► সুশান্ত কুমার রায় / নিত্য নতুনের বৈচিত্র্যময় শিল্পবোধে, শব্দের মিছিল

◆ সুশান্ত কুমার রায় /  নিত্য নতুনের বৈচিত্র্যময় শিল্পবোধে, শব্দের মিছিল

সাহিত্য মানে সুসজ্জিত শব্দের বিন্যাস ও শব্দের খেলা। এটা এতটাই স্বতস্ফুর্ত আর আবেগস্নাত অভিব্যক্তি যে যার মাধ্যমে অভিজ্ঞতার মূল নির্যাসটুকু শুধু পাঠক ও শ্রোতাচিত্তকেই ছুঁয়ে যায় না, হৃদয় গহীন অরণ্যের অন্তরআত্মাকে আলোকিত ও আন্দেলিত করে তোলে। 

সাহিত্য হলো নিত্য নতুনের  এমনিই এক বৈচিত্র্যময় শিল্পবোধ যা পাঠক ও শ্রোতাচিত্তে স্পর্শ, অনভিজ্ঞ ও অপ্রত্যাশিত আনন্দ বেদনা মুখরিত অন্তর ধ্বনি সৃষ্টি করে।অন্তর্জাল সাহিত্য চর্চা ও প্রসারের অন্যতম মাধ্যম শব্দের মিছিল। প্রকাশিত হয়ে আসছে ভারতের উত্তরবঙ্গ থেকে। অনলাইন পত্রিকাটি আজ হাটি হাটি পা পা করে ৯ম বছরে পদার্পণ করেছে ।সময় বিবেচনায় বয়স অল্প হলেও সাহিত্য-সংস্কৃতি ও শিল্প-ভাবনার বিচারে পত্রিকাটি অতি অল্প সময়ের মধ্যে লেখক, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ী মহলের হৃদয়ে জায়গা করে নিতে সক্ষম হয়েছে। যখন কোন একটি পত্রিকার পাঠকসংখ্যা কয়েক লক্ষের কোঠায় পৌঁছায় তখন সহজেই অনুমেয় হয় পত্রিকাটির গুণগত মান বিচার।

শুধু পত্রিকার প্রচ্ছদ কিংবা অলঙ্করণই নয়, লেখার মানও এক্ষত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। পত্রিকাটির লেখাভিত্তিক নান্দনিক প্রচ্ছদ, বিষয়ভিত্তিক লেখার অলঙ্করণ সত্যিই অতুলনীয় ও প্রশংসনীয় । যার সার্বিক অলঙ্করণে প্রথম থেকেই প্রিয়দীপ করে চলেছেন নিরলস ভাবে।আহবায়ক দেবজিত সাহা এই সাহিত্য পত্রিকার বিভিন্ন বিষয়ের যোগাযোগ এর অন্যতম সেতু। ঢাক পেটানো আত্ম প্রচারের বর্তমান সময়েও খুবই বিস্ময়কর, জনপ্রিয় পত্রিকাটির প্রিন্টার্স লাইনে সম্পাদকের নাম অনুপস্থিত থাকায় । 

লেখক কর্তৃক লেখা শব্দের মিছিলের ইমেইলে পাঠানোর পর লেখা মনোনীত হলে দ্রুত জানিয়ে দেয়া হয় ইমেলের মাধ্যমে। লেখার প্রাপ্তি স্বীকার এবং মনোনীত হলে তা জানানোর প্রয়োজনবোধ নিঃসন্দেহে একজন দ্বায়িত্বশীল সম্পাদকের কাজ। আমরা জানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ও ভালো লেখা অনেক পাঠক তৈরি করে। পাঠক তৈরি হয় লেখকের লেখার গুণগত মান দিয়ে। তেমনি একটি আকর্ষণীয় প্রচ্ছদ পাঠকের চোখে দৃষ্টিনন্দন হওয়ায় লেখকের লেখাটিকে পঠিত হওয়ার জন্য সহায়ক বা অনুকুল পরিবেশ তৈরি করে। যেটা শব্দের মিছিলের একটি বিশেষত্ব।

একজন লেখক বা লেখিকার জন্য পুরস্কার বা সম্মাননা প্রাপ্তি তাঁর লেখালেখি ও সুদীর্ঘ লেখক জীবনে অনেক বড় আনন্দের ও গর্বের। এই বিষয়টিও কোনো দায়িত্বশীল পত্রিকা, প্রতিষ্ঠান বা সংগঠনের কাজের মধ্যে বর্তায়। সেই দিক বিবেচনায় শব্দের মিছিল তাঁর  বোধ, বিবেক ও দায়বদ্ধতা থেকে নবীন ও প্রবীণ লেখককে বিভিন্ন বর্ষে "আত্মার সাধনা ও আত্মার স্পন্দন ” লেখক সম্মাননা বা শ্রদ্ধা প্রদর্শনের মধ্য দিয়ে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছে। এক্ষেত্রে শব্দের মিছিল একদিকে যেমন লেখককে সম্মানিত করেছে তেমনিভাবে নিজে সম্মানিত হয়েছে বলে আমি মনে করি। 

অন্তর্জাল সাহিত্য চর্চা ও প্রসারে শব্দের মিছিলের আর একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে পত্রিকার প্রতিটি সংকলনের জন্য বিভিন্ন সাহিত্যিক, শিল্পীদের মধ্যে সম্পাদনার দায়িত্বভার অর্পণ। এটি আমার কাছে ব্যতিক্রমী মনে হয়েছে। সেই সুবাদে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শব্দের মিছিলের ৬৭তম একুশে সঙ্কলনটি সম্পাদনার দায়িত্বভার পালন করার সৌভাগ্য হয়েছিলো আমার।এজন্য অশেষ কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানাই শব্দের মিছিলকে। এখনো পর্যন্ত দুই বাংলার যে সমস্ত লেখক ও লেখিকা অতিথি সম্পাদক হিসেবে আমন্ত্রিত হয়ে শব্দের মিছিল সম্পাদনার দায়িত্ব পালন করেছেন তাঁরা হলেন- প্রখ্যাত সাহিত্যিক ও শিল্পী মৃণাল চক্রবর্তী, ফাল্গুনী মুখোপাধ্যায়, তারাশংকর বন্দোপাধ্যায়, হরিৎ বন্দোপাধ্যায়, ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়, রাহুল ঘোষ, চিন্ময় ঘোষ, স্বপন পাল, সুমনা পাল ভট্টাচার্য, পূজা মৈত্র, স্বপ্ননীল রুদ্র, মন্দিরা ঘোষ, বিপ্লব পাল, শ্রীলেখা মুখার্জ্জী, শাঁওলি দে, বিদিশা সরকার, রূপক সান্যাল, সুবীর সরকার, মনোনীতা চক্রবর্তী, গার্গী রায় চৌধুরী, অনিন্দিতা মন্ডল, দেবাঞ্জন ঘোষ, মৌসুমী মিত্র, আসমা অধরা, অলোবসু, কমল দাস, পিয়ালী বসু, শর্বরী রায় শর্মা, তানিয়া তুন নূর, রুমকি রায় দত্ত, প্রণব বসু রায়, নির্মাল্য বিশ্বাস,ঐশী দত্ত, অনন্যা ব্যানার্জি, রিয়া চক্রবর্তী, পৃথা রায় চৌধুরী, দর্শনা বোস, শামসুন নাহার, দোলনচাপাঁ ধর, ইফতেখারুল হক, জয়া চৌধুরী, সৌমিত্র চক্রবর্তী, শর্মিষ্ঠা ঘোষ, নীল তারা, সুদেষ্ণা চ্যাটার্জী, সাঈদা মিমি, নাশিদা খান চৌধুরী, অমলেন্দু চন্দ, কাশীনাথ গুই, ফারহানা খানম, রেজা রহমান, রত্নদীপা দে, শামীম পারভেজ, মামনি দত্ত, মৌমুমী সেন, জিন্নাত জাহান খান, অমিতাভ দাশ, মোহাম্মদ আনওয়ারুল কবীর, মৌ দাশগুপ্ত, শিবশঙ্কর মন্ডল, মুস্তফা কামরুল আখতার, শ্রীশুভ্র, এবিএম সোহেল রশিদ, ঝিলিমিলি, সুমিত রঞ্জন দাস ও এস আর ফারজানা প্রমুখ।

সাহিত্যপ্রেমি ও বাংলা ভাষাপ্রেমি পাঠক ও লেখকের পত্রিকা হিসেবে দিনের পর দিন সমাদৃত ও আদৃত হয়ে আসছে পত্রিকাটি । পূর্বেই লিখেছি, প্রতিটি লেখার প্রচ্ছদে রয়েছে প্রিয়দীপের নান্দনিক ছোঁয়া। আহবায়ক দেবজিত সাহার আন্তরিক প্রয়াসে সত্যিকারের দুই বাংলার সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন আজ শব্দের মিছিল। একটি অসম্ভব জনপ্রিয় ও অনন্য ওয়েব ম্যাগাজিন। বলাই যায় প্রতিথযশা ও স্বনামধন্য লেখকদের পাশাপাশি তরুণ লেখকদের হাত পাকাবার এক অনন্য মাসিক পত্রিকা। বলা যায় কবি ও সাহিত্যিকদের মিলন মেলা । 

কবিতা, ছোটগল্প ও প্রবন্ধ যাচাই বাছাইয়ের ক্ষেত্রে অদৃশ্য সম্পাদকের ধৈর্য্য, গভীর মনোযোগ, দৃষ্টির তীক্ষ্ণতা লক্ষ্য করা যায়।  যার দরুন একদিকে লেখকের ভাষা, ভাষার বুনট, রূপ, রস, অলংকার, পটভূমি, বিষয়বস্তু, রচনাশৈলী অন্যদিকে শিল্পীর অলঙ্করণ ও প্রকাশভঙ্গীতে পাঠকের চিত্তকে ছুঁয়ে যাওয়ার মতো আবেদন সৃষ্টি করতে পারে । 

এভাবেই সৃষ্টিশীল নতুন লেখিয়েদের উৎসাহ, উদ্দীপনা ও প্রেরণা যুগিয়ে যেমনিভাবে গভীর শিল্পবোধ এবং দায়বদ্ধতা থেকে সাহিত্যকে পাঠকের সামনে তুলে ধরার প্রয়াস চালিয়ে যাচ্ছে তেমনিভাবে লেখক-পাঠক মিলনমেলারই স্বতস্ফুর্ত আর আবেগস্নাত অভিব্যক্তি আজ শব্দের মিছিল। 

এভাবেই প্রচ্ছদ, বর্ণসজ্জা, ভাষার বুনট, রূপ,রস ও রঙে পূর্বের সংখ্যার আবেষ্টনীকে ভেঙ্গে শব্দের মিছিল এক নবতর প্রকাশের মধ্য দিয়ে নানা বৈচিত্র্যে প্রকাশিত হয়ে চলছে। নিত্য নতুনের বৈচিত্র্যময় শিল্পবোধ বলা যায় শব্দের মিছিল। পত্রিকাটির ইমেইল submit@sobdermichil.com।ওয়েবসাইট www.sobdermichil.com । 

অসংখ্য লেখক, পাঠক ও শুভানুধ্যায়ীদের ভালোবাসায় নন্দিত হোক , শুভ ও সুন্দর হোক শব্দের মিছিলের আগামীর পথচলা।




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

0 মন্তব্যসমূহ
* মন্তব্য করতে পেজটি রিফ্রেশ করুন .