ঢাকুরিয়া লেক এর ঝুপো অশ্বত্থ গাছটার নীচে আনমনে ডায়েরি হাতে বসেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। আজ নজরুলেরও এখানে আসার কথা। আর আসবে বিচিত্রার ছেলেমেয়েদের নবীন দলটি। তাঁদের সাথে এখানেই আজ আলোচনা সভা। এবারের পঁচিশে বৈশাখে তারা তাদের পাড়ার মাঠে তাঁদের নিয়ে পনেরো দিনব্যাপী একটা "রবীন্দ্র নজরুল পক্ষ" র অনুষ্ঠান করতে চায়। সেই নিয়েই কিছু আলাপচারিতা হবে।
হঠাৎ গাছের মগডাল থেকে ঝপাৎ করে লাফ মেরে পাশে এসে বসলো হনেন্দু অধিকারী।
রবিবাবু প্রবীণ মানুষ, আজকাল বড় একটা ঘরের বাইরে বেরোন না। টিভি দেখারও অভ্যাস নেই তার একেবারেই। হনেন্দুকে তাই তিনি চেনেন না।
রবিবাবু বিনয়ের সাথে জিজ্ঞাসা করলেন, তুমি কে ভাই? তোমাকে তো ঠিক.....
হনেন্দু হা হা হা করে অট্টহাস্য করে উঠলো, বল্ল,বেস বলেচো খোকা, আ্যাঁ, ভাইইইই,হা, হা, হা।
তুমি তো সেই সেদিনের পুঁচকে ছেলে হে, গাল টিপলে একোনো কোবিতা বেরোয়, জানো তুমি, আমি কে?
রবীন্দ্রনাথ বিস্মিত মুখে নেতিবাচক অর্থে ঘাড় নাড়লেন। চোখে তাঁর বাক্যহীন জিজ্ঞাসা।
হনু বল্ল, সোনো, চেনো না যদি তবে চিনে রাকো আমাকে আজ থেকে, আমি হচ্ছি যথেসটো কেসটো বিষটু লোক, তুমি তো এই সেদিনকার কলিযুগের দাঁতক্যালানে কবি, আর আমি তোলাবাজি চালাচ্চি শেই তেতা জুগ থেকে বুয়েচো।
আমার কাচে ওসব জোড়াশাকো ফাকোর গপ্প দিতে এসো না গুরু,তোমার পুরো জোড়াশাকো পুরসভা একন আমাদের পকেটে, আর সোনো, তোমার অনেক আগেই তেতা জুগে আমার গুরু ইন্ডিয়া সিলংকা সাঁকোটা বানিয়ে গেচে বুয়েচো।
ওসব সঞ্চয়িতা ফঞ্চয়িতা অথবা গীতাঞ্জলি ফিতাঞ্জলির বুকনিবাজি আর কদ্দিন চালাবে খোকন?
দ্যাকোনি বুজি তোমার ওই গীতাঞ্জলি, রবীন্দো সদোন ইষ্টিশানে আমার চ্যালারা সব কেমন গুটকার ফিক ফেলে গেরুয়া চিত্তির বানিয়ে ছেড়েচে?
আমার তো আর তোমার মতোন বাপের জমিদারী নেই, আমাকে তাই পোমোটারি আর সিনডিকেট করে মদ মোচ্ছব মাগী জোগাড় কত্তে হয়।
আমার হাতে সোময় অনেক কম, যা বোলতে এসেচি শোনো 'কান খুলে'---ওসব রোবিন্দ পোক্কো ফোক্কো ছাড়ো, এবার থেকে এপাড়ার মাঠে পোতি বচ্ছর আমার জন্মউচ্ছব পালন করা হবে একমাস ধরে, তোমার ওই বিচিত্তার ছেলে পুলেগুলোকে বলে দিয়েচি, ওরা সবাই মিলে হনুমান চালিশা গাইবে এক মাস ধরে। গোমূত্র ছিটিয়ে বরণ করা হবে সবাইকে। তুমি আর নজরুল না কী যেন নাম ওই কোঁকড়াচুলো ছেলেটার তোমরা এসব মানে মানে একান থেকে বিদেয় হও তো বাপ।
লেকচার ঝেড়ে পরোধম্মোশোহিষনুতা আর জাতীয় সংহতি মারানো হচ্ছে এ্যাঁ?
যত্ত সব!! ""একই বিন্তে দুটি কুসুম! বলি একগাছে গোলাপ আর জবা ফুটতে দেকেচো কোনোদিন? হয় গোলাপ থাকবে নয় জবা।
রবীন্দ্রনাথ ভাবছেন তিনি কি স্বপ্ন দেখছেন নাকি? এই কি তার সেই সোনার বাংলা? এতো বিভেদ, এতো বিষ কারা গোপনে রোপণ করে ফেল্লো? ঠিক কবে থেকে সুচারু পরিকল্পিত স্বার্থে? বাঙালিকে পূর্ব পশ্চিমে কেটে ক্ষত বিক্ষত করে শান্তি হয়নি, এবার ভাঙ্গছে শিক্ষা আর সংস্কৃতির শিরদাঁড়াটাকে, অবশ করে ফেলছে তার মুক্ত চিন্তা ভাবনার স্নায়ু। আর বোকা মানুষগুলো দেশপ্রেমের প্যাকেট ভেবে আত্মস্থ করে নিচ্ছে সাম্প্রদায়িকতার বটিকা।
হনু যাবার আগে ধাক্কা মেরে বলে গেল, ওসব কাব্যক্যালানো আর মাছ মুরগি ছাড়ো, পারলে হনুমান চালিশাটা একবার রোজ পড়ো
মন দিয়ে আর নিরিমিশি খাও রোজ, দ্যাখো যোদি তোমার হারানো নোবেলটা কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়।
রবীন্দ্রনাথ অন্যমনস্কভাবে হাঁটতে হাঁটতে ভাবলেন সত্যিই খুব বড় তুফান আসছে, তবে বিচিত্রার ওই যুবক যুবতীদের উপরে তাঁর আস্থা আছে, আজ ওরা সংখ্যায় সামান্য হলেও মানুষ একদিন ঠিক ওদের ভরসা করে ওদের সঙ্গে মিছিলে হাঁটবে।।
0 মন্তব্যসমূহ
সুচিন্তিত মতামত দিন