নি! কায়স্থ ঘরের মেয়ে হয়েও তোমার চেয়ে ভালো পুজোর কাজ জানে। নিখুঁত সাজিয়ে দেবে। "
" বামুনের ঘরের মেয়ে তার কাজ পুজোর জোগাড় করা,এই ধারণা আপনাকে কে দিল?"
" থাক, তুমি মেমসাহেব মা, তাও আবার উচ্চ শিক্ষিত, তোমার সঙ্গে আমার তর্ক চলে ? নৈবেদ্য সাজাতে জানেননা জানলে আত্মীয় স্বজনে হাসবে।"
" আপনি কতবার আত্মীয় স্বজনকে আমি কী কী পারি সেটা বলেছেন? যেটা পারিনা, সেটাই শুধু বলবেন কেন? আপনি না বললে তারা কী করে জানবে বলুন।"
" দেখ, দেখ বাবু, এই দিন দেখার জন্য উচ্চ শিক্ষিত বৌ এনেছিলি? ওর আমি নাকি নিন্দা করি? আমার সাত জন্মে এসব স্বভাব নেই। কী রে বাবু, তুই কিছু বলবি না?"
বাবু বাড়িতে লক্ষ্মীপুজোর সময় ও বাসি বিছানায় ঘুমায়, ওঠেনা। ছেলেদের অত না করলেও চলে । বাবু ঘুম গেছে বলে বেজায় চটে যায় বৌয়ের উপর। "তোমার নাটকের জন্য কি ঘুমাতেও পারবো না? মায়ের কাছে ক্ষমা চাও। "
" খামোখা ক্ষমা চাইবো কেন?"
" আমি বলছি বলে। চাও।"
" চাইবো না।"
বাবু বিছানা ছাড়ে। দাঁত মাজে, বাথরুমে যায়। গায়ে জামা গলিয়ে বেরিয়ে যায়। যেতে যেতে বলে," তোমরা ঝগড়া চালিয়ে যাও। একটা মাত্র ছুটির দিন পেলাম। বাড়িতে থাকার তো জো নেই। বেরোলাম। খাবো ও না।
এটা বরের একটা চালাকি, মধুরিমা জানে। এটা বললেই শাশুড়ি আরো তেলে বেগুনে জ্বলে ওকে আক্রমণ করবে। হল ও তাই।
" কী একটা জঘন্য বৌ জুটেছে! ওর জন্য ছেলেটা আমার খাবেও না।" চলল সারাদিন।
বড়দিন এসেছে। মধুরিমা ঘর সাজাচ্ছে ক্রিসমাস ট্রী , রঙিন কাগজের চেন দিয়ে। হঠাৎ ছোট ননদের ফোন। তার বাড়িতে অশান্তি র সাতকাহন শুনে মেয়ের দুঃখে সবার আগে রাগ পড়লো গিয়ে ক্রিসমাস ট্রী এর উপর।
"এসব এ বাড়িতে চলবে না। পুজোর কাজ জানেনা, খেস্টান হতে চায়।"
" দু'মাস আগের পুরোনো কাসুন্দি কেন ঘাটছেন?"
" একদম তক্কো নয়।"
শাশুড়ি ছুঁড়ে ফেলে দেন ক্রিসমাস ট্রী।
মধুরিমা বাকি জিনিসগুলো ও। ছুঁড়ে ফেলে দেয় বাইরে।
তারপর অনেক বছর চলে গেছে।আজ বড়দিন। মধুরিমার বয়স এখন পঁয়তাল্লিশ। ছেলে বড় হয়ে গেছে, বন্ধুদের সঙ্গে ব্যস্ত । বরের বন্ধুদের পার্টিতে মধুরিমা যায়না, সেই এক মদ খাওয়া আর ধেড়ে বুড়োদের টীন এজের মতো নোংরা জোক বলে খ্যা খ্যা করে হাসা নিতে পারে না মধুরিমা।
তাই একাই আছে। সন্ধে হল। আলোয় ভাসছে কলকাতা।
" দু'মাস আগের পুরোনো কাসুন্দি কেন ঘাটছেন?"
" একদম তক্কো নয়।"
শাশুড়ি ছুঁড়ে ফেলে দেন ক্রিসমাস ট্রী।
মধুরিমা বাকি জিনিসগুলো ও। ছুঁড়ে ফেলে দেয় বাইরে।
তারপর অনেক বছর চলে গেছে।আজ বড়দিন। মধুরিমার বয়স এখন পঁয়তাল্লিশ। ছেলে বড় হয়ে গেছে, বন্ধুদের সঙ্গে ব্যস্ত । বরের বন্ধুদের পার্টিতে মধুরিমা যায়না, সেই এক মদ খাওয়া আর ধেড়ে বুড়োদের টীন এজের মতো নোংরা জোক বলে খ্যা খ্যা করে হাসা নিতে পারে না মধুরিমা।
তাই একাই আছে। সন্ধে হল। আলোয় ভাসছে কলকাতা।
আজকের বড়দিনে মধুরিমা প্রদীপ জ্বেলে দেয় দরজায় আর শাশুড়ির ছবির সামনে। কী ভেবে লক্ষ্মীর আসনে ও জ্বালে। বড়দিন তো উপাসনার, শুভ বোধের।
ওই প্রদীপটুকুর শিখার মধ্যে অনেক অন্ধকারের পরে দুই মানবীর মাঝখানের অনেক বছরের সখ্যতার আলোটুকু জ্বলে ওঠে।
একটুকরো কেক শাশুড়ির ছবির সামনে দিয়ে মধুরিমা বলে " বড়দিনের শুভেচ্ছা মা।"
0 মন্তব্যসমূহ
সুচিন্তিত মতামত দিন